শতাব্দির মহান সংস্কারক গাউসে জমান, মুর্শিদে বরহক্ব, হযরতুলহাজ্ব, আল্লামা, হাফেজ, ক্বারী, সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহঃ)'র কৃতিত্বঃ
১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ১৩৪০ হিজরির দিকে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশস্থ হাজারা জেলার দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফে কুতুবুল আউলিয়া আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহঃ)'পlর ঘরে এই মহান সাধক জন্মগ্রহণ করেন। শুধু তাঁর পিতা সিরিকোটি (রহ.) নন, বরং তাঁর আম্মাজান সৈয়্যদা খাতুন (রহ.)ও একজন সাহেবে কাশ্ফ অলিআল্লাহ্ হিসেবে সমগ্র সিরিকোট অঞ্চলে মশহুর ছিলেন। আব্বা-আম্মা উভয় দিক থেকেই তিনি ইমাম হোসাইন (রা.)’র বংশ ধারায় বিখ্যাত মাশওয়ানী’ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
#১৯৪২ সালে হযরত সিরিকোটি (রহঃ)'র সাথে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামে শুভাগমন করেন এবং মাতৃগর্ভের ওলী যুবক তৈয়্যব শাহ (রহঃ) আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিতে তারাবীহ নামাযে ইমামতি করেন।
#১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামের রেয়াজুদ্দিন বাজার শেখ সৈয়্যদ ক্লথ স্টোরে চলমান খতমে গাউসিয়া মাহফিলে তাঁকে আব্বা হুযূর কর্তৃক জনসম্মুখে খেলাফত দেয়া হয় এবং আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’র সংবিধান সংশোধনী কমিটিতে তাঁকে প্রধান করে এ বছরই তাঁকে আনজুমান’র জিম্মাদারীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষিক্ত করা হয়।
#১৯৬৮ সনে ঢাকার মুহাম্মদপুরে প্রতিষ্ঠা করেন, ‘কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলীয়া মাদ্রাসা। এটি আজ রাজধানীতে সূফিবাদী সুন্নি মুসলমানদের একমাত্র অবলম্বন।
#১৯৭৪ সালে তিনি এক ঐতিহাসিক নির্দেশ প্রদান করেন যে, পবিত্র জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবীর ﷺ উদযাপনের। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিরোধী ষড়যন্ত্র যখন এদেশের সুন্নিয়তের ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল- তখন এর আবেদনকে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌছিয়ে দিয়ে ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব হিসেবে -‘জশ্নে জুলুছ’ ছিল এক যুগান্তকারী প্রদেক্ষেপ।
#১৯৭৫ সনে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন হালিশহর তৈয়্যবিয়া (ডিগ্রী) মাদ্রাসা ও মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া হাফেজিয়া, কালুরঘাট, চট্টগ্রাম।
#১৯৭৫ সনে পাকিস্তান, করাচীর আওরঙ্গী টাউনেও প্রতিষ্ঠা করেন, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া করাচী।
#১৯৭৬ সনে চন্দ্রঘোনা তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া (ডিগ্রী) মাদরাসা, গাউসিয়া তৈয়্যবিয়া কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম, মাদরাসা-এ মুহাম্মদিয়া তৈয়্যবিয়া, ফরিদগঞ্জ , মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া সুন্নিয়া, ভৈরব, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া সসুন্নিয়া, মমাদার্শা, হাটহাজারী, চন্দনাইশ এলাহাবাদ আহমদিয়া সুন্নিয়া ফাজিল মাদরাসাসহ বাংলাদেশ, বার্মা, পাকিস্তান বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পৃষ্টপোষক করেন যা তাঁর ‘সাচ্চা আলেম’ তৈরীর আন্দোলনের মহাসড়কে মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
