Thursday, August 9, 2018

আমরা রাসূলের (দল) গোলাম ৷

আমরা রাসূলের গোলাম

লেখক: মুফ্তী আহমাদ রেজভী

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-


إِنْ كُلُّ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ إِلَّا آتِي الرَّحْمَٰنِ عَبْدًا


অর্থাৎ আসমান ও যমীনে যত কিছু আছে সবই তাঁর (আল্লাহ) নিকট বান্দারূপে হাজির হবে। (সূরা মরিয়ম, আয়াত: ৯২)


অত্র আয়াতে কারীমা হতে বুঝা গেলো, সবাই আল্লাহর বান্দা। কিন্তু বন্দেগীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এমন কিছু বান্দা আছে, যারা মহান রবকে সন্তুষ্ট করতে চায়। আর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই বান্দা, যাকে মহান রবই সন্তুষ্ট করতে চায়।


তাফসীরে কবীরের মধ্যে রয়েছে-


ان الله تعالى قال يا محمد وكل احد يطلب رضائى وانا اطلب رضاك فى الدرين


অর্থাৎ, হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সমস্ত বস্তু আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আমি আল্লাহ ইহ ও পরপাড়ে আপনার সন্তুষ্টি কামনা করি। আবার যিনি সমস্ত কামিল বা পরিপূর্ণ বান্দার মধ্যে সর্বাধিক কামিল পরিপূর্ণ বান্দা তিনি হলেন আল্লাহর মাহবুব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কেননা ‘আবদুহু’ মানে আল্লাহর বান্দা আর আল্লাহর বন্দেগীর সর্বাধিক পবিত্রতা হলো আল্লাহ তাআলার নৈকট্য। সেই নৈকট্য হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মি‘রাজ শরীফে লাভ করেছিলেন যা পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের মধ্যে কারো ভাগ্যে জোটেনি এবং জোটবেও না। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহর সৃষ্টি সকল বান্দাদের মধ্যে আবদে কামিল বা সর্বাধিক কামিল বা পূর্ণ স্বত্ত্বা হলো একমাত্র হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।


আমরা তথা সাধারণ মানুষ আবদ বা বান্দা। তবে আমাদের আবদিয়াতে কৃত্রিমতার আমেজ রয়েছে বেশি। আমরা আল্লাহর বান্দা হওয়ার কথা নিজেরাই দাবী বা ঘোষণা করে থাকি। কিন্তু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আল্লাহর আব্দ’ বা তাঁরই খাস বান্দা হওয়ার ঘোষণা বা সনদ প্রদান করেন স্বয়ং আল্লাহ। সুতরাং এতেও একথাই প্রমাণিত হয় যে, আমরা সাধারণ মানুষের আবদিয়াত এবং হুজুর কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ‘আবদিয়াত’ এর মধ্যে অভাবনীয় পার্থক্য রয়েছে।


যেহেতু ‘আব্দ’ শব্দের রূপকার্থ হয় গ্রহিতা তাই আমরা যখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দ্বীন, ঈমান, ইসলাম ও কুরআন মজীদ ইত্যাদি মহান অনুগ্রহসমূহ লাভ করে ধন্য হয়েছি তখন আমরাও হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আব্দ। আর এ অর্থেই আমাদের নাম ‘আবদুর রাসূল’ (গোলাম রছুল); আবদুল মোস্তফা ও ‘আবদুন্নবী’ ইত্যাদি হওয়া যুক্তিসঙ্গত। তখন আব্দ মানে হবে গোলাম (রূপকার্র্থে) আবদে হাক্বীক্বী বা ইবাদতকারী অর্থে অবশ্যই নয়। এ পার্থক্যটা এক্ষেত্রে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে, নতুবা ধোঁকা ও বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার সম্ভাবনাই প্রকট।


