Thursday, July 15, 2021

কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা

 কোরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা


||-----๑▬▬๑﷽๑▬▬๑-----||

কোরবানী একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিময় আমল। আল্লাহ বলেন فصل لربك وانحر হে নবী! আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন আর নহর (কোরবানী) করুন।

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ মালী ইবাদত। এটি আদায় করা واجب ( ওয়াজিব)।


সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না, তার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন من وجد سعة ولم يضح فلا يقربن مصلانا, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য আছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-مستدرك حاكم, হাদীস নং ৩৫১৯; الترغيب والترهيب ২/১৫৫

ইমাম আজম আবু হানিফা রহঃ ও ইমাম আওযায়ীসহ জমহুরদের মতে কুরবানী সামর্থবান স্বাধীন বয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব। 


ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তায়ালার اطاعت বা আনুগত্য এবং তাঁর রেজামন্দি লাভ করা। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। এক. اخلاص তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং দুই.  শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল প্রশ্নোত্তর আকারে  উল্লেখ করলাম।


১। প্রশ্ন :কার উপর কুরবানী ওয়াজিব?

━━━━━━━━━━━━━━━━

 :  مكلف بالشرع সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক নেসাব পরিমা সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা - রূপার অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র  কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাব করতে হবে।


আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় , তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।-المحيط البرهانى ৮/৪৫৫; تاتارخانبة ১৭/৪০৫


 ২। প্রশ্ন: নেসাবের মেয়াদ কতদিন থাকতে হবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর:  কুরবানীর নেসাব পুর্ণবছর থাকা জরুরি নয় বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।

 1 بدائع الصنائع৪/১৯৬, 

2  رد المحتار ৬/৩১২


৩। প্রশ্ন: কতদিন কুরবানী করা যায়?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। -

1  المؤطا ১৮৮,

 2  بدائع الصنائع  ৪/১৯৮, 

3  الهندية  ৫/২৯৫


৪। প্রশ্ন: মুসাফিরের কুরবানীর হুকুম কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। قاضيخان ৩/৩৪৪,  بدائع ৪/১৯৫, الدر المختار ৬/৩১৫


৫। প্রশ্ন : নাবালেগের কুরবানীর হুকুম কি?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যার আকল ঠিক নাই , নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা মুস্তাহাব হিসাবে সহীহ হবে।-بدائع ৪/১৯৬, رد المحتار ৬/৩১৬


৬।প্রশ্ন: গরীব মিসকিনের কুরবানীর হুকুম কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  গরিব মিসকিন ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়لان اوجب على نفسه ।  بدائع  ৪/১৯২


৭। প্রশ্ন: কুরবানী করতে না পারার হুকুম কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া  না হয় তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে।-بدائع ৪/২০৪,  قاضيخان ৩/৩৪৫


৮। প্রশ্ন: প্রথম দিন কোন্ সময় থেকে কুরবানী করতে হবে ?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় চলে যাবার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয।-صحيح البخارى ২/৮৩২, قاضيخان ৩/৩৪৪, الدر المختار ৬/৩১৮


৯। প্রশ্ন : রাতে কুরবানী করা যায়েজ আছে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : ১০.১১ও ১২ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো কেননা রাতে কুরবানী করলে আলোস্বল্পতায় জবেহ ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। مسند احمد, হাদীস নং : ১৪৯২৭; مجمع الزوائد ৪/২২, الدر المختار ৬/৩২০, قاضيخان ৩/৩৪৫, بدائع ৪/২২৩


১০। প্রশ্ন: কুরবানীর জন্য কেনা পশু সময়ের পর যবেহ করলে কি করতে হবে?

'━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবেহ করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবেহ করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে কুরবানী দাতা খেতে পারবে না। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য কমলো তা-ও সদকা করতে হবে।-بدائع ৪/২০২, الدر المختار ৬/৩২০-৩২১


১১। উত্তর : কোন্  কোন্ পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া , দুম্বা তথা মেষ  জাতীয় চতুস্পদ হালাল গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বনগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। قاضيخان ৩/৩৪৮, بدائع ৪/২০৫


১২। প্রশ্ন: নর ও মাদী পশুর কুরবানীর হুকুম কি? 

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদী দুটোই কুরবানী করা যায়। -قاضيخان ৩/৩৪৮,  بدائع ৪/২০৫


১৩। প্রশ্ন: কুরবানীর পশুর বয়সসীমা কত হতে হবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━ 

উত্তর :  উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছর হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা (মেষ)কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে  এক বছরের মতো মনে হয়, তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না।قاضيخان ৩/৩৪৮, بدائع ৪/২০৫-২০৬


১৪। প্রশ্ন: এক প্রাণীতে কতজন শরীক  হতে পারে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর:  একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। 

আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। - صحيح مسلم ১৩১৮, مؤطا الامام مالك ১/৩১৯, قاضيخان ৩/৩৪৯, بدائع ৪/২০৭-২০৮


১৫। প্রশ্ন: সাত শরীকের কুরবানীর মাসআলা কি?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :. সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। - بدائع ৪/২০৭

  উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। -مسلم ১৩১৮, بدائع  ৪/২০৭


১৬। প্রশ্ন: কোনো শরীকের বদ নিয়ত থাকলে কী হবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : . যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে।

 بدائع ৪/২০৮, قاضيخان ৩/৩৪৯


১৭। প্রশ্ন: কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ রাখা যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।-طحطاوى على الدر ৪/১৬৬, رد المحتار  ৬/৩৬২

#. শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।


# :  যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট এককভাবে কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে।-قاضيخان ৩/৩৫০-৩৫১, بدائع ৪/২১০


 ১৮। প্রশ্ন: কুরবানীর উত্তম পশু কীরূপ হতে হবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  কুরবানীর পশু মোটা তাজা হওয়া উত্তম।-مسند احمد৬/১৩৬, عالمغيرية ৫/৩০০, بدائع ৪/২২৩


১৯। প্রশ্ন: হাটতে পারেনা এমন পশু দ্বারা কুরবানী যায়েজ কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়। ترمزى ১/২৭৫, سنن ابى داؤد ৩৮৭, بدائع ৪/২১৪, رد المحتار৬/৩২৩,عالمغيرية ৫/২৯৭


২০। প্রশ্ন: রোগা ও দুর্বল পশু কুরবানী করা যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। ترمزى ১/২৭৫,عالمغيرية ৫/২৯৭, بدائع ৪/২১৪


২১। প্রশ্ন: দাঁতবিহীন পশু দ্বারা কুরবানী বৈধ কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -بدائع৪/২১৫,عالمغيرية ৫/২৯৮


 22। প্রশ্ন: শিংবিহীন পশু দ্বারা কুরবানীর হুকুম কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে,  ফলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। -ترمزى ১/২৭৬, سنن ابى داؤد ৩৮৮, بدائع ৪/২১৬

২৩। প্রশ্ন: অন্ধ পশু দ্বারা  কুরবানীর হুকুম কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -جامع ترمزى ১/২৭৫, قاضيخان ৩/৩৫২


২৪। প্রশ্ন: কান বা লেজ কাটা পশু দ্বারা কুরবানীর হুকুম কি? 

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে, তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -ترمزى১/২৭৫,  مسند احمد১/৬১০, قاضيخان ৩/৩৫২,عالمغيرية ৫/২৯৭-২৯৮

২৫। প্রশ্ন: নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে কী করবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━


 উত্তর : কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। -بيهقى ৫/২৪৪, بدائع ৪/১৯৯, قاضيخان ৩/৩৪৭


২৬। প্রশ্ন: গর্ভবতী (গাভিন)পশু দ্বারা কুরবানীর হুকুম

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবেহের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবেহ করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ।  قاضيخان ৩/৩৫০


২৭। প্রশ্ন: পশু কেনার পর ত্রুটি দেখা দিলে কী করবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

 উত্তর : কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। -خلاصة; ৪/৩১৯, بدائع: ৪/২১৬ رد المحتار: ৬/৩২৫


২৮।প্রশ্ন :পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা মানা যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  যদি পশু বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে।


২৯। প্রশ্ন: বন্ধ্যা পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর  : বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। - رد المحتار৬/৩২৫


৩০। প্রশ্ন: নিজের কুরবানীর পশু নিজে জবেহ করা কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর  :. কুরবানীর পশু নিজে জবেহ করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবেহ করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবেহের স্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। مسند احمد ২২৬৫৭, بدائع ৪/২২২-২২৩, عالمغيرية ৫/৩০০


৩১। প্রশ্ন :জবেহের কাজে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে কী করবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর  :  অনেক সময় জবেহকারীর জবেহ সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবেহ সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবেহের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -رد المحتار ৬/৩৩৪


৩২। প্রশ্ন: কুরবানীর পশু থেকে জবেহের আগে উপকৃত হওয়া যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি।সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।-مسند احمد ২/১৪৬, نيل الاوطار ৩/১৭২, قاضيخان ৩/৩৫৪,عالمغيرية ৫/৩০০


৩৩। প্রশ্ন: কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে কিনা?

  ━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। -احمد ২/১৪৬, اعلاء السنن১৭/২৭৭,رد المحتار ৬/৩২৯, قاضيخان ৩/৩৫৪, ৫/৩০১


৩৪। প্রশ্ন: কোনো শরীক মারা গেলে কী করতে হবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর  :  কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবেহের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -بدائع ৪/২০৯, در المختار৬/৩২৬, قاضيخان ৩/৩৫১


৩৫। প্রশ্ন: কুরবানীর পশুর বাচ্চা হলে কী করবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবেহ না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবেহ করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।

-قاضيان ৩/৩৪৯,عالمغيرية ৫/৩০১, رد المحتار ৬/৩২৩


৩৬। প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করার  হুকুম কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর  : মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -مسند احمد ১/১০৭, হাদীস নং ৮৪৫, رد المحتار ৬/৩২৬, قاضيخان ৩/৩৫২


৩৭। প্রশ্ন: কুরবানীর গোশত ফ্রিজিং করে রাখা যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :. কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয আছে।-بدائع ৪/২২৪, مسلم ২/১৫৯, مؤطا مالك ১/৩১৮, اعلاء السنن ১৭/২৭০


৩৮। প্রশ্ন: কুরবানীর গোশত বণ্টনের নিয়ম কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।-الدر المختار ৬/৩১৭, قاضيخان ৩/৩৫১


#  কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। بدائع ৪/২২৪, علمغيرية ৫/৩০০


৩৯। প্রশ্ন: গোশত, চর্বি বিক্রি করা যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : বর্তমানে কিছু লোক এসব বিক্রি করে থাকে। কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। তবে কোন গরীব লোক উহা দান হিসাবে পাওয়ার পর তা বিক্রি করলে যায়েজ হবে।اعلاء السنن ১৭/২৫৯, بدائع  ৪/২২৫, قاضيخان ৩/৩৫৪,عالمغيرية ৫/৩০১


৪০। প্রশ্ন: জবেহকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর  : জবেহকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।


৪১। প্রশ্ন:জবেহের অস্ত্র কীরূপ হতে হবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর  : ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম ভোতা অস্ত্র দ্বারা মাকরূহ।-بدائع ৪/২২৩


৪২। প্রশ্ন: পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর  : জবাইয়ের পর পশু

নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। -بدائع ৪/২২৩


৪৩। প্রশ্ন: অন্য পশুর সামনে জবেহ  করা ঠিক কিনা?

 ━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবেহ করবে না। জবেহের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট দেওয়া ঠিক না।


৪৪। প্রশ্ন: কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।

اعلاء السنن ৭/২৮৩,الهندية ৫/৩০০


৪৫। প্রশ্ন: অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে কী করবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা উত্তম।


৪৬। প্রশ্ন: কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে কী করতে হবে? 

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর: কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব  হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।-بدائع ৪/২১৬, الخلاصة ৪/৩১৯


৪৭। প্রশ্ন: পাগল পশুর কুরবানীর হুকুম কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -النهاية فى غريب الحديث ১/২৩০, بدائع ৪/২১৬


৪৮। প্রশ্ন : নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া যায় কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :. কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব سورة الحج :২৮, مسلم ২২/১৫৯,مسلم  হাদীস নং ৯০৭৮, بدائع ৪/২২৪


৪৯। প্রশ্ন: ঋণ করে কুরবানী করতে পারবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও ঋণের টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।


৫০। প্রশ্ন: হাজীদের জন্য ঈদুল আযহার কুরবানীর হুকুম কী? 

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর  : যে সকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার কুরবানী করা জরুরি হবে। -الهنديه ৫/২৯৩, الهنديةي৬/৩১৫, بدائع ৪/১৯৫, امداد الفتوى ২/১৬৬


৫১। প্রশ্ন : নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। -سنن ابى داود২/২৯, ترمزى ১/২৭৫, اعلاء السنن ১৭/২৬৮, مشكوة ৩/৩০৯


৫২। প্রশ্ন: কোন্ দিন কুরবানী করা উত্তম?

