Sunday, July 29, 2018

পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ গনিমত !!

হযরত মায়মুন বিন মাহরান(রহঃ) থেকে বর্ণিত ,মহানবী(দঃ)বলেছেনঃ পাঁচটি বিষয়কে তোমরা অন্য পাঁচটির পূর্বে গনীমত মনে করো।

☞যথাঃ

1:বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকালকে।

2:অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে।

3:ব্যস্তার পূর্বে অবসর সময়কে।

4:দরিদ্রতার পূর্বে সম্পদশীলতাকে।

5:মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে।


কিতাবঃতাম্বিহুল গাফেলীন(পৃষ্ঠাঃ23)।

লেখকঃ আল্লামা ফকীহ আবুল লায়ছ সমরকন্দী(রহঃ)।

হে আল্লাহ আমাদের একজন নেককার স্ত্রী দান করুন ৷৷

হে আল্লাহ আমাদের একজন নেককার স্ত্রী দান করুন আর আমাদেরও নেককার স্বামী বানিয়ে দিন ৷

ইসলামের ইতিহাসে অনেক বাদশা ছিলেন। তন্মধ্যে ইরাক শহরের  অন্যতম একজন হলো যার নাম অনেকে জানেন বাদশা  হারুনুর রশীদ। উনার একজন নেককার স্ত্রী ছিলেন যার নাম ছিল যুবাইদা।যিনি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর থেকে জীবনে কোনদিন আছরের নামাজ কাজা করেন নি। একদিন স্ত্রী পাশে স্বামী বসা অবস্থায়। স্বামীকে স্ত্রী অছিয়ত করে বলেন, ওগো আমার পেয়ারা স্বামী অল্প কিছুক্ষণ পরে আমি দুনিয়া হতে পরকালের চলে যাব। আপনার কাছে আমার অনুরোধ। আমার ইন্তেকালের পরে এমন একজন লোকের মাধ্যমে আমার নামাজের জানাজা দিবেন যে জীবনে আছরের নামাজ কর্যা করে নি।বাদশা হারুনুর রশীদ স্ত্রীকে তাই কথা দিলেন। কয়েকদিন পরে স্ত্রী মারা গেলে গোসল, কবর খনন ইত্যাদি হলো কিন্তু অছিয়ত মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না যে জীবনে আছরের নামাজ কাজা করেনি।বাদশা নির্দেশমতে  সারা রাজ্যে মানুষ ছড়িয়ে পড়ল সংবাদ নেওয়া জন্য। তখন বাদশা হারুনুর রশীদের পাশে একজন ওযীর দাঁড়ানো অবস্থায় বলল। হুযুর আমার পরিচিত একজন আছে যার কোনদিন আছরের নামাজ কাজা হয়নি। বাদশা মনে মনে খুশি হলেন। পরেদিন জানাজার সময় হলে ওযীরকে বাদশা বললেন কোথায় ঐ লোক যিনি জীবনে আছরের নামাজ কাজা করে নি? জবাবে ওযীর বলল হুযুর বেয়াদবী মাফ করবেন। অন্য কোন লোক নয় বরং আপনিই সেই লোক। বাদশা বললেন মানে? অজির বলল হুযুর আমি আপনার দরবারে আসছি আজকে বহুবছর আগে যতদিন আমি আপনার পাশে ছিল।আমি জিবনে কোনদিন আপনাকে আছরের নামাজ কাজা করতে দেখেনি। সুতরাং আপনি আপনার স্ত্রী জানাজা নামাজ পড়াবেন। তখন বাদশা হাওমাও করে কেঁদে দিয়ে বললেন। হায় আল্লাহ এটা আমার বহু গোপনীয় বিষয় ছিল। আমার স্ত্রী তো আমার আমার এ বিষয়টি প্রকাশ করে দিল। আর সে চেয়েছিল আমিই তার জানাজা পড়াই। শেষ পর্যন্ত বাদশা হারুনুর রশীদ কে নাহারে যুবাইদা(রহঃ) জায়নাজার নামাজের ইমামতি করতে হয়েছিল। (যেমন স্ত্রী তেমন স্বামী)


আল্লাহ রব্বুল আলামীন যেন আমাদের জীবনেও নেককার স্ত্রী দান করে আর আমাদেরকেও নেককার বানান

আমিন

বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন

Friday, July 27, 2018

ইয়ে জামিয়া হে !!!

লেখক

মাসুম বিল্লাহ সানী 

ইয়ে জামিয়া হে। 

- আওলাদে রাসুলের (ﷺ) দরবার,

- সুন্নীয়তের দুর্গ,

- হযরত নূহ (আঃ) এর কিস্তি। 

- দুনিয়ার বাদশাহগণ এর গেইট দিয়ে ভিক্ষুকের ন্যায় মাথা নত করে ঢুকে আর,

- ভিক্ষুক যখন বের হয় (প্রাপ্তিতে) বাদশাহের ন্যায় মাথা উঁচু করে বের হয়,

- এর অলিতে গলিতে বহমান স্নিগ্ধ পবিত্র মনোরম বায়ুও যেন আশেকের মনের তৃপ্তি মেটায়।

- এ যেন আউলিয়া কেরাম ও আলেম তৈরির কারখানা।

- যেখানে আবিদ আবিদের ন্যায় ইবাদত করে।

- খাদেম গোলামের ন্যায় এর খেদমত করে। 

- আশেকগণ যাকে ভালবাসার মতই ভালবাসে।

আসুন দেখি জিকিরের ফজিলত কি ৷

কয়েকটি নিম্নে  বর্ণনা করা হল-  ▼▼

১. জিকিরের ফলে  শয়তান বিতাড়িত হয়। 

২. অন্তর হতে পাপের কালিমা মুছে যায়। 

৩.   মানসিক    অবসাদ   দূর   হয়   ও    এবাদতের  প্রেরণা জাগে। 

৪. চেহারা নুরানী ও জোতির্ময় হয়।  

৫.  জীবিকার  প্রাচুর্য  ও  উপার্জনে  বরকত  লাভ  হয়। 

৬. আল্লাহ তায়ালার  রেজামন্দী ও সন্তোষ লাভ হয়।

৭.   আল্লাহ    তায়ালার    কুদরত   বা   নৈকট্যলাভ হয়।

৮. মারেফাত ও হাকীকতের দ্বার উন্মুক্ত হয়।

৯.   চারিত্রিক  দুর্বলতা  দূর  ও  চারিত্রিক  উৎকর্ষ  লাভ হয়। 

১০. দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও পরকালের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। 

১১.    তাকদীরের    খারাবী    দূর    হয়ে    সৌভাগ্য  নেমে আসে। 

১২.   সমাজে    মকবুলিয়ত   ও   জনপ্রিয়তা    লাভ হয়।

১৩. ফেরেশতাদের সাহচর্য ও দোয়া লাভ হয়।  

১৪. দুনিয়ায় থাকতেই স্বর্গসুখ লাভ হয়। 

১৫.   পরকালে   বিশেষ   মরতবালাভের  উপযুক্ত বিবেচিত হয়।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! তরিকা অনুযায়ী জিকির করলে সহজে  আল্লাহ    পর্যন্ত  পৌঁছা  সহজ  হবে  বিধায় তরিকা     অনুযায়ী     জিকির    করতে    হবে।


জিকিরের নিয়মাবলী

প্রত্যেহ ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর অথবা যখনই জিকির করার ইচ্ছা হয়, তখন নামাযে বসার ন্যায় বসবেন এবং ফাতেহাশরীফ আদায় করবেন। তারপর জিকিরের  নিয়ত  করে  চোখ  বন্ধ করে জিকির শুরু করবেন।

ছয় প্রকারের নারী কে বিয়ে করো না🚺

ছয় প্রকার নারীকে বিয়ে করো না বলে আরবীতে যে প্রবাদ আছে।

সেই ছয় প্রকার হলোঃ

আন্নানা, মান্নানা, হান্নানা, হাদ্দাকা, বাররাকা ও শাদ্দাকা।

১) "আন্নানা" হলো সেই নারী যে সবসময় 'হায় আফসোস' 'হায় অাফসোস' করতে থাকে। এবং অলস, 'রোগিণী'র ভান করে বসে থাকে। এমন নারীকে বিয়ে করলে সংসারে বরকত হয় না।

২)"মান্নানা" হলো সেই নারী যে স্বামীকে প্রায়ই বলে - 'আমি তোমার জন্যে এই করেছি, সেই করেছি।' হেন করেছি তেন করেছি, ইত্যাদি ইত্যাদি।

৩) "হান্নানা" হলো সেই নারী যে তার পূর্বের স্বামী বা প্রেমিকের প্রতি আসক্ত থাকে।

৪)"হাদ্দাকা" হলো সেই নারী, যে কোনো কিছুর উপর থেকেই লোভ সামলাতে পারে না। সব কিছুই পেতে চায়, এবং স্বামীকে তা ক্রয়ের জন্যে নিয়মিত চাপে রাখে।

৫)"বাররাকা" হলো সেই নারী যে সারাদিন কেবল সাজসজ্জা ও প্রসাধনী নিয়ে মেতে থাকে। এই শব্দের অন্য একটি অর্থ হলো, যে নারী খেতে বসে রাগ করে চলে যায়। এবং পরে একা একা খায়।

৬)"শাদ্দাকা" হোলো সেই নারী যে সবসময় বকবক করে

Thursday, July 26, 2018

শাহেনশাহে সিরিকোটি (রহঃ) নিজেই একটি কারামত !!!

শাহেনশাহে সিরিকোট রাঃ নিজেই একটি কারামত

☞ লেখক

ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী

আল্লাহর অলিগণের কারামত সত্য। অলিগণ নিজ নিজ কারামত গোপন রাখতে সচেষ্ট থাকেন। কিন্তু আল্লাহ পাক কিছু কিছু কারামত প্রকাশ করে দেন। তা করেন অলিগণের শান ও মান সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্য। চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া এমনই একটি প্রকাশিত কারামত। জিন্দা কারামত। যা নুহনবীর কিস্তিসম। যার আলোয় সমগ্র চট্টগ্রাম আলোকিত। সে আলো ঠিকরে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানেও ছড়িয়ে পড়েছে। 

আল্লাহর অলিগণ আল্লাহর ভালোবাসার ফেরিওয়ালা। আল্লাহ পাকের ৯৯টি সিফাতী নামের মধ্যে একটি মাত্র নাম কাহহার, মানে কঠোর, প্রতাপশালী। কাল হাশরের মাঠে তিনি হবেন কাহহার। বাকি ৯৮ টি সিফাতী বা গুণবাচক নামের সবগুলোই এই পৃথিবীবাসির জন্য। আমাদের চারপাশে আমরা যা কিছু দেখি - পৃথিবীর অধিবাসী, জীবজন্তু, গাছপালা, তরুরাজি, গ্রহনক্ষত্র, আকাশ-জমিন এ সব কিছুতেই সেই মহান রবের ৯৮ নামের ছোঁয়া লেগে আছে। 


মানুষ আল্লাহ পাকের গুণে গুণান্বিত হয়ে উঠে। তবে রবের সমান হতে পারে না। এ জন্য কামালিয়তের যত চূড়াতেই কোনও মানুষ আরোহণ করুক না কেন, তিনি কখনোই মহান রবের সমতুল্য হতে পারেন না। মহান রব নিজ গুণে এবং নিজ কুদরতেই মহীয়ান। আর মানুষ সেই রব প্রদত্ত গুণে গুণান্বিত। মানুষের মধ্যে আল্লাহর নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ এবং মুমিনগণ সে গুণ বিলানোর ক্ষমতা রাখেন। সূর্য যেমন তার চারপাশের গ্রহরাজি এবং সৌরজগতের ভেতরের সবকিছুকে আলোকিত করতে পারে, আল্লাহর অলিগণও আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে চারপাশের মানুষকে আলোকিত করতে পারেন।


আল্লাহর তেমনি একজন আলোকিত অলি হলেন শাহেনশানে সিরিকোট সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। তিনি ভালোবাসার ফেরিওয়ালা। যেখানেই তাঁর পদধূলি পড়েছে সেখানেই তিনি মানুষের মাঝে ভালোবাসা বিলিয়েছেন। কুরআন, হাদিস এবং ইলমের অন্যান্য শাখায় দক্ষতা অর্জনের পর তিনি আফ্রিকায় চলে গেলেন। সেখানে তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী। কিন্তু সাধারণ মানুষকে তিনি তাঁর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেন নি। সেখানে তিনি দু'হাত খুলে দান করেছেন। নিজ খরচে একটি মসজিদ তৈরি করেছেন যা আজো বিদ্যমান। 


আফ্রিকা জয়ের পর স্বদেশে ফিরে আসেন। তখন ১৯১২ সাল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বছর খানেক আগের ঘটনা। মহীয়সী এবং বিদুষী সহধর্মীনী হযরত সৈয়্যদা খাতুন (রহঃ)’র অনুপ্রেরণায় গাউসে জামান হযরত খাজা আব্দুর রহমান চৌরভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)’র সান্নিধ্য লাভের আশায় হরিপুর গমন করেন। পথেই দেখা হয়ে যায় নূরানী চেহারার গাউসে জামানের সাথে। দু'জনের চোখাচোখি হতেই সালাম বিনিময় হলো। আল্লাহ্‌র এক অলি অন্য অলিকে দেখেই চিলে ফেললেন। খাজা চৌরভি রহঃ জিজ্ঞেস করলেন, "ওহে চাঁদপুরুষ, আপনি কোত্থেকে?" উত্তরে সিরিকোটি রহঃ বললেন, “গঙ্গর উপত্যাকা থেকে এসেছি। হরিপুর বাজারে একটি কাপড়ের দোকান দিয়েছি।”  


চৌরভী (রহঃ) বললেন, “আমার কাছে কিছু লোকজন আসে, আমি তাদেরকে বলবো যে, হরিপুর বাজারে আমার একটি কাপড়ের দোকান আছে, তারা যেন সেখানে যায়।” সুবহানআল্লাহ! দুয়েকটি কথাতেই মন জয় করে ফেললেন ভবিষ্যৎ খলিফার। সিরিকোটি রহঃ বুঝতে পারলেন এই মহান আউলিয়ার কথাই তাঁর প্রাণপ্রিয় সহধর্মিণী বলেছিলেন। দুজনের দেখাসাক্ষাৎ চলতে থাকলো। বেশ অনেক বছর আপন মুরশিদের পদপানে নিজেকে বিলিয়ে দিলেন। একজন খ্যাতনামা ব্যবসায়ী, আলেম, হাফেজ, ক্বারী অধিকন্তু নবী বংশের মর্যাদা সবকিছু ভুলে তিনি নিজের আমিত্ব বিনাশের এ কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত নিজ মুর্শিদের মাধ্যমে আল্লাহ্ ও রাসূল ﷺ’র সন্তুষ্টি অর্জন করেন এবং ত্বরীকতের আসল পুরস্কার বেলায়ত ও খেলাফত লাভে ধন্য হন। এ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে। আমরা আমিত্ব রোগে ভোগে থাকি।  


পীরের ইচ্ছেয় সিরিকোটি রহঃ এর পরবর্তী মিশন নির্ধারিত হলো বার্মার রেঙ্গুনে। সেখানেও মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসার অসংখ্য নজীর স্থাপন করেন। সেখানে থাকতেই চৌরভি রহঃ রচিত "মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসূল" (দরূদ) প্রকাশের দায়িত্ব পান। ৩০ পারার দরূদের এ মহাকাব্য যিনি রচনা করেন তিনি জীবনে কোনও মাদ্রাসা কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দ্বারেও পা রাখার সুযোগ পাননি। মহান রবের মাধ্যমে ইলমে লাদুন্নির এক বিশাল ভাণ্ডার এ গ্রন্থ। 


১৯৪২ সালে সিরিকোটি রহঃ এর করা ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী জাপান কর্তৃক বোমা হামলায় রেঙ্গুন ধ্বংস হয়ে গেল। এর পূর্বেই তিনি তাঁর মুরিদদের সেখান থেকে হিজরত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। 


এরপর আবাদ হতে লাগলো মদিনাতুল আউলিয়া হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম। তিনি লক্ষ্য করলেন, ওখানকার মানুষ আল্লাহ্‌র অলিগণের মাধ্যমে ইসলামে দীক্ষিত হলেও কালের পরিক্রমায় সুন্নিয়ত থেকে তারা অনেক দূরে চলে গেছে। তাই তিনি সেখানে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলেন। সেটা ছিল ১৯৫৪ সাল। যা কালক্রমে এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান “জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া" হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। 


"মুঝে দ্যাখনা হ্যায় তো মাদ্রাসা কো দ্যাখো", আল্লাহ্‌র অলির মুখ দিয়ে এই একটি কথার এতো ওজন যে, আজ পর্যন্ত এই মাদ্রাসা আলিশান একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবং তা টিকে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। 


