Friday, August 31, 2018

৩য় জুমা’ ১৯ যুল হাজ্জাহ ১৪৩৯হি: ৩১ আগষ্ট- ২০১৮

জুমার খুতবা 

***************


রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিদায় হজ্বের ভাষণ

========================================

সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী

খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম। #


بسم الله الرحمن الرحيم

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশম হিজরি,৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে যে হজ্ব পালন করেন, ইসলামের ইতিহাসে তা ‘হজ্জাতুল বিদা’ বা ‘বিদায় হজ্ব’ নামে খ্যাত। দশম হিজরি জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফাতের বিশাল ময়দানে উপস্থিত প্রায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার বা প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার সাহাবীর সম্মুখে জীবনের অন্তিম ভাষণ দান করেন, যা বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের 'বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ' নামে পরিচিত।


১০ম হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসের চারদিন বাকী থাকতে শনিবার যোহরের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায় লক্ষাধিক সাহাবীর এক বিরাট দল সমভিব্যাহারে মদীনা হ’তে মক্কার পথে হজ্ব আদায়ের জন্যে রওয়ানা হ’লেন। অনবরত আট দিন পথ চলার পর যিলহজ্ব মাসের ৪ তারিখ রোজ শনিবার মক্কা মুয়ায্যামায় প্রবেশ করেন, ৮ জিলহজ সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিনায় তাশরীফ নিয়ে গেলেন। দশম হিজরি জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখে আয়োজিত হয় বিশ্বমানবতায় এক মহাসমাবেশ। ওই দিনটি ছিল ইসলামের গৌরবময় ও সুউচ্চ মর্যাদা বিকাশের দিন, যার ফলে প্রাক-ইসলামি অন্ধকার যুগের যাবতীয় কুসংস্কার ও অহেতুক কাজকর্ম বিলুপ্ত হয়ে গেল।


এ দিন ছিল শুক্রবার, ভোরে নামায আদায় করে মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হলেন। লাখো কণ্ঠের গগনবিদারী ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে দুই পাশের পর্বতমালা কেঁপে উঠল। আরাফাহ ময়দানের পূর্বদিকে ‘নামিরা’ নামক স্থানে তাঁবু স্থাপন করা হলো, সেখানে পৌঁছে দুপুর পর্যন্ত তাঁবুতে অবস্থান করেন। জুমার সালাত আদায় করে তিনি ‘কচওয়া’ নামক উষ্ট্রীর উপর আরোহন করে আরাফা’র সন্নিকটে ‘আরনা’ প্রান্তরে উপস্থিত হয়ে এ বিশাল সমাবেশে তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজ্বের খুতবা বা ভাষণ প্রদান করেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ভাষণ ছিল মূলত আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের চূড়ান্ত ঘোষণা। আর তাই তো সেদিন নাযিল হয়েছিল 

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপরে আমার নে‘মতকে পরিপূর্ণ করলাম আর ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (সুরা মায়েদা, আয়াত-৩)।


দীর্ঘ ২৩ বছরে কঠিন সাধনা আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান স্রষ্টার ইচ্ছার স্বরূপে আরব জাহানকে গড়ে তুলেছিলেন। আরাফাত ময়দানে বিদায় হজ্বের ভাষণে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল ইসলামের সেই মর্মবানী। ইসলামের প্রকৃত মূল্যবোধ অনুযায়ী মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে এই ভাষণে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা ছিল। ইসলাম ধর্ম যে ধাপে ধাপে ও পর্যায়ক্রমে পূর্ণতা পেয়েছিলো, তারই চূড়ান্ত ঘোষণা ছিলো মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ভাষণ।


এ ভাষণে ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছিলো। মুসলিম জাতির সাফল্যের ধারা বজায় রাখতে মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। এই ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল উপাসনামূলক অনুশাসন ছিলো না, বরং মানবসমাজের জন্য করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপদেশও ছিলো এ ভাষনে।


আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, তাঁর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি, মানবজাতির ঐক্য, আধ্যাত্মিক ভ্রাতৃত্ব, সামাজিক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক সাম্য ইত্যাদি সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম সব বিষয়ই এই ভাষণের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এই ভাষণে তাকওয়া বা দায়িত্বনিষ্ঠতার কথা গুরুত্ব দেয়া হয়েছিলো এবং পাপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছিলো। আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব বা হক্কুল্লাহ ও মানবস¤প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব বা হক্কুল ইবাদের মধ্যে সীমারেখা টেনে দেয়া হয়েছিলো তাঁর এ ভাষনে।


হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ভাষণে সমাজ ও রাষ্ট্রে অরাজকতা, বিদ্রোহ এবং কুপরামর্শ প্রদানকারী শয়তানদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ভাষণে বিভিন্ন ধরণের সুদপ্রথা রহিত করে শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিলো। নারীর পূর্ণ নিরাপত্তা, সম্মান ও অধিকারকে নিশ্চিত করার জন্য মুসলমানদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো এই ভাষণে। মানুষে মানুষে আত্মীয়তার বন্ধন, বিশেষ করে রক্তের সম্পর্কের উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ ও সামাজিক কুসংস্কার থেকে মানুষের মুক্তি লাভের ওপর জোর দেয়া হয়েছিলো।


হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই ঐতিহাসিক ভাষণে স্বর্গ-মর্তের সকল কিছুর ওপর আল্লাহর কর্তৃত্ব সুনিশ্চিত করা হয়েছিলো এবং মানুষকে এসব কিছুর আমানতদার হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। আল্লাহর মালিকানায় সবার অধিকার স্বীকৃত বলে উত্তরাধিকার আইনের ওপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়। আমানতের খেয়ানতকারীর প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা ও মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা বিধানের জন্য কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সাম্য, স্বাধীনতা, ন্যায়পরায়ণতা, ভ্রাতৃত্ব এবং বদান্যতা ও মানবতার পরম ধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিলো।


আরাফাতের ময়দানের উক্ত ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি এরশাদ করেন, 

أَمَّا بعد، أيّهَا النّاس، اسْمَعُوا منّي أُبّينْ لَكُمْ، فَإنّيَ لاَ أَدْرِي، لعَليّ لاَ أَلْقَاكُمْ بَعْدَ عَامي هَذَا، في مَوْقِفي هذا،

১. ‘হে জনগণ! তোমরা আমার কথা শোন! কারণ আমি হয়তো এরপর তোমাদের সঙ্গে এই স্থানে আর মিলিত হবনা’।[দারেমী হা/২২৭, ফিক্বহুস সীরাহ পৃঃ ৪৫৬, সনদ ছহীহ।]


أَيُهَا النَّاس، إنّ دِمَاءَكُمْ وَأمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عَليكُمْ حَرَامٌ إلى أنْ تَلْقَوْا رَبَّكُمْ، كَحُرمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا في شَهْرِ كُمْ هَذَا في بَلَدِكُم هَذَا

২. ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্ভ্রমকে তোমাদের পরস্পরের উপরে এমনভাবে হারাম, যেমনভাবে আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহর তোমাদের জন্য হারাম’ (অর্থাৎ এর সম্মান বিনষ্ট করা হারাম) ।


أَلَا كُلُّ شَيْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَيَّ مَوْضُوعٌ ، وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ ، وَإِنَّ أَوَّلَ دَمٍ أَضَعُ مِنْ دِمَائِنَا دَمُ ابْنِ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ ، كَانَ مُسْتَرْضِعًا فِي بَنِي سَعْدٍ فَقَتَلَتْهُ هُذَيْلٌ 

৩. ‘শুনে রাখ, জাহেলী যুগের সকল কিছু আমার পায়ের তলে পিষ্ট হ’ল। জাহেলী যুগের সকল রক্তের দাবী পরিত্যক্ত হ’ল। আমাদের রক্ত সমূহের প্রথম যে রক্তের দাবী আমি পরিত্যাগ করছি, সেটি হ’ল রাবী‘আহ ইবনুল হারেছ-এর শিশু পুত্রের রক্ত; যে তখন বনু সা‘দ গোত্রে দুগ্ধ পান করছিল, আর হোযায়েল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিল’।


وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ ، وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ ، فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ 

৪. “জাহেলী যুগের সূদপ্রথা পরিত্যক্ত হ’ল। আমাদের সূদ সমূহের প্রথম যে সূদ আমি পরিত্যক্ত বলে ঘোষনা দিচ্ছি সেটা হ’ল আববাস ইবনু আব্দিল মুত্ত¡ালিবের পাওনা সূদ। সূদের সকল প্রকার কারবার সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত করে দেওয়া হ’ল।”


فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ ، وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ ، فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ ، وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ،

৫. ‘তোমরা মহিলাদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে তাদেরকে হালাল করেছ। তাদের উপর তোমাদের প্রাপ্য হ’ল, তারা যেন তোমাদের বিছানা এমন কাউকে মাড়াতে না দেয়, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা সেটা করে, তবে তোমরা তাদের মৃদু প্রহার করবে, যা গুরুতর হবে না। আর তোমাদের উপরে তাদের প্রাপ্য হক হ’ল, তোমরা যেন তাদের জন্য সুন্দর রূপে খাদ্য ও পরিধেয়ের যোগান দাও।


وَقَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ ، كِتَابُ اللَّهِ ،

৬. ‘আর জেনে রাখ, আমি তোমাদের মাঝে রেখে যাচ্ছি এমন এক বস্তু, যা মযবুতভাবে ধারণ করলে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। আর সেটি হ’ল আল্লাহর কেতাব’।[মুসলিম হা/১২১৮, মিশকাত হা/২৫৫৫ ‘মানাসিক’ অধ্যায়।]


أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ لا نَبِيَّ بَعْدِي , وَلا أُمَّةَ بَعْدَكُمْ , أَلا فَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ , وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ , وَصُومُوا شَهْرَكُمْ , وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ طَيِّبَةً بِهَا أَنْفُسُكُمْ , وَأَطِيعُوا وُلاةَ أَمْرِكُمْ ، تَدْخُلُوا جُنَّةَ رَبِّكُمْ " .

৭. ‘হে জনগণ! শুনে রাখ আমার পরে কোন নবী নেই এবং তোমাদের পরে আর কোন উম্মাত নেই। অতএব তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর, রামাযান মাসের রোযা রাখো, সন্তুষ্ট চিত্তে তোমাদের মালের যাকাত দাও, তোমাদের প্রভুর গৃহে হজ্জ আদায় কর, তোমাদের শাসকদের আনুগত্য কর, এ সবের মাধ্যমে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ কর’।[ত্বাবারাণী, আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৭১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২৩৩।]


وَأَنْتُمْ تُسْأَلُونَ عَنِّي، فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُونَ؟ قَالُوا: نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ ، فَقَالَ: بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ ، يَرْفَعُهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى النَّاسِ اللَّهُمَّ ، اشْهَدْ ، اللَّهُمَّ ، اشْهَدْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ 

৮. আর তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। তখন তোমরা কি বলবে? লোকেরা বলল, আমরা সাক্ষ্য দেব যে, আপনি সবকিছু পৌঁছে দিয়েছেন, দাওয়াতের হক আদায় করেছেন এবং উপদেশ দিয়েছেন’। অতঃপর তিনি শাহাদাত অঙ্গুলি মুবারক আসমানের দিকে উঁচু করে ও সমবেত জনমন্ডলীর দিকে নীচু করে তিনবার বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক’।[মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫।]


ফাযালাহ বিন ওবায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,

أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِالْمُؤْمِنِ؟ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَالْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ النَّاسُ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُجَاهِدُ مَنْ جَاهَدَ نَفْسَهُ فِى طَاعَةِ اللهِ وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ الْخَطَايَا وَالذُّنُوبَ

৯. ‘আমি কি তোমাদেরকে মুমিন সম্পর্কে খবর দিব না? সে ঐ ব্যক্তি যার হাত থেকে অন্যদের মাল ও জান নিরাপদ থাকে। আর মুসলিম সেই, যার যবান ও হাত থেকে অন্যেরা নিরাপদ থাকে। আর মুজাহিদ সেই, যে আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত করে এবং মুহাজির সেই, যে সকল প্রকার অন্যায় ও পাপকর্ম সমূহ পরিত্যাগ করে’। [ আহমাদ হা/২৪০০৪; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৮৬২; ছহীহাহ হা/৫৪৯।]