এ পার্থক্যের ভিত্তিতেই আমাদের পূর্ববর্তী সুদক্ষ আলেমগণের মধ্যে অনেকের নাম ‘আবদুন্নবী’, গোলাম রাসূল, আবদুর রাসূল ইত্যাদি প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন বিশ^বিখ্যাত কিতাব ‘কাফিয়াহ’র ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘জামিউল গুমুছ’ এবং দস্তুরুল ওলামা ইত্যাদি প্রণেতার নামও ছিল ‘আব্দুন্নবী; তাঁর পিতার নাম ছিল আবদুর রাসূল। শরহে মিয়াতে আমিল এর লিখকের নাম ছিল ‘আবদুর রাসূল’। সর্বজন স্বীকৃত প্রসিদ্ধ কিতাব ‘দুররুল মুখতার’ প্রণেতার ওস্তাদের নাম ছিল ‘আব্দুন্নবী’। ‘গোলাম রাসূল’, ‘গোলাম নবী’ এ নামগুলোর অর্থ হচ্ছে রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোলাম।


এখানে সংক্ষেপে এতটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট মনে করি যে, আল্লাহ পাক এরশাদন করেন-


مَّن يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ


অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূলের গোলাম হবে নিঃসন্দেহে সে আল্লাহরই গোলাম।


হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজের মক্কী ছাহেব ইমদাদুল মোস্তাক এর ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, যেহেতু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামআল্লাহর নৈকট্যেই অর্জন প্রাপ্ত সেহেতু ‘ইবাদুল্লাহ’ তথা আল্লাহর বান্দাদেরকে ‘ইবাদুর রাসূল’ রাসূলের গোলাম বলা যাবে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-


قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ


অর্থাৎ, হে আমার প্রিয়তম নবী! আপনি বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের আত্মার উপর অবিচার করেছো। (সূরা যুমার, আয়াত : ৫৩)


কানযুল ঊম্মাল, ৩য় খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে-


عن سعيد بن المسيب قال لما ولي عمر بن الخطاب خطب الناس على منبر رسول الله (صلى الله عليه وسلم) فحمد الله وأثنى عليه ثم قال أيها الناس إني قد علمت أنكم تؤنسون مني شدة وغلظة وذاك أني كنت مع رسول الله (صلى الله عليه وسلم) فكنت عبده وخادمه


অর্থাৎ অতঃপর যখন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু খলিফা হন তখন জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি খোৎবা (ভাষণ) দিয়েছিলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিম্বারের উপর আরোহণ করে (প্রারম্ভে) আল্লাহর প্রশংসা (হামদ্্ ও ছানা) বর্ণনা করেন, তারপর তিনি বলেন, ওহে জনতা, আমি জানি যে, তোমরা আমাকে গভীরভাবে ভালবাস। আর তাও এজন্য যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গেই ছিলাম এবং আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবদ (গোলাম অর্থে) এবং তাঁর খাদেম।


এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যে, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যখন নিজেকে ‘আবদুর রাসূল’ বা রাসূলের গোলাম বলে মিম্বর শরীফে আরোহন করেই ঘোষণা করেছেন, তখন আবদুর রাসূল বা গোলাম রাসূল ও রাসূলের বান্দা নামে নামকরণ করা সে আবার কোন শরীয়তে নিষিদ্ধ?


আল্লামা ইকবাল বলেছেন-


عبد دیگر عبدہ چیزے دیگر * او سراپا انتظار اين منتظر


অর্থাৎ নিছক ‘আব্দ’ শব্দের অর্থ এক, কিন্তু ‘আবদুহু’ সর্বনাম বিশিষ্ট এর অর্থ ভিন্ন। অর্থাৎ ‘আব্দ’ তো আপাদমস্তক খোদার নৈকট্য ও দীদার লাভের জন্য অপেক্ষায় আর যিনি ‘আবদুহু’ তাঁর জন্য তো খোদ খোদা অপেক্ষায়রত।

No comments:

Post a Comment

Featured post

কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা

 কোরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা ||-----๑▬▬๑﷽๑▬▬๑-----|| কোরবানী একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিময় আমল। আল্লাহ বলেন فصل لربك وانحر হে নবী! আপনি ...