━━━━━━━━━━━━━━━━ 

উত্তর:  :  তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। رد المحتار ৬/৩১৬


৫৩। প্রশ্ন: খাসীকৃত ছাগল ও বলদ গরু দ্বারা কুরবানী কর যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

 :. খাসিকৃত ছাগল ও বলদ দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ। فتح القدير ৮/৪৯৮, مجمع الانهر ৪/২২৪, اعلاء السنن ১৭/৪৫৩


৫৪। প্রশ্ন :জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।


৫৫। প্রশ্ন: বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্র করার বিধান কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তম :  বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।


৫৬। প্রশ্ন: কুরবানীদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবেহ করবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবেহ করা যাবে। -الدر المختار ৬/৩১৮


৫৭। প্রশ্ন: কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। الدر المختار ৫/৩০১


৫৮। প্রশ্ন: কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত করার কী হুকুম?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। الهندية ৫/৩০১, قاضيخان ৩/৩৫৪


৫৯। প্রশ্ন: কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম হলে কুরবানী করতে হবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। بدائع ৪/১৯৬, خانية ৩/৩৪৬,الدر المختار ৬/৩১৯


৬০। প্রশ্ন: কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক হওয়া

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :এক কুরবানীর পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।بدائع  ৪/২০৯, رد المحتار ৬/৩২৬, المبسوط للسرخسى ৪/১৪৪, العناية ৮/৪৩৫-৩৪৬ المغنى ৫/৪৫৯


৬১। প্রশ্ন: কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা কী?

 ━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। جامع ترمزى ১/১২০, الدر المختار ২/১৭৬, البحر الرائق ২/১৬৩


৬২। প্রশ্ন: কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি করা যাবে কিনা?

━━━━━━━━━━━━━━━━ 

উত্তর : . কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না।  بدائع ৪/২২৫, قاضيخان৩/৩৫৪, 


৬৩। প্রশ্ন: কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো যাবে?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর :  কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে।احكام القران للجساس ৩/২৩৭, بدائع ৪/২২৪, البحر الرائق ৮/৩২৬, 


৬৪। প্রশ্ন: জবেহকারীকে পারিশ্রমিক দেয়ার বিধান কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর : কুরবানী পশু জবেহ করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -كفاية المفتى ৮/২৬৫

৬৫। প্রশ্ন:  কুরবানীর সময় মোরগ কুরবানী করার বিধান কী?

━━━━━━━━━━━━━━━━

উত্তর:. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবেহ করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। خلاصة ৪/৩১৪, البزازية ৬/২৯০,  ৬/৩১৩,الهندية ৫/২০০ 

(c)


ইয়া আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে আপনারা সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে কুরবানী করার তাওফিক দান করুন আমিন।

Thursday, August 27, 2020

ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (عليه السلام) এর গুরুত্ব /ফজিলত ||

 ⏺ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (عليه السلام) এঁর গুরুত্ব/ফজিলত


★১. রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন "ইয়া আল্লাহ আঁমি হাসান-হুসাইনকে ভালোবাসি আঁপনিও তাঁদেরকে ভালোবাসুন এবং যে তাঁদেরকে ভালোবাসে আঁপনি তাঁদেরকেও ভালোবাসুন।"

          *****দলিল*****

*(ক.) সহিহ মুসলিম হা/নং ৬০৩৯ ই:ফা: 

*(খ.) তিরমিজি শরীফ,ষষ্ঠ খণ্ড,হা/নং ৩৭৬৯/২য় খন্ড, পৃঃ ২১৭,হাদিস নং ৩৭৬৯


★২. হুযুর (ﷺ) এঁর বাণী-"যে এই দু’জনকেই ভালবাসলাে,মূলত সে আঁমাকেই ভালবাসলাে এবং যে এই দু’জনের সাথে শত্রুতা পােষণ করলাে, মূলত সে আঁমার সাথেই শত্রুতা পােষণ করলাে।”

[ইবনে মাজাহ্,কিতাবুস সুন্নাহ্,বাবু ফি ফাযায়ীলে আসহাবে রাসূলুল্লাহ্,১/৯৬, হাদীস-১৪৩]


★৩. আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমাম হাসান (رضي الله عنه) কে বলেছিলেন: হে আল্লাহ,আমি তাকে ভালবাসি।তুমিও তাকে ভালবাস এবং তাকে ভালোবাসো যে তাকে ভালবাসে (হাসান)।

[সহীহ মুসলিম,হা/নং ৫৯৫১-৫৯৫৩]


★৪. ইয়ালা ইবনে মুরয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: হুসাইন আঁমার আর আঁমি হুসাইনের।হুসাইন কে যে ভালবাসবে আল্লাহ্ তাঁকে ভালবাসবেন হুসাইন তো হল আঁমার সন্তান-সন্ততিদের একজন। [তিরমিজি শরীফ,ষষ্ঠ খন্ড,হা/নং ৩৭৭৫]

নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,(আহলে বাইত) হুসাইন আঁমি হতে আর আঁমি হুসাইন হতে।যে হুসাইনকে ভালোবাসবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবে।হুসাইন (রাঃ) বংশসমূহ হতে একটি বংশ।

[তিরমিযি শরীফ,২য় খন্ড,পৃষ্ঠা: ২১৮, হাদিস: ৩৭৭৫]


🌺হাদিস শরীফে এভাবেও ইরশাদ হয়েছে 

৩৭৭৫।


حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَرَفَةَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ رَاشِدٍ، عَنْ يَعْلَى بْنِ مُرَّةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ حُسَيْنٌ مِنِّي وَأَنَا مِنْ حُسَيْنٍ أَحَبَّ اللَّهُ مَنْ أَحَبَّ حُسَيْنًا حُسَيْنٌ سِبْطٌ مِنَ الأَسْبَاطِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ وَإِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ وَقَدْ رَوَاهُ غَيْرُ وَاحِدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ ‏.‏


ইয়া‘লা ইবনু মুর্‌রাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হুসাইন আঁমার হতে এবং আঁমি হুসাইন হতে।যে লোক হুসাইনকে মহাব্বত করে,আল্লাহ্‌ তাকে মুহাব্বাত করেন। নাতিগণের মাঝে একজন হল হুসাইন।

[হাসান; ইবনু মাজাহ (১৪৪)]


★আবু 'ঈসা বলেন,এ হাদীসটি হাসান। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উসমান ইবনু খুসাইমের সূত্রেই জেনেছি।একাধিক বর্ণনাকারী এটি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উসমান ইবনু খুসাইম হতে বর্ণনা করেছেন।


✌“হুসাইন আঁমার থেকে এবং আঁমি হুসাইন থেকে।যে ব্যক্তি হুসাইন (আঃ) কে ভালোবাসে,আল্লাহ্ তা'য়ালা তাঁকে ভালোবাসেন।হুসাইন (আঃ) আমার বংশের একজন।”

[সুনানে ইবনে মাজাহ,১ম খন্ড,হা:নং ১৪৪]


✊ইয়ালা ইবনে মুররাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন,একদা তাঁরা নবী (ﷺ) এর সংগে এক ভোজ সভায় যোগদান করেন সেখানে তাঁদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। এ সময় হুসাইন (রাঃ) রাস্তার ধারে খেলা ধুলায় মশগুল ছিলেন।রাবী বলেন: নবী ﷺ লোকদের সামনে এগিয়ে গেলেন এবং তাঁর দু'হাত বিস্তার করলেন।তখন ছেলেটি (হুসাইন) এদিক ওদিক পালাতে লাগলো এবং নবী (ﷺ) ও তাঁর সাথে কৌতুক করতে করতে তাঁকে ধরে ফেলেন।এরপর তিনি তাঁর এক হাত ছেলেটির চোয়ালের নিচে রাখলেন এবং অপর হাত তাঁর মাথায় রাখলেন এবং এবং চুমু খেলেন।আর বললেন: হুসাইন আমার থেকে এবং আমি হুসাইন থেকে।যে ব্যক্তি হুসাইন (রাঃ) কে ভালোবাসে,আল্লাহ্ তা'য়ালা তাঁকে ভালোবাসেন।হুসাইন (রাঃ) আমার বংশের একজন।

[সুনানে ইবনে মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস নং ১৪৪,( ইসঃ ফাঃ)]


⏩ইয়ালী বিন মুররাহ্ বলেন,“একবার মহানবী (ﷺ) আমাদেরকে দাওয়াত করলেন এবং আমরা ঐ দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করার জন্য রওয়ানা হলাম।চলার পথে আমরা একটি ময়দানে এসে উপস্থিত হলাম।সেখানে শিশুরা খেলাধুলা করছিল আর তাদের মধ্যে ইমাম হোসাইনও ছিল।শিশুরা আমাদেরকে দেখা মাত্রই আমরা সেখান থেকে না যাওয়া পর্যন্ত খেলাধুলা বন্ধ করে দিল। মহানবী আমাদের সামনাসামনি হাঁটছিলেন।তিনি যখন হোসাইনকে ঐ শিশুদের মাঝে দেখতে পেলেন তখন তাকে দেখে চুমো না দিয়ে থাকতে পারলেন না।তাঁর সাথে লোকজন থাকা সত্ত্বেও সবাইকে দাঁড় করিয়ে রেখে হোসাইনের দিকে গেলেন এবং তাকে বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য হাত বাড়ালেন। কিন্তু হোসাইন এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে লাগল।আর এতে মহানবী হাসলেন। অবশেষে তিনি হোসাইনকে ধরে এক হাত তাঁর চিবুকে ও অপর হাত তাঁর মাথায় রাখলেন।এরপর তিনি নিজের গাল হোসাইনের গালের সাথে মিশিয়ে বললেন,


حسین منی و انا من حسین، احبّ الله من احبّ حسینا. الحسین سبط من الاسباط


“হোসাইন আমা হতে আমিও হোসাইন হতে।যে হোসাইনকে ভালবাসবে আল্লাহ্ও তাকে ভালবাসবেন।হোসাইন সৎ কাজের ক্ষেত্রে যেন নিজেই একটি জাতি।”

         *****দলিল******

*(ক.) শেখ সুলায়মান আল-হানাফী আল-কুন্দুযী প্রণীত ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ্,পৃঃ ২৬৪

*(খ.) আল-খাওয়ারিয্মী প্রণীত মাকতালুল হোসাইন,১ম খণ্ড,পৃঃ ১৪৬

*(গ.) ইবনে আসীর প্রণীত আন্-নিহায়াহ্ ফী গারীবিল হাদীস,২য় খণ্ড,পৃঃ ২৩৪।


🌀মহানবী ﷺ থেকে বর্ণিত সিব্ত্ (سبط) শব্দের একাধিক অর্থ করা যেতে পারে:


*১. হোসাইন সৎ কাজের ক্ষেত্রে যেন নিজেই একটি জাতি অর্থাৎ একটি গোত্র বা জাতির সমান।

[ইবনে আসীর প্রণীত আন্-নিহায়াহ্ ফী গারীবিল হাদীস,২য় খণ্ড,পৃঃ ২৩৪]


*২. সিব্ত্ শব্দের অপর অর্থ বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় পল্লবিত বৃক্ষ।আর হোসাইনকে সিব্ত্ বলার অর্থ হচ্ছে,মহানবীর বংশধরগণ হোসাইনের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করবে।


*৩. এ হাদীসটির অর্থ এও হতে পারে,উচ্চ সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে একটি জাতি যেমন সুউচ্চ আসনের অধিকারী এক্ষেত্রে হোসাইনেরও ঠিক এমনি আসন রয়েছে।


*৪. এ হাদীসের অর্থ এমনও হতে পারে,একটি জাতি যেমন পুণ্য ও প্রতিদান পেয়ে থাকে ঠিক তেমনিভাবে ইমাম হোসাইনও মহান আল্লাহর কাছে পুণ্য ও প্রতিদান পাবেন।

[পারতাভী আয-আযামাতে হোসাইন,পৃঃ ৩৩]


⏺ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (عليه السلام) এঁর গুরুত্ব/ফজিলত-২য় পর্ব 


  ⏺হাসান ও হোসাইনের বংশধারা⏺


★৫. রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-


إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ جَعَلَ ذُرِّيَّةَ كُلِّ نَبِيٍّ فِي صُلْبِهِ، وَإِنَّ اللهَ تَعَالَى جَعَلَ ذُرِّيَّتِي فِي صُلْبِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ


অর্থাৎঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সকল নবীর বংশধর তাঁদের ঔরশজাত পুত্র সন্তানের মাধ্যমে বিদ্যমান রেখেছিলেন আর আঁমার বংশধারা হযরত আলী ইবনে আবী তালেব রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র ঔরশজাত সন্তানের মাধ্যমে জারী রাখবেন।”

[সূত্রঃ ইমাম তাবারানি,আল-মু’জামুল কবীর, মাকতাবাতু ইবনে তাইমিয়া,কায়রো,২য় সংস্করণ,৩য় খন্ড,পৃঃ ৪৩,হা/২৬৩০]


⏩অন্য হাদিসে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-


كُلُّ بَنِي أُنْثَى فَإِنَّ عَصَبَتَهُمْ لِأَبِيهِمْ، مَا خَلَا وَلَدَ فَاطِمَةَ فَإِنِّي أَنَا عَصَبَتَهُمْ وَأَنَا أَبُوهُمْ

অর্থাৎঃ “প্রত্যেক সন্তানের বংশ জারী হয় প্রত্যেকের পিতার দিক থেকে; তবে হযরত মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা’র সন্তানগণ এর ব্যতিক্রম; কেননা আঁমিই (নবী করীম) তাঁদের পিতৃবংশীয় নিকট আত্মীয় এবং আমিই তাঁদের পিতা (পূর্বপুরুষ)।”

[সূত্রঃ প্রাগুক্ত,৩য় খন্ড,পৃঃ ৪৪,হা/২৬৩১]


🤞এভাবেও বলা যেতে পারে


أخرج الطبراني عن عمر رضي الله عنه قال:قال رسول اللهﷺ كل بني أنثى فإن عصبتهم لأبيهم، ما خلاولد فاطمة فإنی عصبتهم، فأناأبوهم; 


ইমাম তাবরানী হযরত ওমর (رضي الله عنه) এ সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক নারীর ঔরসজাত সন্তানদের বংশ পরিচয় নির্ণয় হয় তাদের পিতার দিক থেকে।শুধু (আঁমার কন্যা) ফাতেমার (رضي الله عنه)'র সন্তানগণ ব্যতিত। কেননা,আঁমিই তাদের ‘আসাবা’ এবং আঁমিই তাদের পিতার স্থলাভিষিক্ত (অভিভাবক হিসেবে)।"