উক্ত কথাটি হযরত আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় অন্যভাবে এসেছে,

الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ ‘মুসলিম সেই, যার যবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে এবং মুহাজির সেই, যে আল্লাহর নিষেধ সমূহ পরিত্যাগ করে’।[ বুখারী হা/১০; মিশকাত হা/৬।]


হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আরাফাতের ময়দানে উটনীর পিঠে সওয়ার অবস্থায় প্রদত্ত ভাষণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,

أَلاَ وَإِنِّى فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ وَأُكَاثِرُ بِكُمُ الأُمَمَ فَلاَ تُسَوِّدُوا وَجْهِى أَلاَ وَإِنِّى مُسْتَنْقِذٌ أُنَاسًا وَمُسْتَنْقَذٌ مِنِّى أُنَاسٌ فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُصَيْحَابِى. فَيَقُولُ إِنَّكَ لاَ تَدْرِى مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ-

১০. ‘মনে রেখ! আমি তোমাদের সকলের আগেই হাউয কাউছারে পৌঁছে যাব। আর আমি অন্য সকল উম্মতের মধ্যে তোমাদের আধিক্য নিয়ে গর্ব করব। অতএব তোমরা আমার চেহারাকে কালেমালিপ্ত করো না। মনে রেখ! আমি অনেককে সেদিন মুক্ত করব এবং অনেকে সেদিন আমার থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তখন আমি বলব, ‘হে আমার প্রতিপালক! এরা তো আমার সাথী। তিনি বলবেন, তুমি কি জানো না তোমার পরে কী করেছিল’ (ইবনু মাজাহ হা/৩০৫৭)।


হযরত সাহল বিন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে, এ জওয়াব পাওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করবেন, سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِى ‘দূর হও দূর হও! যে ব্যক্তি আমার পরে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছ’।[ বুখারী হা/৬৫৮৩-৮৪; মুসলিম হা/২২৯৭ (৩২); মিশকাত হা/৫৫৭১।]


১১. একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে, أَلاَ إِنَّ الْمُسْلِمَ أَخُو الْمُسْلِمِ فَلَيْسَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ مِنْ أَخِيهِ شَىْءٌ إِلاَّ مَا أَحَلَّ مِنْ نَفْسِهِ ‘মনে রেখ! এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। অতএব কোন মুসলমানের জন্য তার ভাই-এর কোন বস্ত্ত হালাল নয় কেবল অতটুকু ব্যতীত যতটুকু সে তার জন্য হালাল করে’ (তিরমিযী হা/৩০৮৭)।


হযরত ইবনু আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বর্ণনায় এসেছে, لاَ يَحِلُّ لاِمْرِئٍ مِنْ مَالِ أَخِيهِ إِلاَّ مَا أَعْطَاهُ مِنْ طِيبِ نَفْسٍ وَلاَ تَظْلِمُوا ‘কোন ব্যক্তির মাল তার ভাই-এর জন্য হালাল নয়। যতক্ষণ না সে তাকে খুশী মনে তা দেয়। আর তোমরা যুলুম করো না...।[বায়হাক্বী হা/১১৩০৪; ইরওয়া হা/১৪৫৯-এর আলোচনা ১/২৮১, সনদ হাসান।]


১২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও এরশাদ করেন,

وَاعْلَمُوا أَنَّ الْقُلُوبَ لاَ تَغِلُّ عَلَى ثَلاَثٍ: إِخْلاَصِ الْعَمَلِ للهِ، وَمُنَاصَحَةِ أُولِى الأَمْرِ، وَعَلَى لُزُومِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ، فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيطُ مِنْ وَرَائِهِمْ-

