জুমার খুতবা
************
২য় জুমা, যুল ক্বা’দাহ, ১৪৩৯ হি: ২৭ জুলাই, ২০১৮সাল
***রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের রওযা পাক যিয়ারতের উদ্দ্যেশ সফর:***
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী
খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
=============================
পবিত্র মক্কার ন্যায় মদীনা শরীফও পবিত্র ও সম্মানিত শহর, ওহী নাযিলের স্থান। কুরআনুল কারীমের অর্ধেক নাযিল হয়েছে মদীনা শরীফে। মদীনা শরীফ ইসলামের প্রাণকেন্দ্র, ঈমানের আশ্রয়স্থল, মুহাজির ও আনসারদের মিলনভূমি। মুসলমানদের প্রথম রাজধানী। এখান থেকেই আল্লাহর পথে জিহাদের পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল, আর এখান থেকেই হিদায়াতের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটেছে, ফলে আলোকিত হয়েছে সারা বিশ্ব। এখান থেকে সত্যের পতাকাবাহী মু’মিনগণ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন দ্বীনের বারতা নিয়ে। তাঁরা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ডেকেছেন। নবীজীর শেষ দশ বছরের জীবন যাপন, তাঁর ওফাত ও কাফন-দাফন এ ভূমিতেই হয়েছে। এ ভূমিতেই তিনি শায়িত আছেন। এখান থেকেই তিনি পুনরুত্থিত হবেন। নবীদের মধ্যে একমাত্র তাঁর কবর শরীফই সুনির্ধারিত রয়েছে। মদীনা শরীফের যিয়ারত আমাদেরকে ইসলামের সোনালী ইতিহাসের দিকে ফিরে যেতে সাহায্য করে। সুদৃঢ় করে আমাদের ঈমান-আকীদার ভিত্তি।
তাই ইসলামি নিদর্শনাবলীর একটি বড় নিদর্শন হলো “মদীনা শরীফ”, যার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা প্রত্যেক ঈমানদারের অন্তরের কাজ। ইসলামের নিদর্শনগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো ও সেগুলোকে সংরক্ষণ করা মহান আল্লাহরই নির্দেশ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন: ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ "যে আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনাবলীকে সম্মান করবে সে যেন তার আন্তরিক তাকওয়ারই বহিপ্রকাশ ঘটালো।" (সূরা হাজ্ব:৩২)
যেমনিভাবে সাফা, মারওয়া, মাশআর, মিনা, মুযদালিফা এবং হজ্জের সামগ্রিক আনুষ্ঠানিকতা সবই ঐশী নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَن تَطَوَّعَ خَيْراً فَإِنَّ اللّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ “নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দ’ুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তা অবগত এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।” (বাক্বারা-১৫৮) অনুরূপভাবে মদীনা মুনাওয়ারাও ইসলামের নিদর্শনাবলীর একটি বড় নিদর্শন যাকে সম্মান প্রদর্শন করা ঈমান ও তাকওয়ার পরিচায়ক।
রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে সাহাবায়ে কেরাম নবীজী এবং তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহার্য দ্রব্যাদির ও বিচিত্র বস্তুকে তাবাররুক হিসেবে গ্রহণ করার জন্যে উদগ্রিব থাকতেন। তাঁর ব্যবহৃত জিনিস-পত্রকে তাঁরা অত্যন্ত পবিত্র মনে করে সেগুলোকে পবিত্র উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করতেন। নবীজীও কখনো সাহাবাদেরকে এ কাজ করতে নিষেধ করেন নি।
নবীজিন প্রতি সাহাবায়ে কেরামের কিরূপ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা ছিল তার সামান্য নমুনা পেশ করছেন হযরত উরওয়াহ ইবন মাসউদ আস সক্বফী, যিনি তখনও কাফের ছিলেন এবং হুদায়বিয়ার সন্ধি প্রাক্কালে কুরাইশদের প্রতিনিধি হয়ে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কথা বলতে এসেছিলেন।
ثُمَّ إِنَّ عُرْوَةَ جَعَلَ يَرْمُقُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِعَيْنَيْهِ. قَالَ فَوَاللَّهِ مَا تَنَخَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نُخَامَةً إِلاَّ وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمُ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ، فَرَجَعَ عُرْوَةُ إِلَى أَصْحَابِهِ، فَقَالَ أَىْ قَوْمِ، وَاللَّهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى الْمُلُوكِ، وَوَفَدْتُ عَلَى قَيْصَرَ وَكِسْرَى وَالنَّجَاشِيِّ وَاللَّهِ إِنْ رَأَيْتُ مَلِكًا قَطُّ، يُعَظِّمُهُ أَصْحَابُهُ مَا يُعَظِّمُ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم مُحَمَّدًا، وَاللَّهِ إِنْ تَنَخَّمَ نُخَامَةً إِلاَّ وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمُ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ،
অতঃপর ‘উরওয়াহ চোখের কোণ দিয়ে সাহাবীদের দিকে তাকাতে লাগল। সে বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো থুথু ফেললে তা সাহাবীদের হাতে পড়তো এবং তা তাঁরা গায়ে, মুখে মেখে ফেলতেন। তিনি তাঁদের কোন আদেশ দিলে তা তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পালন করতেন। তিনি ওযু করলে তাঁর ওযুর পানির জন্য তাঁর সাহাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হত। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন তাঁরা নীরবে তা শুনতেন এবং তাঁর সম্মানার্থে সাহাবীগণ তাঁর দিকে তীক্ষœ দৃষ্টিতে তাকাতেন না।
অতঃপর ‘উরওয়াহ তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার কওম, আল্লাহর কসম! আমি অনেক রাজা-বাদশাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশী সম্রাটের দরবারে দূত হিসেবে গিয়েছি; কিন্তু আল্লাহর কসম করে বলতে পারি যে, কোন রাজা বাদশাহকেই তার অনুসারীদের মত এত সম্মান করতে দেখিনি, যেমন মুহাম্মাদের অনুসারীরা তাঁকে করে থাকে। আল্লাহর কসম! তিনি (আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি থুথু ফেলেন, তখন তা কোন সাহাবীর হাতে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা তা তাদের গায়ে, মুখে মেখে ফেলেন। তিনি কোন আদেশ দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করেন; তিনি ওযু করলে তাঁর ওযুর পানি নিয়ে সাহাবীগণের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়; তিনি কথা বললে, সাহাবীগণ নিশ্চুপ হয়ে শুনেন। এমনকি তাঁর সম্মানার্থে তাঁরা তাঁর চেহারার দিকেও তাকান না। (বুখারী-২৭৩১, ২৭৩২)
এভাবে হজ্বের সময় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর চুল মোবারক কাটতেন, সাহাবাগণ তখন নবীজীর কর্তিত চুল মোবারকগুলো জমা করতেন পবিত্রতা ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে। একইভাবে নবীজী যখন কোনো পানির মশকের মুখ দিয়ে পানি পান করতেন সাহাবিগণ ঐ মশকের মুখ কেটে নিতেন বরকতের উদ্দেশ্যে।