       *******দলিল*******

*(ক.) আল-মু'জামুল কবীরঃ ৩:৪৪,২৬৩১ 

*(খ.);মাজমাউয যাওয়ায়েদ,ইমাম হাইছামীঃ ৪:২২৪


⏩আরেক বর্ণনায় রয়েছে,রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-


كُلُّ بَنِي أُمٍّ يَنْتَمُونَ إِلَى عَصَبَةٍ إِلَّا وَلَدَ فَاطِمَةَ، فَأَنَا وَلِيُّهُمْ وَأَنَا عَصَبَتُهُمْ

অর্থাৎঃ “প্রত্যেক মায়ের সন্তানদের বংশ নিসবত হয়, তাদের পিতৃকুলের দিকে; তবে হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা’র সন্তানগণ ছাড়া।কেননা আঁমিই তাঁদের অভিভাবক এবং আঁমিই তাঁদের পিতৃবংশীয় নিকট আত্মীয়।”

[সূত্রঃ প্রাগুক্ত, হাদিস নং ২৬৩২]


🤞হাদিস শরীফে এভাবেও এবারত এসেছে

 

أخرج الطبراني عن فاطمة الزهراء رضی الله عنها قالت: قال رسول اللهﷺ كل بني أم ينتمون إلى عصبتهم، إلا ولدی  فاطمة، فأنا وليهما وعصبتهما ؛

ইমাম তাবরানী হযরত ফাতেমাতুজ জাহরা (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক মায়ের সন্তানেরই বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হয় তাদের পিতার দিক দিয়ে।কিন্তু ফাতেমার সন্তানদের ব্যতিত।কেননা,আঁমিই তাদের অভিভাবক এবং তাদের বংশীয় উর্ধতন পুরুষ। তাই আঁমার দিকেই তাদের বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হবে।"

       *******দলিল*******

*(ক.)আল মু’জামুল কাবীরঃ ৩:৪৪ (২৬৩২)

*(খ.) আবু ইয়াআলাঃ ৬:১৬১ (৬৭০৯)

*(গ.) তারীখু বাগদাদ আল খতীব আল বাগদাদীঃ ১১:২৮৫

*(ঘ.) আল মাকাসিদুল হাসানা,ইমাম সাখাভীঃ পৃষ্ঠা ৩৮১


★৬. প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মুহাম্মদ বিন ইসমাইল সানআনি আলাইহির রাহমাহ বলেন-


فأولاد علي من فاطمة رضي الله عنها أولاده – صلى الله عليه وسلم – حقيقة خاصة من الله له وقد عدها أهل الفقه والحديث من خواصه – صلى الله عليه وسلم – وهم أولاد علي أيضًا فإنهم عصبتان حينئذ وهذه فضيلة لعلي وفاطمة لا تغادر قدرها

অর্থাৎঃ “হযরত ফাতেমা (রাঃ) এঁর সূত্রে মাওলা আলী (রাঃ) এঁর সন্তানগণ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর প্রকৃত আওলাদ,যা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর জন্য খাস।এটাকে ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈশিষ্ঠ্য হিসেবে গণ্য করেছেন।আর তাঁরা হযরত আলী (রাঃ)’রও সন্তান।কেননা তাঁরা রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মাওলা আলী (রাঃ) উভয়ের উত্তর পুরুষ। এটি হল হযরত মা ফাতেমা (রাঃ) ও মাওলা আলী (রাঃ) এঁর মর্যাদা,যা তাঁদের জন্যই নির্ধারিত।”

[সূত্রঃ মুহাম্মদ বিন ইসমাইল সানআনি, আত-তায়সীর শরহুল জামিইস সগীর,মাকতাবাতু দারিস সালাম, রিয়াদ,১ম সংস্করণ,১৪৩২ হিঃ,৩য় খন্ড,পৃঃ ২৯৩,হা/নং ১৭১১]


★৭. আরেক বর্ণনায় রয়েছে 


أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ كل سبب ونسب منقطع يوم القيامة، إلا سببی  ونسبی۔

ইমাম তাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)র সূত্রে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক উপায় ও বংশীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে,শুধু আমার উপায় (উসিলা) ও বংশীয় সম্পর্ক ব্যতিত”।

     *******দলিল*******

*১.মাজমাউয যাওয়ায়েদ,ইমাম হাইছামীঃ ৯:১৭৩

*২.আল মু'জামুল কাবীর,ইমাম তাবরানীঃ ২:২৭ (৩৩) (মসুরা ইবনে মাখমা এর সূত্রে)। 

*৩. আল মু'জামুল আওসাতঃ ৬:২৮২ (৫৬০২)। 

*৪. আস সুনানুল বায়হাক্বীঃ ৭:১০২ (২৩২৯৪)/ ১৮৫ (১৩৬৬০)।


★৮. অপর বর্ণনায় রয়েছে 


أخرج ابن عساكر في تاريخه عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ كل نسب وصهر منقطع يوم  القيامة، إلا نسبی وصهری؛

ইবনে আসাকির তার ‘তারীখ’ এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা কিয়ামতের দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে,শুধু আমার বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা ব্যতিত। অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন আমার কোন আত্মীয়তাই নষ্ট হবেনা।"

 *******দলিল*******

*১.আল মু'জামুল কাবীর,তাবরানীঃ ৩:৪৫ (২৬৩৪)। 

*২. আল ফাওয়ায়েদ,তাম্মাম রাজী, ২:৩৩৩ (১৬০৩)। 

*৩. আস সুনানুল কুবরাঃ ৭:১০২ (১৩৩৯৫/১৩৩৯৬) মােসাওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) এর হাদিস থেকে।


★৯. অন্য বর্ননাতে এসেছে।প্রিয় নবীজি থেকে:  হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ) কে বলতে শুনেছি: কিয়ামত দিবসে আঁমার বংশধারা ব্যতীত সকল বংশীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।প্রত্যেক সন্তান তার পিতার দিকে সম্পর্কিত হবে কিন্তু ফাতিমার সন্তানেরা ছাড়া।কেননা,তাদের পিতাও আঁমি আর তাদের বংশধারাও আমি। 

[হায়ছমি,মাজমাউজ জাওয়ায়েদঃ ৪:২২৪,তাররাণি, আল মুজামুল কবিরঃ ৩:৪৪,হা/নং ২৬৩১।শাওকানি, নাইলুল আওতার, ৬:১৩৯]


★১০. হযরত জাবের (রাঃ) আনাস বিন মালেককে বললেন,“একদিন রাসুলে খোদা ﷺ কিছু সাহাবাদের নিয়ে মসজিদে উপবিষ্ট ছিলেন।তখন রাসুলে খোদা ﷺ আমাকে বললেনঃ হে জাবের যাও হাসান ও হোসাইনকে আঁমার নিকট নিয়ে আস।জাবের বললেনঃ পয়গাম্বার ﷺ ঐ দু’জনকে খুব ভালবাসেন, আমিও গিয়েছিলাম ঐ দু’জনকে আনতে। পথিমধ্যে কখনও একজনকে কখনও অন্যজনকে কোলে করে পয়গাম্বার ﷺ এঁর নিকট পৌঁছালাম।পয়গাম্বার ﷺ ওদের দু’জনের প্রতি আমার ভালবাসা ও মমতা দেখতে পেয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন হে জাবের! ঐ দু’জনকে তুমি ভালবাস কি?


*আমি বললামঃ আমার বাবা ও মা আঁপনার জন্য উৎসর্গ হোক।কেন ওদেরকে ভালবাসব না? আঁপনার নিকট তাঁদের মর্যাদা সম্পর্কে আমি অবগত।অতঃপর পয়গাম্বার ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (আঃ) এঁর ফজিলত ও মহত্ত্ব সম্পর্কে বক্তব্য দেন এবং পরিশেষে ইমাম মেহেদী (আঃ) এঁর পবিত্র আগমন ইমাম হোসাইন (আঃ) এর বংশ থেকে ঘটবে তা উল্লেখ করেন।


রাসুলে খোদা ﷺ তাঁর অব্যাহত বক্তৃতায় বলেনঃ তাঁদের ফজিলত সম্পর্কে কি তোমাকে বলবো? আমি বললামঃ হ্যাঁ,আমার পিতা ও মাতা আঁপনার জন্য উৎসর্গ হোক।পয়গাম্বার ﷺ বললেনঃ মহান আল্লাহ তায়ালা আঁমাকে সৃষ্টি করতে যখন মনস্থ করলেন; আঁমাকে একটি শুভ্র রঙ্গের শুক্রের আকৃতিতে সৃষ্টি করলেন এবং আঁমার আদি পিতা আদম (আঃ) এর অস্থির মধ্য তার প্রবেশ ঘটালেন; এমনিভাবে আঁমাকে পবিত্র অস্থি থেকে পবিত্র গর্ভে স্থানান্তরিত করতেন, তার ধারাবাহিকতা হিসেবে হযরত নুহ,হযরত ইব্রাহীম ও হযরত আব্দুল মোতালেব এর নিকট স্থানান্তরিত হল।কখনও অজ্ঞতার কলুষতা আমার নিকট পৌঁছাইনি সর্বশেষ ঐ শ্বেত শুক্র দুইভাগে বিভক্ত হলো।এক ভাগ আঁমার বাবা আব্দুল্লাহ ও অন্য ভাগ আঁমার চাচা আবু তালেবর অভ্যন্তরে প্রবেশ ঘটলো।আব্দুল্লাহ ঐ পবিত্র ও নুরানী শুক্র থেকে আঁমাকে জন্ম দিয়েছেন।আর আঁমি হলাম আঁমার খোদার সর্বশেষ প্রেরিত রাসুল, আর নবুওয়াত আঁমার ঊপর সমাপ্ত হয়েছে।আর আবু তালেব থেকে আলীর জন্ম হয়।যিঁনি সর্বশেষ পয়গাম্বরের ওসী বা ঊত্তরসূরী।আঁমার ও আলীর শুক্রের সংমিশ্রনের মাধ্যমে দু’জন সুন্দর ফুটফুটে সন্তান হাসান ও হোসাইনের আগমন ঘটে। যারা আল্লহর পয়গাম্বারের সর্বশেষ বংশধর আর আল্লাহ তায়ালা আঁমার বংশধর ঐ দু’জন থেকে অব্যাহত রেখেছে।


*অতঃপর পয়গাম্বার ﷺ হোসাইন (আঃ) এর দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ আঁমার সর্বশেষ উত্তরসূরী যিনি পূর্ণ বিজয়ের মাধ্যমে কাফেরদের সকল শহর জয় করবেন এবং অন্যায় ও অত্যাচারে ভরপূর জমিনকে ন্যায় ও ইনসাফে পরিপূর্ণ করবেন।তিনি হবেন তাঁর বংশ হতে।আঁমার এই দু’সন্তান হাসানাইন পাক পবিত্র ও বেহেস্তের যুবকদের সর্দার। সৌভাগ্যবান তারাই যারা এ দুজন ও তাঁদের পিতামাতাদেরকে ভালবাসবে। আর দুর্ভাগ্য তাদের যারা এদুজন ও তাদের পিতা মাতাদের সাথে শত্রুতা করবে।

[সুত্রঃ ভিজেগীহয়ে পয়গাম্বার আযম (ﷺ) আল খাসায়েসুন নাবুওয়াহ) অনুবাদঃ মোঃ শহীদুল হক]


★১১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ


أَنَا وَ عَلِيٌّ مِنْ شَجَرَةٍ وَاحِدَةٍ، وَ النَّاسُ مِنْ أشْجَارٍ شَتَّي.


আঁমি আর আলী (رضي الله عنه) একই বৃক্ষ থেকে,আর অন্যেরা (মানুষ) বিভিন্ন বৃক্ষ থেকে।

         *******দলিল*******

*(ক.) আল মানাকিব-ইবনে মাগাযেলী:৪০০/৫৩

*(খ.) কানযুল উম্মালঃ ১১:৬০৮/৩২৯৪৩

*(গ.) আল ফেরদৌসঃ ১:৪৪/১০৯ 

*(ঘ.) মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ৯:১০০

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ


لِكُلِّ نَبِيٍّ وَصِيٌّ وَ وَارِثٌ، وَ إَِنَّ عَلِيّاً وَصِيِّي وَ وَارِثِي.


প্রত্যেক নবীর ওয়াসী এবং উত্তরসূরি থাকে।আর আঁমার ওয়াসী এবং উত্তরসূরি হলো আলী (رضي الله عنه)।

        *******দলিল*******

*(ক.) আর রিয়াদুন নাদরাহঃ ৩:১৩৮ 

*(খ.) আল ফেরদৌসঃ ৩:৩৩৬/৫০০৯ 

*(গ.) ইমাম আলী (رضي الله عنه)-ইবনে আসাকিরঃ ৩: ৫/১০৩০-১০৩১

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত ফাতিমাকে বলেনঃ


وَصِيِّي خَيْرُ الْأَوْصِيَاءِ، وَ أَحَبُّهُمْ إِلَي اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَ هُوَ بَعْلُكَ.


