Thursday, July 19, 2018

এম.এ মান্নানের বদান্যতা ; বেয়াদবদের নিমকহারামী।

লেখক মুহাম্মদ আবু সাইদ। আ'লা হজরত। একটি উপাধি। একজনের সিলমারা খেতাব। উপমহাদেশের‌ই একজন তিঁনি। ইমাম আহমদ রেজা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলাইহি। আ'লা হজরতের সাথে পরিচিত ছিলাম না আমরা। চিনতাম না তাঁকে। জানতাম না কিছুই। এপার - ওপার। মাঝে বিস্তর ফরক। বিশাল দূরত্ব। সেতুবন্ধন গড়ে দেবার মতো নিঃস্বার্থবান কেউ নেই। হঠাৎ একজনের শুভাগমন। সেতুবন্ধন গড়ার মানসেই তিঁনি আসলেন। বেরলভী টু বাংলা। সেতুর মূল খুঁটি গাড়লেন। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে। নাম দিলেন - জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া। একনামে জামেয়া। 'বেরলভী টু বাংলা'র অমর সেতুবন্ধনের কারিগর হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি আল-কাদেরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। বাংলায় আ'লা হজরতের অনুপ্রবেশ জামেয়ার মাধ্যমে। বরণ করলেন তিঁনি - যাঁর মোবারক তনুতে আ'লা হজরতের মালিকের নূরানী খুন প্রবাহিত। আ'লা হজরত আসলেন ঠিক‌ই। তবে তাঁকে আমরা ঠিকঠাক বুঝতে পারছি না। তাঁর ভাষা বুঝতে পারছি না। বোধগম্য হচ্ছে না কিছুই। ভাষাই যদি না বুঝি তবে কিভাবে বুঝব - তিঁনি কি বলতে চান? কোন সেই সত্তার প্রেমে সিক্ত হয়ে তিঁনি আমাদেরকেও 'প্রেমিক' বানাতে চান? কৌতূহল কখনোই মিটবে না মোদের। কারণ আমরা তাঁর ভাষাই বুঝে উঠতে পারছি না! তাঁর মিশন সম্পর্কে তো অজ্ঞ‌ই থেকে যাব। ঠিক এজন্য‌ই আতিথেয়তা করতে পারছি না নিঃস্বঙ্কোচে। ব্যর্থতা আমাদের। অন্তত চক্ষুলজ্জা থাকায় বলতেও পারছি না কিছু। একজন বুঝলেন। আমাদের মন পড়লেন। একটি বৃহৎ বাংলাভাষী সুন্নী জনগোষ্ঠীর চাপা কষ্ট - আর্তনাদের চিৎকার যেন তাঁর কর্ণকুহরে ধ্বনিত হচ্ছিল বারংবার। কাজ শুরু করে দিলেন। আ'লা হজরতের সাথে বাংলার আ'ম সুন্নীদের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে র‌ওয়ানা হলেন। তিঁনি জানতেন পথটা ঠিক “দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, দুস্তর পারবার”। তবুও সাহস নিয়ে চললেন। পরবর্তী গল্পটা সকলের‌ই জানা। 'কানযুল ইমান' অনুবাদ করলেন। আ'লা হজরতকে চিনালেন কিছুটা হলেও। বিপ্লব সৃষ্টি করলেন বাংলায়। ইতিহাসে কুরআন শরীফের এমন বিশুদ্ধ বাংলা অনুবাদ পূর্বে কেউ করেছেন কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সেতু প্রশস্ত হলো। বাংলাভাষী সুন্নী জনগোষ্ঠী পেল আক্বীদার 'সোনার হরিণ'। শুধুমাত্র বাংলাদেশ‌ই নয় বরং পাক-ভারত উপমহাদেশের অত্যন্ত সমাদৃত একটি অনুবাদগ্রন্থে পরিণত হলো। গ্রহণযোগ্য অনুবাদ। সুন্দর - সাবলীল। এখানেই থেমে থাকেননি। কুরআন শরীফের পর হাদিস শরীফের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করলেন। হাদিস শরীফের জগতে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য কিতাব 'মিশকাতুল মাসাবীহ'। উক্ত কিতাবের শরাহ্ লিপিবদ্ধ করেছেন 'মির‌আত শরহে মিশকাত' মুফতি আহমাদ ইয়ার খান ন‌ঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। মিশকাত শরীফের ব্যাপক ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'মির‌আত শরহে মিশকাত' এঁর‌ও অনুবাদ করেছেন তিঁনি। ছয়টি বিশাল বিশাল খণ্ডে বিভক্ত। চারদিকে যখন সহীহ হাদিসের দোহাই দিয়ে আ'ম জনতার ইমান হরণে ব্যস্ত সালাফীরা ঠিক তখনি হাদিস শরীফের এমন বিশাল খেদমত অতীব প্রয়োজনীয় এবং প্রশংসনীয়। এমন আরও বহু প্রসিদ্ধ এবং প্রয়োজনীয় কিতাবাদি সরল-সাবলীল ভাষায় বিশুদ্ধ অনুবাদ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের জন্য, বিশেষ করে সুন্নীদের জন্য ত্রাণকর্তার ভূমিকায় আসীন হয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মান্যবর চেয়ারম্যান, আঞ্জুমান রিচার্স সেন্টারের মহাপরিচালক মাওলানা এম.