বিদায়ের ক্ষণটিও ছিল উল্লেখ করার মতো। আপন মুরশিদের মাধ্যমে তিনি পূর্ব থেকেই জানতে পেরেছিলেন যে একটি সন্তান তিনি লাভ করবেন যিনি মায়ের গর্ভে থাকতেই আল্লাহ্‌র অলি হিসেবে স্বীকৃত। তিনি আল্লামা হাফেয ক্বারী তৈয়ব শাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। ১৯৬১ সাল তথা ১৩৮০ হিজরীর পহেলা শাওয়াল ঈদুল ফিতর থেকে ১০ই জিলক্বদ রাত পর্যন্ত এই ৪০ দিন সিরিকোটি (রহঃ) একমাত্র লাচ্ছি ছাড়া অন্য কোন খাবার গ্রহণ করেননি। তাঁর চিরবিদায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ চল্লিশ দিন তাঁর একান্ত সান্নিধ্যে থাকেন সাহেবজাদা তৈয়্যব শাহ্ (রহঃ। প্রকৃতপক্ষে এ চল্লিশ দিনে সিরিকোটি (রহঃ) তৈয়্যব শাহ্ (রহঃ)’র হাতে গাউসিয়াতের মহান দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। এভাবে চল্লিশতম দিবস ১০ই জিলক্বদ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে শাহেনশাহ সিরিকোটি (রহঃ) তাঁর শতোর্ধ্ব বছরের জাহেরী হায়াতের ইতি টানেন এবং পরদিন ১১ই জিলক্বদ জুমা দিবসে তাঁকে শায়িত করা হয়।

আজ তাঁর ৫৯তম ওফাত দিবস। এ বিশেষ দিনে আল্লাহ্‌র অলির উছীলায় মহান রবের কাছে আমাদের মাগফেরাতের আর্জি পেশ করছি। এই মহান গাউসকে আল্লাহ্‌ পাক জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন।

Wednesday, July 25, 2018

বানিয়ে জামেয়া, কুতুবুল আউলিয়া, সৈয়্যদ আহম্মদ শাহ সিরিকোটি (রহঃ)

সীরাতে হযরত সিরিকোটি। 
 বিষয়ঃ তাঁর উপাধি সমূহ


  1. লকব বা উপাধিঃ বংশগত সূত্রে তিনি অারবী, হাসেমী, মক্কী, মাদানী কোরাশী এবং হোসাইনী ।জন্ম সূত্রে, অাজমী, পেশওয়ারী অার সিরিকোটি।তরিকার অনুসরণে, তিনি কাদেরী।অামলে শরীয়তে, হানাফি। অাকিদায়ে, সুন্নি। অধ্যায়নে তিনি অাল্লামা, হাফিজ এবং ক্বারী।ধর্ম প্রচারের প্রয়োজনে, হিজরত করার কারণে, তিনি অাফ্রিকাওয়ালা।অামল ও রিয়াজতের শিক্ষা বিস্তারে এবং প্রাতিষ্ঠানিক রুপদানে তিনি রাহবর। অর্থাৎ তিনি রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরিকত।তরিকতের শায়েখদের শাজরায় তিনি, পীরে তরিকত। তিনি ছিলেন কুতুবুল অাউলিয়া এবং গাউসে জামান। সবচেয়ে তাঁর মর্যাদাবান পরিচয় হলো--- তিনি অাওলাদে রাসুল (সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) । এবং ৩৯তম বংশধর। অাবার যেহেতু তিনি, পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে বসবাস করতেন, তাই সবাইর কাছে তিনি সীমান্ত পীর নামে পরিচিত ছিলেন।তিনি যেখানে গমন করেছেন, সেখানেই অাকাঈদে অাহলে সুন্নাতের পতাকাকে উড্ডয়ন করেছেন এবং মাযহাব মিল্লাত অার সুন্নিয়তের নেতৃত্ব দিয়েছেন, এই সব খেদমতের জন্য তাঁর নামের সাথে পেশোয়ায়ে অাহলে সুন্নাত উপাধি ব্যবহার করেন, সুন্নি জামাতের অনুসারীরা। বানিয়ে জামেয়া।জামেয়া প্রতিষ্ঠার একমাত্র অনুপ্রেরণা ছিল, দরুদ শরীফ।অর্থাৎ বাঁশখালীর শেখের খীলে হুজুর কেবলা শাহেন শাহে সিরিকোটের মাহফিলে কিছুসংখ্যক উপস্থিত দরুদ শরীফ না পড়ার কারণ । সেখানে থেকে চট্টগ্রাম শহরে এসে হুজুর কেবলা দরুদ শরীফ পড়ার এবং পড়ানোর লোক তৈরির জন্য জামেয়ার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন ১৯৫৪ সালে। বর্তমানে স্বদেশ এবং বহিঃবিশ্বে যারা বিভিন্ন ভাবে সুন্নিয়তের খেদমত করছেন, তাদের মধ্যে সর্বাধিক জামেয়ার ছাত্র অথবা অাশেক ভক্ত কিংবা সংশ্লিষ্টরা। অার এই মাদ্রাসা তো বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বেশ কয়েকবার স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত।জামেয়ার মর্যাদা, এর সুশিক্ষার মানোন্নয়ন এবং জগত বিখ্যাত অালেমে দ্বীন হযরত কেরামের মাধ্যমে পাঠদানসহ সর্ব বিষয়ে এর সুনাম ও সুখ্যাতি অাজ শুধু এশিয়া নয়--- বরং বিশ্ববিজয়ী।এই সবই শাহেন শাহে সিরিকোটের বেলায়তের কাজ ছাড়া কিছু নয়---। মানুষের জাগতিক এবং অাধ্যাত্মিকসহ সর্ব প্রয়োজনের চাহিদা পূরণ করে অাসছে জামেয়া, এবং প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে।যাঁরা সৎ মকসুদ পুরণের জন্য মান্নত করেন, তাদের সফল বয়ে এনে দেয়, এই জামেয়া। তাই শাহেন শাহে সিরিকোট এবং জামেয়া মানুষের অন্তর আত্মার মধ্যে এমন ভাবে স্থান করে নিয়েছেন, যা বর্ণনাতীত। সে অালোকে শাহেন শাহে সিরিকোট ছাত্র শিক্ষকসহ অাপমর সুন্নি জনতার কাছে, "বানিয়ে জামেয়া" নামে সুপরিচিত এবং সুখ্যাত। দরবারে সিরিকোট শরীফের দর্শনকে, তাঁর অালোকে পরবর্তীতে অারো বেগবান এবং মানুষের দ্বারপ্রান্ত থেকে শুরু করে বহিঃবিশ্বের বহুপ্রান্তে বহু স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন, হুজুর কেবলার সাহেবজাদা বানিয়ে জশনে জুলুছ, অাল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ কেবলা (রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি) । যার ফলে এই মাতৃগর্ভের ওলীর নূরানি হাতে অসংখ্য মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং লাখো লাখো পথহারা মানব বায়াত গ্রহণ করে, সঠিক সহজ সরল পথের সন্ধান পাই। অার সে সকল লাখো মানুষের কাছে শাহেন শাহে সিরিকোট "দাদা হুজুর কেবলা" নামে সম্মানিত অার পরিচিত। শাহেন শাহে সিরিকোট। ইলমে লদুনির অধিকারী গাউসে জামান হযরত খাজা চৌহরভী, তাঁর দরবারের শরীয়ত তরিকত অার বেলায়তের সব দায় দায়িত্ব কুতুবুল অাউলিয়ার হাত মোবারকে অর্পণ করেন। কুতুবুল অাউলিয়া সে মহান দায়িত্ব পাওয়ার পর , তিনি তা সর্বোত্তম ভাবে পালন করেন। যার ফলে, দাদা হুজুর কেবলা সিরিকোট শরীফ কাদেরিয়া তরিকার প্রধানতম মারকাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সমক্ষ হয়েছিলেন। সুন্নিয়তের জন্য হুজুর কেবলার অক্লান্ত পরিশ্রম অার খেদমতের জন্য এই দরবার সারা দুনিয়ায় পরিচিতি হয়ে পড়ে।তিনি এই মহান দরবারের প্রাণপুরুষের দায়িত্ব গ্রহণ করে সুন্নিয়তের পাঞ্জেরীর ভূমিকা পালেন করেন।মাযহাব মিল্লাত তাই তাকে, "শাহেন শাহে সিরিকোট'' উপাধির খ্যাতিতে অবিহিত করেন

Tuesday, July 24, 2018

ওরশ শরীফ, সৈয়দ আহম্মদ শাহ সিরিকোটি (রহঃ)


ওরশ মোবারক -------------- ☞ ছিরিকোট শরীফ থেকে লাকড়ির বোঝা কাঁধে নিয়ে ১১ মাইল দূরে চৌহর শরীফ পীরের লঙ্গর খানায় দিয়ে আসতেন আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি! ২৫ জুলাই-২০১৮, বুধবার, বাদে যোহর থেকে আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটির ওরশ মোবারক।

সুন্দর জীবন গঠনে মহানবী (দঃ) এর ২৫ টি সোনালী বাণী ৷৷


এক লোকের ২৫ টি প্রশ্ন আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উত্তরঃ ১. প্রশ্নঃ আমি ধনী হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, অল্পতুষ্টি অবলম্বন কর; ধনী হয়ে যাবে। ২. প্রশ্নঃ আমি সবচেয়ে বড় আলেম (ইসলামী জ্ঞানের অধিকারী) হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, তাক্বওয়া (আল্লাহ্ ভীরুতা) অবলম্বন কর, আলেম হয়ে যাবে। ৩. প্রশ্নঃ সম্মানী হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, সৃষ্টির কাছে চাওয়া বন্ধ কর; সম্মানী হয়ে যাবে। ৪. প্রশ্নঃ ভাল মানুষ হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, মানুষের উপকার কর। ৫. প্রশ্নঃ ন্যায়পরায়ণ হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, যা নিজের জন্য পছন্দ কর; তা অন্যের জন্যেও পছন্দ কর। ৬. প্রশ্নঃ শক্তিশালী হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, আল্লাহর উপর ভরসা কর। ৭. প্রশ্নঃ আল্লাহর দরবারে বিশেষ মর্যাদার অধিকরী হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ (জিকির) কর। ৮. প্রশ্নঃ রিযিকের প্রশস্ততা চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, সর্বদা অযু অবস্থায় থাকো। ৯. প্রশ্নঃ আল্লাহর কাছে সমস্ত দোয়া কবুলের আশা করি! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, হারাম খাবার হতে বিরত থাকো। ১০. প্রশ্নঃ ঈমানে পূর্ণতা কামনা করি! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, চরিত্রবান হও ৷ ১১. প্রশ্নঃ কেয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে গুনামুক্ত হয়ে সাক্ষাৎ করতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, জানাবত তথা গোসল ফরজ হওয়ার সাথে সাথে গোসল করে নাও। ১২. প্রশ্নঃ গুনাহ্ কিভাবে কমে যাবে? উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, বেশী বেশী ইস্তেগফার (আল্লাহর নিকট কৃত গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা) কর। ১৩. প্রশ্নঃ কেয়ামত দিবসে আলোতে থাকতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, জুলুম করা ছেড়ে দাও। ১৪. প্রশ্নঃ আল্লাহ্ তা’য়ালার অনুগ্রহ কামনা করি! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, আল্লাহর বান্দাদের উপর দয়া-অনুগ্রহ কর। ১৫. প্রশ্নঃ আমি চাই আল্লাহ্ তা’য়ালা আমার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখ। ১৬. প্রশ্নঃ অপমানিত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে চাই ? উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, যিনা (ব্যভিচার) থেকে বেঁচে থাকো। ১৭. প্রশ্নঃ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) এর নিকট প্রিয় হতে চাই ? উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, যা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের (সাঃ) এর নিকট পছন্দনীয় তা নিজের জন্য প্রিয় বানিয়ে নাও। ১৮. প্রশ্নঃ আল্লাহর একান্ত অনুগত হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, ফরজ সমূহকে গুরুত্বের সহিত আদায় কর। ১৯. প্রশ্নঃ ইহ্সান সম্পাদনকারী হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, এমন ভাবে আল্লাহর এবাদত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ অথবা তিনি তোমাকে দেখছেন। ২০. প্রশ্নঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! (সাঃ) কোন বস্তু গুনাহ্ মাফে সহায়তা করবে? উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, ক) কান্না। (আল্লাহর নিকট, কৃত গুনাহের জন্য) খ) বিনয়। গ) অসুস্থতা। ২১. প্রশ্নঃ কোন জিনিষ দোযখের ভয়াবহ আগুনকে শীতল করবে? উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, দুনিয়ার মুছিবত সমূহ। ২২. প্রশ্নঃ কোন কাজ আল্লাহর ক্রোধ ঠান্ডা করবে? উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, গোপন দান এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা। ২৩. প্রশ্নঃ সবচাইতে নিকৃষ্ট কি? উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, দুশ্চরিত্র এবং কৃপণতা। ২৪. প্রশ্নঃ সবচাইতে উৎকৃষ্ট কি? উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, সচ্চরিত্র, বিনয় এবং ধৈর্য্য। ২৫. প্রশ্নঃ আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচার উপায় কি? উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, মানুষের উপর রাগান্বিত হওয়া পরিহার কর। আল্লাহ্ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন…।

