Wednesday, July 18, 2018

ইতিবাচক ও নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ

লেখকঃ মাহদী গালিব
📖 একটি গ্লাস। অর্ধেক পানি। সামনে রাখা। ডাক্তার বলবে : গ্লাসের অবস্থা ব্যাখ্যা করুন। কেউ বলবে অর্ধেক ভর্তি। কেউ, অর্ধেক খালি। এই 'খালি' ও 'ভর্তি' মানসিকতার প্রকাশ। ইতিবাচক ও নেতিবাচক। পজেটিভ ও নেগেটিভ। পজেটিভগণ বলবে, ভর্তি। নেগেটিভগণ বলবে, খালি। সমস্ত বিষয়টি হচ্ছে 'দৃষ্টিকোণ'। পয়েন্ট অভ ভিউ। জীবনে দৃষ্টিকোণের প্রভাব বিশাল। আমরা জগতকে কিভাবে দেখি। এবং নিজেকে কিভাবে দেখাই। সব কিছুই দৃষ্টিকোণের ওপর নির্ভরশীল। ইমাম আ'লা হযরত কে একজন বলল। মদিনা-মুনিব (দ) নামায পড়ছিলেন। কিন্তু তাঁর কাপড়ে লেগেছিল ধুলো-বালি। তিনি কি জানতেন না? এ সামান্য বিষয়টিও তিনি যদি না জানেন, তবে ইলমে গায়েব জানেন কি করে? ['অদৃশ্য-জ্ঞান' কে ইলমে গায়েব বলে। ধরুন আজ থেকে একশ বছর পর, কিংবা পৃথিবী থেকে সূর্য পেরিয়ে অন্য গ্যালাক্সিতে কি হচ্ছে আমরা জানি না। কিন্তু আল্লাহ জানেন। এবং তাঁর বন্ধুকে জানিয়ে দিয়েছেন। এই জানাকেই বলে 'ইলমে গায়েব'। এর ব্যাখ্যা বিশাল। অতিসহজে বললাম।] যা-হোক, আ'লা হযরত বললেন : ধুলো-বালি লেগেছে, তিনি জানতেন না। এভাবে বলিও না। এভাবে বলো, ধুলো আমার রাসুল-অতুল (দ) এঁর কাছে আশ্রয় নিয়েছে। কারণ, সৃষ্টির সমস্ত কিছুই আমার রাসুলের কাছে আশ্রয় চায়। এটাই পার্থক্য। কিভাবে দেখছি? পজেটিভ-নেগেটিভ। আরেকটি উদাহারণ। মদিনা-মুনিব (দ) মেষ চড়িয়েছেন। মুনাফেকরা বলে, নবী তো রাখাল। সাধারণ মানুষ। বড় ভাইয়ের মত সম্মান করো। তাঁকে নিয়ে এত মাতামতির কি আছে? আ'লা হযরত বলেন, হে অভাগা! তুমি মেষের পিছনে নবী-আরাবী (দ) কে দেখ। কিন্তু দেখনা, কোটি মানুষ তাঁর আনুগত্য করে। মেরাজ রাতে নবী-সুরভী (দ) এঁর পিছনে জিব্রাইলকে দেখ না। দেখ না সমস্ত রাসুল, স্থান, সময়, সৃষ্টিকে ছাপিয়ে তিনি স্রষ্টার সান্নিধ্যে গিয়েছেন। এই তোমার বিবেক! ---- একই কোর'আন পড়ে কেউ নবীজি (দ) কে মূর্খ বলে। কেউ বলে সমস্ত জ্ঞানের উৎস। কেউ বলে মৃত। কেউ বলে হায়াতুন্নাবী। কেউ বলে চিরপবিত্র। কেউ বলে দোষে-গুনে মানুষ। এই যে পার্থক্য। এটাকেই বলে দৃষ্টিভঙ্গী। কে ইসলামকে কিভাবে নিচ্ছে, তা প্রামণিত হয় কে নবীজীকে কিভাবে নিচ্ছে। কারণ, ইমানের মূল শানে-রেসালাত। শান মানে সম্মান। রেসালাত বুঝায় নবুয়তের ধারা কে। শানে রেসালাতের প্রতি দৃঢ়তাই ইমানের ভিত্তি। যারা অর্ধেক খালি গ্লাস দেখে তারা অসুস্থ্য। মানসিক অসুস্থ্য। কারণ জগতের সৌন্দর্য সম্পর্কে তারা জানে না। ঠিক একই ভাবে যারা নবীজি (দ) এঁর অপূর্ণতা দেখে তারাও অসুস্থ্য। তাদের ইমানে অসুস্থ্যতা রয়েছে। চিকিৎসা প্রয়োজন। এখন এই চিকিৎসা কে করবে? করতে হবে আমাকে, আমাদেরকে। কারণ, ইমান বিষয়টি এমন। নিজে জানলে অন্যকে জানানোটা ওয়াজিব। অর্থ্যাৎ, আমাদের দাওয়াত দিতে হবে। এই দাওয়াতই হবে দাওয়া (ওষুধ)। কিন্তু দু:খের বিষয় আমরা দাওয়াতে পিছিয়ে। অনেক অনেক পিছিয়ে। সত্য কথাটাই বলি। স্বাদে একটু তিতে। আমরা মানুষকে চিকিৎসা দেয়ার থেকে ভাগিয়ে দিতেই বেশি পারদর্শী। মানে, কাফের-মুরতাদ-মুনাফেক তকমা দিতেই অভ্যস্থ। এই গণ্ডি থেকে বেরুতে হবে। মানুষকে বুঝাতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। ভালোবাসতে হবে। কাছে টানতে হবে। হাসতে হবে। হাসাতে হবে। সাথে হাঁটতে হবে। একসাথে দেখতে হবে পূর্ণিমা চাঁদ। লুকাতে হবে তার দোষ-দূর্বলতা। বুঝাতে হবে আপনার হৃদয়ের ঘ্রাণ। যে ঘ্রাণের উৎস মদিনা। হেদায়তের মালিক আল্লাহ। আমরা শুধু চেষ্টাই করতে পারি। কেউ হলে হবে। না হলে নেই। কিন্তু আমরা যেন রুক্ষ না হই। চরম শত্রুও যেন মনে মনে শ্রদ্ধা করে আমাদের। যেমনটা ইমাম আ'লা হযরত কে করত। বিরোধীরাও বলেছেন, আ'লা হযরত এঁর জ্ঞান-প্রেম অনস্বীকার্য। কাউকে হুটহাট করে ভাগানোই সমাধান না। সমাধানের চেষ্টাই সমাধান। সংশোধন করটাই সমাধান। ইমামে আ'যম বলেন, কাউকে হারানো সহজ। কিন্তু কারো মন জয় করাটাই কঠিন। এবং, মন-রাজ্যের দখলই সবচে বড় বিজয়। এটাই টেকসই। চিরস্থায়ী।

No comments:

Post a Comment

Featured post

কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা

 কোরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা ||-----๑▬▬๑﷽๑▬▬๑-----|| কোরবানী একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিময় আমল। আল্লাহ বলেন فصل لربك وانحر হে নবী! আপনি ...