ওয়াসিগণের মধ্যে আঁমার ওয়াসীই সর্বোত্তম এবং আল্লাহর নিকটে তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়তম।আর সে হলো তোমার স্বামী।

            *****দলিল******

*(ক.) মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ৯:১৬৫ 

*(খ.) যাখায়িরুল উকবাঃ ১৩৬


★১২. একবার নবীজী (ﷺ) ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের পিতা হযরত আলী (رضي الله عنه) কে  বললেন,হে আলী (رضي الله عنه), তোমার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট আছে,যা অন্য কারো মধ্যে নেই, এমনকি আঁমার মধ্যেও নেই।হযরত আলী (رضي الله عنه) বললেন,হে আল্লার রাসুল (ﷺ), এ আঁপনি কি বলছেন! এও কি সম্ভব,আঁপনি হলেন,সাইয়্যেদুল মুরসালীন। “নবীজী (ﷺ) মৃদু হেসে তখন বললেন, তোমার বৈশিষ্টগুলি হচ্ছে যেমন তোমার জন্ম পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তরে হয়েছে,আঁমার হয়নি।তোমার শ্বশুর সাইয়্যেদুল মুরসালীন,আঁমার নয়।তোমার শ্বাশুড়ী হযরত খাদীজাতুল কোবরা সিদ্দীকা,আঁমার নয়।তোমার স্ত্রী হলেন জান্নাতের সম্রাজ্ঞী,আঁমার নয়।তোমার দুই পুত্র,ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন জান্নাতের যুবকদের সর্দার,আঁমার নয়। তাই তুমি কত ভাগ্যবান ও মর্যাদাবান। তবে তোমরা সবাই আঁমার হতে আর আমি তোমাদের থেকে।“

         *****দলিল******

*(ক.) নবীর (ﷺ) বংশধর (আঞ্জুমানে কাদেরীয়া, চট্রগ্রাম),পৃ-২২।

*(খ.) আরজাহুল মাতালেবঃ পৃ-৪১২ 

*(গ.) ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাতঃ পৃ-৪৬ 

*(ঘ.) শাওয়াহেদুত তানযিলঃ ১ম খন্ড,পৃঃ ৪১৪

*(ঙ.) নুরুল আবসারঃ পৃ-১০২

*(চ.) আর রিয়াদুন নাদরাহঃ ৩য় খন্ড,পৃঃ ১৭২।


★১৩. হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) সর্বোত্তম বংশের অধিকারী: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: হে লোকেরা আঁমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে অবহিত করবো না যারা নানা-নানীর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আঁমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না, যারা চাচা ও ফুফুর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আঁমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না,যারা পিতা-মাতার দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? তারা হলো,হাসান ও হোসাইন। তাদের নানা আল্লাহর রাসূল,তাদের নানী খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ।তাদের মাতা আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতিমা।তাদের পিতা আলী ইবনু আবি তালিব।তাদের মামা আল্লাহর রাসূলের পুত্র কাসিম এবং তাদের খালা রাসূলুল্লাহ’র কন্যাগণ যয়নব,রোকেয়া ও উম্মে কুলসুম।তাদের নানা,পিতা,মাতা,চাচা,ফুফু,মামা ও খালা সকলেই জান্নাতে থাকবে এবং এরা দুই জনও থাকবে জান্নাতে। 

[তাবরাণি,আল মুজামুল কবিরঃ ৩:৬৬,হা/ নং ২৬৮২,ইবনে আসাকির,তারিখে দামিশ্কিল কবিরঃ ১৩:২২৯,হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদঃ ৯:১৮৪]


★১৪. ড: আল্লামা ইকবাল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন,‘‘সিরের ইবরাহীম ইসমাঈল বুয়দ ইয়া’নি ইসমাঈল রা তাফসীলে বুয়দ।’’


অর্থাৎ ইবরাহীম আলায়হিস্ সালাম এবং হযরত ইসমাঈল আলায়হিস্ সালাম-এঁর সেই কোরবানির ঘটনা ছিল এক গূঢ় রহস্য,আর তার প্রাকটিক্যাল নমুনা হলো কারবালার যমীনে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত।হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এঁর ওফাত শরীফের পর শেরে খোদা হযরত আলী ও নবী দুলালী মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এঁর বংশ অব্যাহত থাকে।সেই শাহাদাত সংঘটিত হওয়ার সময় যাকে যবেহ ইসমাঈল প্রতিপাদ্য করা হয়েছে।অর্থাৎ কারবালার ময়দানের ঘটনা নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এঁর পরিবারের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।


আর আহলে বাইত তথা আউলাদে রাসূলগণকে আল্লাহ্ তা‘আলা যে মর্যাদা দান করেছেন তা সাধারণ মুমিন মুসলমানদের দেয়া হয়নি।কারণ তাঁরা আল্লাহর রাসূলের বংশধর।ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমাকে আল্লাহর রাসূল নিঁজের পুত্রের মত ভালোবাসতেন।হাদীসে পাকে এসেছে- হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাস‘ঊদ হতে বর্ণিত,তিনি বলেন আমি দেখেছি,নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের হাত ধরে বলেছেন-এঁরা আঁমার সন্তান।

[দায়লামী আল্ ফিরদাউস বিমা’ সূরিল খিতাব- ৪/৩৩৬,হাদীস ৫৯৭৩]


★১৫. হাসান ও হোসাইন আহলে বাইত:


হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসূলে আকরাম (ﷺ) ফাতিমা,হাসান ও হোসাইনকে একত্রিত করে তাদেরকে স্বীয় চাদরের ভেতরে ঢুকিয়ে বললেন: হে আল্লাহ! এরা আঁমার আহলে বাইত।

          ******দলিল******

*(ক.) হাকেম,আল মুস্তাদরাকঃ ৩:১৮০, হা/নং ৪৭০৫

*(খ.) তাররাণি,আল মুজামুল কবিরঃ 

৩:৫৩,হা/নং ২৬৬৩

*(গ.) তাবারি,জামেউল কুরআন ফি তাফসিরুল কুরআনঃ ২২:৮

*(ঘ.) ইবনে কাসির,তাফসিরুল কুরআনিল আজিমঃ ৪:৪৮৬

রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র পালিত হযরত ওমর ইবনে আবু সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه)র ঘরে নবীজির উপর এ আয়াত....নাজিল হলো তখন তিনি ফাতিমা ও হাসনাইন করিমাইনকে ডাকলেন এবং তাদেরকে একটি চাদরের মধ্যে জড়িয়ে নিলেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাকেও চাদরে জড়িয়ে নিলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত। সুতরাং তাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করো এবং তাদেরকে পূত-পবিত্র করো। 

[তিরমিযি,৫:৩৫১,জামেউল বয়ান, ২২:৮।]


★১৬. হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) প্রিয় নবীর বৈশিষ্ট্যসমূহের ওয়ারিছ:


হযরত সৈয়দা ফাতিমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিঁনি স্বীয় পিতা রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র বেসালপূর্ব অসুস্থাবস্থায় হাসান ও হোসাইনকে তার কাছে নিয়ে আসলেন।অতঃপর তিুনি আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এদের দু’জনকে আঁপনার উত্তরাধিকার থেকে কিছু দান করুন।তিঁনি  ইরশাদ করেন: হাসান আঁমার ভীতিসঞ্চারক ও নেতৃত্ব এ দুটির ওয়ারিশ; আর হোসাইন আঁমার ধৈর্য ও দানশীলতা এ দুটির ওয়ারিশ। 

[আল মুজামুল কবিরঃ ২২:৪২৩,আল আহাদ ওয়াল মাসানিঃ ১:২৯৯]


★১৭. প্রিয় নবী (ﷺ) নিজেই তাঁদের নাম রেখেছেন: হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিঁনি বলেন,যখন হযরত ফাতিমার ঘরে হাসানের জন্ম হলো তখন রাসূলে আকরাম (ﷺ) আগমন করলেন অতঃপর বললেন: আঁমাকে আঁমার সন্তান আঁমাকে দেখাও; তোঁমরা তাঁর কি নাম রেখেছো? আঁমি বললাম,আঁমি তার নাম রেখেছি হারব।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং সে হবে হাসান।অতঃপর যখন হোসাইনের জন্ম হলো তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আঁমাকে আঁমার সন্তান আঁমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং সে হবে হোসাইন। অতঃপর তৃতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করলো তখন তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং তার নাম মুহসিন। অতঃপর ইরশাদ করলেন: আমি তাদের নাম হারুন আলায়হিস সালামের সন্তান শাব্বার, শাব্বির ও মুশাব্বার-এর নামের ওপর রেখেছি।আরবি ভাষায় এ তিনটি নাম হলো-হাসান,হোসাইন ও মুহসিন। 

[হাকেম,আল মুস্তাদরাকঃ ৩:১৮০, হা/নং ৪৭৭৩, আহমদ বিন হাম্বল,আল মুসনাদ, ১:১১৮, হা/নং ৯৩৫]


★১৮. হযরত উম্মুল ফযল বিনতে হারেস (রাঃ) হতে বর্ণীত,একদা তিনি রাসুল ﷺ এঁর নিকট গিয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ﷺ আজ রাতে আমি একটি খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।তিনি বললেন,সে স্বপ্ন টা কি ? উম্মুল ফযল বললেন,আমি দেখেছি, আঁপনার দেহ মোবারক হতে যেন এক টুকরা গোশত কর্তন করা হয়েছে এবং উহা আমার কোলে রাখা হয়েছে।তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ তুমি খুব উত্তম এবং চমৎকার স্বপ্নই দেখেছ।ইন্‌ শা আল্লাহ্‌ আঁমার কন্যা ফাতেমা একটি ছেলে সন্তান প্রসব করবে,যা তোমার কোলেই রাখা হবে।সুতরাং কিছুদিন পর ফাতেমার গর্ভে হোসাইন (আঃ) এঁর জন্ম গ্রহন করলেন এবং তাকে আমার কোলেই রাখা হলো,যেমনটি রাসুল ﷺ বলেছিলেন।

[মেশকাত,হাদিস নং ৫৯২০]


★১৯. হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) জান্নাতি নাম সমূহের দু’টি নাম:


হযরত ইমরান বিন সুলাইমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,হাসান ও হোসাইন জান্নাতিদের নামসমূহের দুটি নাম।যে দুটি নাম জাহেলি যুগে কারো নাম হিসেবে রাখা হয় নি। 

[ইবনে হাজর মক্কি,আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকাঃ ১৯২,ইবনে আসির,উসদুল গাবা ফি মারিফাতিস সাহাবাঃ ২: ২৫]


★২০. নবীজি হাসান ও হোসাইনের কানে আযান দিয়েছেন: হযরত আবু রাফে (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,যখন হাসান ও হোসাইন জম্মগ্রহণ করলেন তখন রাসূলে আকরাম (ﷺ) স্বয়ং তাদের উভয়ের কানে আযান দিয়েছেন।

[তাবরানী,আল মুজামুল কবির-১:৩১৫, হা/নং ৯৩১,হায়ছমি,মাজমাউজ জাওয়ায়েদঃ ৪:৬০]


★২১. প্রিয় নবীজি  (ﷺ) হাসান ও হোসাইনের (رضي الله عنه) আকিকা করেছেন: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) হাসান ও হোসাইনের পক্ষ থেকে আকিকার মধ্যে প্রত্যেকের জন্য দুটি করে দুম্বা যবেহ করেছেন।

[নাসাই,হা/নং ৪২১৯,শরহে মুয়াত্তা:৩:১৩০]


★২২. হাসান ও হোসাইন প্রিয় নবী (ﷺ) এঁর সন্তান: হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসূলে আকরাম (ﷺ) আঁমার ঘরে আগমন করলেন আর বললেন,আমার সন্তানরা কোথায়? আমি বললাম,আলী তাদেরকে সাথে নিয়ে গেছেন।নবীজি তাদের সন্ধানে বের হলেন। আর তাদেরকে পানি পান করার একটি স্থানে খেলারত অবস্থায় পেলেন। আর তাদের সম্মুখে কিছু অবশিষ্ট খেজুর দেখতে পেলেন।অতঃপর তিঁনি বললেন: আলী খেয়াল রেখো! আঁমার সন্তানদেরকে গরম শুরু হওয়ার আগেই ফিরিয়ে নিয়ে এসো। 

[হাকেম,আল মুস্তাদরাকঃ ৩:১৮০,হা/নং ৪৭৭৪, দুলাবি,আয যুররিয়্যাতুত তাহিরা: ১:১০৪,হা/নং ১৯৩]

 

★২৩. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আঁপনার আহলে বায়েত (পরিবারের) এর মধ্যে আঁপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় কে? তিনি বলেন: হাসান ও হুসাইন।আনাস (রাঃ) বলেন : তিনি ফাতিমা (রাঃ) কে বলতেন আঁমার দু'সন্তানকে ডাক।এরপর তিনি তাঁদের উভয়কে নাকে শুকতেন ও বুকে চেপে ধরতেন।

[তিরমিজি শরীফ,ষষ্ঠ খণ্ড,হাদিস নং ৩৭৭২]


⏺ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (عليه السلام) এঁর গুরুত্ব/ফজিলত-৩য় পর্ব 


★২৪. হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه)-এঁর সাথে প্রিয় নবীর সাদৃশ্য:  


ﻋﻦ ﻋﻠﻰ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﺷﺒﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﺪﺭ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺮﺃﺱ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺍﺷﺒﻪ ﺍﻟﻨﺒﻴﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺍﺳﻔﻞ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ .


হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,হজরত হাসান হলেন (চেহারা- আকৃতি-অবয়বে) রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র বক্ষ হতে মাথা মুবারক পর্যন্ত অংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।আর হজরত হোসাইন (رضي الله عنه) রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র শরীর মুবারকের অবশিষ্ট নিচের অংশের (বক্ষ মুবারক হতে নীচ পর্যন্ত) সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 

[তিরমিযি হা/নং ৫৭৭৯,আহমদ,মুসনাদঃ ১:৯৯]


✌তাবরানী শরীফের এক হাদীসে পাকে রয়েছে- হযরত মাওলা আলী শেরে খোদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন হযরত ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বক্ষ থেকে মাথা মুবারক পর্যন্ত,আর ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ছিলেন বক্ষ থেকে পা মুবারক পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এঁর পুরোপুরি সদৃশ। 

[আল্ মুজামুল কবির: ৩/২৯ হা/২৫৭]


🌺ইমাম হাসান ও হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমার সাদৃশ্য হাদীসে পাকে এসেছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এঁর সঙ্গে।হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত,তাঁরা সবচেয়ে বেশী সদৃশ ছিলেন।

[আসকালানী,আল্ ইসাবা ফি তাময়িজিস সাহাবা: ২/৭৭,হা/নং ১৭২৬]


🏵আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন: আহলে বায়েতর মাঝে হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ) অপেক্ষা রাসুলুল্লাহর (ﷺ) অধিক সদৃশ আর কেউ নেই।

[তিরমিজি শরীফ: ষষ্ঠ খন্ড,হা/নং ৩৭৭৬]


🌺৩৭৭৬


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ لَمْ يَكُنْ مِنْهُمْ أَحَدٌ أَشْبَهَ بِرَسُولِ اللَّهِ مِنَ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏


আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, লোকদের মাঝে দৈহিক কাঠামোয় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এঁর সঙ্গে আল-হাসান ইবনু ‘আলীর তুলনায় বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিল না।

[সহীহ; বুখারী।আবু 'ঈসা বলেন,এ হাদীসটি হাসান সহীহ।হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]


💟৩৭৭৭


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبِي خَالِدٍ، عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ يُشْبِهُهُ ‏.‏ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ وَابْنِ عَبَّاسٍ وَابْنِ الزُّبَيْرِ ‏.‏


আবূ জুহাইফাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি দেখেছি।আল-হাসান ইবনু ‘আলী ছিলেন (দৈহিক কাঠামোয়) তাঁর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

[সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।পূর্বে (২৬৭৬) নং হাদীস বর্ণিত হয়েছে।]


★আবূ 'ঈসা বলেন,এ হাদীসটি হাসান সহীহ।এ অনুচ্ছেদে আবু বাক্‌র আস-সিদ্দীক্ব,ইবনু ‘আব্বাস ও ইবনুয যুবাইর (রাঃ) কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে।হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।


★২৫. হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) দুনিয়ার বাগানের ফুল:


হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু নুআম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, একজন ইরাকি লোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করেন,কাপড়ের উপর মশার রক্ত লাগলে তার বিধান কি? হযরত ইবনে ওমর বললেন,এর দিকে দেখো! মশার রক্তের মাসআলা জিজ্ঞাসা করছে অথচ এরাই রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র সন্তান (হোসাইন) কে শহীদ করেছে।আর আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলতে শুনেছি: হাসান ও হোসাইন দুনিয়ায় আঁমার বাগানের দু’টি ফুল। 

[বুখারি:হা/নং ৫৬৪৮,তিরমিযি: হা/নং ৩৭৭০,নাসাই হা/নং ৮৫৩০]


⏺৩৭৭০


حَدَّثَنَا عُقْبَةُ بْنُ مُكْرَمٍ الْعَمِّيُّ، حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرِ بْنِ حَازِمٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَعْقُوبَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي نُعْمٍ، أَنَّ رَجُلاً، مِنْ أَهْلِ الْعِرَاقِ سَأَلَ ابْنَ عُمَرَ عَنْ دَمِ الْبَعُوضِ يُصِيبُ الثَّوْبَ فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ انْظُرُوا إِلَى هَذَا يَسْأَلُ عَنْ دَمِ الْبَعُوضِ وَقَدْ قَتَلُوا ابْنَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ إِنَّ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ هُمَا رَيْحَانَتَاىَ مِنَ الدُّنْيَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَقَدْ رَوَاهُ شُعْبَةُ وَمَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَعْقُوبَ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوُ هَذَا ‏.‏


আবদুর রহমান ইবনু আবী নু'ম (রহ:) থেকে বর্ণিতঃ এক ইরাকবাসী মাছির রক্ত কাপড়ে লাগলে তার বিধান প্রসঙ্গে ইবনু 'উমার (রাঃ)–এর কাছে জানতে চায়। ইবনু 'উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা তার প্রতি লক্ষ্য কর, সে মাছির রক্ত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করছে।অথচ তারাই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এঁর পুত্রকে (নাতি হুসাইন) হত্যা করেছে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন দু’জন এই পৃথিবীতে আমার দু’টি সুগন্ধময় ফুল।

[সহীহ; মিশকাত (৬১৫৫),সহীহ (৫৬৪), বুখারী সংক্ষিপ্তভাবে।]


★আবূ 'ঈসা বলেন,এ হাদীসটি সহীহ।শু’বাহ (রহঃ) এ হাদীস মাহদী ইবনু মাইমূন হতে,তিনি মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়া‘কূবের সনদে রিওয়ায়াত করেছেন।আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ)-এর বরাতেও নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে একই রকম হাদীস বর্ণিত আছে।

[হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]


✊ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ “ হাসান ও হুসাইন হলেন দুনিয়ায় আঁমার দু'টি পুষ্প।”

[তিরমিজি শরীফ,ষষ্ঠ খন্ড,হাদিস নং ৩৭৭০]


💠হাসান ও হােসাইন (رضي الله عنه) দুনিয়ায় আমার দু’টি ফুল।”


[সহীহ বুখারী,কিতাবু ফাযায়ীলে আসহাবে নবী,বাব মানাকিবে হাসান ওয়া হােসাইন,২য় খন্ড,৫৪৭ পৃষ্ঠা,হাদীস- ৩৭৫৩]


⏩হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে 


ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻥ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻫﻤﺎ ﺭﻳﺤﺎﻧﻰ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ .


অর্থ: "হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, হযরত হাসান (رضي الله عنه) এবং হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) তাঁরা দু’জনেই দুনিয়াতে আমার দু’টি ফুলস্বরূপ।[তিরমিযী শরীফ‏]


👆মহানবী প্রায়ই ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনকে বুকে টেনে নিয়ে বলতেন, “সন্তান সুগন্ধি ফুলের মত; হাসান ও হোসাইন আমার দু’টি সুগন্ধি ফুল।তাই এ দু’জনের সুঘ্রাণ গ্রহণ করি।”


আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) বলেন,“একদিন মহানবীর কাছে গেলাম।হাসান ও হোসাইন তাঁর বগলের নীচে ছিল এবং খেলা করছিল।মহানবীকে বললাম, “আঁপনি কি এ দু’জনকে ভালবাসেন?” তিনি বললেন,“কিভাবে এ দু’জনকে না ভালবেসে থাকতে পারি আর এরাই তো এ পৃথিবীর বুকে আঁমার সুগন্ধি ফুল! আর আঁমি এ দু’জনের সুঘ্রাণ নিয়ে থাকি।”

[উসদুল গাবাহ্: ২য় খণ্ড,পৃঃ ১৮]


🔘মহানবী (ﷺ) ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনকে সর্বদা চুমো দিতেন এবং তাঁদের শরীরের ঘ্রাণ নিতেন মহানবী (ﷺ) ইমাম হোসাইনকে অত্যন্ত ভালবাসতেন এবং স্নেহ করতেন।আর এ ভালবাসা,স্নেহ ও মমতা প্রকাশ করার জন্য তিনি হোসাইনকে চুমো দিতেন এবং এভাবে তিনি আত্মিক প্রশান্তি লাভ করতেন।মহানবী প্রায়ই হযরত ফাতেমাকে বলতেন,“আমার দৌহিত্রদ্বয়কে ডেকে আন,আমি তাদেরকে জাড়িয়ে ধরে তাদের শরীরের ঘ্রাণ নেব।”


কখনো কখনো হোসাইন মহানবীর কাছে আসতেন।তখন তিনি হযরত আলীকে বলতেন,“হে আলী,ওকে ধরো এবং আমার কাছে নিয়ে এসো।”হযরত আলী হোসাইনকে ধরে মহানবীর কাছে নিয়ে আসতেন এবং মহানবী তাঁকে ধরে চুমো খেতেন।শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগেও মহানবী (ﷺ) ইমাম ভ্রাতৃদ্বয়কে বুকে জড়িয়ে চুমো দিয়েছিলেন এবং তাঁদের শরীরের ঘ্রাণ নিয়েছিলেন।আর এ সময় তাঁর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল।

[আল-খাওয়ারিয্মী প্রণীত মাকতালুল হোসাইন,১ম খণ্ড,পৃঃ ১০২]


★কী হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল তখন!!!


💟জান্নাতী যুবক-যুবতীদের অবিভাবক ও সর্দার:


★২৬. হাদীস শরীফে আরো বর্নিত আছে-


عن حضرت ابي سعيد رضي الله تعالي عنه قال رسول الله صلي الله عليه و سلم الحسن عليه السلام و الحسين عليه السلام و الحسسين عليه السلام سيدا شباب اهل الجنة


অর্থ: হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বলেন,হুজুর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা দু’জনেই জান্নাতী যুবকগনের সাইয়্যিদ।”

[তিরমীযি শরীফ,আহলে বাইত শরীফ উঁনাদের ফযীলত অধ্যায়]

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: হাসান ও হুসাইন হল জান্নাতের যুবকদের সরদার।

[তিরমিজি শরীফঃ ষষ্ঠ খণ্ড,হাদিস নং-৩৭৬৮,(ইসঃফাঃ)]


🌀অনুচ্ছেদঃ আল-হাসান ইবনু 'আলী এবং আল-হুসাইন ইবনু 'আলী ইবনু আবী ত্বালীব (রাঃ)-এঁর মর্যাদা


৩৭৬৮।

حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الْحَفَرِيُّ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي زِيَادٍ، عَنِ ابْنِ أَبِي نُعْمٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ ‏"‏ ‏.‏


আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন (রাঃ) প্রত্যেকেই জান্নাতী যুবকদের সরদার।

সহীহঃ সহীহাহ্‌ (৭৯৬)


★সুফ্‌ইয়ান ইবনু ওয়াকী’-জারীর ও মুহাম্মাদ ইবনু ফুযাইল হতে, তিনি ইয়াযীদ (রহঃ) হতে এই সনদে একই রকম বর্ণনা করেছেন। আবু 'ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনু আবী নু‘ম হলেন ‘আব্দুর রহমান ইবনু আবী নু’ম আল-বাজালী,কূফার অধিবাসী।তার উপনাম আবুল হাকাম।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস


🌺৩৭৮১


حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَإِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، قَالاَ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ مَيْسَرَةَ بْنِ حَبِيبٍ، عَنِ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ زِرِّ بْنِ حُبَيْشٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ سَأَلَتْنِي أُمِّي مَتَى عَهْدُكَ - تَعْنِي - بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ فَقُلْتُ مَا لِي بِهِ عَهْدٌ مُنْذُ كَذَا وَكَذَا ‏.‏ فَنَالَتْ مِنِّي فَقُلْتُ لَهَا دَعِينِي آتِي النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأُصَلِّيَ مَعَهُ الْمَغْرِبَ وَأَسْأَلُهُ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لِي وَلَكِ ‏.‏ فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّيْتُ مَعَهُ الْمَغْرِبَ فَصَلَّى حَتَّى صَلَّى الْعِشَاءَ ثُمَّ انْفَتَلَ فَتَبِعْتُهُ فَسَمِعَ صَوْتِي فَقَالَ ‏"‏ مَنْ هَذَا حُذَيْفَةُ ‏"‏ ‏.‏ قُلْتُ نَعَمْ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ مَا حَاجَتُكَ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ وَلأُمِّكَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ إِنَّ هَذَا مَلَكٌ لَمْ يَنْزِلِ الأَرْضَ قَطُّ قَبْلَ هَذِهِ اللَّيْلَةِ اسْتَأْذَنَ رَبَّهُ أَنْ يُسَلِّمَ عَلَىَّ وَيُبَشِّرَنِي بِأَنَّ فَاطِمَةَ سَيِّدَةُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَأَنَّ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ إِسْرَائِيلَ ‏.


হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, আমার মা আমাকে প্রশ্ন করেন,নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এঁর নিকট তুমি কখন যাবে? আমি বললাম, আমি এতদিন হতে তাঁর নিকট উপস্থিত পরিত্যাগ করেছি।এতে তিনি আমার উপর নারাজ হন।আমি তাকে বললাম,নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এঁর সঙ্গে আমাকে মাগরিবের নামায আদায় করতে ছেড়ে দিন।তাহলে আমি তাঁর কাছে আমার ও আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করব।অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এঁর নিকট আমি হাযির হয়ে তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম।তারপর তিনি নফল নামায আদায় করতে থাকলেন,অবশেষে তিনি এশার নামায আদায় করলেন।তারপর তিনি বাড়ির দিকে যাত্রা করলেন এবং আমি তাঁর পিছু পিছু গেলাম।তিনি আমার আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং প্রশ্ন করলেন,তুমি কে, হুযাইফাহ্‌? আমি বললাম, হ্যাঁ।তিনি বললেনঃ তোমার কি দরকার,আল্লাহ্‌ তা‘আলা তোমাকে এবং তোমার মাকে ক্ষমা করুন।তিনি বললেনঃ একজন ফেরেশতা যিনি আজকের এ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি।তিনি আমাকে সালাম করার জন্য এবং আমার জন্য এ সুখবর বয়ে আনার জন্য আল্লাহ্‌ তা‘আলার কাছে অনুমতি চেয়েছেনঃ ফাতিমাহ্‌ জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন জান্নাতের যুবকদের নেতা।

[সহীহঃ তা‘লীকুর রাগীব (২০৫,২০৬), মিশকাত (২১৬২),সহীহাহ্‌ (২৭৮৫)]


★আবূ 'ঈসা বলেন,উপর্যুক্ত সনদে এ হাদীসটি হাসান গারীব।এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র ইসরাঈলের বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতেই জানতে পেরেছি।

[হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]


⏩হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) জান্নাতি যুবকদের সর্দার: হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,আমার মাতা আমার কাছে রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে আমার হাজির হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলেন।আমি বললাম, এ ক’দিন থেকে আমি তো হুযুরের খেদমতে হাজির হতে পারি নি।এতে তিঁনি অসন্তুষ্ট হলেন।আমি বললাম,আমাকে অনুমতি দিন, আমি এ ক্ষুণি রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে হাজির হবো, তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করবো ও তাঁর কাছে আবেদন করবো যে, আমার ও আমার মায়ের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন।অতঃপর আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে হাজির হলাম এবং তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম।অতঃপর হুযুর নফল আদায় করতে করতে শেষ পর্যন্ত ইশার নামাযও আদায় করলেন।তারপর রাসূলে আকরাম (ﷺ) হুজরা শরিফের দিকে রওনা করলে আমি তাঁর পেছনে চলতে লাগলাম।তিঁনি আমার আওয়াজ শুনে বললেন,কে? হুযাইফা! আমি আরজ করলাম,জি- হাঁ। রাসূলে জিজ্ঞাসা করলেন,তোমার কি প্রয়োজন আছে? আল্লাহ তায়ালা তোমার ও তোমার মাতাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন,আঁমার নিকট এক্ষণি একজন ফেরেস্তা এসেছেন।এটি এমন এক ফেরেস্তা যে,ইতিপূর্বে দুনিয়াতে অবতরণ করেন নি; সে স্বীয় রবের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেছে যেন সে আঁমার ওপর সালাম পেশ করে ও আঁমাকে এ সুসংবাদ দেয় যে,ফাতিমা জান্নাতি রমনিদের সর্দার আর হাসান ও হোসাইন জান্নাতি যুবকদের সর্দার। 

[তিরমিযিঃ ৫:৬৬০,আহমদ,মুসনাদঃ ৫:৩৯১,হাকেম, মুস্তাদরাকঃ ৩:৪৩৯]


★২৭. হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে 


 عن حذيفة رضي الله عنه، قال: قال رسولالله صلى الله عليه وسلم: إن هذا ملك لم ينزل الأرض قط قبل هذه الليلة استأذن ربه أن يسلم عليّ و يبشّرني بأن فاطمة سيدة نساء أهل الجنة، وأن الحسن والحسين سيدا شباب أهل الجنة


হুযাইফাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “এমন এক ফেরেশতা আছেন যিনি আজ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে নেমে আসেননি, তাঁর পালনকর্তার কাছে আমাকে সালাম এবং সুসংবাদ দেওয়ার জন্য অনুমতি চেয়েছেন যে,"ফাতেমা (عليه السلام) জান্নাতের সমস্ত নারীদের নেত্রী এবং ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) হলেন জান্নাতের সকল যুবকের নেতা।"

           ******দলিল******

 *(ক.) তিরমিজি,আল জামি-উস-সহীহ (৫: ৬০৬০০ # ৩৭৮১)

*(খ.) নাসাই,আস-সুনান-উল-কুবরা (৫: ৮০,৯৫ # ৮২৯৮,৮৩৬৫)

*(গ.) নাসাই,ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (পৃষ্ঠা.৫৮,৭২ # ১৯৩,২৬০)

*(ঘ.) আহমাদ বিন হাম্বল,আল-মুসনাদ (৫: ৩৯১)

*(ঙ.) আহমাদ বিন হাম্বল,ফাদাইল-উস- সাহাবাহ (২: ৭৮৮ # ১৪০৬)

*(চ.) ইবনে আবী শায়বাহ,আল-মুসান্নাফ (৬: ৩৮৮ # ৩২২৭১)

*(চ.) হাকিম,আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৬৪ # ৪৭২১,৪৭২২)

*(ছ.) তাবারানী,আল-মুজাম-উল-কবির (২২: ৪০২ # ১০০৫)

*(জ.) বায়হাকী,আল-ইতিকাদ (পৃষ্ঠা ৩৩২)

*(ঝ.) মুহিব্ব তাবারি,দাখায়িরুল-উকবা (পৃষ্ঠা.২২৪)

⏺ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (عليه السلام) এঁর গুরুত্ব/ফজিলত-৪র্থ পর্ব


★২৮. হযরত সায়্যিদুনা আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; একদা তাজেদারে রিসালাম,শাহেনশাহে নবুয়ত, নবীয়ে রহমত (ﷺ) এঁর সাথে ইশার নামায আদায় করছিলাম।রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন সিজদায় গেলেন তখন ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (عليه السلام) হুযুর পুরনূর (ﷺ) এঁর পিঠ মােবারকে আরােহন করলেন।তিঁনি (ﷺ) সিজদা থেকে মাথা উঠালেন তখন তাঁদেরকে নম্রভাবে ধরে জমিনে বসিয়ে দিলেন। অতঃপর যখন তিঁনি (ﷺ) দ্বিতীয়বার সিজদায় গেলেন তখন ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (عليه السلام) দ্বিতীয়বার এমনই করল,এমনকি তিঁনি (ﷺ) নামায পরিপূর্ণ করলেন এবং তাঁরা উভয়কে আঁপন রান মােবারকে বসালেন।

[মুসনদে আহমদ,আবু হােরাইরা,৩/৫৯৩,হা/নং ১০৬৬৪, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/৫১৬]


🌀মদীনাবাসীরা বহুবার দেখেছে,মহানবী ﷺ তাঁর দুই দৌহিত্রকে দু’কাঁধে বসিয়ে তাঁদের মন খুশী করার জন্য মদীনার অলিতে-গলিতে হাঁটছেন।অনেকে বহুবার চেষ্টা করেও তাঁদের একজনকেও নবিজীর কাঁধ থেকে নামাতে পারেনি।মহানবী ﷺ কাউকে তা করার অনুমতি দেননি।কোন কোন সাহাবী এ দৃশ্য দেখে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনকে বলতেন,“কতই না উত্তম বাহনের ওপর তোমরা দু’জন চড়েছো!”


মহানবীও ঐ সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলতেন,“আর এ দু’জনও কতই না উত্তম আরোহী!”


আর এভাবে নবিজী তাঁর দুই দৌহিত্রের উচ্চ মর্যাদা,সম্মান ও তাঁদের দু’জনের প্রতি তাঁর অগাধ ভালবাসা ও আত্মিক টানের কথা বর্ণনা করতেন।

[মানাকিবে খাওয়ারিয্মী,পৃঃ ১১১]


⏺হযরত হাসান (রা.) ও হযরত হোসাইন (রা.) এঁর নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে এমন হাদিসের সংখ্যা অসংখ্য।হযরত হোসাইন (রা.) এঁর জীবনী বর্ণনাকালে আমরা আরও কিছু হাদিসের উল্লেখ করব।বস্ত্তত তাঁদের উভয়কে সবসময় একই সাথে দেখা যেত।বাইরে গেলেও তাঁরা একসাথে বের হতেন।একদিন তাঁরা ঘর হতে বের হয়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন। হারিয়ে ফেলেছিলেন পথের দিশা।মা জননী ফাতিমা (রা.) তাঁদের অনুপস্থিতিতে পাগলপারা হয়ে পড়লেন। ভাবলেন তাঁদের কোথাও কোন বিপদ ঘটেছে।তিঁনি দ্রুত আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘‘হাসান হোসাইন দু'জনই বাইরে চলে গেছে।আঁমি জানি না তারা কোথায় আছে।'' তিঁনি সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,‘নিশ্চয়ই যিঁনি তাঁদের সৃষ্টি করেছেন তিঁনি তাদের প্রতি তোমার চাইতেও বেশি দয়ালু ও যত্নবান।'


অতঃপর তিঁনি মহান আল্লাহর দরবারে তাঁদের নিরাপত্তার জন্য এই বলে দোয়া করলেন, ‘‘ইয়া আল্লাহ্! তাঁরা জলে ও স্থলে যেখানেই থাকুক না কেন,তাদেরকে নিরাপদে ফিরিয়ে দিন ও সুরক্ষা দান করুন।'' তারপর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাঁদের সম্পর্কে খবর পৌঁছল। তাঁদের এক জায়গায় পাওয়া গেল যেখানে তাঁরা একে অন্যের বাহুতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেন।নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলেন এবং তাঁদেরকে চুমু খেলেন।তিনি হযরত হাসান (রা.) কে ডান কাঁধে ও হযরত হোসাইন (রা.) কে বাম কাঁধে তুলে নিলেন।আর বললেন, ‘আল্লাহর কসম,আঁমি তোমাদের প্রতি সেভাবেই দৃষ্টি রাখব যেভাবে মহান সম্মানিত ও গৌরবের অধিকারী আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি দৃষ্টি রাখেন।'


পথিমধ্যে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর সাথে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাক্ষাৎ হল।তিঁনি বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্! একজনকে আমায় দিন যাতে আপনার বোঝা কিছু হালকা হয়।'কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, ‘‘কি চমৎকার বাহন তাদের আর কি চমৎকার আরোহীই না তারা! আর তাদের পিতা তাদের চেয়ে উত্তম।'' এভাবে তিঁনি তাঁদেরকে মসজিদ পর্যন্ত বহন করে নিয়ে এলেন।''

[মাজমা'উজ জাওয়ায়েদ: কৃত আল হাইতামি,৯ম খন্ড,পৃ: ১৮২]


★২৯. শৈশবকালে একবার খুতবা চলাকালীন উভয় শাহ্জাদা মসজিদে আগমন করলেন,তখন নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) খুতবা বন্ধ রেখে তাঁদের নিকট গেলেন এবং তাদেরকে উঠিয়ে নিজের সামনে বসালেন।

[তিরমিযী,৫ম খন্ড,৪২৯ পৃষ্ঠা,হা/৩৭৯৯]


🏵৩৭৭৪


حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُسَيْنِ بْنِ وَاقِدٍ، حَدَّثَنِي أَبِي، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ، قَالَ سَمِعْتُ أَبِي، ‏:‏ بُرَيْدَةَ يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُنَا إِذْ جَاءَ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ عَلَيْهِمَا قَمِيصَانِ أَحْمَرَانِ يَمْشِيَانِ وَيَعْثُرَانِ فَنَزَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْمِنْبَرِ فَحَمَلَهُمَا وَوَضَعَهُمَا بَيْنَ يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ ‏"‏ صَدَقَ اللَّهُ ‏:‏ ‏(‏ إنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلاَدُكُمْ فِتْنَةٌ ‏)‏ فَنَظَرْتُ إِلَى هَذَيْنِ الصَّبِيَّيْنِ يَمْشِيَانِ وَيَعْثُرَانِ فَلَمْ أَصْبِرْ حَتَّى قَطَعْتُ حَدِيثِي وَرَفَعْتُهُمَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ الْحُسَيْنِ بْنِ وَاقِدٍ ‏.‏


আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।আমি আমার পিতা বুরাইদাহ্‌ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন।হঠাৎ হাসান ও হুসাইন (রাঃ) লাল বর্ণের জামা পরিহিত অবস্থায় (শিশু হওয়ার কারণে) আছাড় খেতে খেতে হেঁটে আসেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বার হতে নেমে তাদের দু’জনকে তুলে এনে নিঁজের সম্মুখে বসান, তারপর বলেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা সত্যই বলেছেন, “তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তো পরীক্ষা বিশেষ”।[সুরা তাগাবুন: আয়াত নং ১৫]


★আমি তাকিয়ে দেখলাম এই শিশু দু’টি আছাড় খেতে খেতে হেঁটে আসছে। আমি আর সহ্য করতে পারলাম না,এমনকি আমার বক্তৃতা বন্ধ করে তাদেরকে তুলে নিতে বাধ্য হলাম।

[সহীহঃ ইবনু মাজাহ: ৩৬০০]


★আবূ 'ঈসা বলেন,এ হাদীসটি হাসান গারীব।আমরা শুধুমাত্র আল-হুসাইন ইবনু ওয়াকিদ-এর বর্ণনার প্রেক্ষিতেই এটি অবগত হয়েছি।হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।


✌বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (ﷺ) খুৎবা দিচ্ছিলেন এমন সময় হাসান ও হুসাইন আসলেন। তাঁদের গায়ে ছিলো লাল দু'টো জামা।তাঁরা হাটসছিলেন আবার পড়ে যাচ্ছিলেন।রাসুলুল্লাহ ﷺ মিম্বর থেকে নেমে এলেন এবং তাঁদের দু'জন কে উঠিয়ে নিয়ে সামনে বসালেন।পরে বললেন: আল্লাহ্ তায়ালা সত্যই বলেছেন যে,তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো তোমাদের জন্যই পরীক্ষা স্বরুপ।

[সুরা তাগাবুন: আয়াত নং ১৫]


★এই দু'টি শিশু হেঁটে আসছিল আর পড়ে যাচ্ছিল বলে আর স্থির থাকতে পারলাম না।এমনকি কথা বন্ধ করেও এদেরকে তুলে নিলাম।

[তিরমিজি শরীফ: ষষ্ঠ খণ্ড,হা/নং ৩৭৭৪]


★৩০. অপর হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে 


৩৭৭৩।


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا الأَنْصَارِيُّ، مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ حَدَّثَنَا الأَشْعَثُ، هُوَ ابْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، قَالَ صَعِدَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمِنْبَرَ فَقَالَ ‏ "‏ إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ يُصْلِحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ يَعْنِي الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ ‏.‏


আবূ বাক্‌রাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাসজিদে নববীর) মিম্বারে উঠে বললেনঃ আঁমার এ পুত্র (হাসান) নেতা হবে এবং আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার মাধ্যমে (মুসলমানদের) দু’টি বিবাদমান দলের মাঝে সমঝোতা স্থাপন করাবেন।

[সহীহঃ রাওযুন্‌ নাযীর (৯২৩),ইরওয়া (১৫৯৭),বুখারী]


✊আবূ 'ঈসা বলেন,এ হাদীসটি হাসান সহীহ।“এই পুত্র” দিয়ে আল-হাসান ইবনু ‘আলি (রাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে।

[হাদিসের মান-সহিহ হাদিস]


 ★৩১. একদিন মহানবী ﷺ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই শিশু হাসান ও হোসাইনের কান্নার শব্দ শুনতে পেলেন।মহানবী ﷺ হযরত ফাতেমার দিকে দ্রূত অগ্রসর হয়ে বললেন,“আঁমার দৌহিত্রদ্বয় কাঁদছে কেন?” তখন হযরত ফাতেমা তাঁকে বললেন,“ওরা তৃষ্ণার্ত,তাই পানি চাচ্ছে।” নবীজি এ কথা শুনে পানির খোঁজে গেলেন।কিন্তু পানি পেলেন না।তাই তিঁনি নিঁজের পবিত্র জিহ্বা হাসান ও হোসাইনের মুখের ভেতর রাখলেন এবং এর ফলে শিশু ভ্রাতৃদ্বয় কান্না থামালেন। আরো অনেক সময় মহানবী ইমাম হাসান ও হোসাইনের মুখের ভেতর জিহ্বা রেখেছেন এবং তাঁরাও তাঁর জিহ্বা চুষে তৃষ্ণা মিটিয়েছেন।

        ******দলিল******

*(ক.) আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী প্রণীত তাহযিব আত্-তাহযিব,২য় খণ্ড,পৃঃ ২৯৮

*(খ.) আল-খাওয়ারিয্মী প্রণীত মাকতালুল হোসাইন,১ম খণ্ড,পৃঃ ১৫২

*(গ.) ফাযায়েলুল খামসাহ্,৩য় খণ্ড,পৃঃ ১৭৯.