জেনে রেখ, তিনটি বিষয়ে মুমিনের অন্তর খিয়ানত করে না : (ক) আল্লাহর উদ্দেশ্যে এখলাসের সাথে কাজ করা। (খ) শাসকদের জন্য কল্যাণ কামনা করা এবং (গ) মুসলমানদের জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরা। কেননা তাদের দো‘আ তাদেরকে পিছন থেকে (শয়তানের প্রতারণা হ’তে) রক্ষা করে’ (দারেমী হা/২২৭, সনদ ছহীহ)। অর্থাৎ মুমিন যতক্ষণ উক্ত তিনটি স্বভাবের উপরে দৃঢ় থাকবে, ততক্ষণ তার অন্তরে খিয়ানত বা বিদ্বেষ প্রবেশ করবে না। যা তাকে ইলম প্রচারের কাজে বাধা দেয়। আর তিনিই হবেন কামেল মুমিন’ (মির‘আত হা/২২৯-এর ব্যাখ্যা)।


ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, لُزُومِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ অর্থ আক্বীদা ও সৎকর্মে সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং জুম‘আ, জামা‘আত ও অন্যান্য বিষয়ে সকলে অংশগ্রহণ করা। فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيطُ مِنْ وَرَائِهِمْ অর্থ তাদের দো‘আ তাদেরকে শয়তানী প্রতারণা এবং পথভ্রষ্টতা হ’তে পিছন থেকে তাদের রক্ষা করে। 

এর মধ্যে ধমকি রয়েছে, যে ব্যক্তি জামা‘আত তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে বেরিয়ে যাবে, সে ব্যক্তি জামা‘আতের বরকত ও মানুষের দো‘আ থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়াও এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা অধিক উত্তম বিচ্ছিন্ন থাকার চাইতে’। 

কোন কোন বর্ণনায় مَنْ وَرَائَهُمْ এসেছে। অর্থাৎ তাদের পিছনে যারা আছে, তারা তাকে রক্ষা করে। ত্বীবী বলেন, এর দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতকে বুঝানো হয়েছে। যাদের দো‘আ তাদের পরবর্তী বংশধরগণকেও পথভ্রষ্টতা হ’তে রক্ষা করে’ (মিরক্বাত, শরহ মিশকাত হা/২২৮-এর ব্যাখ্যা)।


ইসলামের পূর্ণাঙ্গতার সনদ নাযিল : 

-----------------------------------

সারগর্ভ ও মর্মস্পর্শী বিদায়ী ভাষণ শেষে আল্লাহর পক্ষ হ’তে নাযিল হয় এক ঐতিহাসিক দলীল, ইসলামের পূর্ণতার সনদ, যা ইতিপূর্বে নাযিলকৃত কোন আসমানী ধর্মের জন্য নাযিল হয়নি। 

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপরে আমার নে‘মতকে পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ-৩)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যবানে পাকে এই আয়াত শ্রবণ করে হযরত ওমর ফারূক রাদিয়াল্লাহু আনহু কেঁদে উঠলেন। অতঃপর লোকদের প্রশ্নের জওয়াবে বললেন, ‘পূর্ণতার পরে তো কেবল ঘাটতিই এসে থাকে’।[আর-রাহীক্ব পৃঃ ৪৬০; আল-বিদায়াহ ৫/২১৫।]


বস্তুতঃ এই আয়াত আল্লাহর প্রিয় নবীর ইন্তিকালের আভাস, এ আয়াত নাযিলের মাত্র ৮১ দিন পর তিনি ওফাত লাভ করেন। এই আয়াত প্রসঙ্গে জনৈক ইহুদী পন্ডিত হযরত ওমর ফারূক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, عَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، أَنَّ الْيَهُودَ، قَالُوا لِعُمَرَ: إِنَّكُمْ تَقْرَءُونَ آيَةً، لَوْ أُنْزِلَتْ فِينَا لَاتَّخَذْنَا ذَلِكَ الْيَوْمَ عِيدًا، যদি এরূপ আয়াত আমাদের উপর নাযিল হ’ত, তাহ’লে আমরা ঐদিনটিকে ঈদের দিন হিসাবে উদযাপন করতাম’।