তাই মদীনা শরিফের মাটি, ধুলো-বালি এমনকি ফল-ফলাদি অন্য কোন মাটি, ধুলো-বালি ও ফল-ফলাদিও সাথে তুলনা হয় না। মদীনা শরিফের মাটি, ধুলো-বালি হলো সকল রোগের নিরাময়, বিশেয করে জ্বর, কুষ্ঠ রোগ ও শ্বেত রোগের জন্যে শিফা। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - كَانَ يَقُولُ لِلمَرِيضِ: " بِسْمِ اللهِ تربَةُ أَرْضِنَا، بِرِيقةِ بَعْضِنَا، يُشْفَى سَقِيمُنَا، بإِذْنِ رَبِّنَا ". নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিকট আশা রোগীদের চিকিৎসা করতেন এভাবে: “বিসমিল্লাহ, আমাদের এ মাটি আমাদের কারও লালার সাথে মিশ্রিত করে রোগীর জণ্য ব্যবহার করলে আমাদের রোগীরা আরোগ্য লাভ করবে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায়।”( বোখারী, ১১২৪)
যেহেতু মদীনা মুনাওয়ারা আল্লাহর কাছে সম্মানিত হারাম হিসেবে পরিগণিত এবং সুন্নাতে নববীতেও মদীনা শরীফ, সেখানকার মাটি এবং বাসিন্দারা এমনকি সেখানে যাদেঁরকে দাফন করা হয়েছে তাঁদেরকে অনেক উচ্চ ফযীলত সম্পন্ন বলে মূল্যায়ন করা হয়। তাই মদীনা শরীফ যিয়ারত যদিও হজের অংশ নয়, কিন্তু অতীব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও পরম সৌভাগ্যের বিষয়।
মদীনা শরীফের সীমানা:
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
পবিত্র মক্কার ন্যায় এ বরকতময় মদীনা নগরীকেও হারাম অর্থাৎ সম্মানিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কা মুকাররমাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি তাকে সম্মানিত করেছেন। আর আমি এই দুই পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণা করলাম।’[মুসলিম : ২/১০০১।]
হারামের সীমারেখা হচ্ছে, উত্তরে লম্বায় উহুদ পাহাড়ের পেছনে সাওর পাহাড় থেকে দক্ষিণে আইর পাহাড় পর্যন্ত। পূর্বে হার্রা ওয়াকিম অর্থাৎ কালো পাথর বিশিষ্ট এলাকা থেকে পশ্চিমে হার্রা আল-ওয়াবরা অর্থাৎ কালো পাথর বিশিষ্ট এলাকা পর্যন্ত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, اَلْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ ما بَيْنَ عَيْرٍ إلى ثَوْرٍ ‘মদীনা শরীফের ‘আইর’ থেকে ‘সাওর’-এর মধ্যবর্তী স্থানটুকু হারাম।’[বুখারী : ৬২৫৮; মুসলিম : ২৪৩৩।]
নবীজীর সাথে সম্পর্কের কারণে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থান মদীনা মুনাওয়ারা আল্লাহর দরবারে খুবই ঘনিষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন, ্রإِنِّى أُحَرِّمُ مَا بَيْنَ لاَبَتَىِ الْمَدِينَةِ أَنْ يُقْطَعَ عِضَاهُهَا أَوْ يُقْتَلَ صَيْدُهَاগ্ধ.‘আমি মদীনা শরীফের দুই হাররা বা কালো পাথর বিশিষ্ট যমীনের মাঝখানের অংশটুকু হারাম তথা সম্মানিত বলে ঘোষণা দিচ্ছি। এর কোন গাছ কাটা যাবে না বা কোন শিকারী জন্তু হত্যা করা যাবে না।’[মুসলিম : ২৪২৫।]
সুতরাং মদীনা শরীফও নিরাপদ শহর। এখানে রক্তপাত বৈধ নয়। বৈধ নয় শিকার করা বা গাছ কাটা। এ শহর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে এরশাদ করেন, ্রلاَ يُهَرَاقَ فِيهَا دَمٌ وَلاَ يُحْمَلَ فِيهَا سِلاَحٌ لِقِتَالٍ وَلاَ يُخْبَطَ فِيهَا شَجَرَةٌ إِلاَّ لِعَلْفٍগ্ধ.‘এখানে রক্তপাত করা যাবে না। এখানে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে অস্ত্র বহন করা যাবে না। ঘাস সংগ্রহের জন্য ছাড়া কোন গাছও কাটা যাবে না।’[মুসলিম : ২/১০০১।]
মদীনা শরীফের ফযীলত:
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
মদীনাতুর রাসূলের ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হল :
১. মক্কার ন্যায় মদীনা শরীফও পবিত্র নগরী: মক্কার ন্যায় মদীনা শরীফও পবিত্র নগরী। মদীনা শরীফও নিরাপদ শহর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,্রإِنَّ إِبْرَاهِيْمَ حَرَّم مَكَّةَ، وإنّيْ حَرَّمْتُ الْمَدِيْنَةَগ্ধ ‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কা মুকাররমাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি তাকে সম্মানিত করেছেন। আর আমি এই দুই পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণা করলাম।’[মুসলিম : ২/১০০১।]
২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফের জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন: হযরত আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রاَللَّهمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْ ثَمَرِنا، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ مَدِيْنَتِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَاগ্ধ. ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ফল-ফলাদিতে বরকত দাও। আমাদের এ মদীনা শরীফে বরকত দাও। আমাদের সা’তে বরকত দাও এবং আমাদের মুদ-এ বরকত দাও।’[মুসলিম : ১৩৭৩।]
৩. মদীনা শরীফ যাবতীয় অকল্যাণকর বস্তুকে দূর করে দেয়: হযরত জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রالْمَدِينَةُ كَالْكِيرِ تَنْفِي خَبَثَهَا وَيَنْصَعُ طِيبُهَاগ্ধ.“মদীনা শরীফ হল হাপরের মতো, এটি তার যাবতীয় অকল্যাণ দূর করে দেয় এবং তার কল্যাণকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে।’[বুখারী : ১৮৮৩; মুসলিম : ১৩৮৩।]
৪. শেষ যামানায় ঈমান মদীনা শরীফে এসে আশ্রয় নেবে: শেষ যামানায় ঈমান মদীনা শরীফে এসে একত্রিত হবে এবং এখানেই তা ফিরে আসবে। হযরত আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রإنَّ الإِيْمَانَ لَيَأْرِزُ إلى المَدِيْنَةِ كما تَأْرِزُ الحيَّةُ إلى جُحْرِهاগ্ধ ‘নিশ্চয়ই ঈমান মদীনা শরীফের দিকে ফিরে আসবে যেমনিভাবে সাপ তার গর্তে ফিরে আসে।’[বুখারী : ১৮৬৭; মুসলিম : ১৪৭।]
৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফের জন্য দ্বিগুন বরকতের দো‘আ করেছেন: হযরত আনাস ইবন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রاَللَّهُمَّ اجْعَلْ بِالْمَدِينَةِ ضِعْفَيْ مَا جَعَلْتَ بِمَكَّةَ مِنَ الْبَرَكَةِগ্ধ.‘হে আল্লাহ, আপনি মক্কায় যে বরকত দিয়েছেন মদীনা শরীফে তার দ্বিগুণ বরকত দান করুন।’[বুখারী : ১৮৮৫; মুসলিম ১৩৬০।]
হযরত আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রإِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ وَدَعَا لأَهْلِهَا وَإِنِّى حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ كَمَا حَرَّمَ إِبْرَاهِيمُ مَكَّةَ وَإِنِّى دَعَوْتُ فِى صَاعِهَا وَمُدِّهَا بِمِثْلَىْ مَا دَعَا بِهِ إِبْرَاهِيمُ لأَهْلِ مَكَّةَগ্ধ.
‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার বাসিন্দাদের জন্য দো‘আ করেছেন। যেমনিভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন, আমিও তেমন মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণা করেছি। মক্কার বাসিন্দাদের জন্য হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যে বরকতের দো‘আ করেছেন আমি মদীনা শরীফের অধিবাসীদের জন্য তাদের সা’ ও মুদ-এ তার চেয়ে দ্বিগুন বরকতের দো‘আ করছি।’[বুখারী : ২১২৯; মুসলিম : ১৩৬০।
সা‘ ও মুদ দু’টি পরিমাপের পাত্র। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে দু‘আ করেছেন যেন তাতে বরকত হয় এবং তা দিয়ে যেসব বস্তু ওযন করা হয়- সেসব বস্তুতেও বরকত হয়।]
৬. মদীনা শরীফে মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রعَلَى أَنْقَابِ الْمَدِيْنَةِ مَلاَئِكَةٌ، لاَ يَدْخُلُهَا الطَّاعُونُ وَلاَ الدَّجَّالُগ্ধ.‘মদীনা শরীফের প্রবেশ দ্বারসমূহে ফেরেশতারা প্রহরায় নিযুক্ত আছেন, এতে মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না।’[বুখারী : ১৮৮০; মুসলিম : ১৩৭৯।]
৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফে মৃত্যু বরণকারীর জন্য সুপারিশের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَنْ اسْتَطَاعَ أَنْ يَمُوْتَ بِالْمَدِيْنَةِ فَلْيَمُتْ بِهَا فَإِنِّيْ أَشْفَعُ لِمَنْ يَمُوْتُ بِهَاগ্ধ.‘যার পক্ষে মদীনা শরীফে মৃত্যুবরণ করা সম্ভব সে যেন সেখানে মৃত্যুবরণ করে। কেননা মদীনা শরীফে যে মারা যাবে আমি তার পক্ষে সুপারিশ করব।’[মুসলিম : ১৩৭৪।]
৮. মদীনা শরীফে কোনরূপ জুলুম বা অন্যায় ঘটনা ঘটানোর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণার প্রাক্কালে এর মধ্যে কোন জুলুম বা অন্যায় ঘটনা ঘটানোর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করেছেন। হযরত আলী ইবন আবী তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রالمَدِينَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إلى ثَوْرٍ، مَنْ أَحْدَثَ فيْهَا حَدَثاً أَو آوَى مُحدِثاً فَعَلَيهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالمَلاَئِكَةِ وَالنَاسِ أَجمَعِينَ، لاَ يَقبَلُ اللهٌ مِنهُ صَرْفاً وَلَا عَدْلاًগ্ধ. ‘মদীনা শরীফ ‘আইর’ থেকে ‘সাওর’ পর্যন্ত হারাম। যে ব্যক্তি মদীনা শরীফে কোন অন্যায় কাজ করবে অথবা কোন অন্যায়কারীকে আশ্রয় প্রদান করবে তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সমস্ত মানুষের লা‘নত। তার কাছ থেকে আল্লাহ কোন ফরয ও নফল কিছুই কবুল করবেন না।’[বুখারী : ১৮৭০; মুসলিম : ১৩৭০।]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
وَلَا يُرِيدُ أَحَدٌ أَهْلَ الْمَدِينَةِ بِسُوءٍ، إِلَّا أَذَابَهُ اللَّهُ فِي النَّارِ ذَوْبَ الرَّصَاصِ أَوْ ذَوْبَ الْمِلْحِ فِي الْمَاءِ
‘যে ব্যক্তি মদীনাবাসীদের ক্ষতি করতে চেষ্টা করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে এমনভাবে শাস্তি দিবেন যেভাবে সীসা আগুনে এবং লবণ পানিতে গলে যায়। (মুসলিম শরীফ,খ.২,পৃ.৯৯২) এভাবে অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি ইরশাদ করেন-
لَا يَكِيدُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ أَحَدٌ، إِلَّا انْمَاعَ كَمَا يَنْمَاعُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ
‘যে ব্যক্তি মদীনাবাসীর সাথে অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্র করবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে যেভাবে লবণ পানিতে গলে যায়’। (বুখারি শরীফ,খ.৩,পৃ.২১)
মদীনা শরীফে অনেক স্মৃতি বিজড়িত ও ঐতিহাসিক স্থানের যিয়ারত করতে হাদীসে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সেগুলো হলো : মসজিদে নববী শরীফ, মসজিদে কুবা, জান্নাতুল বাকী’, উহুদের শহীদদের মাযার ইত্যাদি। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে এসব স্থানের ফযীলত ও যিয়ারতের আদব উল্লেখ করা হল।
মসজিদে নববী শরীফের ফযীলত:
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
মসজিদে নববী শরীফের রয়েছে ব্যাপক মর্যাদা ও অসাধারণ শ্রেষ্ঠত্ব। কুরআন ও হাদীসে এ সম্পর্কে একাধিক ঘোষণা এসেছে। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَّمَسۡجِدٌ أُسِّسَ عَلَى ٱلتَّقۡوَىٰ مِنۡ أَوَّلِ يَوۡمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِۚ فِيهِ رِجَالٞ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُواْۚ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُطَّهِّرِينَ [التوبة: ١٠٨ “অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে তা বেশী হকদার যে, আপনি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবেন। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।’[তওবা : ১০৮।] আল্লামা সামহুদী বলেন, ‘কুবা ও মদীনা শরীফ- উভয় স্থানের মসজিদ প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত। উক্ত আয়াতে তাই উভয় মসজিদের কথা বলা হয়েছে।’[সফিউর রহমান মুবারকপুরী, তারীখুল মাদীনাতিল মুনাওয়ারা : পৃ. ৭৫।]
এতে এক নামায পড়লে এক হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার নামায পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়: মসজিদে নববী শরীফের আরেকটি ফযীলত হলো, এতে এক নামায পড়লে এক হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার নামায পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। হযরত ইবন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রصَلاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاةٍ فِيمَا سِوَاهُ، إِلا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَগ্ধ‘আমার এ মসজিদে এক সালাত আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায় করার চেয়েও উত্তম।’[বুখারী : ১১৯০; মুসলিম : ১৩৯৪।]
হযরত আবূ দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রاَلصَّلاَةُ فِيْ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ بِمِائَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ وَالصَّلاَةُ فِيْ مَسْجِدِيْ بِأَلْفِ صَلاَةٍ وَالصَّلاَةُ فِيْ بَيْتِ الْمُقَدَّسِ بِخَمْسِمِائَةٍ صَلاَةٍগ্ধ.“মসজিদে হারামে এক নামায এক লাখ সালাতের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববী) এক নামায এক হাজার সালাতের সমান এবং বাইতুল মাকদাসে এক নামায পাঁচশ সালাতের সমান।’[মাজমাউয যাওয়াইদ : ৪/১১।]
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
عن أنس بن مالك ، قال : قال رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " صَلاةُ الرَّجُلِ فِي بَيْتِهِ بِصَلاةٍ ، وَصَلاَتُهُ فِي مَسْجِدِ الْقَبائِلِ بِخَمْسٍ وَعِشْرِينَ صَلاَةٍ ، وَصَلاَتُهُ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِي يُجمَّعُ فِيهِ بِخَمٍسِ مِئَةِ صَلاةٍ ، وَصَلاَةٌ فِي الْمسْجِدِ الأَقْصَى بِخَمْسِينَ أَلْفَ صَلاَةٍ ، وَصَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي بِخَمْسِينَ أَلْفِ صَلاةٍ ، وَصَلاَةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرامِ بِمئَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ " ) سنن ابن ماجه গ্ধ كتاب إقامة الصلاة والسنة فيها গ্ধ باب ما جاء في الصلاة في المسجد الجامع. مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح গ্ধ كتاب الصلاة গ্ধ باب المساجد ومواضع الصلاة ৭৫২
“নিজ ঘরে যদি কেউ নামায পড়ে তাহলে তার এক নামাযের সাওয়াব, নিজ গোত্রের মসজিদে পঁচিশ নামাযের, জুমা হয় এমন মসজিদে পাঁচ শত, বাইতুল মাকদাসে এক নামায পঞ্চাশ হাজার নামায পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়, আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববী শরীফে) এক নামায পঞ্চাশ হাজার সালাতের সমান এবং মসজিদে হারামে এক নামায এক লাখ সালাতের সমান।” [ইবনু মাযা, হা-১৪১৩, মিশকাত-৭৫২]
হযরত আবূ হুরাইয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَنْ جَاءَ مَسْجِدِي هَذَا ، لَمْ يَأْتِهِ إِلاَّ لِخَيْرٍ يَتَعَلَّمُهُ أَوْ يُعَلِّمُهُ ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ ، وَمَنْ جَاءَ لِغَيْرِ ذَلِكَ ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الرَّجُلِ يَنْظُرُ إِلَى مَتَاعِ غَيْرِهِগ্ধ.‘যে আমার এই মসজিদে কেবল কোনো কল্যাণ শেখার জন্য কিংবা শেখানোর জন্য আসবে, তার মর্যাদা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য। পক্ষান্তরে যে অন্য কোন উদ্দেশ্যে আসবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে অন্যের মাল-সামগ্রীর প্রতি তাকায়।’[ইবন মাজাহ্ : ২৭৭।]