⏺ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (عليه السلام) এঁর গুরুত্ব/ফজিলত-৫ম পর্ব


★৩২. হুযুর (ﷺ) এ হাসানাঈনে করীমাঈনকে ফুঁক দিতেন:


হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম,নূরে মুজাস্সম (ﷺ) হযরত সয়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হােসাইন (عليه السلام) কে কলেমাতে তাউয (নিরাপত্তার বাক্য সমূহ) সহকারে ফুঁক দিতেন।তিনি (ﷺ) ইরশাদ করেন: “তােমাদের সম্মানীত দাদাজান অর্থাৎ হযরত ইসহাক (عليه السلام) এসব কলেমা (বাক্য) দ্বারা ফুঁক দিতেন।অর্থাৎ আঁমি আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ বাক্য সমূহের মাধ্যমে সমস্ত শয়তান ও বিষাক্ত জন্তু এবং সকল বদনযর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”

[বুখারী,কিতাবুল আহাদীসুল আম্বিয়া, ২/৪২৯,হাদীস-৩৩৭১]


★৩৩. ইমাম হাসানের প্রতি সিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) এর ভালবাসা:


হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) যখন আমীরুল মু'মিনীন ও খলিফাতুল মুসলীমিনের সিংহাসনের আসনে আসীন হলেন। তখন রাসূলে করীম (ﷺ) এর প্রতি সম্পর্কের কারণে তিনি (ﷺ) পবিত্র আহলে বাইতগণের খুবই দেখাশুনা করতেন এবং আহলে বাইতের ব্যাপারে বলতেন: নবী করীম,রউফুর রহীম (ﷺ) এঁর আত্মীয় স্বজন আমার কাছে আমার আত্মীয়স্বজনের চেয়ে অধিক প্রিয়।

[বুখারী,কিতাবুল মাগাজী,বাব হাদীস বনি নদ্বীর,৩য় খন্ড,২৯ পৃষ্ঠা,হাদীস-৪০৩৬]


★৩৪. ইমাম হােসাইনের প্রতি ফারুকে আযম (رضي الله عنه) এর অকৃত্রিম ভালবাসাঃ


হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হােসাইন (عليه السلام) বলেন: আমি একদিন আমীরুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (رضي الله عنه) এর ঘরে গেলাম, কিন্তু তিনি  হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর সাথে আলাদা ভাবে আলােচনায় ব্যস্ত ছিলেন এবং ওনার ছেলে আব্দুল্লাহ্ (رضي الله عنه) দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সে ফিরে আসতে লাগল,তখন তার সাথে আমিও ফিরে আসতে লাগলাম।পরে আমীরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (رضي الله عنه) এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে আমি বললাম: হে আমীরুল মু'মিনীন! আমি আপনার নিকট এসে ছিলাম।কিন্তু আপনি হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর সাথে আরােচনায় ব্যস্ত ছিলেন।(আমি ভেবেছিলাম যখন ছেলের ভিতরে যাবার অনুমতি নেই সেখানে আমার কিভাবে?) এই কারণে আমিও তার সাথে ফিরে এসেছি।তখন ফারুকে আযম (رضي الله عنه) বললেন: হে আমার পুত্র হােসাইন! আমার সন্তানের চেয়ে অধিক হকদার এই কথার উপর যে আপনি ভিতরে চলে আসবেন।আর আমাদের মাথায় যে চুল রয়েছে, আপনাদের সদকায় তাে সব কিছু উৎপন্ন হয়।

[তারিখ ইবনে আসাকির,১৪তম খন্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা]


✊একবার হযরত উমর (রা.) এর কাছে ইয়েমেন থেকে কিছু কাপড় চোপড় এসেছিল।তিনি জনসাধারণের মাঝে সে সব বিতরণ করে দিলেন।এমন সময় সেখানে হযরত হাসান (রা.) ও হযরত হোসাইন (রা.) উপস্থিত হলেন।তখন ইয়েমেনি কাপড়ের আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।এতে হযরত উমর (রা.) খুবই ব্যথিত হলেন।তিনি তৎক্ষণাৎ ইয়েমেনি প্রতিনিধির কাছে অতিসত্বর আরো কাপড় পাঠানোর জন্য খবর পাঠালেন।সেখান হতে পুনরায় কাপড় এলে তা থেকে দু'খন্ড হযরত হাসান (রা.) ও হযরত হোসাইন (রা.) এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।তারপর বললেন, ‘‘এখন আমি স্বস্তি পাচ্ছি।''


হযরত হোসাইন (রা.) বলেন,একদিন আমি হযরত উমর (রা:) এর কাছে গেলাম।তিনি তখন হযরত মুয়াবিয়া (রা.) এর সাথে একাকি ছিলেন।দরজায় হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা.) এর সাথে সাক্ষাৎ হল।তিনি বেরিয়ে আসছিলেন। আমিও তাঁর সাথে বেরিয়ে এলাম।পরে তাঁর {হযরত উমর (রা.)} সাথে আমার দেখা হল; তিনি বললেন,‘‘বহুদিন আপনার সাথে আমার দেখা হয় না।'' আমি বললাম,‘‘ইয়া আমীরুল মোমেনীন! আমি আপনার কাছে গিয়েছিলাম, আপনি হযরত মুয়াবিয়া (রা.) এর সাথে একাকি ছিলেন।আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা.) সেখানে ছিলেন।তিনি ফিরে আসছিলেন আমিও তাঁর সাথে ফিরে এসেছি।'' তিনি বললেন,‘‘ইবনে উমরের (আব্দুল্লাহর) চাইতে আমার কাছে আসার হক আপনার বেশি।আমাদের মাথায় যা গজিয়েছে তা আল্লাহ্রই অনুগ্রহে আর আপনাদের পরিবারের উছিলায়।''

[তাহজিবুল কামাল,৬ষ্ঠ খন্ড,পৃ: ৪০৪]


★৩৫. ইমাম হাসানের প্রতি শেরে খােদা মওলা আলী (رضي الله عنه)'র ভালবাসাঃ


হযরত সায়্যিদুনা আসবাগ বিন নুবাতা (رضي الله عنه) বলেন: একবার হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান মুজতবা (عليه السلام) অসুস্থ হয়ে পড়লেন,তখন হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা (عليه السلام) তাঁর সেবায় তাশরীফ নিয়ে গেলেন।আমিও তাঁর সাথে সেবার জন্য গেলাম।হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা (عليه السلام) তাঁর অবস্থা জিজ্ঞাসা করে বললেন: হে রাসূলের নাতি! আপনার অবস্থা কেমন? উত্তর দিলেন: ভাল আছি। তিনি বললেন: যদি আল্লাহ্ তাআলা চান।তাে ভাল হয়ে যাবেন।তার পর হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) আরজ করলেন: আমাকে হেলান দিয়ে বসান। হযরত সায়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه) তাঁকে বুকে ঠেস লাগিয়ে বসিয়ে দিলেন। তারপর হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) বললেন:


একদিন আমাকে নানাজান,রহমতে আলামীন (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “হে আমার পুত্র! জান্নাতে একটি গাছ রয়েছে়।পরীক্ষায় নিমজ্জীত লােকদের কিয়ামতের দিন ঐ বৃক্ষের নিচে একত্রিত করা হবে।ঐ সময় তখন না মীযান রাখা হবে না আমল নামা খােলা হবে। তাদেরকে পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিদান দেওয়া হবে।” তার পর ছরকারে দো’আলম (ﷺ) এই আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করেন:

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:

"ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণ ভাবে দেওয়া হবে অগণিত ভাবে।" (যুমর,আয়াত-১০)

[কিতাবুদ দোয়া লিত তাবারানী,৩৪৭ পৃ:]


★৩৬. আল আইজার বিন হুরায়িশ বলেন,হযরত আমর বিন আল আ'স (রা.) একদিন কা'বার ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সে সময় হযরত হোসাইন (রা.) কে দেখে তিনি বললেন, ‘‘বেহেশতবাসিদের চোখে আজকের দিনে পৃথিবীর পৃষ্ঠে বিচরণকারি মানুষের মধ্যে তিনিই হচ্ছেন প্রিয়তম মানুষ।''

[সিয়ার আ'লম আন নুবালা,৩য় খন্ড]


★৩৭. হযরত ইবনে আববাস (রা.) বহনকারী পশুদের তাঁদের {হযরত হাসান (রা.) ও হযরত হোসাইন (রা.) এর} কাছে নিয়ে আসতেন।এ কাজকে তিনি নিজের জন্য সৌভাগ্য বলে মনে করতেন।তাঁরা দু'জন যখন আল্লাহর ঘর তওয়াফ করতেন লোকজন তাঁদের অভিনন্দন জানানোর জন্য ঘিরে ধরতেন।মনে হত লোকজনের ভিড়ে তাঁরা পিষ্ট হয়ে যাবেন। মহান আল্লাহ্ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন, তাঁরাও সন্তুষ্ট আছেন মহান আল্লাহর প্রতি।

[আল বিদায়াহ আন নিহায়া ৪র্থ খন্ড]


★৩৮. আল্লাহর নবীর সাহাবায়ে কেরামগণ হযরত হাসান (রা.) ও হযরত হোসাইন (রা.) কে তাঁদের বাল্য অবস্থা থেকেই ভালবাসতেন।তাঁদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাঁদের প্রতি সাহাবা কেরামগণের ভালবাসাও বাড়তে থাকে।কারণ তাঁরা ছিলেন পূত পবিত্র চরিত্রের অধিকারী।তাঁদের মহত্ব ও চরিত্র মাধুর্য সবারই মনোযোগ আকর্ষণ করত।সর্বোপরি আল্লাহ্র হাবীব রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের খুবই ভালবাসতেন।আর সাহাবায়ে কেরামগণ (রা.) সব কাজে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই অনুসরণ করতেন।


হযরত ইমাম আল বুখারি (রা.) হযরত আবু হোরায়রা (রা.) এর বরাতে বলেন, তিনি বলেছেন,আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর সাথে একদিন মদীনার বাজারে ছিলাম।তিঁনি বাজার থেকে ফিরলেন,আমিও তাঁর সাথে ফিরলাম।তিঁনি জানতে চাইলেন,‘‘ছোট শিশুটি কই?'' তারপর বললেন, ‘‘হাসান বিন আলীকে ডাক।'' হাসান বিন আলী আসলেন।তাঁর গলায় ছিল একটা হার। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে হাত বাড়িয়ে দিলেন, হাসানও তাই করলেন।তিঁনি তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘‘ইয়া আল্লাহ্! আঁমি তাঁকে ভালবাসি,আঁপনিও মেহেরবানি করে তাঁকে ভালবাসুন,আর ভালবাসুন তাদের যারা তাকে ভালবাসে।''


এই যেখানে ছিল আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর অভিপ্রায়,তাই আমার কাছে হাসানের চাইতে প্রিয় আর কেউ ছিল না।


★হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আলী,ফাতেমা, হাসান,হুসাইন (আঃ) কে লক্ষ্য করে বলেন: যারা তোমাদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করবে আমিও তাদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করব।আর যারা বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে,আমিও তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবো।

[ইবনে মাজাহ,১ম খন্ড,হাদিস নং ১৪৫]

Wednesday, August 26, 2020

 #কারবালার_ইতিহাস -০১


সৈয়্যদুশ শোহাদা হযরত ইমাম হুসাইন رضي الله عنه চতুর্থ হিজরীর শাবান মাসের ৫ তারিখ পবিত্র মদীনা শরীফে জন্মগ্রহন করেন। পবিত্র বেলাদাতের পর সরকারে মদীনা ﷺ তাঁর কানে আযান দেন এবং তিনি তার জন্য দোয়া করেছিলেন। এই বিষয়ে হাদীস শরিফে বর্ণিত আছে -->