এ মান্নান সাহেব হুজুর (মাঃ জিঃ আঃ)। বড় অকৃতজ্ঞ আমরা। আমাদের মনের তৃষ্ণা মেটাতে যে লোকটা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন অগণিত সেই লোকটার ঘুম কেড়ে নিয়েছি আজ‌ও - সমালোচনার মাধ্যমে। অপবাদে জর্জরিত করছি। লিস্ট করে একের পর এক দোষ জাহির করেই চলেছি। আমাদের উপর তাঁর এহসান-বদান্যতা-উদারতা-মহানুভবতা ভুলে গিয়ে বিক্ষিপ্ত গুটিকয়েক বেখেয়ালী ভুলের সমালোচনায় টেবিল গরম করছি। ব্যস্ত সময় পার করছি তাঁর কুৎসা রটনায়। এক্ষেত্রে আমরা শুধু অকৃতজ্ঞ নয় বরং নিমক হারাম। ফেসবুকের কল্যাণে কিছু চরম নিম্নস্তরের বেয়াদব দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে আজ। সুস্পষ্টভাবে সত্য প্রকাশের দরুন আজ তাঁকে জনসম্মুখে 'ডিলিট' করে দিচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণিত ষড়যন্ত্রের কৌশল আঁটছে। ওহে নিমকহারামীর দল! আর কত নিচে নামবে? কোনোদিন তাঁর অনুবাদকৃত কানযুল ইমান পড়নি? একবার‌ও না? 'মির‌আত শরহে মিশকাত' পড়ার‌ও সৌভাগ্য হয়নি? গাউছে পাক সম্পর্কে জানতে 'বাহ্‌জাতুল আসরার' অধ্যায়ন করোনি? এই দুর্বোধ্য কিতাব পাঠ করে গাউছে পাকের কারামত বর্ণনা করনি? 'ফয়যানে সুন্নত' এঁর বদান্যতায় একটি সুন্নত‌ও আকড়ে ধরোনি? শেরে বাংলার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে 'দিওয়ানে আজিজ' খরিদ করোনি? তোমার ইমান হেফাজত করতে, শিয়াদের প্রতিহত করতে 'হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু' এঁর আশ্রয় নাওনি? মাহবুবে খোদার শান-মান সম্পর্কে কিঞ্চিৎ জানতে 'শানে রিসালাত' -এ ডুব দাওনি? প্রতিটি উত্তর‌ই নেতিবাচক। যদি একটি উত্তর‌ও ইতিবাচক হয় তবে তুমি নিম্নস্তরের নিমকহারাম । 'নিমকহারাম' শব্দটা বুঝি তোমার জন্য‌ই সৃজিত। প্রতিদিন 'নিমক' খেয়েও যে নিমকহারামী করে সে অন্য কেউ নয়, অবশ্যই তুমি। অনুবাদিত 'কানযুল ইমান' এঁর মাধ্যমে যদি একজন ব্যক্তির ইমান হেফাজত হয় তবে কৃতজ্ঞতার তশতরিতে আ'লা হজরতের সাথে অতিক্ষুদ্র মেহমান হিসেবে স্থান পাবে মাওলানা এম.এ মান্নান। 'মির‌আত শরহে মিশকাত' পড়ে একজন ব্যক্তি হাদিস শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা জানলে সেই কৃতিত্বে মুফতি আহমাদ ইয়ার খান ‌ন‌ঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একাংশের ভাগীদার হলেও করবেন এই প্রখ্যাত অনুবাদককে। 'বাহজাতুল আসরার' অধ্যায়ন করে কেহ গাউছে পাকের আশেক্ব হলে গাউছে পাক থেকে সামান্য কিছু হলেও তাঁর প্রতিদান পাবেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মান্যবর চেয়ারম্যান। 'ফয়যানে সুন্নত' এঁর দ্বারা কারো জীবনে যদি একটি আমল‌ও পরিবর্তন হয় তবে ইলিয়াস আত্তারী কাদেরী (মাঃজিঃআঃ) এঁর সাথে অতিক্ষুদ্র সংখ্যক হলেও নির্দিষ্ট একটি সাওয়াব লিপিবদ্ধ হবে আঞ্জুমান রিচার্স সেন্টারের মহাপরিচালকের অদৃশ্য খাতায়। 'শানে রিসালাত' পাঠে মাহবুবে খোদার প্রেমে যদি সিক্ত হয় একজনের‌ও মন তবে মদিনাওয়ালা উত্তম প্রতিদান দানকারী। এমন আরও অসংখ্য বাক্য সাজাতে পারব তাঁর নিমিত্তে যাঁর জন্য আমি বাংলাভাষী হয়েও জগদ্বিখ্যাত মশহুর আরবী-উর্দু কিতাব নির্দ্বিধায়-নিঃস্বঙ্কোচে অধ্যায়ন করতে পারছি। শেষোক্তে বলব একটি কথা, সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক নির্মিত 'বেরলভী টু বাংলা'র অমর সেতুবন্ধন আজ এতটা সুখ্যাতি-প্রশস্তটা লাভ করেছে যাঁর বদৌলতে, তা হচ্ছে 'কানযুল ইমান'। আর আজকের আমাদের 'কানযুল ইমান' প্রাপ্তির পিছনে যাঁর অবদান অনস্বীকার্য তিঁনিই হলেন আমাদের প্রকাশনা জগতের বাংলার আ'লা হজরত, মাওলানা এম.এ মান্নান সাহেব হুজুর। 'কানযুল ইমান' এঁর সফলতার ইতিহাসের সাথে যাঁর অবদান লিখা থাকবে যুগ-যুগ ধরে।

No comments:

Post a Comment

Featured post

কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা

 কোরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা ||-----๑▬▬๑﷽๑▬▬๑-----|| কোরবানী একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিময় আমল। আল্লাহ বলেন فصل لربك وانحر হে নবী! আপনি ...