হযরত আবূ উমামা আল-বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ لا يُرِيدُ إِلا أَنْ يَتَعَلَّمَ خَيْرًا أَوْ ُيعلِّمَهُ، كَانَ لَهُ كَأَجْرِ حَاجٍّ تَامًّا حِجَّتُهُগ্ধ. ‘যে ব্যক্তি একমাত্র কোন কল্যাণ শেখা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে (নববী শরীফে) আসবে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজের সওয়াব লেখা হবে।’[মাজমাউয যাওয়াইদ : ১/১২৩।]
তাঁর রওযা শরীফ ও মিম্বর শরীফের মাঝখানের জায়গাটুকু জান্নাতের অন্যতম অংশ:
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুজরা মুবারক তথা সাইয়েদা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহার ঘর যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাফন করা হয়েছে সে রবকতময় স্থান ও তাঁর মিম্বর শরীফের মাঝখানের জায়গাটুকুকে জান্নাতের অন্যতম উদ্যান বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَا بَينَ بَيْتِيْ ومِنْبَرِيْ رَوْضَةٌ مِن رِيَاضِ الْجَنَّةٍগ্ধ ‘আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝখানের অংশটুকু রওদাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাত (জান্নাতের উদ্যানসমুহের একটি উদ্যান)।’[বুখারী : ১১২০; মুসলিম : ২৪৬৩।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা শরীফ ও এর আশেপাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে। এ সবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পূর্ব দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুজরা শরীফ। তার পশ্চিম দিকের দেয়ালের মধ্যখানে তাঁর মিহরাব শরীফ এবং পশ্চিমে মিম্বর শরীফ। এখানে বেশ কিছু পাথরের খুঁটি রয়েছে। যে সবের সাথে জড়িয়ে আছে হাদীস ও ইতিহাসের কিতাবে বর্ণিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও স্মৃতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এসব খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। এগুলো ছিল-
১. উসতুওয়ানা আয়েশা বা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু -এর খুঁটি।
২. উসতুওয়ানাতুল-উফূদ বা প্রতিনিধি দলের খুঁটি।
৩. উসতুওয়ানাতুত্তাওবা বা তওবার খুঁটি।
৪. উসতুওয়ানা মুখাল্লাকাহ বা সুগন্ধি জালানোর খুঁটি।
৫. উসতুওয়ানাতুস-সারীর বা খাটের সাথে লাগোয়া খুঁটি এবং উসতুওয়ানাতুল-হারছ বা মিহরাছ তথা পাহাদারদের খুঁটি।
মুসলিম শাসকগণের কাছে এই রওযা মুবারক ছিল বরাবর খুব গুরুত্ব ও যতেœর বিষয়। উসমানী সুলতান সলীম রওযা শরীফের খুঁটিগুলোর অর্ধেক পর্যন্ত লাল-সাদা মারবেল পাথর দিয়ে মুড়িয়ে দেন। অতপর আরেক উসমানী সুলতান আবদুল মাজীদ এর খুঁটিগুলোর সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯৯৪ সালে সৌদি সরকার পূর্ববর্তী সকল বাদশাহর তুলনায় উৎকৃষ্ট পাথর দিয়ে এই রওযা মুবারকের খুঁটিগুলো ঢেকে দেন এবং রওযার মেঝেতে দামী কার্পেট বিছিয়ে দেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের রওযা পাক যিয়ারতের উদ্দ্যেশ সফর:
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
ওহাবি মতবাদের আবির্ভাবের আগে ইসলামের ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলো সংরক্ষিত ছিল। ইসলামে নবিয়্যে মুকাররাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা ছাড়াও তাঁর ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন আংটি মোবারক, জুতা মোবারক, মেসওয়াক মোবারক, তলোয়ার মোবারক, ঢাল মোবারক এমনকি রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব কূপ থেকে পানি পান করেছেন সেই কূপগুলো পযর্ন্ত সংরক্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ওহাবিদের ধ্বংসযজ্ঞের কারণে সেগুলোর খুব কমই এখন অবশিষ্ট রয়েছে।
এসব কাজ যদি র্শিক হতো তাহলে নবিয়্যে মুকাররাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদেরকে সেসব করতে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। নবীজীর কাছ থেকে ফযিলত ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে জনগণ যে চেষ্টা চালিয়েছেন সে সম্পর্কে বহু হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, নবীজী এ কাজের বিরোধিতা করেছেন এরকম কোনো বর্ণনা নির্ভরযোগ্য কোনো গ্রন্থে পাওয়া যায় না।
একইভাবে নবী-রাসূলসহ সালেহিনদের রওয়া পাক বা মাযারের প্রতি সম্মান দেখানোটাও ইসলামের একটি দ্বীনী দায়িত্ব এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়। কেননা ইসলামের মহান নবী এবং আল্লাহর অন্যান্য অলি-আওলিয়ারা হলেন আল্লাহর যমিনে তাঁরই সবর্ত্তম নিদর্শন, তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি উপায় হলো তাঁদের মাযার এবং কীর্তিগুলোকে সংরক্ষণ করা। নবী, রাসূল আর সালেহিনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বা তাঁদের মাযারগুলোকে সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দ্বীনে ইসলামের প্রতি মুসলমানদের ভালোবাসাই প্রকাশ পায়।
তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের রওযা পাক যিয়ারতের উদ্দ্যেশ সফর করা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত, জায়েয ও সুন্নাত। কেননা পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا “যদি কখনও তারা নিজেদের আতœার প্রতি জুলুম করে হে মাহবুব আপনার দরবারে হাজির হয়। অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে।”(সূরা আন নিসা, আয়াত- ৬৪)
جآءُوْكَ অর্থ: “হে মাহবুব আপনার দরবারে হাজির হয়” অর্থাৎ, হে আল্লাহর রাসূল আপনার মদীনা তাইয়্যেবায় হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে আর আপনিও তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- হযরত ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহ তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, "مَنْ زَارَ قَبْرِي وَجَبَتْ له شَفاعتي" “যে ব্যক্তি আমার কবর শরীফ যিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।“{সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৯৪, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১০০৫৩, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-৬৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-৩১১২, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪১৫৩)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, مَنْ حَجَّ الْبَيْتَ وَلَمْ يَزُرْنِي فَقَدْ جَفَانِي “যে ব্যক্তি হজ্ব করেছে, অথচ আমার যিয়ারত করেনি, সে আমার উপর জুলুম করল”। {হাশিয়ায়ে মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৯৪৭}
অন্য বর্ণনায় এসেছে, অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, مَنْ زَارَنِي بَعْدَ مَوْتِي ، فَكَأَنَّمَا زَارَنِي فِي حَيَاتِي ، وَمَنْ مَاتَ فِي أَحَدِ الْحَرَمَيْنِ بُعِثَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْآمِنِينَ“যে আমার ওফাতের পর আমার যেয়ারতে আসবে সে যেন আমার যাহেরী হায়াতেই যেয়ারত করতে আসল। যে দুই হেরমের যে কোন একটি মৃত্যুবরণ করবে কেয়ামত দিবসে সে নিরাপত্তা প্রাপ্তদের সাথে উত্থিত হবে। ” ( দারু ক্বুত্বনী, ২/২৭৮, হ- ১৯২, বায়হাক্বী, ৫/ ২৪৬, শিফাউস সিক্বাম: সুবক্বী- ২১, আল মুজালিসা ওয় জাওয়াহিরুল ইলম: আদ দায়নাওয়ারী, হা-১২৯)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, من زار قبري أو قال من زارني كنت له شفيعا أو شهيدا
) البيهقي، السنن الكبرى ج৫: ص২৪৫- ورواه الإمام السبكي، في شفاء السقام: ২৯- والسمهودي، في وفاء الوفاج৪: ص১৩৪২. وقال: أخرجه الدار قطني في السنن.(
"যে-কেউ যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মদীনায় আসবে এবং আমাকে যিয়ারত করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার জন্যে শাফায়াত করবো এবং তার পক্ষ্যে সাক্ষ্য দেবো।"। {সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-১০০৫৩, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪১৫৩, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-৬৫}
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, وعن أنس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وآله: ্রمن زارني بالمدينة محتسباً كنت له شهيداً وشفيعاً يوم القيامة
) رواه الإمام السبكي في شفاء السقام بسنده إلى أنس بن مالك: ص৩৫- كما رواه السمهودي في وفاء الوفا عن ابن أبي الدنيا بسنده إلى أنس ج৪: ص১৩৪৫- ورواه العلامة الأميني عن واحد وعشرين مصدراً، الغدير ج৫: ص১০২و১০৩.(
“যে মদীনায় সাওয়াবের নিয়তে আমার যেয়ারতে আসল কিয়ামতের দিন আমি তার জন্যে শাফায়াত করবো এবং তার পক্ষ্যে সাক্ষ্য দেবো।"( সামহুদী, ৪/১৩৪৫, শিফাউস সিক্বাম-৩৫)
অন্য বর্ণনায় এসেছে-