জওয়াবে হযরত ওমর ফারূক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, فقال عمر: قد علمت اليوم الذي أنزلت، والمكان الذي أنزلت فيه، نزلت في يوم الجمعة ويوم عرفة، وكلاهما بحمد الله لنا عيد. ঐদিনে একটি নয়, বরং দু’টি ঈদ একসঙ্গে উদযাপন করেছিলাম।- (১) ঐদিন ছিল শুক্রবার, যা আমাদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন (২) ঐদিন ছিল ৯ই যিলহাজ্জ আরাফাহর দিন। যা হ’ল উম্মতের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে বার্ষিক ঈদের দিন’।[তিরমিযী হা/৩০৪৪, সনদ ছহীহ।]


মিনায় ২য় ভাষণ: 

===========

সুনানে আবু দাঊদের বর্ণনা অনুযায়ী ১০ই যিলহাজ্জ কুরবানীর দিন সকালে সূর্য উপরে উঠলে [আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৬৭১।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি সাদা-কালো মিশ্রিত বাহনে সওয়ার হয়ে (কংকর নিক্ষেপের পর) জামরায়ে আক্বাবায় এক ভাষণ দেন। ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, এদিনে তিনি এরশাদ করেন,

"لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ، فَإِنِّي لَا أَدْرِي لَعَلِّي لَا أَحُجُّ بَعْدَ حَجَّتِي هَذِهِ"

(১) হে জনগণ! তোমরা আমার নিকট থেকে হজ্জের নিয়ম-কানূন শিখে নাও। কারণ আমি এ বছরের পর আর হজ্জ করতে পারব না’।[মুসলিম, মিশকাত হা/২৬১৮।] তিনি আরও এরশাদ করেন, 

إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللَّه السَّماواتِ والأَرْضَ: السَّنةُ اثْنَا عَشَر شَهْرًا، مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُم: ثَلاثٌ مُتَوَالِيَاتٌ: ذُو الْقعْدة، وَذو الْحجَّةِ، والْمُحرَّمُ، وَرجُب مُضَر الَّذِي بَيْنَ جُمادَى وَشَعْبَانَ

২. ‘কালচক্র আপন রূপে আবর্তিত হয়, যেদিন থেকে আসমান ও যমীন সৃষ্টি হয়েছে। বছর বারো মাসে হয়। তারমধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। তিনটি পরপর, যুলক্বা‘দাহ, যুলহিজ্জাহ ও মুহাররম এবং রজব মুদার’ [মুদার গোত্রের দিকে সম্পর্কিত করে ‘রজবে মুদার’ বলা হয়েছে।] হ’ল জুমাদা ও শা‘বানের মধ্যবর্তী।[বুখারী হা/১৭৪১ ‘মিনায় ভাষণ’ অনুচ্ছেদ; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৫৯।]


৩. অতঃপর তিনি এরশাদ করেন,

أَيُّ شَهْرٍ هَذَا؟ قلْنَا: اللَّه ورسُولُهُ أَعْلَم، فَسكَتَ حَتَّى ظنَنَّا أَنَّهُ سَيُسمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ، قَالَ: ্রأَليْس ذَا الْحِجَّةِ؟গ্ধ قُلْنَا: بلَى، قَالَ: فأَيُّ بلَدٍ هَذَا؟ قُلْنَا: اللَّه وَرسُولُهُ أَعلمُ، فَسَكَتَ حتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سيُسمِّيهِ بغَيْر اسْمِهِ، قَالَ: أَلَيْسَ الْبَلْدةَ؟ قُلْنا: بلَى، قَالَ: فَأَيُّ يَومٍ هذَا؟ قُلْنَا: اللَّه ورسُولُهُ أَعْلمُ، فَسكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّه سيُسمِّيهِ بِغيْر اسمِهِ، قَالَ: أَلَيْسَ يَوْمَ النَّحْر؟ قُلْنَا: بَلَى، قَالَ: فإِنَّ دِماءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وأَعْراضَكُمْ عَلَيْكُمْ حرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، في بَلَدِكُمْ هَذا، في شَهْرِكم هَذَا، 