Monday, July 23, 2018

জুমার খুতবা, সৈয়দ জালাল উদ্দিন আল আজহারী


জুমার খুতবা ************ ২য় জুমা, যুল ক্বা’দাহ, ১৪৩৯ হি: ২৭ জুলাই, ২০১৮সাল ***রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের রওযা পাক যিয়ারতের উদ্দ্যেশ সফর:*** সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম। ============================= পবিত্র মক্কার ন্যায় মদীনা শরীফও পবিত্র ও সম্মানিত শহর, ওহী নাযিলের স্থান। কুরআনুল কারীমের অর্ধেক নাযিল হয়েছে মদীনা শরীফে। মদীনা শরীফ ইসলামের প্রাণকেন্দ্র, ঈমানের আশ্রয়স্থল, মুহাজির ও আনসারদের মিলনভূমি। মুসলমানদের প্রথম রাজধানী। এখান থেকেই আল্লাহর পথে জিহাদের পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল, আর এখান থেকেই হিদায়াতের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটেছে, ফলে আলোকিত হয়েছে সারা বিশ্ব। এখান থেকে সত্যের পতাকাবাহী মু’মিনগণ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন দ্বীনের বারতা নিয়ে। তাঁরা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ডেকেছেন। নবীজীর শেষ দশ বছরের জীবন যাপন, তাঁর ওফাত ও কাফন-দাফন এ ভূমিতেই হয়েছে। এ ভূমিতেই তিনি শায়িত আছেন। এখান থেকেই তিনি পুনরুত্থিত হবেন। নবীদের মধ্যে একমাত্র তাঁর কবর শরীফই সুনির্ধারিত রয়েছে। মদীনা শরীফের যিয়ারত আমাদেরকে ইসলামের সোনালী ইতিহাসের দিকে ফিরে যেতে সাহায্য করে। সুদৃঢ় করে আমাদের ঈমান-আকীদার ভিত্তি। তাই ইসলামি নিদর্শনাবলীর একটি বড় নিদর্শন হলো “মদীনা শরীফ”, যার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা প্রত্যেক ঈমানদারের অন্তরের কাজ। ইসলামের নিদর্শনগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো ও সেগুলোকে সংরক্ষণ করা মহান আল্লাহরই নির্দেশ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন: ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ "যে আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনাবলীকে সম্মান করবে সে যেন তার আন্তরিক তাকওয়ারই বহিপ্রকাশ ঘটালো।" (সূরা হাজ্ব:৩২) যেমনিভাবে সাফা, মারওয়া, মাশআর, মিনা, মুযদালিফা এবং হজ্জের সামগ্রিক আনুষ্ঠানিকতা সবই ঐশী নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَن تَطَوَّعَ خَيْراً فَإِنَّ اللّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ “নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দ’ুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তা অবগত এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।” (বাক্বারা-১৫৮) অনুরূপভাবে মদীনা মুনাওয়ারাও ইসলামের নিদর্শনাবলীর একটি বড় নিদর্শন যাকে সম্মান প্রদর্শন করা ঈমান ও তাকওয়ার পরিচায়ক। রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে সাহাবায়ে কেরাম নবীজী এবং তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহার্য দ্রব্যাদির ও বিচিত্র বস্তুকে তাবাররুক হিসেবে গ্রহণ করার জন্যে উদগ্রিব থাকতেন। তাঁর ব্যবহৃত জিনিস-পত্রকে তাঁরা অত্যন্ত পবিত্র মনে করে সেগুলোকে পবিত্র উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করতেন। নবীজীও কখনো সাহাবাদেরকে এ কাজ করতে নিষেধ করেন নি। নবীজিন প্রতি সাহাবায়ে কেরামের কিরূপ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা ছিল তার সামান্য নমুনা পেশ করছেন হযরত উরওয়াহ ইবন মাসউদ আস সক্বফী, যিনি তখনও কাফের ছিলেন এবং হুদায়বিয়ার সন্ধি প্রাক্কালে কুরাইশদের প্রতিনিধি হয়ে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কথা বলতে এসেছিলেন। ثُمَّ إِنَّ عُرْوَةَ جَعَلَ يَرْمُقُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِعَيْنَيْهِ‏.‏ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا تَنَخَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نُخَامَةً إِلاَّ وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمُ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ، فَرَجَعَ عُرْوَةُ إِلَى أَصْحَابِهِ، فَقَالَ أَىْ قَوْمِ، وَاللَّهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى الْمُلُوكِ، وَوَفَدْتُ عَلَى قَيْصَرَ وَكِسْرَى وَالنَّجَاشِيِّ وَاللَّهِ إِنْ رَأَيْتُ مَلِكًا قَطُّ، يُعَظِّمُهُ أَصْحَابُهُ مَا يُعَظِّمُ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم مُحَمَّدًا، وَاللَّهِ إِنْ تَنَخَّمَ نُخَامَةً إِلاَّ وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمُ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ، অতঃপর ‘উরওয়াহ চোখের কোণ দিয়ে সাহাবীদের দিকে তাকাতে লাগল। সে বলল, আল্লাহর কসম!আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো থুথু ফেললে তা সাহাবীদের হাতে পড়তো এবং তা তাঁরা গায়ে, মুখে মেখে ফেলতেন। তিনি তাঁদের কোন আদেশ দিলে তা তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পালন করতেন। তিনি ওযু করলে তাঁর ওযুর পানির জন্য তাঁর সাহাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হত। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন তাঁরা নীরবে তা শুনতেন এবং তাঁর সম্মানার্থে সাহাবীগণ তাঁর দিকে তীক্ষœ দৃষ্টিতে তাকাতেন না। অতঃপর ‘উরওয়াহ তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার কওম, আল্লাহর কসম! আমি অনেক রাজা-বাদশাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশী সম্রাটের দরবারে দূত হিসেবে গিয়েছি; কিন্তু আল্লাহর কসম করে বলতে পারি যে, কোন রাজা বাদশাহকেই তার অনুসারীদের মত এত সম্মান করতে দেখিনি, যেমন মুহাম্মাদের অনুসারীরা তাঁকে করে থাকে। আল্লাহর কসম! তিনি (আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি থুথু ফেলেন, তখন তা কোন সাহাবীর হাতে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা তা তাদের গায়ে, মুখে মেখে ফেলেন। তিনি কোন আদেশ দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করেন; তিনি ওযু করলে তাঁর ওযুর পানি নিয়ে সাহাবীগণের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়; তিনি কথা বললে, সাহাবীগণ নিশ্চুপ হয়ে শুনেন। এমনকি তাঁর সম্মানার্থে তাঁরা তাঁর চেহারার দিকেও তাকান না। (বুখারী-২৭৩১, ২৭৩২) এভাবে হজ্বের সময় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর চুল মোবারক কাটতেন, সাহাবাগণ তখন নবীজীর কর্তিত চুল মোবারকগুলো জমা করতেন পবিত্রতা ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে। একইভাবে নবীজী যখন কোনো পানির মশকের মুখ দিয়ে পানি পান করতেন সাহাবিগণ ঐ মশকের মুখ কেটে নিতেন বরকতের উদ্দেশ্যে। তাই মদীনা শরিফের মাটি, ধুলো-বালি এমনকি ফল-ফলাদি অন্য কোন মাটি, ধুলো-বালি ও ফল-ফলাদিও সাথে তুলনা হয় না। মদীনা শরিফের মাটি, ধুলো-বালি হলো সকল রোগের নিরাময়, বিশেয করে জ্বর, কুষ্ঠ রোগ ও শ্বেত রোগের জন্যে শিফা। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - كَانَ يَقُولُ لِلمَرِيضِ: " بِسْمِ اللهِ تربَةُ أَرْضِنَا، بِرِيقةِ بَعْضِنَا، يُشْفَى سَقِيمُنَا، بإِذْنِ رَبِّنَا ". নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিকট আশা রোগীদের চিকিৎসা করতেন এভাবে: “বিসমিল্লাহ, আমাদের এ মাটি আমাদের কারও লালার সাথে মিশ্রিত করে রোগীর জণ্য ব্যবহার করলে আমাদের রোগীরা আরোগ্য লাভ করবে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায়।”( বোখারী, ১১২৪) যেহেতু মদীনা মুনাওয়ারা আল্লাহর কাছে সম্মানিত হারাম হিসেবে পরিগণিত এবং সুন্নাতে নববীতেও মদীনা শরীফ, সেখানকার মাটি এবং বাসিন্দারা এমনকি সেখানে যাদেঁরকে দাফন করা হয়েছে তাঁদেরকে অনেক উচ্চ ফযীলত সম্পন্ন বলে মূল্যায়ন করা হয়। তাই মদীনা শরীফ যিয়ারত যদিও হজের অংশ নয়, কিন্তু অতীব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও পরম সৌভাগ্যের বিষয়। মদীনা শরীফের সীমানা: ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ পবিত্র মক্কার ন্যায় এ বরকতময় মদীনা নগরীকেও হারাম অর্থাৎ সম্মানিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কা মুকাররমাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি তাকে সম্মানিত করেছেন। আর আমি এই দুই পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণা করলাম।’[মুসলিম : ২/১০০১।] হারামের সীমারেখা হচ্ছে, উত্তরে লম্বায় উহুদ পাহাড়ের পেছনে সাওর পাহাড় থেকে দক্ষিণে আইর পাহাড় পর্যন্ত। পূর্বে হার্রা ওয়াকিম অর্থাৎ কালো পাথর বিশিষ্ট এলাকা থেকে পশ্চিমে হার্রা আল-ওয়াবরা অর্থাৎ কালো পাথর বিশিষ্ট এলাকা পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, اَلْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ ما بَيْنَ عَيْرٍ إلى ثَوْرٍ ‘মদীনা শরীফের ‘আইর’ থেকে ‘সাওর’-এর মধ্যবর্তী স্থানটুকু হারাম।’[বুখারী : ৬২৫৮; মুসলিম : ২৪৩৩।] নবীজীর সাথে সম্পর্কের কারণে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থান মদীনা মুনাওয়ারা আল্লাহর দরবারে খুবই ঘনিষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন, ্রإِنِّى أُحَرِّمُ مَا بَيْنَ لاَبَتَىِ الْمَدِينَةِ أَنْ يُقْطَعَ عِضَاهُهَا أَوْ يُقْتَلَ صَيْدُهَاগ্ধ.‘আমি মদীনা শরীফের দুই হাররা বা কালো পাথর বিশিষ্ট যমীনের মাঝখানের অংশটুকু হারাম তথা সম্মানিত বলে ঘোষণা দিচ্ছি। এর কোন গাছ কাটা যাবে না বা কোন শিকারী জন্তু হত্যা করা যাবে না।’[মুসলিম : ২৪২৫।] সুতরাং মদীনা শরীফও নিরাপদ শহর। এখানে রক্তপাত বৈধ নয়। বৈধ নয় শিকার করা বা গাছ কাটা। এ শহর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে এরশাদ করেন, ্রلاَ يُهَرَاقَ فِيهَا دَمٌএখানে রক্তপাত বৈধ নয়। বৈধ নয় শিকার করা বা গাছ কাটা। এ শহর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে এরশাদ করেন, ্রلاَ يُهَرَاقَ فِيهَا دَمٌ وَلاَ يُحْمَلَ فِيهَا سِلاَحٌ لِقِتَالٍ وَلاَ يُخْبَطَ فِيهَا شَجَرَةٌ إِلاَّ لِعَلْفٍগ্ধ.‘এখানে রক্তপাত করা যাবে না। এখানে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে অস্ত্র বহন করা যাবে না। ঘাস সংগ্রহের জন্য ছাড়া কোন গাছও কাটা যাবে না।’[মুসলিম : ২/১০০১।] মদীনা শরীফের ফযীলত: ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ মদীনাতুর রাসূলের ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হল : ১. মক্কার ন্যায় মদীনা শরীফও পবিত্র নগরী: মক্কার ন্যায় মদীনা শরীফও পবিত্র নগরী। মদীনা শরীফও নিরাপদ শহর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,্রإِنَّ إِبْرَاهِيْمَ حَرَّم مَكَّةَ، وإنّيْ حَرَّمْتُ الْمَدِيْنَةَগ্ধ ‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কা মুকাররমাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি তাকে সম্মানিত করেছেন। আর আমি এই দুই পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণা করলাম।’[মুসলিম : ২/১০০১।] ২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফের জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন: হযরত আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রاَللَّهمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْ ثَمَرِنا، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ مَدِيْنَتِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَاগ্ধ. ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ফল-ফলাদিতে বরকত দাও। আমাদের এ মদীনা শরীফে বরকত দাও। আমাদের সা’তে বরকত দাও এবং আমাদের মুদ-এ বরকত দাও।’[মুসলিম : ১৩৭৩।] ৩. মদীনা শরীফ যাবতীয় অকল্যাণকর বস্তুকে দূর করে দেয়: হযরত জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রالْمَدِينَةُ كَالْكِيرِ تَنْفِي خَبَثَهَا وَيَنْصَعُ طِيبُهَاগ্ধ.“মদীনা শরীফ হল হাপরের মতো, এটি তার যাবতীয় অকল্যাণ দূর করে দেয় এবং তার কল্যাণকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে।’[বুখারী : ১৮৮৩; মুসলিম : ১৩৮৩।] ৪. শেষ যামানায় ঈমান মদীনা শরীফে এসে আশ্রয় নেবে: শেষ যামানায় ঈমান মদীনা শরীফে এসে একত্রিত হবে এবং এখানেই তা ফিরে আসবে। হযরত আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রإنَّ الإِيْمَانَ لَيَأْرِزُ إلى المَدِيْنَةِ كما تَأْرِزُ الحيَّةُ إلى جُحْرِهاগ্ধ ‘নিশ্চয়ই ঈমান মদীনা শরীফের দিকে ফিরে আসবে যেমনিভাবে সাপ তার গর্তে ফিরে আসে।’[বুখারী : ১৮৬৭; মুসলিম : ১৪৭।] ৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফের জন্য দ্বিগুন বরকতের দো‘আ করেছেন: হযরত আনাস ইবন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রاَللَّهُمَّ اجْعَلْ بِالْمَدِينَةِ ضِعْفَيْ مَا جَعَلْتَ بِمَكَّةَ مِنَ الْبَرَكَةِগ্ধ.‘হে আল্লাহ, আপনি মক্কায় যে বরকত দিয়েছেন মদীনা শরীফে তার দ্বিগুণ বরকত দান করুন।’[বুখারী : ১৮৮৫; মুসলিম ১৩৬০।] হযরত আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রإِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ وَدَعَا لأَهْلِهَا وَإِنِّى حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ كَمَا حَرَّمَ إِبْرَاهِيمُ مَكَّةَ وَإِنِّى دَعَوْتُ فِى صَاعِهَا وَمُدِّهَا بِمِثْلَىْ مَا دَعَا بِهِ إِبْرَاهِيمُ لأَهْلِ مَكَّةَগ্ধ. ‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার বাসিন্দাদের জন্য দো‘আ করেছেন। যেমনিভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন, আমিও তেমন মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণা করেছি। মক্কার বাসিন্দাদের জন্য হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যে বরকতের দো‘আ করেছেন আমি মদীনা শরীফের অধিবাসীদের জন্য তাদের সা’ ও মুদ-এ তার চেয়ে দ্বিগুন বরকতের দো‘আ করছি।’[বুখারী : ২১২৯; মুসলিম : ১৩৬০। সা‘ ও মুদ দু’টি পরিমাপের পাত্র। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে দু‘আ করেছেন যেন তাতে বরকত হয় এবং তা দিয়ে যেসব বস্তু ওযন করা হয়- সেসব বস্তুতেও বরকত হয়।] ৬. মদীনা শরীফে মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রعَلَى أَنْقَابِ الْمَدِيْنَةِ مَلاَئِكَةٌ، لاَ يَدْخُلُهَا الطَّاعُونُ وَلاَ الدَّجَّالُগ্ধ.‘মদীনা শরীফের প্রবেশ দ্বারসমূহে ফেরেশতারা প্রহরায় নিযুক্ত আছেন, এতে মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না।’[বুখারী : ১৮৮০; মুসলিম : ১৩৭৯।] ৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফে মৃত্যু বরণকারীর জন্য সুপারিশের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন: রাসূলুল্লাহ সা وَلاَ يُحْمَلَ فِيهَا سِلاَحٌ لِقِتَالٍ وَلاَ يُخْبَطَ فِيهَا شَجَرَةٌ إِلاَّ لِعَلْفٍগ্ধ.‘যার পক্ষে মদীনা শরীফে মৃত্যুবরণ করা সম্ভব সে যেন সেখানে মৃত্যুবরণ করে। কেননা মদীনা শরীফে যে মারা যাবে আমি তার পক্ষে সুপারিশ করব।’[মুসলিম : ১৩৭৪।] ৮. মদীনা শরীফে কোনরূপ জুলুম বা অন্যায় ঘটনা ঘটানোর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণার প্রাক্কালে এর মধ্যে কোন জুলুম বা অন্যায় ঘটনা ঘটানোর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করেছেন। হযরত আলী ইবন আবী তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রالمَدِينَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إلى ثَوْرٍ، مَنْ أَحْدَثَ فيْهَا حَدَثاً أَو آوَى مُحدِثاً فَعَلَيهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالمَلاَئِكَةِ وَالنَاسِ أَجمَعِينَ، لاَ يَقبَلُ اللهٌ مِنهُ صَرْفاً وَلَا عَدْلاًগ্ধ. ‘মদীনা শরীফ ‘আইর’ থেকে ‘সাওর’ পর্যন্ত হারাম। যে ব্যক্তি মদীনা শরীফে কোন অন্যায় কাজ করবে অথবা কোন অন্যায়কারীকে আশ্রয় প্রদান করবে তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সমস্ত মানুষের লা‘নত। তার কাছ থেকে আল্লাহ কোন ফরয ও নফল কিছুই কবুল করবেন না।’[বুখারী : ১৮৭০; মুসলিম : ১৩৭০।] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- وَلَا يُرِيدُ أَحَدٌ أَهْلَ الْمَدِينَةِ بِسُوءٍ، إِلَّا أَذَابَهُ اللَّهُ فِي النَّارِ ذَوْبَ الرَّصَاصِ أَوْ ذَوْبَ الْمِلْحِ فِي الْمَاءِ ‘যে ব্যক্তি মদীনাবাসীদের ক্ষতি করতে চেষ্টা করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে এমনভাবে শাস্তি দিবেন যেভাবে সীসা আগুনে এবং লবণ পানিতে গলে যায়। (মুসলিম শরীফ,খ.২,পৃ.৯৯২) এভাবে অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি ইরশাদ করেন- لَا يَكِيدُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ أَحَدٌ، إِلَّا انْمَاعَ كَمَا يَنْمَاعُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ ‘যে ব্যক্তি মদীনাবাসীর সাথে অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্র করবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে যেভাবে লবণ পানিতে গলে যায়’। (বুখারি শরীফ,খ.৩,পৃ.২১) মদীনা শরীফে অনেক স্মৃতি বিজড়িত ও ঐতিহাসিক স্থানের যিয়ারত করতে হাদীসে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সেগুলো হলো : মসজিদে নববী শরীফ, মসজিদে কুবা, জান্নাতুল বাকী’, উহুদের শহীদদের মাযার ইত্যাদি। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে এসব স্থানের ফযীলত ও যিয়ারতের আদব উল্লেখ করা হল। মসজিদে নববী শরীফের ফযীলত: ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ মসজিদে নববী শরীফের রয়েছে ব্যাপক মর্যাদা ও অসাধারণ শ্রেষ্ঠত্ব। কুরআন ও হাদীসে এ সম্পর্কে একাধিক ঘোষণা এসেছে। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَّمَسۡجِدٌ أُسِّسَ عَلَى ٱلتَّقۡوَىٰ مِنۡ أَوَّلِ يَوۡمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِۚ فِيهِ رِجَالٞ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُواْۚ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُطَّهِّرِينَ [التوبة: ١٠٨ “অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে তা বেশী হকদার যে, আপনি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবেন। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।’[তওবা : ১০৮।] আল্লামা সামহুদী বলেন, ‘কুবা ও মদীনা শরীফ- উভয় স্থানের মসজিদ প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত। উক্ত আয়াতে তাই উভয় মসজিদের কথা বলা হয়েছে।’[সফিউর রহমান মুবারকপুরী, তারীখুল মাদীনাতিল মুনাওয়ারা : পৃ. ৭৫।] এতে এক নামায পড়লে এক হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার নামায পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়: মসজিদে নববী শরীফের আরেকটি ফযীলত হলো, এতে এক নামায পড়লে এক হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার নামায পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। হযরত ইবন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রصَلاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاةٍ فِيمَا سِوَاهُ، إِلا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَগ্ধ‘আমার এ মসজিদে এক সালাত আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায় করার চেয়েও উত্তম।’[বুখারী : ১১৯০; মুসলিম : ১৩৯৪।] হযরত আবূ দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রاَلصَّلاَةُ فِيْ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ بِمِائَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ وَالصَّلاَةُ فِيْ مَسْجِدِيْ بِأَلْفِ صَلاَةٍ وَالصَّلاَةُ فِيْ بَيْتِ الْمُقَدَّسِ بِخَمْسِمِائَةٍ صَلاَةٍগ্ধ.