قال الذهبي: لَمّا دخلَ عمر الشام سألهُ بلال أن يقرَّه به، ففعل ونزل داريًّا. ثُمَّ أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وهو يقول له: ما هذه الجفوة يا بلال؟ ، أما آن لك أن تزورني، فانتبه حزينًا وركبَ راحلته وقصد المدينة، فأتى قبر النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ، فجعل يبكي عنده ويمرّغ وجهه عليه. فأقبلَ الحَسَن والحسين، فضمّهما وقبّلهما، فقالا: نشتهي أن نسْمع أذانك. ففعل، وعلا سطح المسجد، ووقَفَ موقفه الذي كان يقفُ فيه، فلمّا أن قال: اللَّه أكبر اللَّه أكبر ارتجّت المدينة. فلمّا أن قَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ ازدادت رجّتها، فلمّا أن قال: أشهدُ أنّ محمدا رسول اللَّه. خرج العواتق من خدورهنّ، وقيل: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فما رئي يوم أكثر باكيًا بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ ذلك اليوم) وقد أوردها الإمام المحدث الذهبي في تاريخ الإسلام (১৭/ ৬৭) الطبعة الثانية لدار الكتاب العربي، بيروت والتي حققها عمر عبد السلام التدمري،
হযরত আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। .... একদা হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি বেলালকে বলছেন-হে বেলাল! একি অবিচার! এখনো কি সময় হয়নি যে, তুমি আমার যিয়ারতে আসবে? তারপর বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু চিন্তিত ও ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় জাগ্রত হলেন। তিনি সওয়ারী নিয়ে মদীনা শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। অবশেষে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাওযা শরীফে এসে রোদন করতে থাকলেন এবং চেহারায় ধুলি মারতে লাগলেন। {যাহবী: তারিখুল ইসলাম, ১৭/৬৭, আসারুস সুনান-২৭৯} এখানে পরিস্কারভাবে পরিস্ফুটিত যে, হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর সফর ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা শরীফ যিয়ারত। অন্য কিছু নয়।
এ সকল হাদীস দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে একথা প্রমাণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযায়ে আতহার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা সম্পূর্ণ জায়েজ। শুধু জায়েজই নয়, বরং উত্তমও।
এক বছর মদীনায় প্রচÐ খরা দেখা দিয়েছিল। আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা তখন জনগণকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা যেন এই খরা থেকে মুক্তি পাবার জন্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযায়ে আতহার যিয়ারতের করে। জনগণ তা-ই করে এবং সেই বছর ব্যাপক বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল।
য়ারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযায়ে আতহার যিয়ারতের উদ্দেশ্য সফর করা শিরক, জায়েজ নেই বলে তাদের দলিল ও তার জবাব:
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
১. যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযায়ে আতহার যিয়ারতের উদ্দেশ্য সফর করা শিরক, জায়েজ নেই বলে তারা নিজেদের মতের পক্ষে নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলির পেশ করে থাকে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রلا تُشَدُّ الرِّحَالُ إلاَّ إلى ثَلاثَةِ مَسَاجِدَ: اَلْمَسْجِدِ الْحَرَام، وَمَسْجِدِيْ هَذَا، وَالْمَسْجِدِ الأَقْصَىগ্ধ.‘তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে (অধিক সওয়াবের আশায়) সফর করা জায়েয নেই: মসজিদুল হারাম, আমার এ মসজিদ ও মসজিদুল আক্সা।’[বুখারী : ১১৩২, ১১৮৯, মুসলিম : ১৩৯৭, ৩৪৫০।]
জবাব:
=====
জমহুর ওলামায়ে কিরাম উক্ত হাদীসটির ক্ষেত্রে বলেন, এ হাদীস শরীফে অধিক সওয়াবের আশায় তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনও মসজিদে নামাযের উদ্দেশ্যে সফর করাকে নিষেধ করা হয়েছে, কেননা অন্যান্য সকল মসজিদে নামায পড়ার সাওয়াব সমান। কিন্তু এ তিন মসজিদে সওয়াব বেশি হওয়ায় এ মসজিদের উদ্দেশ্যে সফরের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা যিয়ারতের ক্ষেত্রে এ হাদীসে কিছুই বলা নেই।
তাই তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সফর করাকে নিষেধ করা হয়নি, যদি তাই হতো তা’হলে ব্যাবসা-বানিজ্য, চাকুরী-বাকুরী, চিকিৎসা, আত্মীয়-স্বজনের সাক্ষাতসহ সবধরণের সফর নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, যা হাদীস শরীফের উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।
ইবনে তাইমিয়া এ বিষয়ে বলেছেন, উক্ত হাদীসের আলোকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযায়ে আহতার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নয়। ইবনে তাইমিয়া যে অর্থ করেছেন সে অর্থ অতিরঞ্জন, তা মেনে নিলে বলতে হবে-কোন আলেমের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সফর করা, চিকিৎসার ও ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নয়। অথচ একথা কি বলবেন?
সারকথা হল-
===========
এ হাদীসে “মসজিদ” উদ্দেশ্য, রওযায়ে আহতার, কবর যেয়ারত উদ্দেশ্য নয়। এ বক্তব্যটির অনুকূলে মুসনাদে আহমাদে নিম্নোক্ত বর্ণাটি সমর্থন হিসেবে পাওয়া যায়। মুসনাদ-এ আহমদ এ হযরত শহর ইবনু হাওশাব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, شَهْرِ بْنِ حَوْشَبٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا سَعِيدٍ وَذَكَرَ عِنْدَهُ الصَّلَاةَ فِي الطُّورِ فَقَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا ينبغي للمصلي أن يشد رحاله إِلَى مَسْجِدٍ تُبْتَغَى فِيهِ الصَّلَاةُ غَيْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَالْمَسْجِدِ الْأَقْصَى وَمَسْجِدِي (وَشَهْرٌ حَسَنُ الْحَدِيثِ. أخرجه أحمد في المسند (৩ / ৬৪، ৯৩) واللفظ له، وأبو يعلى في مسنده (২ / ৪৮৯. الزيارة النبوية في ضوء الكتاب والسنة لفضيلة الدكتور محمد علوي المالكي (صـ ৮৩ )
“কোনও মুসল্লীর জন্য নামায আদায়ের লক্ষে তিনটি মসজিদ তথা মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আক্সা ও আমার এ মসজিদ ব্যতিরেকে অন্য কোনও মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা উচিৎ নয়। (মুসনাদ-এ আহমদ, খ-৩, পৃ-৬৪, হাদীস নং-১১৬০৯, মুসনাদ-এ আবু ইয়ালা খ-২, পৃ-৪৮৯)
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহইি আলাইহি তাঁর প্রণীত বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্ত উমদাতুল কারীর ৩ নং খন্ডে এবং ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহইি আলাইহি তাঁর প্রণীত ফাতহুল বারীর ৩ নং খন্ডে এ হাদীস দ্বারা জমহুরের মতের পক্ষে দলীল পেশ করেছেন।
২. তারা নিজেদের মতের পক্ষে নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলির পেশ করে বলে: হাদিসটি প্রমাণ করে, রওযায়ে আহতার, ও কবর যেয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন হারাম। হাদিসে আছে:
عن أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَا تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قُبُورًا ، وَلَا تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا ، وَصَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُمْ
“হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, তোমরা আমার রওযাকে ঈদগাহ বানিয়ো না, আমার উদ্দেশ্যে দরুদ পাঠ কর, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে”।( সুনান এ আবু দাউদ, হা-২০৪২)
জবাব:
====
“তোমরা আমার রওযাকে ঈদগাহ বানিয়ো না” অর্থাৎ, মানুষ যেভাবে বছরে একটি মাত্র দিনে ঈদগাহে গমন করে, আমার রওযার সাথেও তেমন আচরণ করো না। Ÿরং সদা সর্Ÿদা যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মদীনায় আসবে এবং আমার যিয়ারত করবে, বছরে এক দিন নয়।
৩. হাদিসে এসেছে: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, اللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَنًا يُعْبَدُ، اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ “হযরত আতা বিন য়াসার রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, হে আল্লাহ! আমার কবরকে পুজনীয় মূর্তির মত বানাবেন না। আল্লাহর ক্রোধ তাদের উপর প্রবল হয়েছে, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করেছে। (মুয়াত্তা মালিক, ১/১৭২, হা-৪১৪)
৪. হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
عن عائشة رضي الله عنها قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي مَرَضِهِ الَّذِي لَمْ يَقُمْ مِنْهُ: لَعَنَ اللَّهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ . قَالَتْ : وَلَوْلا ذَلِكَ أُبْرِزَ قَبْرُهُ غَيْرَ أَنَّهُ خُشِيَ أَنْ يُتَّخَذَ مَسْجِدًا .
“হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম রোগশয্যায় যে রোগশয্যা হতে তিনি আর উঠে দাঁড়াননি, এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা ইহুদি ও নাসারাদের লা’নত দিয়েছেন তারা তাদের নবীর কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। (বোখারি,১/১৬৮, হা-৪২৫, মুসলিম, ১/৩৭৭, হা-৫৩১)
জবাব:
=====
অর্থাৎ কবরকে মসজিদ বানিয়ে মসজিদের ন্যয় কবরকে সাজদা করা; এর ফলে তা কবর থাকে নি, বরং তা পরিণত হয় পূজনীয় মূর্তিতে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন।
হারাম কাজের জন্য সফর করা হারাম। জায়েজ কাজের জন্য জায়েজ, সুন্নাত কাজের জন্য সুন্নাত এবং ফরজ কাজের জন্য ফরজ । যেমন ফরজ হজ্বের জন্য সফর করাও ফরজ । জিহাদ ও বাণ্যিজের জন্য সফর করা সুন্নাত কেননা এ কাজ সুন্নাত। হুযূর আলাইহিস সালামের রওযা পাক যিয়ারতের উদ্দ্যেশ সফর করা সুন্নাত কেননা এ যিয়ারত সুন্নাত। বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাত আতœীয়-স্বজনের বিবাহ শাদী খতনা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের যোগদান এবং চিকিৎসার জন্য সফর করা জায়েয। কেননা এগুলো জায়েয কাজ। চুরি-ডাকাতির জন্য সফর করা হারাম । মোট কথা হলো, সফরের হুকুমটা জানতে হলে, প্রথমে এর মকসুদটা জেনে নিতে হবে ।
কবর যিয়ারত হচ্ছে সুন্নাত:
==========================
যেহেতু কবর যিয়ারত হচ্ছে সুন্নাত। সুতরাং কবর যিয়ারতে জন্য সফর করাটাও সুন্নাত বলে বিবেচ্য হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, فزُورُوا القُبُورَ، فإنها تُذكِّرُ الموتَ“তোমরা কবর জিয়ারত কর, কারণ তা তোমাদের আখেরাত স্বরণ করিয়ে দেয়।”(ইবনু মাজা, ১/১১৩, হা-১৫৬৯)
কঠিন হৃদয়গুলোর জন্যে কবর যিয়ারত হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম ঔষধ। কারণ যিয়ারত তাদেরকে আখেরাত এবং মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে আর মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরণ হলে দুনিয়াবি চাওয়া-পাওয়া হ্রাস পাবে এবং দুনিয়ায় থাকার আগ্রহ কমে যাবে। যিয়ারতকারীর জন্য কবর যিয়ারত উপদেশ ও নসীহত স্বরূপ। এর ফলে মৃত্যুর কথা স্বরণ করা হয়, যা সৎকর্মের জন্য সহায়ক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ، فَزُورُوهَا، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ، وفي رواية تُذَكِّرُ الآخِرَةَ “আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার। কেননা তা তোমাদের আখেরাত স্বরণ করিয়ে দেয়।” (মুসলিম, ২/১৭১. হা-১০৫)
যিয়ারতের উদ্দেশ্য:
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
হযরত ইবনে মাসউদ এবং আবু হুরাইরার হাদীস দ্বারা যিয়ারতের অন্যতম উদ্দেশ্য বুঝা যায়।
ক. কবর যিয়ারতের দ্বারা দুনিয়ার আকর্ষণ কমে, কেননা তখন যিয়ারতকারী মনে করে একদিন আমাকেও দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে স্থায়ী বসত বাড়ী কবরে আসতে হবে। এই চিন্তা ভাবনা দুনিয়ার স্বাদকে মিটায়।
খ. আখেরাতের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। আখেরাত মানুষের জন্য চিরস্থায়ী অবস্থান স্থল, দুনিয়া সহায় সম্পদ কোন কিছুই সাথে যাবে না, খালি হাতে একা সেখানে যেতে হবে। যারা নেক কর্ম করে এবং নেক আমলের অধিকারী, কেবল তারাই সেখানে চিরস্থায়ী সুখী হবে। তারা জান্নাতের অতুলনীয় সুখ শান্তি উপভোগ করতে পারবে। এরূপ অনুভূতি মানুষকে আখেরাতের আমল এবং আখেরাতমুখী করে তোলে।
অনেক হাদিস গ্রন্থে এসেছে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মা আমেনা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহার কবর যিয়ারত করতে গিয়ে কান্নাকাটি করতেন। আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করে নিজেও কেঁদেছেন এবং অন্যদেরকেও কাদিয়েঁছেন, তারপর বলেছেন... "কবরগুলোকে যিয়ারত করবে, কেননা কবর যিয়ারত করলে মৃত্যুর কথা মনে পড়ে।"
আওলিয়ায়ে কেরামের মাযার যেয়ারত:
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
হাজত বা মনষ্কামনা পূরণার্থে বিভিন্ন মাযারে বা আল্লাহ মাহবুব বান্দাদের দরবারে যাওয়ার বাস্তব প্রমাণ কিতাবে রয়েছে। যেমন ফতওয়ায়ে শামী প্রথম খন্ড যিয়ারতে কুবুর’ শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখিত আছে - ইমাম গাযযালী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন: وَاَمَّا الْاَوْلِيَاءُ فَاِنَّهُمْ مُتَفاوِتُوْنَ فِى القُرْبِ اِلَى اللهِ وَنَفَعِ الزئريْنَ بِحَسْبِ مَعَارِفِهِمْ وَاَسْرَارِهِمْ.
“কিন্তু আল্লাহর ওলীগন আল্লাহর নৈকট্য লাভে ও যিয়ারতকারীদের ফায়দা পৌছানোর বেলায় নিজেদের প্রসিদ্ধি ও আধ্যাতিœক শক্তি অনুসারে ভিন্নতর । (ফাতওয়া ইমাম ইবন হাজর আল আসক্বালানী, ২/২৪)
ফতুওয়ায়ে শামীর ভূমিকায় ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ফযিলত বর্ণনা প্রসংগে ইমাম শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির উক্তিটি উল্লেখ করা হয়েছ ।– ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
اِنِّىْ لَا تَبَرَّكُ بِاَبِىْ حَنِيْفَةَ وَاَجِئُ اِلَى قَبْرِهِ فَاذَا عَرَضَتْ لِىْ حَاجَّةٌ صَلَّيْتُ رَكْعَتَيْنِ وَسَالْتَ اللهِ عِنْدَ قَبْرِهِ فَتُقْضَى سَرِيْعًا.
আমি ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বরকত হাসিল করি এবং তাঁর মাযারে আসি। আমার কোন সমস্যা দেখা দিলে, প্রথমে দু’রাকাত নামায পড়ি। অতঃপর তাঁর মাযারে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তখন সহসা আমার সমস্যার সমাধান হয়ে যায় । (রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রাহ।)
হিজরতের পূর্বে মেরাজ পথে মদীনা তাইয়্যেবায়, সিনাই পর্বতে ও বেথেলহামে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়েছেন:
عن أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ: أُتِيتُ بِدَابَّةٍ فَوْقَ الْحِمَارِ وَدُونَ الْبَغْلِ خَطْوُهَا عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهَا ، فَرَكِبْتُ وَمَعِى جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ، فَسِرْتُ ، فَقَالَ: انْزِلْ فَصَلِّ ، فَفَعَلْتُ .فَقَالَ: أَتَدْرِى أَيْنَ صَلَّيْتَ ؟ صَلَّيْتَ بِطَيْبَةَ وَإِلَيْهَا الْمُهَاجَرُ. ثُمَّ قَالَ: انْزِلْ فَصَلِّ ، فَصَلَّيْتُ ، فَقَالَ: أَتَدْرِى أَيْنَ صَلَّيْتَ؟ صَلَّيْتَ بِطُورِ سَيْنَاءَ حَيْثُ كَلَّمَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ. ثُمَّ قَالَ: انْزِلْ فَصَلِّ ، فَنَزَلْتُ فَصَلَّيْتُ ، فَقَالَ: أَتَدْرِى أَيْنَ صَلَّيْتَ؟ صَلَّيْتَ بِبَيْتِ لَحْمٍ حَيْثُ وُلِدَ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ.