#১৯৭৬ এর ১৬ ডিসেম্বর তারিখে তিনি বাংলা ভাষায় সুন্নিয়াত ভিত্তিক সাহিত্য প্রকাশনার উপর গুরুত্বারোপ করে মাসিক ‘তরজুমান এ আহলে সুন্নাত’ প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং জানুয়ারি ১৯৭৭ থেকে আনজুমান থেকে এ প্রকাশনার যাত্রা শুরু হয় এবং পরবর্তীতে নিবন্ধন লাভের পর অদ্যাবধি সুন্নিয়তের শীর্ষস্থানীয় মাসিক প্রকাশনার ক্ষেত্রে এখনো প্রধান এবং প্রাচীনতম এই মাসিক তরজুমান।
#১৯৭৯ সালে হুজূর ক্বিবলা ২২ জন পীরভাইসহ যিয়ারতের উদ্দেশে গাউসে পাক হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ)'র দরবারে উপস্থিত হন। সেখানে অবস্থানকালে একদিন রাত প্রায় ১২টার পর হুজুর ক্বিবলা আকস্মিকভাবে আনজুমানের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ্ব মুহাম্মদ জাকারিয়া সাহেবকে ডেকে বললেন- মাওলানা জালালুদ্দীনকো বুলাইয়ে। তিনি অধ্যক্ষকে নিয়ে হুজূর ক্বিবলার সামনে উপস্থিত হলে হুজূর কেবলা (রহঃ) সকলের উপস্থিতিতে এরশাদ করলেন-
“আভী আভী হুজূর গাউসে পাক শাহেনশাহে বাগদাদ (রঃ) কি তরফ্ছে অর্ডার হুয়া হ্যায় আলমগীর খানক্বাহ্ শরীফ বানানা হ্যায়, আউর মাজমুয়ায়ে ছালাওয়াতে রাসূল ﷺ ছাপওয়ানা হ্যায়, আউর ইয়ে বাত ভা-য়ূঁকো ছমঝা দিজিয়ে’।
অর্থাৎ: এ মাত্র হুজুর গাউছে পাক শাহেনশাহে বাগদাদ (রঃ)'র পক্ষ থেকে নির্দেশ এসেছে আলমগীর খানক্বাহ্ শরীফ তৈরি করতে হবে এবং মাজমুয়ায়ে ছালাওয়াতে রাসূল ﷺ ছাপাতে হবে; আর এ নির্দেশ ভাইদেরকে বুঝিয়ে দিন। তখন হুজূর কেবলা (রঃ)'র নির্দেশে বিষয়টি অধ্যক্ষ সাহেব ভাইদেরকে বুঝিয়ে দিলেন এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম জামেয়ার পাশে নির্মাণ করা হয় আলমগীর খানকা-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া। যা আজ ত্বরিকতপন্থীদের প্রশান্তির স্থান আর আউলিয়ায়ে কেরামগণের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে। আর হুজুর কেবলার জীবদ্দশায় বিরল তাৎপর্যপূর্ণ ৩০ পারা বিশিষ্ট দরূদ গ্রন্থ মাজমুয়ায়ে ছালাওয়াতে রাসূল ﷺ এর ২২ পারা পর্যন্ত উর্দু অনুবাদ নিজ তত্ত্বাবধানেই সম্পন্ন করেন- যা পরবর্তীতে বর্তমান হুজুর কিবলা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী কর্তৃক ৩০ পারা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়ে বর্তমানে বঙ্গানুবাদসহ প্রকাশিত হচ্ছে।
#১৯৮৬ সালে ত্বরিকতের ভিত্তিকে মজবুত ও সুন্নিয়তের প্রচার প্রসারকে শক্তিশালী করার লক্ষে গাউসে পাকের নামানুসারে আনজুমানের সহযোগী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। বর্তমানে এই সংগঠনেরর ঝান্ডা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ব্রাজিল, আরব-আমিরাতসহ পৃথিবীর প্রায় অর্দশতাধিক দেশে উড়ছে আর বাংলাদেশে ত্বরিকত ভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ।
#১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুন মোতাবেক ১৫ জিলহজ্ব ১৪১৩ হিজরি সোমবার সকালে দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফে মুর্শিদে বরহক, গাউসে জামান, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) ইন্তেকাল করেন। তাঁকে সেখানেই দাফন করা হয় পরদিন মঙ্গলবার। তাঁর ঐতিহাসিক জানাজায় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী গওহর আইয়ুবসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী বিশেষতঃ খ্যাতনামা ওলামা-মাশায়েখগণ।
#আগামীকাল সোমবার ১৫ যিলহজ্ব জামেয়ার ময়দানে এই মহান দ্বীনি সংস্কারকের পবিত্র ওরস মোবারকে উপস্থিত হয়ে আল্লাহ তাআলা যেন সবাইকে ওনার ফয়ুজাত হাসিল করার তাওফিক দান করেন।
#আমিন.....
No comments:
Post a Comment