“মসজিদে হারামে এক নামায এক লাখ সালাতের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববী) এক নামায এক হাজার সালাতের সমান এবং বাইতুল মাকদাসে এক নামায পাঁচশ সালাতের সমান।’[মাজমাউয যাওয়াইদ : ৪/১১।] হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, عن أنس بن مالك ، قال : قال رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " صَلاةُ الرَّجُلِ فِي بَيْتِهِ بِصَلاةٍ ، وَصَلاَتُهُ فِي مَسْجِدِ الْقَبائِلِ بِخَمْسٍ وَعِشْرِينَ صَلاَةٍ ، وَصَلاَتُهُ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِي يُجمَّعُ فِيهِ بِخَمٍسِ مِئَةِ صَلاةٍ ، وَصَلاَةٌ فِي الْمسْجِدِ الأَقْصَى بِخَمْسِينَ أَلْفَ صَلاَةٍ ، وَصَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي بِخَمْسِينَ أَلْفِ صَلاةٍ ، وَصَلاَةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرامِ بِمئَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ " ) سنن ابن ماجه গ্ধ كتاب إقامة الصلاة والسنة فيها গ্ধ باب ما جاء في الصلاة في المسجد الجامع. مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح গ্ধ كتاب الصلاة গ্ধ باب المساجد ومواضع الصلاة ৭৫২ “নিজ ঘরে যদি কেউ নামায পড়ে তাহলে তার এক নামাযের সাওয়াব, নিজ গোত্রের মসজিদে পঁচিশ নামাযের, জুমা হয় এমন মসজিদে পাঁচ শত, বাইতুল মাকদাসে এক নামায পঞ্চাশ হাজার নামায পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়, আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববী শরীফে) এক নামায পঞ্চাশ হাজার সালাতের সমান এবং মসজিদে হারামে এক নামায এক লাখ সালাতের সমান।” [ইবনু মাযা, হা-১৪১৩, মিশকাত-৭৫২] হযরত আবূ হুরাইয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَنْ جَاءَ مَسْجِدِي هَذَا ، لَمْ يَأْتِهِ إِلاَّ لِخَيْرٍ يَتَعَلَّمُهُ أَوْ يُعَلِّمُهُ ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ ، وَمَنْ جَاءَ لِغَيْرِ ذَلِكَ ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الرَّجُلِ يَنْظُرُ إِلَى مَتَاعِ غَيْرِهِগ্ধ.‘যে আমার এই মসজিদে কেবল কোনো কল্যাণ শেখার জন্য কিংবা শেখানোর জন্য আসবে, তার মর্যাদা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য। পক্ষান্তরে যে অন্য কোন উদ্দেশ্যে আসবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে অন্যের মাল-সামগ্রীর প্রতি তাকায়।’[ইবন মাজাহ্ : ২৭৭।] হযরত আবূ উমামা আল-বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ لا يُرِيدُ إِلا أَنْ يَتَعَلَّمَ خَيْرًا أَوْ ُيعلِّمَهُ، كَانَ لَهُ كَأَجْرِ حَاجٍّ تَامًّا حِجَّتُهُগ্ধ. ‘যে ব্যক্তি একমাত্র কোন কল্যাণ শেখা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে (নববী শরীফে) আসবে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজের সওয়াব লেখা হবে।’[মাজমাউয যাওয়াইদ : ১/১২৩।] তাঁর রওযা শরীফ ও মিম্বর শরীফের মাঝখানের জায়গাটুকু জান্নাতের অন্যতম অংশ: ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুজরা মুবারক তথা সাইয়েদা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহার ঘর যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাফন করা হয়েছে সে রবকতময় স্থান ও তাঁর মিম্বর শরীফের মাঝখানের জায়গাটুকুকে জান্নাতের অন্যতম উদ্যান বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَا بَينَ بَيْتِيْ ومِنْبَرِيْ رَوْضَةٌ مِن رِيَاضِ الْجَنَّةٍগ্ধ ‘আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝখানের অংশটুকু রওদাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাত (জান্নাতের উদ্যানসমুহের একটি উদ্যান)।’[বুখারী : ১১২০; মুসলিম : ২৪৬৩।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা শরীফ ও এর আশেপাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে। এ সবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পূর্ব দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুজরা শরীফ। তার পশ্চিম দিকের দেয়ালের মধ্যখানে তাঁর মিহরাব শরীফ এবং পশ্চিমে মিম্বর শরীফ। এখানে বেশ কিছু পাথরের খুঁটি রয়েছে। যে সবের সাথে জড়িয়ে আছে হাদীস ও ইতিহাসের কিতাবে বর্ণিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও স্মৃতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এসব খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। এগুলো ছিল- ১. উসতুওয়ানা আয়েশা বা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু -এর খুঁটি। ২. উসতুওয়ানাতুল-উফূদ বা প্রতিনিধি দলের খুঁটি। ৩. উসতুওয়ানাতুত্তাওবা বা তওবার খুঁটি। ৪. উসতুওয়ানা মুখাল্লাকাহ বা সুগন্ধি জালানোর খুঁটি। ৫. উসতুওয়ানাতুস-সারীর বা খাটের সাথে লাগোয়া খুঁটি এবং উসতুওয়ানাতুল-হারছ বা মিহরাছ তথা পাহাদারদের খুঁটি। মুসলিম শাসকগণের কাছে এই রওযা মুবারক ছিল বরাবর খুব গুরুত্ব ও যতেœর বিষয়। উসমানী সুলতান সলীম রওযা শরীফের খুঁটিগুলোর অর্ধেক পর্যন্ত লাল-সাদা মারবেল পাথর দিয়ে মুড়িয়ে দেন। অতপর আরেক উসমানী সুলতান আবদুল মাজীদ এর খুঁটিগুলোর সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯৯৪ সালে সৌদি সরকার পূর্ববর্তী সকল বাদশাহর তুলনায় উৎকৃষ্ট পাথর দিয়ে এই রওযা মুবারকের খুঁটিগুলো ঢেকে দেন এবং রওযার মেঝেতে দামী কার্পেট বিছিয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের রওযা পাক যিয়ারতের উদ্দ্যেশ সফর: ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ ওহাবি মতবাদের আবির্ভাবের আগে ইসলামের ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলো সংরক্ষিত ছিল। ইসলামে নবিয়্যে মুকাররাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা ছাড়াও তাঁর ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন আংটি মোবারক, জুতা মোবারক, মেসওয়াক মোবারক, তলোয়ার মোবারক, ঢাল মোবারক এমনকি রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব কূপ থেকে পানি পান করেছেন সেই কূপগুলো পযর্ন্ত সংরক্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ওহাবিদের ধ্বংসযজ্ঞের কারণে সেগুলোর খুব কমই এখন অবশিষ্ট রয়েছে। এসব কাজ যদি র্শিক হতো তাহলে নবিয়্যে মুকাররাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদেরকে সেসব করতে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। নবীজীর কাছ থেকে ফযিলত ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে জনগণ যে চেষ্টা চালিয়েছেন সে সম্পর্কে বহু হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, নবীজী এ কাজের বিরোধিতা করেছেন এরকম কোনো বর্ণনা নির্ভরযোগ্য কোনো গ্রন্থে পাওয়া যায় না। একইভাবে নবী-রাসূলসহ সালেহিনদের রওয়া পাক বা মাযারের প্রতি সম্মান দেখানোটাও ইসলামের একটি দ্বীনী দায়িত্ব এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়। কেননা ইসলামের মহান নবী এবং আল্লাহর অন্যান্য অলি-আওলিয়ারা হলেন আল্লাহর যমিনে তাঁরই সবর্ত্তম নিদর্শন, তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি উপায় হলো তাঁদের মাযার এবং কীর্তিগুলোকে সংরক্ষণ করা। নবী, রাসূল আর সালেহিনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বা তাঁদের মাযারগুলোকে সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দ্বীনে ইসলামের প্রতি মুসলমানদের ভালোবাসাই প্রকাশ পায়। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের রওযা পাক যিয়ারতের উদ্দ্যেশ সফর করা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত, জায়েয ও সুন্নাত। কেননা পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا “যদি কখনও তারা নিজেদের আতœার প্রতি জুলুম করে হে মাহবুব আপনার দরবারে হাজির হয়। অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে।”(সূরা আন নিসা, আয়াত- ৬৪) جآءُوْكَ অর্থ: “হে মাহবুব আপনার দরবারে হাজির হয়” অর্থাৎ, হে আল্লাহর রাসূল আপনার মদীনা তাইয়্যেবায় হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে আর আপনিও তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- হযরত ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহ তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, "مَنْ زَارَ قَبْرِي وَجَبَتْ له شَفاعتي" “যে ব্যক্তি আমার কবর শরীফ যিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।“{সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৯৪, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১০০৫৩, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-৬৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-৩১১২, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪১৫৩) অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, مَنْ حَجَّ الْبَيْتَ وَلَمْ يَزُرْنِي فَقَدْ جَفَانِي “যে ব্যক্তি হজ্ব করেছে, অথচ আমার যিয়ারত করেনি, সে আমার উপর জুলুম করল”। {হাশিয়ায়ে মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৯৪৭} অন্য বর্ণনায় এসেছে, অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, مَنْ زَارَنِي بَعْدَ مَوْتِي ، فَكَأَنَّمَا زَارَنِي فِي حَيَاتِي ، وَمَنْ مَاتَ فِي أَحَدِ الْحَرَمَيْنِ بُعِثَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْآمِنِينَ“যে আমার ওফাতের পর আমার যেয়ারতে আসবে সে যেন আমার যাহেরী হায়াতেই যেয়ারত করতে আসল। যে দুই হেরমের যে কোন একটি মৃত্যুবরণ করবে কেয়ামত দিবসে সে নিরাপত্তা প্রাপ্তদের সাথে উত্থিত হবে। ” ( দারু ক্বুত্বনী, ২/২৭৮, হ- ১৯২, বায়হাক্বী, ৫/ ২৪৬, শিফাউস সিক্বাম: সুবক্বী- ২১, আল মুজালিসা ওয় জাওয়াহিরুল ইলম: আদ দায়নাওয়ারী, হা-১২৯) অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, من زار قبري أو قال من زارني كنت له شفيعا أو شهيدا ) البيهقي، السنن الكبرى ج৫: ص২৪৫- ورواه الإمام السبكي، في شفاء السقام: ২৯- والسمهودي، في وفاء الوفاج৪: ص১৩৪২. وقال: أخرجه الدار قطني في السنن.( "যে-কেউ যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মদীনায় আসবে এবং আমাকে যিয়ারত করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার জন্যে শাফায়াত করবো এবং তার পক্ষ্যে সাক্ষ্য দেবো।"। {সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-১০০৫৩, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪১৫৩, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-৬৫} য়ারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযায়ে আতহার যিয়ারতের উদ্দেশ্য সফর করা শিরক, জায়েজ নেই বলে তাদের দলিল ও তার জবাব: ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ ১. যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযায়ে আতহার যিয়ারতের উদ্দেশ্য সফর করা শিরক, জায়েজ নেই বলে তারা নিজেদের মতের পক্ষে নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলির পেশ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রلا تُشَدُّ الرِّحَالُ إلاَّ إلى ثَلاثَةِ مَسَاجِدَ: اَلْمَسْجِدِ الْحَرَام، وَمَسْجِدِيْ هَذَا، وَالْمَسْجِدِ الأَقْصَىগ্ধ.‘তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে (অধিক সওয়াবের আশায়) সফর করা জায়েয নেই: মসজিদুল হারাম, আমার এ মসজিদ ও মসজিদুল আক্সা।’[বুখারী : ১১৩২, ১১৮৯, মুসলিম : ১৩৯৭, ৩৪৫০।] জবাব: ===== জমহুর ওলামায়ে কিরাম উক্ত হাদীসটির ক্ষেত্রে বলেন, এ হাদীস শরীফে অধিক সওয়াবের আশায় তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনও মসজিদে নামাযের উদ্দেশ্যে সফর করাকে নিষেধ করা হয়েছে, কেননা অন্যান্য সকল মসজিদে নামায পড়ার সাওয়াব সমান। কিন্তু এ তিন মসজিদে সওয়াব বেশি হওয়ায় এ মসজিদের উদ্দেশ্যে সফরের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা যিয়ারতের ক্ষেত্রে এ হাদীসে কিছুই বলা নেই। তাই তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সফর করাকে নিষেধ করা হয়নি, যদি তাই হতো তা’হলে ব্যাবসা-বানিজ্য, চাকুরী-বাকুরী, চিকিৎসা, আত্মীয়-স্বজনের সাক্ষাতসহ সবধরণের সফর নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, যা হাদীস শরীফের উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। ইবনে তাইমিয়া এ বিষয়ে বলেছেন, উক্ত হাদীসের আলোকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযায়ে আহতার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নয়। ইবনে তাইমিয়া যে অর্থ করেছেন সে অর্থ অতিরঞ্জন, তা মেনে নিলে বলতে হবে-কোন আলেমের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সফর করা, চিকিৎসার ও ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নয়। অথচ একথা কি বলবেন? সারকথা হল- এ হাদীসে “মসজিদ” উদ্দেশ্য, রওযায়ে আহতার, কবর যেয়ারত উদ্দেশ্য নয়। এ বক্তব্যটির অনুকূলে মুসনাদে আহমাদে নিম্নোক্ত বর্ণাটি সমর্থন হিসেবে পাওয়া যায়। মুসনাদ-এ আহমদ এ হযরত শহর ইবনু হাওশাব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, شَهْرِ بْنِ حَوْشَبٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا سَعِيدٍ وَذَكَرَ عِنْدَهُ الصَّلَاةَ فِي الطُّورِ فَقَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا ينبغي للمصلي أن يشد رحاله إِلَى مَسْجِدٍ تُبْتَغَى فِيهِ الصَّلَاةُ غَيْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَالْمَسْجِدِ الْأَقْصَى وَمَسْجِدِي (وَشَهْرٌ حَسَنُ الْحَدِيثِ. أخرجه أحمد في المسند (৩ / ৬৪، ৯৩) واللفظ له، وأبو يعلى في مسنده (২ / ৪৮৯. الزيارة النبوية في ضوء الكتاب والسنة لفضيلة الدكتور محمد علوي المالكي (صـ ৮৩ ) “কোনও মুসল্লীর জন্য নামায আদায়ের লক্ষে তিনটি মসজিদ তথা মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আক্সা ও আমার এ মসজিদ ব্যতিরেকে অন্য কোনও মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা উচিৎ নয়। (মুসনাদ-এ আহমদ, খ-৩, পৃ-৬৪, হাদীস নং-১১৬০৯, মুসনাদ-এ আবু ইয়ালা খ-২, পৃ-৪৮৯) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহইি আলাইহি তাঁর প্রণীত বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্ত উমদাতুল কারীর ৩ নং খন্ডে এবং ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহইি আলাইহি তাঁর প্রণীত ফাতহুল বারীর ৩ নং খন্ডে এ হাদীস দ্বারা জমহুরের মতের পক্ষে দলীল পেশ করেছেন। ২. তারা নিজেদের মতের পক্ষে নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলির পেশ করে বলে: হাদিসটি প্রমাণ করে, রওযায়ে আহতার, ও কবর যেয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন হারাম। হাদিসে আছে: عن أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَا تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قُبُورًا ، وَلَا تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا ، وَصَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُمْ “হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, তোমরা আমার রওযাকে ঈদগাহ বানিয়ো না, আমার উদ্দেশ্যে দরুদ পাঠ কর, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে”।( সুনান এ আবু দাউদ, হা-২০৪২) জবাব: ==== অর্থাৎ কবরকে মসজিদ বানিয়ে মসজিদের ন্যয় কবরকে সাজদা করা; এর ফলে তা কবর থাকে নি, বরং তা পরিণত হয় পূজনীয় মূর্তিতে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। হারাম কাজের জন্য সফর করা হারাম। জায়েজ কাজের জন্য জায়েজ, সুন্নাত কাজের জন্য সুন্নাত এবং ফরজ কাজের জন্য ফরজ । যেমন ফরজ হজ্বের জন্য সফর করাও ফরজ । জিহাদ ও বাণ্যিজের জন্য সফর করা সুন্নাত কেননা এ কাজ সুন্নাত। হুযূর আলাইহিস সালামের রওযা পাক যিয়ারতের উদ্দ্যেশ সফর করা সুন্নাত কেননা এ যিয়ারত সুন্নাত। বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাত আতœীয়-স্বজনের বিবাহ শাদী খতনা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের যোগদান এবং চিকিৎসার জন্য সফর করা জায়েয। কেননা এগুলো জায়েয কাজ। চুরি-ডাকাতির জন্য সফর করা হারাম । মোট কথা হলো, সফরের হুকুমটা জানতে হলে, প্রথমে এর মকসুদটা জেনে নিতে হবে । কবর যিয়ারত হচ্ছে সুন্নাত: ========================== যেহেতু কবর যিয়ারত হচ্ছে সুন্নাত। সুতরাং কবর যিয়ারতে জন্য সফর করাটাও সুন্নাত বলে বিবেচ্য হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, فزُورُوا القُبُورَ، فإنها تُذكِّرُ الموتَ“তোমরা কবর জিয়ারত কর, কারণ তা তোমাদের আখেরাত স্বরণ করিয়ে দেয়।”(ইবনু মাজা, ১/১১৩, হা-১৫৬৯) কঠিন হৃদয়গুলোর জন্যে কবর যিয়ারত হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম ঔষধ। কারণ যিয়ারত তাদেরকে আখেরাত এবং মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে আর মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরণ হলে দুনিয়াবি চাওয়া-পাওয়া হ্রাস পাবে এবং দুনিয়ায় থাকার আগ্রহ কমে যাবে। যিয়ারতকারীর জন্য কবর যিয়ারত উপদেশ ও নসীহত স্বরূপ। এর ফলে মৃত্যুর কথা স্বরণ করা হয়, যা সৎকর্মের জন্য সহায়ক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ، فَزُورُوهَا، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ، وفي رواية تُذَكِّرُ الآخِرَةَ “আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার। কেননা তা তোমাদের আখেরাত স্বরণ করিয়ে দেয়।” (মুসলিম, ২/১৭১. হা-১০৫) যিয়ারতের উদ্দেশ্য: ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ হযরত ইবনে মাসউদ এবং আবু হুরাইরার হাদীস দ্বারা যিয়ারতের অন্যতম উদ্দেশ্য বুঝা যায়। ক. কবর যিয়ারতের দ্বারা দুনিয়ার আকর্ষণ কমে, কেননা তখন যিয়ারতকারী মনে করে একদিন আমাকেও দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে স্থায়ী বসত বাড়ী কবরে আসতে হবে। এই চিন্তা ভাবনা দুনিয়ার স্বাদকে মিটায়। খ. আখেরাতের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। আখেরাত মানুষের জন্য চিরস্থায়ী অবস্থান স্থল, দুনিয়া সহায় সম্পদ কোন কিছুই সাথে যাবে না, খালি হাতে একা সেখানে যেতে হবে। যারা নেক কর্ম করে এবং নেক আমলের অধিকারী, কেবল তারাই সেখানে চিরস্থায়ী সুখী হবে। তারা জান্নাতের অতুলনীয় সুখ শান্তি উপভোগ করতে পারবে। এরূপ অনুভূতি মানুষকে আখেরাতের আমল এবং আখেরাতমুখী করে তোলে। অনেক হাদিস গ্রন্থে এসেছে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মা আমেনা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহার কবর যিয়ারত করতে গিয়ে কান্নাকাটি করতেন। আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করে নিজেও কেঁদেছেন এবং অন্যদেরকেও কাদিয়েঁছেন, তারপর বলেছেন... "কবরগুলোকে যিয়ারত করবে, কেননা কবর যিয়ারত করলে মৃত্যুর কথা মনে পড়ে।" আওলিয়ায়ে কেরামের মাযার যেয়ারত: ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ হাজত বা মনষ্কামনা পূরণার্থে বিভিন্ন মাযারে বা আল্লাহ মাহবুব বান্দাদের দরবারে যাওয়ার বাস্তব প্রমাণ কিতাবে রয়েছে। যেমন ফতওয়ায়ে শামী প্রথম খন্ড যিয়ারতে কুবুর’ শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখিত আছে - ইমাম গাযযালী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন: وَاَمَّا الْاَوْلِيَاءُ فَاِنَّهُمْ مُتَفاوِتُوْنَ فِى القُرْبِ اِلَى اللهِ وَنَفَعِ الزئريْنَ بِحَسْبِ مَعَارِفِهِمْ وَاَسْرَارِهِمْ. “কিন্তু আল্লাহর ওলীগন আল্লাহর নৈকট্য লাভে ও যিয়ারতকারীদের ফায়দা পৌছানোর বেলায় নিজেদের প্রসিদ্ধি ও আধ্যাতিœক শক্তি অনুসারে ভিন্নতর । (ফাতওয়া ইমাম ইবন হাজর আল আসক্বালানী, ২/২৪) ফতুওয়ায়ে শামীর ভূমিকায় ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ফযিলত বর্ণনা প্রসংগে ইমাম শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির উক্তিটি উল্লেখ করা হয়েছ ।– ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- اِنِّىْ لَا تَبَرَّكُ بِاَبِىْ حَنِيْفَةَ وَاَجِئُ اِلَى قَبْرِهِ فَاذَا عَرَضَتْ لِىْ حَاجَّةٌ صَلَّيْتُ رَكْعَتَيْنِ وَسَالْتَ اللهِ عِنْدَ قَبْرِهِ فَتُقْضَى سَرِيْعًا. আমি ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বরকত হাসিল করি এবং তাঁর মাযারে আসি। আমার কোন সমস্যা দেখা দিলে, প্রথমে দু’রাকাত নামায পড়ি। অতঃপর তাঁর মাযারে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তখন সহসা আমার সমস্যার সমাধান হয়ে যায় । (রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রাহ।) হিজরতের পূর্বে মেরাজ পথে মদীনা তাইয়্যেবায়, সিনাই পর্বতে ও বেথেলহামে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়েছেন: عن أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ: أُتِيتُ بِدَابَّةٍ فَوْقَ الْحِمَارِ وَدُونَ الْبَغْلِ خَطْوُهَا عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهَا ، فَرَكِبْتُ وَمَعِى جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ، فَسِرْتُ ، فَقَالَ: انْزِلْ فَصَلِّ ، فَفَعَلْتُ .فَقَالَ: أَتَدْرِى أَيْنَ صَلَّيْتَ ؟ صَلَّيْتَ بِطَيْبَةَ وَإِلَيْهَا الْمُهَاجَرُ. ثُمَّ قَالَ: انْزِلْ فَصَلِّ ، فَصَلَّيْتُ ، فَقَالَ: أَتَدْرِى أَيْنَ صَلَّيْتَ؟ صَلَّيْتَ بِطُورِ سَيْنَاءَ حَيْثُ كَلَّمَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ. ثُمَّ قَالَ: انْزِلْ فَصَلِّ ، فَنَزَلْتُ فَصَلَّيْتُ ، فَقَالَ: أَتَدْرِى أَيْنَ صَلَّيْتَ؟ صَلَّيْتَ بِبَيْتِ لَحْمٍ حَيْثُ وُلِدَ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ. "মদীনা তাইয়্যেবায় নামায পড়েছেন কেননা সেটা ছিল আপনার হিজরতের স্থান, সিনাই পর্বতে নামায পড়েছেন কেননা সেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাথে কথা বলেছিলেন, আর বেথেলহামে নামায পড়েছেন কেননা তা ছিল মারিয়াম আলাইহাস সালামের পুত্র হযরত ইসা আলাইহিস সালামের জন্মস্থান।" (নাসায়ী,হা- ৫৫০) উপরোক্ত বক্তব্য থেকে কয়েকটি বিষয় জানা গেল-কবর যিয়ারতের জন্য সফর- কেননা ইমাম শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজের জন্ম ভূমি ফিলিস্তিন থেকে ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযার যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সুদূর বাগদাদ শরীফ আসতেন, কবরবাসীদের থেকে বরকত গ্রহণ, ওনাদের মাযারের কাছে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা এবং কবরবাসীদের অভাব পূর্ণ করার মাধ্যম মনে করতেন। সুতরাং অসংখ্য দলীলের মাধ্যমে প্রমানিত হলো আল্লাহর নেক বান্দাদের রওযাতে যাওয়া শুধু জায়েয নয়, বরং প্রখ্যাত ইমামদের অনুসৃত নীতিও বটে। (কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, রদ্দুল মুহতার, ফতোয়ায়ে আজীজিয়া, বুযুর্গ কে আকীদা।) বিবেকও বলে যে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর জায়েয। কেননা আমি ইতি পূর্বে উল্লেখ করেছি যে সফর হালাল বা হারাম হওয়াটা এর মকসুদ থেকেই বোঝা যায়। এ সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে কবর যিয়ারত যা নিষেধ নয়, কেননা যিয়ারতে কবর সাধারণভাবেই অনুমোতিত الَافَزُوْرَوْهَا তাহলে সফর কেন হারাম হবে? অধিকন্তু দ্বীনি ও দুনিয়াবী কাজ কারবারের জন্য সফর করা হয় । এটাও একটি দ্বীনি কাজের জন্য সফর হেতু হারাম কেন হবে? (-সুত্রঃ জা’আল হক ২য় খন্ড-) নিঃসন্দেহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা অবশ্যই জায়েজ। কথিত আহলে হাদীস এবং ইবনে তাইমিয়া ছাড়া রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ হওয়ার বিষয়ে ওলামায়ে উম্মতের মাঝে কোন মতবিরোধ নেই। সর্বসম্মত মতে তা জায়েজ। রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের কিংবা আল্লাহর নেক বান্দাদের রওযাতে যিয়ারতকালে যিয়ারতকারীগণ প্রকৃতপক্ষে তাদেঁর সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন যে, জীবনে তাদেঁর প্রদর্শিত পথ ছাড়া আর কোনো পথে পা বাড়াবেন না। আল্লাহ তায়ালা যাকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন তাঁর প্রতি সম্মান দেখানোটা বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকেও যুক্তিযুক্ত এবং পূণ্যময়, আর যিয়ারত করা এক ধরনের সম্মান প্রদর্শনেরই নামান্তর মাত্র। এইসব বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় কবর যিয়ারত করাটা কেবল বৈধই নয় বরং নবীজীর একটি সুন্নাতও বটে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্নিত রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস আছে - مَا رَآهُ الْمُسْلِمُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ "মুসলমান যে কাজকে পছন্দনীয় বলে বিবেচনা করেন -তা আল্লাহর নিকট ও পছন্দনীয় "। ( মুসনাদ এ আহমদ, ১/৩৭৯. হা-৩৬০০ )। তাই উহা গোমরাহী হতে পারে না । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন । عَنْ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِنَّ اللَّهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِي عَلَى ضَلَالَةٍ ، وَيَدُ اللَّهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ " আমার উম্মত গোমরাহ বিষয়ে একমত হতে পারে না " ( তিরমিযী, হা-২১৬৭, আবু দাউদ, হা- ৪২৫৩) ইমাম বুসেরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘কাসীদাতুল বুরদা’তে বলেন: فإنَّ من جودك الدنيا وضرَّتها + ومن علومك علم اللوح والقلمِ হে নবী! আপনার দয়া থেকেই দুনিয়া ও আখেরাত সৃষ্ঠি হয়েছে। আর আপনার জ্ঞান থেকেই লাওহে মাহফুয ও কলমের জ্ঞান উদ্ভাসিত হয়েছে। (বুসেরী: কাসীদাতুল বুরদা) يا أكرم الخلق ما لي من ألوذ به + سواك عند حلول الحوادث العمم “হে সৃষ্টির সেরা সম্মানিত! আমার জন্য কে আছে আপনি ব্যতীত, যার কাছে আমি কঠিন বালা মসীবতে আশ্রয় প্রার্থনা করবো?” (বুসেরী: কাসীদাতুল বুরদা) মসজিদে নববীতে প্রবেশের আদব ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ আবাসস্থল থেকে উযূ-গোসল সেরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ধীরে-সুস্থে মসজিদে নববী শরীফের উদ্দেশ্যে গমন করবেন। আল্লাহর প্রতি বিনয় প্রকাশ করবেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করবেন। নিচের দো‘আ পড়তে পড়তে ডান পা দিয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করবেন : ্রبِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلى رَسُوْلِ اللهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَগ্ধ. (বিসমিল্লাহি ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাগফিরলী যুনূবী ওয়াফ-তাহলী আবওয়াবা রহমাতিকা)।‘আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।’[ইবন মাজাহ্ : ৭৭১।] পাশাপাশি এ দো‘আও পড়তে পারেন, ্রأَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِগ্ধ (আউযুবিল্লাহিল আযীম ওয়া বি ওয়াজহিহিল কারীম ওয়া সুলতানিহিল কাদীমি মিনাশ শায়তানির রাজীম।)‘আমি মহান আল্লাহর, তাঁর সম্মানিত যাতে পাকের এবং তাঁর চিরন্তন কর্তৃত্বের মাধ্যমে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’[আবূ দাউদ : ৪৬৬।] অতপর যদি কোন ফরয নামাজের জামাত দাঁড়িয়ে যায় তবে সরাসরি জামাতে অংশ নিন। নয়তো বসার আগেই দু’রাক‘আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়বেন। হযরত আবূ কাতাদা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রإِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يَرْكَعَ رَكْعَتَيْنِগ্ধ.‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন দু’রাক‘আত নামাজ পড়ে তবেই বসে।’[বুখারী : ৪৪৪; মুসলিম : ১৬৫৪।] আর সম্ভব হলে ফযীলত অর্জনের উদ্দেশ্যে রাওযা শরীফে মিম্বর শরীফের সীমানার মধ্যে এই নামায পড়বেন। কারণ হযরত আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَا بَينَ بَيْتِيْ ومِنْبَرِيْ رَوضَةٌ مِن رِيَاضِ الجَنَّةٍগ্ধ ‘আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝখানের অংশটুকু রওযাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাত (জান্নাতের উদ্যানসমুহের একটি উদ্যান)।’[বুখারী : ১১২০; মুসলিম : ২৪৬৩।] আর সম্ভব না হলে মসজিদে নববী শরীফের যেখানে সম্ভব সেভাবেই পড়বেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মসজিদের এ অংশকে অন্যান্য অংশ থেকে পৃথক গুণে গুণান্বিত করা দ্বারা এ অংশের আলাদা ফযীলত ও বিশেষ শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করছে। আর সে শ্রেষ্ঠত্ব ও ফযীলত অর্জিত হবে কাউকে কষ্ট না দিয়ে সেখানে নফল নামায আদায় করা, আল্লাহর যিক্র করা, কুরআন তিলাওয়াত ও অধিকহারে দুরূদ শরীফ পাঠ করা দ্বারা। ফরয নামায প্রথম কাতারগুলোতে পড়া উত্তম; কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রخَيْرُ صُفُوْفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَاগ্ধ. ‘পুরুষদের সবচেয়ে উত্তম কাতার হলো প্রথমটি, আর সবচেয়ে খারাপ কাতার হলো শেষটি।’[মুসলিম : ১০১৩।] , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন, ্রلَوْ يَعْلَمُ النّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَولِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا إلا أَن يَّسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوْا عَلَيْهِগ্ধ. ‘ মানুষ যদি আযান ও প্রথম কাতারের ফযীলত জানত, তারপর লটারি করা ছাড়া তা পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকত, তাহলে অবশ্যই তারা তার জন্য লটারি করত।’[বুখারী : ৬১৫; মুসলিম : ৯৮১।] সুতরাং এর দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, মসজিদে নববী শরীফে নফল সালাতের উত্তম জায়গা হলো রাওযাতুম মিন রিয়াযুল জান্নাত। আর ফরয নামাজের জন্য উত্তম জায়গা হলো প্রথম কাতার তারপর তার নিকটস্থ কাতার। মদীনা মুনাওয়ারার অন্যান্য বরকতময় স্থান সমূহের যেয়ারত: ১. জান্নাতুল বাকী’ বা বাকী‘র মাযারসমূহ। ২. মসজিদে কুবা’ ৩. শুহাদায়ে উহুদের মাযার জান্নাতুল বাকী’ বা বাকী‘র মাযারসমূহ: ======================= রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে বাকী‘ মদীনা শরীফবাসীর প্রধান কবরস্থান। এটি মসজিদে নববী শরীফের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। মদীনা শরীফে মৃত্যু বরণকারী হাজার হাজার ব্যক্তির কবর রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় অধিবাসী এবং বাইরে থেকে আগত যিয়ারতকারীগণ। এখানে প্রায় দশ হাজার সাহাবায়ে কেরামের মাযার শরীফ রয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন হযরত খাদীজা ও হযরত মায়মূনা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা ছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাকী স্ত্রীবর্গের মাযার, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা, পুত্র হযরত ইবরাহীম রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু, চাচা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু, ফুফু হযরত সাফিয়্যা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা, নাতী হযরত ইমাম হাসান ইবন আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা এবং জামাতা হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ছাড়াও অনেক মহান ব্যক্তিবর্গ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই বাকী‘র মাযারসমূহের যিয়ারত করতেন। সেখানে তিনি বলতেন, ্রالسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَأَتَاكُمْ مَا تُوعَدُونَ غَدًا مُؤَجَّلُونَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَدগ্ধ (আস্সালামু আলাইকুম দারা কাওমিম মু’মিনীন ওয়া আতাকুম মা তুআ‘দুনা গাদান মুআজ্জালুনা ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকূন, আল্লাহুম্মাগ ফির লিআহলি বাকী‘ইর গারকাদ।) ‘তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক হে মু’মিনদের চিরস্থায়ী ঘরে অবস্থানকারীগন, তোমাদেরকে যা ওয়াদা করা হয়েছিল তা তোমাদের কাছে এসেছে। আর আগামীকাল (কিয়ামত) পর্যন্ত তোমাদের সময় বর্ধিত করা হল। ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে আমরাও মিলিত হব। হে আল্লাহ, বাকী‘ গারকাদের অধিবাসীদের ক্ষমা করুন।’[মুসলিম : ৯৭৪; ইবন হিববান : ৩১৭২।] তাছাড়া কোন কোন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলা বাকী‘উল গারকাদে যাদের দাফন করা হয়েছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন। এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আমার কাছে জিবরীল এসেছিলেন ...তিনি বললেন, ্রإِنَّ رَبَّكَ يَأْمُرُكَ أَنْ تَأْتِىَ أَهْلَ الْبَقِيعِ فَتَسْتَغْفِرَ لَهُمْগ্ধ ‘আপনার রব আপনাকে বাকী‘র কবরস্থানে যেতে এবং তাদের জন্য দো‘আ করতে বলেছেন।’ হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি কীভাবে তাদের জন্য দো‘আ করবো? তিনি বললেন, তুমি বলবে, ্রالسَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّاوَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاَحِقُونَগ্ধ. (আসসালামু আ‘লা আহলিদ দিয়ারি মিনাল মু’মিনীন ওয়াল মুসলিমীন ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাকদিমীন মিন্না ওয়াল মুসতা’খিরীন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকূন।) ‘মুমিন-মুসলিম বাসিন্দাদের ওপর সালাম। আল্লাহ আমাদের পূর্ব ও পরবর্তী সবার ওপর রহম করুন। ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হব।’[মুসলিম : ৯৭৪; নাসাঈ : ২০৩৯।] মসজিদে কুবা’: ============== মদীনা শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিষ্ঠিত প্রথম মসজিদ এটি। মক্কা থেকে মদীনা শরীফে হিজরতের পথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে কুবা [মদীনা শরীফের অদূরে একটি গ্রামের নাম। বর্তমানে এটি মদীনা শরীফের অংশ।] পল্লীতে আমর ইবন আউফ গোত্রের কুলছুম ইবন হিদমের গৃহে অবতরণ করেন। এখানে তাঁর উট বাঁধেন। তারপর এখানেই তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এর নির্মাণকাজে তিনি সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। এ মসজিদে তিনি নামাজ পড়তেন। এটিই প্রথম মসজিদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে তাঁর সাহাবীদের নিয়ে প্রকাশ্যে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। এ মসজিদের কিবলা প্রথমে বাইতুল মাকদিসের দিকে ছিল। পরে কিবলা পরিবর্তন হলে কা‘বার দিকে এর কিবলা নির্ধারিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে চাইতেন। সপ্তাহে অন্তত একদিন তিনি এ মসজিদের যিয়ারতে গমন করতেন। হযরত ইবন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা তাঁর অনুকরণে প্রতি শনিবার মসজিদে কুবার যিয়ারত করতেন। হযরক ইবন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা বলেন, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি শনিবারে হেঁটে ও বাহনে চড়ে মসজিদে কুবায় তাশরীফ নিয়ে যেতেন।’[বুখারী : ১১৯৩; মুসলিম : ১৩৯৯।] মসজিদে কুবার ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَنْ خَرَجَ حَتَّى يَأْتِىَ هَذَا الْمَسْجِدَ مَسْجِدَ قُبَاءٍ فَصَلَّى فِيهِ كَانَ لَهُ عِدْلَ عُمْرَةٍগ্ধ ‘যে ব্যক্তি (ঘর থেকে) বের হয়ে এই মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে কুবায় আসবে। তারপর এখানে নামাজ পড়বে। তা তার জন্য একটি উমরার সমতুল্য।’[হাকেম, মুস্তাদরাক : ৩/১২।] শুহাদায়ে উহুদের মাযারসমূহ: =========================== ২য় হিজরীতে সংঘটিত উহুদ যুদ্ধের শহীদদের মাযারসমূহ যিয়ারত করা। তাঁদের জন্য দো‘আ করা এবং তাঁদের জন্য রহমত প্রার্থনা করা। সপ্তাহের যেকোন দিন যে কোন সময় যিয়ারতে যাওয়া যায়। অনেকে জুমাবার বা বৃহস্পতিবার যাওয়া উত্তম মনে করেন। উপরোল্লিখিত স্থানগুলোতে যাওয়ার কথা হাদীসে এসেছে বিধায় সেখানে যাওয়া সুন্নত। এছাড়াও মদীনা শরীফতে আরো অনেক ঐতিহাসিক ও স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে। যেমন: মসজিদে কিবলাতাইন, মসজিদে ইজাবা, মসজিদে জুমা‘, মসজিদে বনী হারেছা, মসজিদে ফাত্হ, মসজিদে মীকাত, মসজিদে মুসাল্লা ও উহুদ পাহাড় ইত্যাদি। মসজিদে কিবলাতাইন: ====================== এটি একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। মদীনা শরীফ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে খাযরাজ গোত্রের বানূ সালামা গোত্রে অবস্থিত। বনূ সালামা গোত্রের মহল্লায় অবস্থিত হওয়ার কারণে মসজিদে কিবলাতাইনকে মসজিদে বনী সালামাও বলা হয়। একই নামাজ এই মসজিদে দুই কিবলা তথা বাইতুল মাকদিস ও কা‘বাঘরের দিকে পড়া হয়েছিল বলে একে মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ বলা হয়। হযরত বারা’ ইবন আযেব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে ষোল বা সতের মাস নামাজ পড়েছেন। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনে মনে কা‘বামুখী হয়ে নামাজ পড়তে চাইতেন। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন, قَدۡ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجۡهِكَ فِي ٱلسَّمَآءِۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبۡلَةٗ تَرۡضَىٰهَاۚ فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۚ وَحَيۡثُ مَا كُنتُمۡ فَوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ شَطۡرَهُۥۗ ‘আকাশের দিকে বার বার আপনার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখছি। অতএব আমি অবশ্যই আপনাকে এমন কিবলার দিকে ফিরাব, যা আপনার নিকট পছন্দনীয় হবে। সুতরাং আপনার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরিয়ে নিন এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকেই তোমাদের চেহারা ফিরাও।’[বাকারা : ১৪৪।] এ আয়াত নাযিল হবার সাথে সাথে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বার দিকে ফিরে যান।’[বুখারী : ৩৯৯।] ইবন সা‘দ উল্লেখ করেন, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানূ সালামার উম্মে বিশর ইবন বারা’ ইবন মা‘রূর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহার সাক্ষাতে যান। তাঁর জন্য খাদ্য প্রস্তুত করা হয়। ইতোমধ্যেই যোহর নামাজের সময় ঘনিয়ে আসে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের নিয়ে দুই রাক‘আত নামাজ পড়েন। এরই মধ্যে কা‘বামুখী হওয়ার নির্দেশ আসে। সাথে সাথে (সালাতের অবশিষ্ট রাক‘আতের জন্য) তিনি কা‘বামুখী হয়ে যান। এ থেকেই মসজিদটির নাম হয়ে যায় মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ।’[ড. ইলিয়াস আবদুল গনী, আল-মাসাজিদ আল-আছারিয়্যা : পৃ. ১৮৬।]