"মদীনা তাইয়্যেবায় নামায পড়েছেন কেননা সেটা ছিল আপনার হিজরতের স্থান, সিনাই পর্বতে নামায পড়েছেন কেননা সেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাথে কথা বলেছিলেন, আর বেথেলহামে নামায পড়েছেন কেননা তা ছিল মারিয়াম আলাইহাস সালামের পুত্র হযরত ইসা আলাইহিস সালামের জন্মস্থান।" (নাসায়ী,হা- ৫৫০)
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে কয়েকটি বিষয় জানা গেল-কবর যিয়ারতের জন্য সফর- কেননা ইমাম শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজের জন্ম ভূমি ফিলিস্তিন থেকে ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযার যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সুদূর বাগদাদ শরীফ আসতেন, কবরবাসীদের থেকে বরকত গ্রহণ, ওনাদের মাযারের কাছে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা এবং কবরবাসীদের অভাব পূর্ণ করার মাধ্যম মনে করতেন।
সুতরাং অসংখ্য দলীলের মাধ্যমে প্রমানিত হলো আল্লাহর নেক বান্দাদের রওযাতে যাওয়া শুধু জায়েয নয়, বরং প্রখ্যাত ইমামদের অনুসৃত নীতিও বটে। (কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, রদ্দুল মুহতার, ফতোয়ায়ে আজীজিয়া, বুযুর্গ কে আকীদা।)
বিবেকও বলে যে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর জায়েয। কেননা আমি ইতি পূর্বে উল্লেখ করেছি যে সফর হালাল বা হারাম হওয়াটা এর মকসুদ থেকেই বোঝা যায়। এ সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে কবর যিয়ারত যা নিষেধ নয়, কেননা যিয়ারতে কবর সাধারণভাবেই অনুমোতিত الَافَزُوْرَوْهَا তাহলে সফর কেন হারাম হবে? অধিকন্তু দ্বীনি ও দুনিয়াবী কাজ কারবারের জন্য সফর করা হয় । এটাও একটি দ্বীনি কাজের জন্য সফর হেতু হারাম কেন হবে? (-সুত্রঃ জা’আল হক ২য় খন্ড-)
নিঃসন্দেহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা অবশ্যই জায়েজ।
কথিত আহলে হাদীস এবং ইবনে তাইমিয়া ছাড়া রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ হওয়ার বিষয়ে ওলামায়ে উম্মতের মাঝে কোন মতবিরোধ নেই। সর্বসম্মত মতে তা জায়েজ।
রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের কিংবা আল্লাহর নেক বান্দাদের রওযাতে যিয়ারতকালে যিয়ারতকারীগণ প্রকৃতপক্ষে তাদেঁর সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন যে, জীবনে তাদেঁর প্রদর্শিত পথ ছাড়া আর কোনো পথে পা বাড়াবেন না।
আল্লাহ তায়ালা যাকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন তাঁর প্রতি সম্মান দেখানোটা বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকেও যুক্তিযুক্ত এবং পূণ্যময়, আর যিয়ারত করা এক ধরনের সম্মান প্রদর্শনেরই নামান্তর মাত্র।
এইসব বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় কবর যিয়ারত করাটা কেবল বৈধই নয় বরং নবীজীর একটি সুন্নাতও বটে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্নিত রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস আছে - مَا رَآهُ الْمُسْلِمُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ "মুসলমান যে কাজকে পছন্দনীয় বলে বিবেচনা করেন -তা আল্লাহর নিকট ও পছন্দনীয় "। ( মুসনাদ এ আহমদ, ১/৩৭৯. হা-৩৬০০ )।
তাই উহা গোমরাহী হতে পারে না । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন । عَنْ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِنَّ اللَّهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِي عَلَى ضَلَالَةٍ ، وَيَدُ اللَّهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ " আমার উম্মত গোমরাহ বিষয়ে একমত হতে পারে না " ( তিরমিযী, হা-২১৬৭, আবু দাউদ, হা- ৪২৫৩)
ইমাম বুসেরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘কাসীদাতুল বুরদা’তে বলেন:
فإنَّ من جودك الدنيا وضرَّتها + ومن علومك علم اللوح والقلمِ
হে নবী! আপনার দয়া থেকেই দুনিয়া ও আখেরাত সৃষ্ঠি হয়েছে। আর আপনার জ্ঞান থেকেই লাওহে মাহফুয ও কলমের জ্ঞান উদ্ভাসিত হয়েছে। (বুসেরী: কাসীদাতুল বুরদা)
يا أكرم الخلق ما لي من ألوذ به + سواك عند حلول الحوادث العمم
“হে সৃষ্টির সেরা সম্মানিত! আমার জন্য কে আছে আপনি ব্যতীত, যার কাছে আমি কঠিন বালা মসীবতে আশ্রয় প্রার্থনা করবো?” (বুসেরী: কাসীদাতুল বুরদা)
মসজিদে নববীতে প্রবেশের আদব
ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
আবাসস্থল থেকে উযূ-গোসল সেরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ধীরে-সুস্থে মসজিদে নববী শরীফের উদ্দেশ্যে গমন করবেন। আল্লাহর প্রতি বিনয় প্রকাশ করবেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করবেন। নিচের দো‘আ পড়তে পড়তে ডান পা দিয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করবেন : ্রبِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلى رَسُوْلِ اللهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَগ্ধ.
(বিসমিল্লাহি ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাগফিরলী যুনূবী ওয়াফ-তাহলী আবওয়াবা রহমাতিকা)।‘আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।’[ইবন মাজাহ্ : ৭৭১।] পাশাপাশি এ দো‘আও পড়তে পারেন, ্রأَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِগ্ধ (আউযুবিল্লাহিল আযীম ওয়া বি ওয়াজহিহিল কারীম ওয়া সুলতানিহিল কাদীমি মিনাশ শায়তানির রাজীম।)‘আমি মহান আল্লাহর, তাঁর সম্মানিত যাতে পাকের এবং তাঁর চিরন্তন কর্তৃত্বের মাধ্যমে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’[আবূ দাউদ : ৪৬৬।]
অতপর যদি কোন ফরয নামাজের জামাত দাঁড়িয়ে যায় তবে সরাসরি জামাতে অংশ নিন। নয়তো বসার আগেই দু’রাক‘আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়বেন। হযরত আবূ কাতাদা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রإِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يَرْكَعَ رَكْعَتَيْنِগ্ধ.‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন দু’রাক‘আত নামাজ পড়ে তবেই বসে।’[বুখারী : ৪৪৪; মুসলিম : ১৬৫৪।]
আর সম্ভব হলে ফযীলত অর্জনের উদ্দেশ্যে রাওযা শরীফে মিম্বর শরীফের সীমানার মধ্যে এই নামায পড়বেন। কারণ হযরত আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَا بَينَ بَيْتِيْ ومِنْبَرِيْ رَوضَةٌ مِن رِيَاضِ الجَنَّةٍগ্ধ ‘আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝখানের অংশটুকু রওযাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাত (জান্নাতের উদ্যানসমুহের একটি উদ্যান)।’[বুখারী : ১১২০; মুসলিম : ২৪৬৩।]
আর সম্ভব না হলে মসজিদে নববী শরীফের যেখানে সম্ভব সেভাবেই পড়বেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মসজিদের এ অংশকে অন্যান্য অংশ থেকে পৃথক গুণে গুণান্বিত করা দ্বারা এ অংশের আলাদা ফযীলত ও বিশেষ শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করছে। আর সে শ্রেষ্ঠত্ব ও ফযীলত অর্জিত হবে কাউকে কষ্ট না দিয়ে সেখানে নফল নামায আদায় করা, আল্লাহর যিক্র করা, কুরআন তিলাওয়াত ও অধিকহারে দুরূদ শরীফ পাঠ করা দ্বারা। ফরয নামায প্রথম কাতারগুলোতে পড়া উত্তম; কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রخَيْرُ صُفُوْفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَاগ্ধ. ‘পুরুষদের সবচেয়ে উত্তম কাতার হলো প্রথমটি, আর সবচেয়ে খারাপ কাতার হলো শেষটি।’[মুসলিম : ১০১৩।] , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন, ্রلَوْ يَعْلَمُ النّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَولِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا إلا أَن يَّسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوْا عَلَيْهِগ্ধ. ‘মানুষ যদি আযান ও প্রথম কাতারের ফযীলত জানত, তারপর লটারি করা ছাড়া তা পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকত, তাহলে অবশ্যই তারা তার জন্য লটারি করত।’[বুখারী : ৬১৫; মুসলিম : ৯৮১।]
সুতরাং এর দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, মসজিদে নববী শরীফে নফল সালাতের উত্তম জায়গা হলো রাওযাতুম মিন রিয়াযুল জান্নাত। আর ফরয নামাজের জন্য উত্তম জায়গা হলো প্রথম কাতার তারপর তার নিকটস্থ কাতার।
মদীনা মুনাওয়ারার অন্যান্য বরকতময় স্থান সমূহের যেয়ারত:
১. জান্নাতুল বাকী’ বা বাকী‘র মাযারসমূহ।
২. মসজিদে কুবা’
৩. শুহাদায়ে উহুদের মাযার
জান্নাতুল বাকী’ বা বাকী‘র মাযারসমূহ:
=======================