হযরত আবু রাফে  رضي الله عنه থেকে বর্ণিত , যখন  হাসান ও হুসাইন জন্মগ্রহণ করলেন , তখন নবী ﷺ খোদ তাঁদের কানে আযান দিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্রঃ আল-মু'জামুল কাবির- ইমাম তাবরানী رحمه الله عليه

সাত দিন পর আকীকা করেন, এই বিষয়ে হাদীস শরিফে বর্ণিত আছে -->


উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা رضي الله عنها থেকে বর্ণিত , নবী ﷺ  হাসান-হুসাইনের জন্মের সপ্তম দিন তাদের আকীকা হিসাবে দু'টি ছাগল জবাই করেন।

তথ্যসূত্রঃ আস- সহীহ - ইমাম ইবনে হিব্বান رحمه الله عليه

তাঁর নাম 'হুসাইন' রাখা হয়েছিল।  হাদীসে বর্ণিত আছে -->


ইমরান বিন সোলাইমান থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , হাসান ও হুসাইন নাম দু'টি জান্নাতবাসীর দু'টি নাম। জাহেলী যুগে এই নামে কোন নাম ছিল না।

তথ্যসূত্রঃ আস- সাওয়ারিকুল মুহরিকা - ইবনে হাজর মক্কী رحمه الله عليه


হযরত মফযল رحمه الله عليه থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহ ﷻ হাসান-হুসাইনের নামকে অন্তরালে রেখেছিলেন। এক পর্যায়ে নবী ﷺ এই দুই নাম তাঁর দুই পুত্র(নাতি) , হাসান- হুসাইনের নামে রাখেন।

তথ্যসূত্রঃ আশ-শরফুল মুআব্বিদ- ইমাম নাবহানী رحمه الله عليه


হযরত হাসান ও হুসাইন رضي الله تعالى عنهما হুযুর ﷺ-এর খুবই প্রিয় পাত্র ছিলেন। তাঁদের ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস মুবারক রয়েছে।  

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী رضي الله عنه থেকে বর্ণিত। আমি যখন নবী ﷺ -এর দরবারে উপস্থিত হলাম, তখন দেখতে পেলাম, হাসান-হুসাইন رضي الله تعالى عنهما তাঁর ﷺ  সামনে অথবা পবিত্র কোল মুবারকে খেলছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি তাঁদের ভালোবাসেন? নবী ﷺ   বললেন আমি কেন তাদের ভালোবাসবো না, অথচ তাঁরাই তো আমার দুনিয়ার পুষ্পোদ্যানের দুই পুষ্প। এদের সুগন্ধীর ঘ্রান নিচ্ছি।

তথ্যসূত্রঃ আল-মু'জামুল কাবির- ইমাম তাবরানী رحمه الله عليه


এমনকি তিনি ﷺ  আপন সন্তান থেকেও তাঁদেরকে অধিক ভালবাসতেন।


এই বিষয়ে হযরত আল্লামা জামী رحمه الله عليه বর্ণনা করেন, একদিন সরকারে দু'আলম ﷺ  হযরত ইমাম হুসাইন رضي الله عنه কে ডানে ও স্বীয় সাহেব্জাদা হযরত ইব্রাহিম رضي الله عنه কে বামে বসিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাইল عليهم السلام  উপস্থিত হয়ে আরয করলেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ! ﷺ আল্লাহ তায়ালা এই দু'জনকে আপনার কাছে একসাথে রাখবেন না। ওনাদের মধ্যে একজনকে ফিরিয়ে নিবেম। অতএব আপনি এই দু'জনের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পছন্দ করুন । হুযুর ﷺ  বললেন, যদি হুসাইনকে নিয়ে যায়, তাহলে ওর বিরহে ফাতেমা ও আলীর খুবী কষ্ট হবে এবং মন্টাও ক্ষুন্ন হবে, আর যদি ইব্রাহিমের ওফাত হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশী দুঃখ একমাত্র আমিই পাব। এজন্য নিজে দুঃখ পাওয়াটাই আমি পছন্দ করি । এই ঘটনার তিন দিন পর হযরত ইব্রাহিম رضي الله عنه ইন্তিকাল করেন। এরপর থেকে যখনই ইমাম হুসাইন رضي الله عنه হুযুর ﷺ -এর সমীপে আসতেন, হুযুর ﷺ  তাকে মুবারকবাদ জানাতেন, তার কপলে চুমো দিতেন এবং উপস্থিত লোকদের সম্মোধন করে বলতেন, আমি হুসাইনের জন্য স্বীয় সন্তান ইব্রাহিমেকে কুরবানী দিয়েছি।

তথ্যসূত্রঃ শাওয়াহেদুন নবুয়াত


(চলবে)

কারবালা সম্পর্কে সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দীন চিশতী (রঃ) এর মূল্যবান বাণী মোবারক

 কারবালা সম্পর্কে সুলতানুল হিন্দ

খাজা গরীবে নেওয়াজ

মঈনুদ্দীন চিশতী (রঃ) এর মূল্যবান বাণী মোবারক :- 

বোকারা বুঝতে পারেনি "  ইমাম হোসাইন (রাঃ) পানির পিপাসায় অসহায়ের মত শাহাদাত হননি 

বরং তিনি আসল ও নকল ভাগটি

পরিস্কার করে দেখিয়ে গেছেন।


ইমাম হোসাইন (রাঃ)  এর জুলজেনা'র (ঘোড়ার নাম) পদধূলা বলতেও নিজেকে লজ্বাবোধ করি।

অথচ আমি মঈনুদ্দীন যদি সেদিন কারবালার মাঠে একটি আঙ্গুল দিয়েও খোঁচা দিতাম তাহলে আল্লাহর কসম" সঙ্গে সঙ্গে পানির নহর বয়ে যেত।


পৃথ্বীরাজ যখন খাজা বাবার পানি বন্ধ করে দিল" তখন গাউছে পাক খাজা বাবা হুঙ্কার ছেড়ে বলেছিলেন:- ওহে ইয়াজিদের বাচ্চা" তুই কি এটা কারবালা পেয়েছিস?হোসাইনের গোলামের পানি বন্ধ করার সাহস কার? তুই কি আমার পানি বন্ধ করবি? তোর সমগ্র রাজস্থানের পানি আমি আমার এ বাটির মধ্যে তুলে নিলাম।। কথিত আছে" এর ফলে সমগ্র রাজস্থানের পানি শুকিয়ে গেছিল।

এমন কি মায়ের স্তনের দুধও। সত্যিইতো যার হাতে হাউজে কাওসারের কর্তৃত্ব" যিনি সমগ্র জান্নাতীদের জামে ওয়াহাদাত পান করাবেন" যিনি বেহেশ্তের সর্দার"


সেই প্রিয় নবীজীর নয়ণের মণি" খাতুনে জান্নাতের কলিজার টুকরা" ইমাম হোসাইন (রাঃ) কিভাবে পিপাসিত থাকতে পারেন??

এখানে খাজা বাবা ইমাম হোসাইন (আ:) এর গোলামের গোলাম হয়ে" আল্লাহর কসম করে যে কাজটি করতে পারতেন বলেছেন" ইমাম হোসাইন (রাঃ)  আকা হয়ে সে কেরামতটি দেখালেন না কেন??

কারন ইমামে আলী মোকাম ধৈর্য ও ছবরের অগ্নি পরীক্ষায় আল্লাহর রেজাবন্দীর উপর ইমাম ছিলেন সন্তষ্ট।।

আল্লাহওয়ালাদের ধৈর্য্যের চরম পরীক্ষায় তিনি জয়ী হয়েছিলেন। নিজের জীবন দিয়ে মোহাম্মদী ইসলাম ও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।


পরিশেষে একটি সূফী কবির কবিতা

দিয়ে শেষ করলাম!!!!


কাটায়া ছেরকো সিজদেমে এহি উম্মতোকি

খাতির হোসাইন আগার সওকছে ছের না

কাটা তে" তো হাম আজ শানছে ছের

নেহি উঠা ছেকতে।


অর্থাৎ- ইমাম হোসাইন (আ:) যদি আল্লাহর রাহে

নিবেদিত হয়ে সেদিন ছের (মাথা)

না কাটাতেন" তাহলে উম্মতে

মুহাম্মদী মর্যাদা সাথে কোন

দিনও মাথা তুলতে পারতেন না।।


মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) মৃত্যু শয্যায় করুন ঘটনা!

 মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর, ব্যবহারিত যুদ্ধের পোশাক ও অস্ত্র। আসুন দিগ্বিজয়ী এই মহাবীর, খালেদ সাইফুল্লাহ (আল্লাহর তলোয়াল) সম্পর্কে কিছু জানি।


মৃত্যুশয্যায় সাহাবী খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)। দূর্বল কন্ঠে তাঁর স্ত্রীকে বিছানায় পাশে বসতে বললেন। খুব প্রয়োজনীয় একটি প্রশ্নের উত্তর জানা যে বাকি রয়ে গেছে! এই সেই মহাবীর খালিদ যিনি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপ্রধান। যার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী ১০০ টিরও বেশি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে এবং কোনোটাতেই পরাজয় বরণ করেনি। তার রণকৌশল আজও বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণের সময় পাঠ্য হিসাবে শিখানো হয়! তাঁর নামে মুসলিম দেশগুলোতে আজও অনেক ব্রিগেড, যুদ্ধবিমান ও নৌযানের নামকরণ করা হয়। এই সেই খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) যাকেঅঞ স্বয়ং রাসূল মুহাম্মদ (সা.) 'সাইফুল্লাহ' উপাধি দিয়েছিলেন, যার মানে আল্লাহর তরবারি। এই সেই খালিদ যিনি মুসলিম বাহিনীর সেনাপ্রধান হিসেবে তুখোড় বিজয়ী আর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় তৎকালীন খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর নির্দেশে বিনা বাক্য ব্যয়ে সেনাপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সাধারণ সৈনিক হিসেবে লড়াই করা শুরু করেন। নেতার নেতৃত্ব মানতে হবে, এতো ইসলামে ভীষণ জোড় দিয়ে বলা। নেতার নির্দেশের প্রতি আনুগত্য একজন সত্যিকার বীরের মহত্ব। 


স্ত্রীকে খালিদ (রাঃ) বললেন, 'প্রিয়তমা স্ত্রী, আমি বেশিক্ষণ বাঁচবো বলে মনে হচ্ছেনা। একটা আফসোস এই বিদায় বেলায় ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে, তুমি কি উত্তর দিতে পারো'? খালিদ (রাঃ)কে স্ত্রী বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন, 'হে মহাবীর, কি প্রশ্ন আপনার মনে'? ৫৭ বছরের খালিদ বললেন, 'তুমি আমার সারাটা শরীর পরীক্ষা করে দেখো, এমন কোনো স্থান কি আমার শরীরে আছে যেখানে শত্রুর তরবারীর আঘাত নেই'? দীর্ঘক্ষণ পরীক্ষা করে স্ত্রী উত্তর দিলেন, 'না, আল্লাহর রাস্তায় আপনি এতো বেশি যুদ্ধ করেছেন যে শত্রুর আঘাত আপনার সারাটা শরীরেই আছে'। খালিদ বিন ওয়ালিদ(রাঃ) তখন দুঃখ নিয়ে বললেন, 'আল্লাহর কসম, প্রতিটা জিহাদে আমার নিয়ত থাকতো যেনো আমি ময়দানে শত্রুর আঘাতে মারা যাই, তাতে যেনো শহীদের মর্যাদা পাই। কিন্তু আফসোস, দেখো আজ যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যু না হয়ে  আমার মৃত্যু হচ্ছে আমারই বিছানায়! আমায় কি আল্লাহ শহীদদের মাঝে রাখতে চাননা'? স্বামীর আফসোস দেখে স্ত্রী কিছুক্ষণ মৌন রইলেন। এরপর করলেন সেই বিখ্যাত উক্তি, 'আপনার নাম স্বয়ং রাসূল (সা.) রেখেছিলেন ‘সাইফুল্লাহ’- এমন কোনো তরবারী কি দুনিয়ায় আছে যেটা আল্লাহর তরবারীর মোকাবেলা করতে পারে? তাইতো ময়দানে আপনার মৃত্যু হয়নি কারন আল্লাহ তাঁর তরবারী মাটিতে লুটিয়ে যেতে দেননি'। ভীষণ খুশি হলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ(রাঃ), বুঝতে পারলেন আল্লাহর ইচ্ছা এবং কিছুক্ষণ পরে শান্তিতে বেহেস্তের রাস্তায় চলে গেলেন।


আমরা অনেকেই সম্রাট জুলিয়াস সিজারের গুনগান করি, আলেকজান্ডারের ঘটনা মন দিয়ে শুনি, নেপোলিয়ানকে শ্রেষ্ঠ বলি। অথচ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে গবেষণা করলে সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে যে জেনারেল খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বগুণ, বীরত্ব আর রণকৌশলের সামনে অন্য যেকোনো সেনানায়কই তুচ্ছ। খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) কেই আমার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা মনে হয়। আর এসব কোনো কল্পকাহিনী নয়, ইতিহাস ঘাটলেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানিত হয়। এমন বীর সাহাবীদের জীবনী যেনো আমাদের প্রতিদিনের পথচলায় অনুপ্রেরণার উৎস হয়...


​​​​আমাদের ইতিহাস,কৃষ্টি,ঐতিহ্য তে ইসলামি ব্যক্তিত্ব এমনভাবে তুলে ধরা হয় না বিধায় ইসলাম এতটা ক্ষতিগ্রস্থ।

Featured post

কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা

 কোরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা ||-----๑▬▬๑﷽๑▬▬๑-----|| কোরবানী একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিময় আমল। আল্লাহ বলেন فصل لربك وانحر হে নবী! আপনি ...