Sunday, July 22, 2018

জানাযা যখন কথা বলে !!


জানাযা যখন কথা বলে:(কপি ও শেয়ার করুন) আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক উপাধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদ্রাসা ইবনে তাইমিয়ার জানাযার নামাযে অংশ নেয়া মানুষের সংখ্যা নিয়ে তার অনুসারীরা সকল যুগেই খুব গৌরব করে থাকে। এত মানুষের বিস্ময়কর উপস্থিতি! এটাকে তারা হক্কানিয়্যতের অন্যতম দলিল হিসেবে গ্রহণ করে ও প্রচার করে। তার জানাযার নামাযে ১৫ হাজার নারীসহ ৬০ হাজার কিংবা সত্তর হাজার, মতান্তরে আশি হাজার কিংবা দুই লক্ষ উপস্থিতির মত পাওয়া যায়। ইবনে তাইমিয়া অনুসারীদের কাছে এটা খুব গৌরবের। তারা হয়ত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রা. এর জানাযার ইতিহাস দেখেনি। তাঁর জানাযায় শুধু মহিলাভক্তই এসেছেন ৬০ হাজার। আর অংশগ্রহণকারী পুরুষের সংখ্যা বিভিন্ন মতের মধ্যে ৮ লক্ষ পর্যন্ত পাওয়া যায়। হযরত আহমদ বিন হাম্বল রা. জীবদ্দশায় বিদআতী ফেরকা মুতাজিলা ও জাহমিয়াদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন: قولوا لأهل البدع بينا وبينكم الجنائز- "বিদআতীদের বলে দিও, আমার এবং তোমাদের মধ্যে জানাযার নামায পার্থক্য নির্দেশ করবে।" ঠিক তাই হয়েছে। আট লক্ষ মানুষের জানাযায় অংশগ্রহণ কম কথা নয়। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রা. এর কাছে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিনখানা পবিত্র চুল মোবারক সংরক্ষিত ছিল। তিনি অসিয়ত করেছিলেন, 'মৃত্যুর সময় যাতে দুই চোখে দুইখানা এবং মুখের উপর একখানা চুল মোবারক রাখা হয়'। এবং অসিয়ত অনুসারে তাই করা হয়েছিল। তাবারুক বিরোধীদের ক্ষেপে যাওয়ার কিছু নেই। ইবনে তাইমিয়া গোসল দেয়ার পর অবশিষ্ট পানিও ভক্তরা সকলে মিলে পান করেছিল। জেয়ারত বিরোধী হিসেবে পরিচিত ইবনে তাইমিয়াকে দাফন করার পর অনেকদিন পর্যন্ত ভক্তরা তার কবরে আসা-যাওয়াও অব্যাহত রেখেছিল। হযরত আহমদ বিন হাম্বল রা. এর জানাযা সম্পর্কে তাঁর উক্তিটা আবার লক্ষ করুন। বিরোধীপক্ষের জন্য তাঁর জানাযার নামায কথা বলেছিল। তাহলে গত শুক্রবারে ওফাতপ্রাপ্ত তাজুশ শরীয়া রহ. এর জানাযার নামায ইতিহাসের পাতায় কি সংলাপ রেখে গেল!!

Friday, July 20, 2018

শোকাহত 😓😰


শোকাহত : গোটা বিশ্বে কয়েকজন বড় আলমের মধ্যে যাকে গণনা করা হয়, উনি হলেন তাজুশ শরীয়া আল্লামা আখতার রেযা আযহারী। তিনি আজ 20/7/2018 বাদে ইশা ইন্তেকাল করেছেন । ইন্না নিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ পাক ওনাকে জান্নাতের আ'লা মকাম নসীব করুন। আমীন।

Thursday, July 19, 2018

রাসূল (দঃ) এঁর অধিক বিবাহ ; প্রেক্ষাপট ও শিক্ষা-১


মুহাম্মদ আবু সাইদ। বলছিলাম ইসলাম বিদ্বেষীদের কথা। তাদের প্রবেশ পথ সম্পর্কে আগেই বলেছি। ইসলাম মানেই রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর নামে নাস্তিকতা কাজে ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রধান এবং প্রথম টার্গেট ওখানেই। "রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক বিবাহ করেছেন কেন? তিঁনি করলেন দশাধিক আর উম্মতকে দিলেন সর্বোচ্চ চারটি, অন্যায় নয় কি? তিঁনি কেমন চরিত্রবান ছিলেন যে পুত্রবধূকে বিবাহ করেছেন?" (নাউযুবিল্লাহ্) রাসূলে খোদার বিবাহ সংক্রান্ত এমন আরও বহু সস্তা যৌক্তিকতার ভিত্তিতে কিছু প্রশ্ন তারা করে থাকে। আলহামদুলিল্লাহ্, তাদের জবাব‌ও আছে আমাদের নিকট। এখন শুধু জায়গা মতো সাহস করে পাল্টা জবাব দিতে হবে। বীর বাহাদুরের মতো চ্যালেঞ্জ ছুড়তে হবে। যেন তারা তাদের ভিত্তিহীন ভিটে মাটি নিয়ে কিছুটা হলেও শঙ্কিত হয়। এই 'কিছুটাই' হবে মোদের সাকসেস। চলুন, শুরু করা যাক! [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বারোটি বিবাহ্ মোবারক নিয়ে আলোচনা করব। তিনটি পর্বে বিভক্ত। প্রতিটি পর্বে চারটি করে বিবাহ্‌র পটভূমি এবং শিক্ষা নিয়ে আলোচনা থাকবে।] ১. হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। ছিলেন বিধবা। মৃত স্বামীর উত্তরাধিকার সূত্রে খ্যাতনামা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। স্বভাব-চরিত্রে তৎকালীন আরবের সর্বোত্তম নারী। উপাধিও ছিল 'ত্বাহিরাহ্' - বিশুদ্ধ, পবিত্র। বলা হতো, খাদিজাতুত ত্বাহিরা। ব্যবসার সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে পরিচয়। ভালো লেগেছে। মনে ধরেছে। এমন ধরা ধরেনি কখনো পূর্বে! বিয়ের জন্য পয়গাম পাঠালেন রাসূলের দরবারে। অভিভাবক রূপে তখন‌ও বিদ্যমান চাচাদের অনুমতি নিলেন। অতঃপর সানন্দে রাজি হলেন। বিবাহ্ মোবারক সম্পন্ন হলো। তখন মা খাদিজার বয়স ৪০ এবং রাসূলে আরাবীর মাত্র ২৫। শিক্ষা: রূপ-লাবণ্য-যৌবন নয় বরং সৎ গুণে গুণান্বিত আদর্শবান নারীই হবে একজন পুরুষের পারফেক্ট জীবনসঙ্গিনী। পরবর্তী দীর্ঘ পঁচিশ বছরের সোনালী সংসারের দিকে তাকালেই ঠিক বুঝতে পারবেন, একজন সৎ গুণে গুণান্বিত আদর্শবান স্ত্রী, স্বামীর সফলতার পিছনে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ সহায়িকার ভূমিকা পালন করে! হযরত পূর্বে এমনটা অনুভূত করেছিলেন বলেই পঁচিশ বছরের টগবগে যুবক হয়েও চল্লিশ বছরের বিধবা মহিলা মা খাদিজাতুল কুবরা-কে সানন্দে বিবাহ্ করেছিলেন। মূল কারণে সেই, 'সৎ, পবিত্র, আদর্শ'! দ্বিতীয়তঃ মা খাদিজাতুল কুবরা-কে বিবাহ্ করার মাধ্যমে তাঁকে সর্বপ্রথম ইসলাম কবুলকারী হিসেবে চিরসৌভাগ্যমণ্ডিত করলেন। সর্বপ্রথম ইসলাম কবুলকারী - একজন নারী। নারীজাতির জন্য কতখানি গর্বের বিষয়, ভাবা যায়? একজন নারীর জন্য এঁর চেয়ে বড় গর্বের, ইজ্জত সম্মান আর মর্যাদার বিষয় কি হতে পারে? ইজ্জত সম্মানহীন অবহেলিত-‌উপেক্ষিত, নিপীড়িত নারীজাতিকে 'গর্বোজ্জ্বল নারীজাতি'-তে পরিণত করলেন। ইসলাম প্রদত্ত নারীজাতির সর্বোচ্চ মর্যাদাই যেন এটা! ২. হযরত সাওদা বিনতে জাময়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। তিঁনি ইসলাম গ্রহণ করলেও তাঁর পিতা তখন‌ও খ্রিষ্টান ছিলেন। হঠাৎ তাঁর স্বামীর মর্মান্তিক ইন্তেকাল। এমতাবস্থায় কি করবেন ভেবে কুল পাচ্ছিলেন না! কার কাছে যাবেন, কিভাবে বাকি জীবন অতিবাহিত করবেন তা নিয়েই সর্বক্ষণ পেরেশান। পিতা খ্রিষ্টান হ‌ওয়ায় পিতৃকুলে উঠতে পারছিলেন না। অপরদিকে রাসূলে খোদা মা খাদিজাতুল কুবরা-কে হারিয়ে নিঃস্ব, একা হয়ে পড়লেন। ঘরের সমস্ত কাজ একাই করতে লাগলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খালার সিদ্ধান্তে হযরত সাওদা বিনতে জাময়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা 'উম্মুল মু'মিনীন' এঁর মর্যাদায় সিক্ত হোন। শিক্ষা: স্বামীর ইন্তেকালের পর স্বভাবত‌ই একজন নারীর ঠাই হয় পিতৃকুল। কিন্তু শুধুমাত্র ধর্মান্তরিত হবার কারণে যখন একজন অসহায় নারী পিতৃকুলেও স্থান পাচ্ছে না তখন ঐ ধর্মের উপর কিংবা ঐ ধর্মাবলম্বী লোকদের উপর একটি দায়িত্ব এসে পড়ে না? অনিচ্ছা সত্ত্বেও মানবতা আপনার ঘাড়ে কর্তব্য চাপিয়ে দিবে। আর সেখানে ধর্মীয় প্রধান হিসেবে, রাহমাতুল্লিল আলামীন রূপে আগত রাসূলে আরাবীর দায়িত্ব-কর্তব্য কিরূপ হ‌ওয়া চাই? কতটা ভারী হতে পারে বোঝা? ঠিক এ কর্তব্যপরায়ণের জায়গা থেকেই হযরত সাওদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে বিবাহ্ করা। ৩. হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর প্রিয়তম কন্যা। সিদ্দিকে আকবর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পর সবচে বেশী ভালবাসেন যাকে সেই আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-কে হযরতের কদমে সোপর্দ করলেন। হযরত উৎফুল্লচিত্তে গ্রহণ করলেন। কিন্তু ঘরে তুললেন না। তখন মা আয়েশার বয়স দশের কোটাও পার হয়নি। অতঃপর হিজরত করলেন। হিজরতের কিছুদিন পর রাসূলে কারীম আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-কে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ব্যবস্থা করলেন। নিজের কাছে নিয়ে আসলেন। ঘরে তুললেন। তখন মা আয়েশার বয়স কিন্তু ঘরে তুললেন না। তখন মা আয়েশার বয়স দশের কোটাও পার হয়নি। অতঃপর হিজরত করলেন। হিজরতের কিছুদিন পর রাসূলে কারীম আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-কে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ব্যবস্থা করলেন। নিজের কাছে নিয়ে আসলেন। ঘরে তুললেন। তখন মা আয়েশার বয়স দশাধিক। শিক্ষা: হিজরতের পূর্বে রাসূলে আরাবী আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-কে ঘরে তুলেননি। হিজরতের পরে মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও রাহমাতুল্লিল আলামীন আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-কে মদিনায় নিজের কাছে নিয়ে আসার সমস্ত ব্যবস্থা করলেন। কেন? হযরত কি পারতেন না উনাকে মদিনায় রেখে দিতে? মক্কা তে দিব্যি ভালোই চলছিল। মদিনায় হিজরতের জরুরত কি ছিল? এই পয়েন্টে আছে আমাদের জন্য চরম শিক্ষা। স্ত্রীকে বেশীদিন দূরে রাখা যাবে না। কাছাকাছি থাকতে হবে। তুমি যেখানে বাস করবে সেখানে সাথে স্ত্রীর বাসের‌ও ব্যবস্থা করতে হবে। চাই তুমি যেখানেই যাও না কেন! তোমার উপর তোমার স্ত্রীর যথেষ্ট হক্ব আছে। হক্ব আদায় করার নিমিত্তে এবং স্ত্রীকে আপন বন্ধনে হেফাজত করতে তাকে কাছে নিয়ে আসো। এতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হ‌ওয়া চলবে না। রাসূলে খোদা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-কে মদিনায় হিজরতের মাধ্যমে ঘরে তুলে এই সূক্ষ্ম শিক্ষাটাই প্রেক্টিক্যাল দেখালেন উম্মতদেরকে। যেন কোনো অবস্থাতেই স্ত্রীর প্রতি কেহ গাফেল না হোন। অর্ধাঙ্গিনীর প্রতি সুবিচার করণে এঁর চেয়ে উত্তম উদাহরণ আর কি হতে পারে! ৪. হযরত হাফসা বিনতে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। বদর যুদ্ধে উনার স্বামী আহত হয়ে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তিঁনি ঠাই পেলেন পিতৃকুল তথা হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট। কিন্তু হযরত উমর উনার এই বিধবা কন্যার ভবিষ্যত নিয়ে গভীর চিন্তায় পড়েন। হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে গেলে তিঁনি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। হযরত আবু বকর‌ও এ ব্যাপারে কিছু বলছেন না। এ নিয়ে ফারুকে আযম বিপাকে পড়ে যান। সারাক্ষণ টেনশনে থাকেন মেয়েকে নিয়ে। এমতাবস্থায় আসলেন দরবারে মোস্তফায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সমস্ত ব্যাপার খুলে বললেন। অতঃপর রাসূলে খোদা হযরত হাফসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-কে বিবাহ্ করতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এতে হযরত উমর চিন্তামুক্ত হন। আর মাহবুবে খোদার ঘরে আপন কন্যাকে পাঠাতে পেরে ফারুকে আযম কতটা খুশি হয়েছেন সেটা জ্ঞানী পাঠক মাত্র‌ই বুঝতে পারবেন। আরেকটা সূক্ষ্ম বিষয় বুঝতে পেরেছেন? দরবারে মোস্তফা থেকে কেউ খালি হাতে ফিরে না। নৈরাশ হয় না। কিছু না কিছু মিলে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে অনেক সময় চাওয়ার চেয়ে পাওয়ার মাত্রাটা অত্যাধিক বেশী হয়। প্রমাণিত। শিক্ষা: বদর যুদ্ধে আহত স্বামী কিছুদিন পর ইন্তেকাল করেছেন। ঠাই পেয়েছেন পিতৃকুলে। কিন্তু ভবিষ্যত অন্ধকার। বাবা প্রাণপণে চেষ্টা করছেন উপযুক্ত পাত্রের নিকট মেয়ের বিবাহের জন্য। কিন্তু বারংবার হতাশা নিয়েই ঘরে ফিরছেন। কার কাছে সপে দিবেন কন্যাকে? ভবিষ্যত জীবন কাটবে কিভাবে? এমতাবস্থায় আশ্রয়দাতার ভূমিকায় রাহমাতুল্লিল আলামীন। চিন্তিত বাবাকে চিন্তামুক্ত করলেন। হতাশাগ্রস্থ পিতাকে ভারমুক্ত করলেন। আশ্রয়হীন কন্যাকে আশ্রয় দিলেন। সম্বলহীন নারীকে ঘরে তুললেন। দাসীরূপে নয় ; স্ত্রীর মর্যাদা দানে। মানবতা বুঝি একেই বলে! 'রাহমাতুল্লিল আলামীন' এঁর রহমতের ঝলক দেখা গিয়েছিল খানিকটা। দরবারে মোস্তফায় চিন্তিত ব্যক্তি নিশ্চিন্ত হয়। হতাশাগ্রস্থ - প্রফুল্লিত হয়। নিরাশ্রয় - স্ব-সম্মানে আশ্রয় পায়। সম্বলহীন ব্যক্তির কিছু চাওয়ার থাকে না। সম্বলের বণ্টন‌ই তো হচ্ছে সর্বক্ষণ! একটু লক্ষ্য করুন! উল্লিখিত চারটি বিবাহের প্রতিটিতেই নারীর মর্যাদা নিহিত। প্রথমটিতে গুণ, আদর্শ। দ্বিতীয়তে নৈতিকতা, কর্তব্যবোধ। তৃতীয়তে সুবিচার, যথাযথ হক্ব আদায়। চতুর্থতে আশ্রয়, মানবতাবোধ। আচ্ছা! যারা ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণার্থে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অধিক বিবাহের উপর বাঁকা আঙ্গুল তুলে তারাও কি এ শিক্ষণীয় বিষয়গুলো অস্বীকার করতে পারবে? যে নারীরা স্বার্থের মোহে পড়ে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করে তারা কি এ বিষয়সমূহ এড়িয়ে যেতে পারবে? চাইলেই কি এড়িয়ে চলা সম্ভব? তারাই তো এসবের ব্যানার লাগিয়ে নিজেদের দল ভারী করতে ব্যস্ত! আদতে তাদের কর্ণকুহরে এসব প্রবেশ করবে না কখনো। কারণ তারা বধির। কেমন বধির? ওয়া লাহুম আযানূন, লা ইয়াসমায়ুনা বিহা।(তারা শুনেও শুনে না) তাদের চোখ কখনো দেখবে না এ তৃপ্তিকর বিষয়গুলো। কারণ তারা অন্ধ। কেমন অন্ধ? ওয়া লাহুম আ'য়ূন, লা ইয়ূবচিরুনা বিহা। (তারা দেখেও দেখে না) তাদের মর্যাদা কত উচ্চস্তরের (!) জানেন? কাল আনয়াম ; বাল হুম আদ্বাল। (চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট) এসব বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা মানে 'কানার হাতি দেখা'! তবুও যথাসম্ভব দায়িত্ব পালন করে যাই। যেন ধরা না খেতে হয়।