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে বাকী‘ মদীনা শরীফবাসীর প্রধান কবরস্থান। এটি মসজিদে নববী শরীফের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। মদীনা শরীফে মৃত্যু বরণকারী হাজার হাজার ব্যক্তির কবর রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় অধিবাসী এবং বাইরে থেকে আগত যিয়ারতকারীগণ। এখানে প্রায় দশ হাজার সাহাবায়ে কেরামের মাযার শরীফ রয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন হযরত খাদীজা ও হযরত মায়মূনা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা ছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাকী স্ত্রীবর্গের মাযার, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা, পুত্র হযরত ইবরাহীম রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু, চাচা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু, ফুফু হযরত সাফিয়্যা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা, নাতী হযরত ইমাম হাসান ইবন আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা এবং জামাতা হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ছাড়াও অনেক মহান ব্যক্তিবর্গ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই বাকী‘র মাযারসমূহের যিয়ারত করতেন। সেখানে তিনি বলতেন, ্রالسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَأَتَاكُمْ مَا تُوعَدُونَ غَدًا مُؤَجَّلُونَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَدগ্ধ (আস্সালামু আলাইকুম দারা কাওমিম মু’মিনীন ওয়া আতাকুম মা তুআ‘দুনা গাদান মুআজ্জালুনা ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকূন, আল্লাহুম্মাগ ফির লিআহলি বাকী‘ইর গারকাদ।) ‘তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক হে মু’মিনদের চিরস্থায়ী ঘরে অবস্থানকারীগন, তোমাদেরকে যা ওয়াদা করা হয়েছিল তা তোমাদের কাছে এসেছে। আর আগামীকাল (কিয়ামত) পর্যন্ত তোমাদের সময় বর্ধিত করা হল। ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে আমরাও মিলিত হব। হে আল্লাহ, বাকী‘ গারকাদের অধিবাসীদের ক্ষমা করুন।’[মুসলিম : ৯৭৪; ইবন হিববান : ৩১৭২।]
তাছাড়া কোন কোন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলা বাকী‘উল গারকাদে যাদের দাফন করা হয়েছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন। এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আমার কাছে জিবরীল এসেছিলেন ...তিনি বললেন, ্রإِنَّ رَبَّكَ يَأْمُرُكَ أَنْ تَأْتِىَ أَهْلَ الْبَقِيعِ فَتَسْتَغْفِرَ لَهُمْগ্ধ ‘আপনার রব আপনাকে বাকী‘র কবরস্থানে যেতে এবং তাদের জন্য দো‘আ করতে বলেছেন।’ হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি কীভাবে তাদের জন্য দো‘আ করবো? তিনি বললেন, তুমি বলবে, ্রالسَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّاوَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاَحِقُونَগ্ধ. (আসসালামু আ‘লা আহলিদ দিয়ারি মিনাল মু’মিনীন ওয়াল মুসলিমীন ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাকদিমীন মিন্না ওয়াল মুসতা’খিরীন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকূন।) ‘মুমিন-মুসলিম বাসিন্দাদের ওপর সালাম। আল্লাহ আমাদের পূর্ব ও পরবর্তী সবার ওপর রহম করুন। ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হব।’[মুসলিম : ৯৭৪; নাসাঈ : ২০৩৯।]
মসজিদে কুবা’:
==============
মদীনা শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিষ্ঠিত প্রথম মসজিদ এটি। মক্কা থেকে মদীনা শরীফে হিজরতের পথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে কুবা [মদীনা শরীফের অদূরে একটি গ্রামের নাম। বর্তমানে এটি মদীনা শরীফের অংশ।] পল্লীতে আমর ইবন আউফ গোত্রের কুলছুম ইবন হিদমের গৃহে অবতরণ করেন। এখানে তাঁর উট বাঁধেন। তারপর এখানেই তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এর নির্মাণকাজে তিনি সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। এ মসজিদে তিনি নামাজ পড়তেন। এটিই প্রথম মসজিদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে তাঁর সাহাবীদের নিয়ে প্রকাশ্যে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। এ মসজিদের কিবলা প্রথমে বাইতুল মাকদিসের দিকে ছিল। পরে কিবলা পরিবর্তন হলে কা‘বার দিকে এর কিবলা নির্ধারিত হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে চাইতেন। সপ্তাহে অন্তত একদিন তিনি এ মসজিদের যিয়ারতে গমন করতেন। হযরত ইবন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা তাঁর অনুকরণে প্রতি শনিবার মসজিদে কুবার যিয়ারত করতেন। হযরক ইবন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা বলেন, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি শনিবারে হেঁটে ও বাহনে চড়ে মসজিদে কুবায় তাশরীফ নিয়ে যেতেন।’[বুখারী : ১১৯৩; মুসলিম : ১৩৯৯।]
মসজিদে কুবার ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَنْ خَرَجَ حَتَّى يَأْتِىَ هَذَا الْمَسْجِدَ مَسْجِدَ قُبَاءٍ فَصَلَّى فِيهِ كَانَ لَهُ عِدْلَ عُمْرَةٍগ্ধ ‘যে ব্যক্তি (ঘর থেকে) বের হয়ে এই মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে কুবায় আসবে। তারপর এখানে নামাজ পড়বে। তা তার জন্য একটি উমরার সমতুল্য।’[হাকেম, মুস্তাদরাক : ৩/১২।]
শুহাদায়ে উহুদের মাযারসমূহ:
===========================
২য় হিজরীতে সংঘটিত উহুদ যুদ্ধের শহীদদের মাযারসমূহ যিয়ারত করা। তাঁদের জন্য দো‘আ করা এবং তাঁদের জন্য রহমত প্রার্থনা করা। সপ্তাহের যেকোন দিন যে কোন সময় যিয়ারতে যাওয়া যায়। অনেকে জুমাবার বা বৃহস্পতিবার যাওয়া উত্তম মনে করেন।
উপরোল্লিখিত স্থানগুলোতে যাওয়ার কথা হাদীসে এসেছে বিধায় সেখানে যাওয়া সুন্নত। এছাড়াও মদীনা শরীফতে আরো অনেক ঐতিহাসিক ও স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে। যেমন: মসজিদে কিবলাতাইন, মসজিদে ইজাবা, মসজিদে জুমা‘, মসজিদে বনী হারেছা, মসজিদে ফাত্হ, মসজিদে মীকাত, মসজিদে মুসাল্লা ও উহুদ পাহাড় ইত্যাদি।
মসজিদে কিবলাতাইন:
======================
এটি একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। মদীনা শরীফ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে খাযরাজ গোত্রের বানূ সালামা গোত্রে অবস্থিত। বনূ সালামা গোত্রের মহল্লায় অবস্থিত হওয়ার কারণে মসজিদে কিবলাতাইনকে মসজিদে বনী সালামাও বলা হয়। একই নামাজ এই মসজিদে দুই কিবলা তথা বাইতুল মাকদিস ও কা‘বাঘরের দিকে পড়া হয়েছিল বলে একে মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ বলা হয়।
হযরত বারা’ ইবন আযেব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে ষোল বা সতের মাস নামাজ পড়েছেন। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনে মনে কা‘বামুখী হয়ে নামাজ পড়তে চাইতেন। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন, قَدۡ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجۡهِكَ فِي ٱلسَّمَآءِۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبۡلَةٗ تَرۡضَىٰهَاۚ فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۚ وَحَيۡثُ مَا كُنتُمۡ فَوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ شَطۡرَهُۥۗ ‘আকাশের দিকে বার বার আপনার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখছি। অতএব আমি অবশ্যই আপনাকে এমন কিবলার দিকে ফিরাব, যা আপনার নিকট পছন্দনীয় হবে। সুতরাং আপনার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরিয়ে নিন এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকেই তোমাদের চেহারা ফিরাও।’[বাকারা : ১৪৪।] এ আয়াত নাযিল হবার সাথে সাথে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বার দিকে ফিরে যান।’[বুখারী : ৩৯৯।]
ইবন সা‘দ উল্লেখ করেন, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানূ সালামার উম্মে বিশর ইবন বারা’ ইবন মা‘রূর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহার সাক্ষাতে যান। তাঁর জন্য খাদ্য প্রস্তুত করা হয়। ইতোমধ্যেই যোহর নামাজের সময় ঘনিয়ে আসে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের নিয়ে দুই রাক‘আত নামাজ পড়েন। এরই মধ্যে কা‘বামুখী হওয়ার নির্দেশ আসে। সাথে সাথে (সালাতের অবশিষ্ট রাক‘আতের জন্য) তিনি কা‘বামুখী হয়ে যান। এ থেকেই মসজিদটির নাম হয়ে যায় মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ।’[ড. ইলিয়াস আবদুল গনী, আল-মাসাজিদ আল-আছারিয়্যা : পৃ. ১৮৬।]
No comments:
Post a Comment