আয়ে সবজ গুম্বাদ ওয়ালে..... 😓


আয়ে সবজ গুম্বাদ ওয়ালে আ'লা হযরত রহঃ রচিত জগদ্বিখ্যাত একটি না'ত-এর বাংলা কাব্যানুবাদ- যতবার শুনি ততবার কাঁদি! আপনিও কাঁদুন! ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী اے سبز گنبد والے منظور دعا کرنا جب وقت نزع آئے دیدار عطا کرنا ১। উচ্চারণঃ- এয় সাবজে গুম্বাদ ওয়ালে মানজুর দুয়া কারনা জব ওয়াক্তে নাজা' আয়ে দীদারে 'আত্বা কারনা কাব্যনুবাদঃ- ওগো স-বুজ গম্বুজ-ওয়ালা-- গ্র-হ--ণ করুন আর্জি নি-দান কা-লে- দেখা- দিবেন, এ- ছাড়া আর চাই কি? اے نور خدا آکر آنکھوں میں سما جانا یا در پہ بلا لینا یا خواب میں آ جانا اے پردہ نشیں دل کے پردہ میں رہا کرنا جب وقت نزع آئے دیدار عطا کرنا ২। উচ্চারণঃ- এয় নূরে খোদা আ-কার আঁখো মে ছামা জানা ইয়া দর পে বোলা লেনা ইয়া খওবে মে আ-জানা এয় পরদা নাশি দিল কে পরদাহ মে রাহা কারনা জব ওয়াক্তে নাজা' আয়ে দীদারে 'আত্বা কারনা কাব্যনুবাদঃ- ওগো নূ-রে খো-দা প্রি-য়--, এ-সে-- দেখা দেন গো না হয় মোরে ডেকে নিন গো, না হয় স্বপ্নে দেখা দেন ওগো দিলের পর্দা হরি, পর্দায় রেখে দেন গো নি-দান কা-লে- দিবেন দেখা-, এ- ছাড়া আর চাই কি? میں قبر اندھیری میں گھبراوں گا جب تنہا امداد میری کرنے آ جانا میری اقا امداد میری تم آ جانا رسول اللہﷺ روشن میری تربت کو اے نور خدا کرنا جب وقت نزع آئے دیدار عطا کرنا ৩। উচ্চারণঃ- ম্যে ক্বাবরে আন্ধেরি মে ঘাবরাওঁ গা জব তনহা ইমদাদ মেরি কারনে আ-জানা মেরি আক্বা [ইমদাদ মেরি তুম আ-জানা রাসুলাল্লাহ! (দরূদ)] রোওশন মেরি তুরবাত কো এয় নূরে খোদা কারনা জব ওয়াক্তে নাজা' আয়ে দীদারে 'আত্বা কারনা কাব্যনুবাদঃ- ওই কবরে, অন্ধকারে--, ভী-ত এ-কা যখন করতে ম-দদ প্রিয়- মোরে, আসবেন গো- তখন [করতে মদদ আমায় আসুন ইয়া রাসূলাল্লাহ] রওশন করুন কবর আমার, ওগো নূরে খোদা নি-দান কা-লে- দিবেন দেখা-, এ- ছাড়া আর চাই কি? مجرم ہوں زمانہ کا محشر میں بھرم رکھنا رسواء زمانہ ہوں دامن میں چھپا لینا مقبول یہ عرض میری للہ ذرا کرنا جب وقت نزح آئے دیدار عطا کرنا ৪। উচ্চারণঃ- মুজরিম হো যামানা কা মেহশের মে ভ্রম রাখনা রুছওয়া জামানা হুঁ দামান মে ছুপা লে না মাক্ববুল ইয়ে আরজ মেরি লিল্লাহ জারা কারনা জব ওয়াক্তে নাজা' আয়ে দীদারে 'আত্বা কারনা কাব্যনুবাদঃ- যুগোসেরা পাপী আমি, হাশরে ভ্রম বাঁচান অপমানে কঠিন দিনে, পদতলে ঠাঁই দিন [অপমানে কঠিন দিনে, জা-হান্নাম থেকে বাঁচান] আমার এই আরজ খানি, ওগো কবুল করে নিন নি-দান কা-লে- দিবেন দেখা-, এ- ছাড়া আর চাই কি? چہرے سے ضیا پائی ان چاند ستاروں نے اس در سے شفا پائی دکھ درد ے کے ماروں نے آتا ہے ان میں صابر ہر دکھ کی دوا کرنا جب وقت نزع آئے دیدار عطا کرنا ৫। উচ্চারণঃ- চেহরে ছে জিয়া পায়ি উন চান্দে ছিতারো নে উছ দর ছে শাফা পায়ি দুখ দরদে কে মারোঁ নে আতা হে উন মে ছাবের হার দুখ কি দাওয়া কারনা জব ওয়াক্তে নাজা' আয়ে দীদারে 'আত্বা কারনা কাব্যনুবাদঃ- যে চেহারার রশনি পেয়ে চাঁদ-সেঁতারা হাসে সে দরদীর শাফায়াতে, দুঃখ যাবে ভেসে এই অধমে ভরসা করে বাঁচি সে আশায় নি-দান কা-লে- দিবেন দেখা-, এ- ছাড়া আর চাই কি?

এম.এ মান্নানের বদান্যতা ; বেয়াদবদের নিমকহারামী।

লেখক মুহাম্মদ আবু সাইদ। আ'লা হজরত। একটি উপাধি। একজনের সিলমারা খেতাব। উপমহাদেশের‌ই একজন তিঁনি। ইমাম আহমদ রেজা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলাইহি। আ'লা হজরতের সাথে পরিচিত ছিলাম না আমরা। চিনতাম না তাঁকে। জানতাম না কিছুই। এপার - ওপার। মাঝে বিস্তর ফরক। বিশাল দূরত্ব। সেতুবন্ধন গড়ে দেবার মতো নিঃস্বার্থবান কেউ নেই। হঠাৎ একজনের শুভাগমন। সেতুবন্ধন গড়ার মানসেই তিঁনি আসলেন। বেরলভী টু বাংলা। সেতুর মূল খুঁটি গাড়লেন। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে। নাম দিলেন - জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া। একনামে জামেয়া। 'বেরলভী টু বাংলা'র অমর সেতুবন্ধনের কারিগর হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি আল-কাদেরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। বাংলায় আ'লা হজরতের অনুপ্রবেশ জামেয়ার মাধ্যমে। বরণ করলেন তিঁনি - যাঁর মোবারক তনুতে আ'লা হজরতের মালিকের নূরানী খুন প্রবাহিত। আ'লা হজরত আসলেন ঠিক‌ই। তবে তাঁকে আমরা ঠিকঠাক বুঝতে পারছি না। তাঁর ভাষা বুঝতে পারছি না। বোধগম্য হচ্ছে না কিছুই। ভাষাই যদি না বুঝি তবে কিভাবে বুঝব - তিঁনি কি বলতে চান? কোন সেই সত্তার প্রেমে সিক্ত হয়ে তিঁনি আমাদেরকেও 'প্রেমিক' বানাতে চান? কৌতূহল কখনোই মিটবে না মোদের। কারণ আমরা তাঁর ভাষাই বুঝে উঠতে পারছি না! তাঁর মিশন সম্পর্কে তো অজ্ঞ‌ই থেকে যাব। ঠিক এজন্য‌ই আতিথেয়তা করতে পারছি না নিঃস্বঙ্কোচে। ব্যর্থতা আমাদের। অন্তত চক্ষুলজ্জা থাকায় বলতেও পারছি না কিছু। একজন বুঝলেন। আমাদের মন পড়লেন। একটি বৃহৎ বাংলাভাষী সুন্নী জনগোষ্ঠীর চাপা কষ্ট - আর্তনাদের চিৎকার যেন তাঁর কর্ণকুহরে ধ্বনিত হচ্ছিল বারংবার। কাজ শুরু করে দিলেন। আ'লা হজরতের সাথে বাংলার আ'ম সুন্নীদের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে র‌ওয়ানা হলেন। তিঁনি জানতেন পথটা ঠিক “দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, দুস্তর পারবার”। তবুও সাহস নিয়ে চললেন। পরবর্তী গল্পটা সকলের‌ই জানা। 'কানযুল ইমান' অনুবাদ করলেন। আ'লা হজরতকে চিনালেন কিছুটা হলেও। বিপ্লব সৃষ্টি করলেন বাংলায়। ইতিহাসে কুরআন শরীফের এমন বিশুদ্ধ বাংলা অনুবাদ পূর্বে কেউ করেছেন কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সেতু প্রশস্ত হলো। বাংলাভাষী সুন্নী জনগোষ্ঠী পেল আক্বীদার 'সোনার হরিণ'। শুধুমাত্র বাংলাদেশ‌ই নয় বরং পাক-ভারত উপমহাদেশের অত্যন্ত সমাদৃত একটি অনুবাদগ্রন্থে পরিণত হলো। গ্রহণযোগ্য অনুবাদ। সুন্দর - সাবলীল। এখানেই থেমে থাকেননি। কুরআন শরীফের পর হাদিস শরীফের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করলেন। হাদিস শরীফের জগতে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য কিতাব 'মিশকাতুল মাসাবীহ'। উক্ত কিতাবের শরাহ্ লিপিবদ্ধ করেছেন 'মির‌আত শরহে মিশকাত' মুফতি আহমাদ ইয়ার খান ন‌ঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। মিশকাত শরীফের ব্যাপক ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'মির‌আত শরহে মিশকাত' এঁর‌ও অনুবাদ করেছেন তিঁনি। ছয়টি বিশাল বিশাল খণ্ডে বিভক্ত। চারদিকে যখন সহীহ হাদিসের দোহাই দিয়ে আ'ম জনতার ইমান হরণে ব্যস্ত সালাফীরা ঠিক তখনি হাদিস শরীফের এমন বিশাল খেদমত অতীব প্রয়োজনীয় এবং প্রশংসনীয়। এমন আরও বহু প্রসিদ্ধ এবং প্রয়োজনীয় কিতাবাদি সরল-সাবলীল ভাষায় বিশুদ্ধ অনুবাদ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের জন্য, বিশেষ করে সুন্নীদের জন্য ত্রাণকর্তার ভূমিকায় আসীন হয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মান্যবর চেয়ারম্যান, আঞ্জুমান রিচার্স সেন্টারের মহাপরিচালক মাওলানা এম.এ মান্নান সাহেব হুজুর (মাঃ জিঃ আঃ)। বড় অকৃতজ্ঞ আমরা। আমাদের মনের তৃষ্ণা মেটাতে যে লোকটা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন অগণিত সেই লোকটার ঘুম কেড়ে নিয়েছি আজ‌ও - সমালোচনার মাধ্যমে। অপবাদে জর্জরিত করছি। লিস্ট করে একের পর এক দোষ জাহির করেই চলেছি। আমাদের উপর তাঁর এহসান-বদান্যতা-উদারতা-মহানুভবতা ভুলে গিয়ে বিক্ষিপ্ত গুটিকয়েক বেখেয়ালী ভুলের সমালোচনায় টেবিল গরম করছি। ব্যস্ত সময় পার করছি তাঁর কুৎসা রটনায়। এক্ষেত্রে আমরা শুধু অকৃতজ্ঞ নয় বরং নিমক হারাম। ফেসবুকের কল্যাণে কিছু চরম নিম্নস্তরের বেয়াদব দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে আজ। সুস্পষ্টভাবে সত্য প্রকাশের দরুন আজ তাঁকে জনসম্মুখে 'ডিলিট' করে দিচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণিত ষড়যন্ত্রের কৌশল আঁটছে। ওহে নিমকহারামীর দল! আর কত নিচে নামবে? কোনোদিন তাঁর অনুবাদকৃত কানযুল ইমান পড়নি? একবার‌ও না? 'মির‌আত শরহে মিশকাত' পড়ার‌ও সৌভাগ্য হয়নি? গাউছে পাক সম্পর্কে জানতে 'বাহ্‌জাতুল আসরার' অধ্যায়ন করোনি? এই দুর্বোধ্য কিতাব পাঠ করে গাউছে পাকের কারামত বর্ণনা করনি? 'ফয়যানে সুন্নত' এঁর বদান্যতায় একটি সুন্নত‌ও আকড়ে ধরোনি? শেরে বাংলার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে 'দিওয়ানে আজিজ' খরিদ করোনি? তোমার ইমান হেফাজত করতে, শিয়াদের প্রতিহত করতে 'হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু' এঁর আশ্রয় নাওনি? মাহবুবে খোদার শান-মান সম্পর্কে কিঞ্চিৎ জানতে 'শানে রিসালাত' -এ ডুব দাওনি? প্রতিটি উত্তর‌ই নেতিবাচক। যদি একটি উত্তর‌ও ইতিবাচক হয় তবে তুমি নিম্নস্তরের নিমকহারাম । 'নিমকহারাম' শব্দটা বুঝি তোমার জন্য‌ই সৃজিত। প্রতিদিন 'নিমক' খেয়েও যে নিমকহারামী করে সে অন্য কেউ নয়, অবশ্যই তুমি। অনুবাদিত 'কানযুল ইমান' এঁর মাধ্যমে যদি একজন ব্যক্তির ইমান হেফাজত হয় তবে কৃতজ্ঞতার তশতরিতে আ'লা হজরতের সাথে অতিক্ষুদ্র মেহমান হিসেবে স্থান পাবে মাওলানা এম.এ মান্নান। 'মির‌আত শরহে মিশকাত' পড়ে একজন ব্যক্তি হাদিস শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা জানলে সেই কৃতিত্বে মুফতি আহমাদ ইয়ার খান ‌ন‌ঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একাংশের ভাগীদার হলেও করবেন এই প্রখ্যাত অনুবাদককে। 'বাহজাতুল আসরার' অধ্যায়ন করে কেহ গাউছে পাকের আশেক্ব হলে গাউছে পাক থেকে সামান্য কিছু হলেও তাঁর প্রতিদান পাবেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মান্যবর চেয়ারম্যান। 'ফয়যানে সুন্নত' এঁর দ্বারা কারো জীবনে যদি একটি আমল‌ও পরিবর্তন হয় তবে ইলিয়াস আত্তারী কাদেরী (মাঃজিঃআঃ) এঁর সাথে অতিক্ষুদ্র সংখ্যক হলেও নির্দিষ্ট একটি সাওয়াব লিপিবদ্ধ হবে আঞ্জুমান রিচার্স সেন্টারের মহাপরিচালকের অদৃশ্য খাতায়। 'শানে রিসালাত' পাঠে মাহবুবে খোদার প্রেমে যদি সিক্ত হয় একজনের‌ও মন তবে মদিনাওয়ালা উত্তম প্রতিদান দানকারী। এমন আরও অসংখ্য বাক্য সাজাতে পারব তাঁর নিমিত্তে যাঁর জন্য আমি বাংলাভাষী হয়েও জগদ্বিখ্যাত মশহুর আরবী-উর্দু কিতাব নির্দ্বিধায়-নিঃস্বঙ্কোচে অধ্যায়ন করতে পারছি। শেষোক্তে বলব একটি কথা, সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক নির্মিত 'বেরলভী টু বাংলা'র অমর সেতুবন্ধন আজ এতটা সুখ্যাতি-প্রশস্তটা লাভ করেছে যাঁর বদৌলতে, তা হচ্ছে 'কানযুল ইমান'। আর আজকের আমাদের 'কানযুল ইমান' প্রাপ্তির পিছনে যাঁর অবদান অনস্বীকার্য তিঁনিই হলেন আমাদের প্রকাশনা জগতের বাংলার আ'লা হজরত, মাওলানা এম.এ মান্নান সাহেব হুজুর। 'কানযুল ইমান' এঁর সফলতার ইতিহাসের সাথে যাঁর অবদান লিখা থাকবে যুগ-যুগ ধরে।

নজরুলের সুমধুর ছন্দে 'সেনানায়ক থেকে রাষ্ট্রশাসক'!

লেখক মুহাম্মদ আবু সাইদ। ১৭ হিজরী - ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দ। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফার খেলাফত চলমান। হযরত উমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাসনকাল। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট শোভা পাচ্ছিল মুসলমানদের শিরে।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ইসলামের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে দিকের পর দিক। একের পর এক রাজ্য জয় করেই চলছে মুসলিম সৈন্যরা। ইসলামের বাস্তব পরিধি বেড়েই চলছে...! কারো মাঝে নেই নূন্যতম ক্লান্তি কিংবা বিশ্রাম ফুরসত। 'উন্নত মম শির' এঁর বাস্তব উদাহরণ প্রতিটি সৈনিক! এমন অকাতর পরিশ্রমী ক্লান্তিশূন্য ; শ্রান্তিহীন আদর্শবান সৈনিকদের সেনাধ্যক্ষ কে? কার নেতৃত্বে তাঁরা বিরামহীনভাবে পরপর বহু প্রবল শক্তিশালী অমুসলিম রাজ্যে শান্তির নীড় স্থাপন করছিল? কার অনন্য স্কন্ধে ছিল তৎকালীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৈন্যদলের একক লিডারশীপ? যিঁনি ক্ষুদ্র-বৃহৎ শতাধিক যুদ্ধের বিজয়ী সেনাপতি, যাকে স্বয়ং রাসূলে খোদা উপাধি দিয়েছেন 'সাইফুল্লাহ্' সেই হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। অতিবাহিত হচ্ছে সেনাপতির জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়। হযরত উমরের সময়কালে সিরিয়া-দামেশক-ফিহল-হিমস আর ইয়ারমুকের ময়দানে রোমানদের ঐতিহাসিক বিশাল সৈন্যদলের বিপক্ষে বীরবিক্রমে জয়ের পর মহাবীর খালিদ যেন টগবগে ফুটছেন। 'সাইফুল্লাহ্' এঁর বাস্তব প্রমাণ যেন দিচ্ছেন তিঁনি। শুধুমাত্র জাযিরাতুল আরব নয় বরং যত স্থানে মুসলমান আছে তত স্থানে 'সাইফুল্লাহ্' এঁর প্রশংসাবাণী প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। হরদম চলছে খালিদের জিকির। তাঁর‌ই রেশ ধরে তৎকালীন খ্যাতনামা কবি আশ'‌আস রচনা করলেন সেনানায়কের প্রশংসায় বিশাল কাব্য। খালিদ বিন ওয়ালিদ শুনলেন। কবিতা পাঠ করলেন। তৃপ্তি পেলেন। আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে পুরস্কৃত করলেন রচয়িতাকে। দশ হাজার দিরহাম প্রদানের মাধ্যমে। দিরহামের অঙ্ক দেখে কিছুটা হলেও আঁচ করা যায়, সেনাপতি খালিদ কেমন খুশি হয়েছিল! স্বাভাবিকভাবেই চাপা র‌ইলো না এ কথা। আমিরুল মু'মিনীন এঁর কর্ণে প্রবেশ করল। বড় আশ্চর্যান্বিত হলেন। মর্মাহত‌ও বটে! তদন্তের নির্দেশ দিলেন। এত এত অর্থ তিঁনি কোথায় পেয়েছেন? কোন খাত থেকে খরচ করেছেন? তদন্তের মূল রিপোর্ট আসল। যদি সেনাপতি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ নিয়ে থাকেন তাহলে তিঁনি অবশ্যই অন্যায় করেছেন। আর যদি নিজ পকেট থেকে দিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই তিঁনি অপচয় করেছেন। এই সামান্য সূত্র ধরে আমিরুল মু'মিনীন খালিদ বিন ওয়ালিদ-কে সেনাপতির মহান পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করলেন। মূলতঃ উনাকে পদচ্যুত করতে এটা আসল কারণ নয়। 'আল্লাহু ওয়া রাসূলুহু আ'লামু'! নতুন সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দিলেন হযরত সা'দ ইবনে আবু উবায়দা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে। পদচ্যুতির খবর শুনে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ এতটুকু বিচলিত হননি। কেহ তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জোড় গলায় বলেছিলেন, “আমি যুদ্ধ করি আল্লাহর জন্য ; উমরের জন্য নয়।” সেনাপতির পদ থেকে অব্যাহতির পর সাধারণ সেনা হিসেবে যুদ্ধের প্রতি আরও বেশী মনোযোগী হলেন। বীরত্ব যেন পূর্বের চেয়ে অনেকাংশে এগিয়ে! পরবর্তী যুদ্ধসমূহে সেনাপতি না হয়েও সেনাপতির চেয়ে কোনো অংশে কম ভূমিকা রাখেননি তিঁনি। জেরুজালেম-মিসর-দামেস্ক-‌আলেকজান্দ্রিয়া সহ সেনা হিসেবে প্রতিটি যুদ্ধে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সেনা হয়েও যেন সেনাপতির মতোই লড়াই করছেন। যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ খালিদকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, তিঁনি অন্য সকলের মতো সাধারণ একজন সেনা! সেনাপতির পদ থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কারণ দর্শানো ব্যতীত অপসারণের পর‌ও হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ এতটুকু বিচলিত হননি। কোনোরূপ প্রতিবাদ করার চেষ্টাও করেননি। আমিরুল মু'মিনীন এঁর আদেশ মেনে নিয়েছেন মাথা পেতে। নূন্যতম হেরফের করেননি! বরং পরবর্তীতে যুদ্ধের প্রতি আরও বেশী মনোযোগী হয়েছেন। নিষ্ঠার সাথে সেনাপতি সা'দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর অধীনে নিজের সর্বস্ব দিয়ে প্রাণপণে যুদ্ধ করেছেন। খলিফা হযরত উমর মহাবীর খালিদ এঁর এহেন শক্ত প্রশংসনীয় কর্ম দর্শনে মুগ্ধ হলেন। হলেন অনুতপ্ত‌ও। অতঃপর খলিফা সর্বত্র উদারচিত্তে ঘোষণা দিলেন, “আমি খালিদকে আস্থাহীনতা, ক্রোধবশতঃ বা এ জাতীয় কোন কারণে অপসারণ করিনি। শুধুমাত্র এ কারণে পদচ্যুত করেছি যে, মুসলমানরা জেনে নিক, খালিদের শক্তির ওপর ইসলামের বিজয়সমূহ নির্ভরশীল নয়। বরং ইসলামের বিজয় আল্লাহর মদদ ও সাহায্যের উপর নির্ভরশীল ” সুবহান-‌আল্লাহ্! তৎপর খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর উপর পূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে উনাকে সিরিয়ার শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োজিত করেন। বরাবরের মতোই খলিফার প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে সাথে সাথে তিঁনি সিরিয়ার উদ্দেশ্যে র‌ওয়ানা হন। এভাবেই মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধের ময়দানের সেনাপতি থেকে রাষ্ট্রীয় শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। 'সাইফুল্লাহ্' খালিদ বিন ওয়ালিদ এঁর ইন্তেকালের পর হযরত উমর ফারুক বড্ড আফসোসের সাথে বলেছিলেন, “নারীরা খালিদের মতো সন্তান প্রসবে অক্ষম হয়ে গেছে!”
প্রিয় কবি নজরুল তাঁর সুমধুর ছন্দে বলেন, উমর যেদিন বিনা অজুহাতে পাঠাইল ফরমান, ‘সিপাহ-সালার খালেদ পাবে না পূর্বের সম্মান, আমার আদেশ - খালেদ ওলিদ সেনাপতি থাকিবে না, সা'দের অধীনে করিবে যুদ্ধ হয়ে সাধারণ সেনা!’ ঝড়া জলপাই - পাতার মতন কাঁপিতে কাঁপিতে সা'দ, দিল ফরমান, নফসি নফসি জপে, গণে পরমাদ! খালেদ! খালেদ! তাজিমের সাথে ফরমান পড়ে চুমি সিপা-সালারের সকল জেওর খুলিয়া ফেলিলে তুমি। শিশুর মতন সরল হাসিতে বদন উজালা করি একে একে সব রেখে দিলে তুমি সা'দের চরণ পরি! বলিলে, ‘আমি তো সেনাপতি হতে আসিনি, ইবনে সা'দ, সত্যের তরে হ‌ইব শহীদ, এই জীবনের সাধ! উমরের নয়, এ যে খলিফার ফরমান, ছি ছি আমি লঙ্ঘিয়া তাহা রোজ-কেয়ামতে হবো যশ-বদনামি?’ মার-মুখো যত সেনাদলে ডেকে ইঙ্গিতে বুঝাইলে, কুর্নিশ করি সা'দেরে, মামুলি সেনাবাসে ডেরা নিলে! সেনাদের চোখে আঁসু ধরে না কো, হেসে কেঁদে তারা বলে, ‘খালেদ আছিল মাথায় মোদের, এবার আসিল কোলে!’ মক্কায় যবে আসিলে ফিরিয়া, উমর কাঁদিয়া ছুটে, একি রে, খলিফা কাহার বক্ষে কাঁদিয়া পড়িল লুটে! ‘খালেদ! খালেদ!’ ডাকে আর কাঁদে উমর পাগল-প্রায়, বলে, ‘সত্যই মহাবীর তুই, বুসা দিই তোকে, আয়! তখ্‌তের পর তখ্‌ত যখন তোমার তেগের আগে ভাঙিতে লাগিলে, হাতুড়ি যেমন বাদামের খোসা ভাঙে, ভাবিলাম বুঝি তোমারে এবার মুগ্ধ আরব-বাসী সিজদা করিবে, বীরপূজা বুঝি আসিল সর্বনাশী! পরীক্ষা আমি করেছি খালেদ, ক্ষমা চাই ভাই ফের, আজ হতে তুমি সিপাহ-সালার ইসলাম জগতের!’

Wednesday, July 18, 2018

একটি অতুলনীয় না'তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কাব্যানুবাদ-

কাব্যনুবাদ ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী ১. সালাতুন ইয়া রাছুলাল্লাহ আলাইকুম, সালামুন ইয়া হাবিবাল্লাহ আলাইকুম। অর্থঃ দরূদ আমার তোমার উপর ওগো আল্লাহর প্রিয় রাসূল সালাম আমার তোমার প্রতি ওগো আল্লাহর বন্ধু অতুল। ২. জ্বাল্ওয়াগর্ হো ইয়া ইমামাল মুরসালীন, জ্বাল্ওয়াগর্ হো রাহমাতাল্ লিল্ আলামীন। অর্থঃ স্বাগতম হে রাসূল গণের ইমাম তোমার শুভাগমন স্বাগতম হে বিশ্বসভার অনুগ্রহের শুভাগমন! ৩. জ্বাল্ওয়াগর্ হো আম্বিয়াকে মুক্ তাদা, জ্বাল্ওয়াগর্ হো আওলিয়াকে পেশওয়া। অর্থঃ স্বাগতম হে নবীগণের অনুসরণীয় যিনি স্বাগতম হে আউলিয়াদের অনুকরণীয় তিনি। ৪. জ্বাল্ওয়াগর্ হো ছাইয়েদে খায়রুল বাশার, জ্বাল্ওয়াগর্ হো আয়মেরে নুরে নজর। অর্থঃ স্বাগতম হে মানব কূলের প্রিয় নেতা শ্রেষ্ঠ সাইয়্যেদ স্বাগতম হে দৃষ্ট আমার জ্যোতি প্রিয় শ্রেষ্ঠ সাইয়্যেদ। ৫. জ্বাল্ওয়াগর্ হো গম্ ঝাদোঁকে দস্তগীর, জ্বাল্ওয়াগর্ হো হাদিয়ে রওশন্ জমীর। অর্থঃ স্বাগতম হে দুঃখ বিষাদ দূরকারী যে দানোত্তোমে স্বাগতম হে অমূল্য ধন উজ্জ্বলতার প্রাণোত্তোমে ৬. জ্বাল্ওয়াগর্ হো জল্ওয়ায়ে নুরে খোদা, জ্বাল্ওয়াগর্ হো আয়মেরে মোহাম্মাদ মোস্তফা। অর্থঃ স্বাগতম হে খোদার জ্যোতির প্রজ্বলিত উলকা যিনি স্বাগতম হে মোর প্রিয় মুখ মুহাম্মদ মুস্তাফা যিনি। ৭. আস্ সালাম আয় নূরে চশ্ মে আম্বিয়া, আস্ সালাম আয় বাদশায়ে আওলিয়া। অর্থঃ নবীগণের চোখের জ্যোতির প্রতি বহে লক্ষ সালাম আউলিয়াদের শাহেন শাহে এই অধমের লক্ষ সালাম।

Featured post

কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা

 কোরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা ||-----๑▬▬๑﷽๑▬▬๑-----|| কোরবানী একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিময় আমল। আল্লাহ বলেন فصل لربك وانحر হে নবী! আপনি ...