এটি কোন মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক অবগত। অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম হয়ত তিনি এর পরিবর্তে অন্য কোন নাম রাখবেন। তিনি বললেন, এটা কি যুলহিজ্জাহ নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটি কোন শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক অবগত। অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম হয়ত তিনি এর পরিবর্তে অন্য কোন নাম রাখবেন। তিনি বললেন, এটা কি মক্কা নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আজ কোন দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক অবগত। অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম হয়ত তিনি এর পরিবর্তে অন্য কোন নাম রাখবেন। তিনি বললেন, আজ কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, জেনে রেখ, তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল-সম্পদ, তোমাদের ইয্যত তোমাদের উপর এমনভাবে হারাম যেমনভাবে তোমাদের আজকের এই দিন, এই শহর, এই মাস তোমাদের জন্য হারাম (অর্থাৎ এর সম্মান বিনষ্ট করা হারাম)।

وَسَتَلْقَوْنَ ربَّكُم فَيَسْأَلُكُمْ عَنْ أَعْمَالِكُمْ، أَلا فَلا تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ، 

৪. ‘সত্বর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে। অতঃপর তিনি তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। সাবধান! আমার পরে তোমরা পুনরায় ভ্রষ্টতার দিকে ফিরে যেয়ো না এবং একে অপরের গর্দান মেরো না বা হত্যা করোনা।


أَلا لِيُبَلِّغ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ، فلَعلَّ بعْضَ مَنْ يَبْلغُه أَنْ يَكُونَ أَوْعَى لَه مِن بَعْضِ مَنْ سَمِعه، ثُمَّ قال: أَلا هَلْ بَلَّغْتُ؟ أَلا هَلْ بلَّغْتُ؟ قُلْنا: نَعَمْ، قَالَ: اللَّهُمَّ اشْهَدْ 

৫. ‘ওহে জনগণ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? লোকেরা বলল, হাঁ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। উপস্থিতগণ যেন অনুপস্থিতগণকে কথাগুলি পৌঁছে দেয়। কেননা উপস্থিত শ্রোতাদের অনেকের চাইতে অনুপস্থিত যাদের কাছে এগুলি পৌঁছানো হবে, তাদের মধ্যে অনেকে অধিক বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছে’।[বুখারী হা/১৭৪১ ‘মিনায় ভাষণ’ অনুচ্ছেদ; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৫৯।]


অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, উক্ত ভাষণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও এরশাদ করেন,

أَلاَ لاَ يَجْنِى جَانٍ إِلاَّ عَلَى نَفْسِهِ لاَ يَجْنِى وَالِدٌ عَلَى وَلَدِهِ وَلاَ مَوْلُوْدٌ عَلَى وَالِدِهِ 

৬. ‘মনে রেখ, অপরাধের শাস্তি অপরাধী ব্যতীত অন্যের উপরে বর্তাবে না। মনে রেখ, পিতার অপরাধের শাস্তি পুত্রের উপরে এবং পুত্রের অপরাধের শাস্তি পিতার উপরে বর্তাবে না’।


(৭) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، خَطَبَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ ، فَقَالَ : إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ يَئِسَ أَنْ يُعْبَدَ بِأَرْضِكُمْ وَلَكِنَّهُ رَضِيَ أَنْ يُطَاعَ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِمَّا تَحْقِرُونَ مِنْ أَعْمَالِكُمْ ، فَاحْذَرُوا 

মনে রেখ, শয়তান তোমাদের এই শহরে পূজা পাওয়া থেকে চিরদিনের মত নিরাশ হয়ে গেছে। তবে যে সব কাজগুলিকে তোমরা তুচ্ছ মনে কর, সেসব কাজে তার আনুগত্য করা হবে, আর তাতেই সে খুশী থাকবে’।[তিরমিযী হা/২১৫৯; ইবনু মাজাহ হা/২৭৭১ ‘হজ্জ’ অধ্যায়; মিশকাত হ/২৬৭০।] যেমন মিথ্যা, প্রতারণা, ঝগড়া-মারামারি ইত্যাদি। যা পরবর্তীদের মধ্যে ঘটেছিল (মির‘আত)। হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে وَلَكِنْ فِى التَّحْرِيشِ بَيْنَهُمْ ‘কিন্তু শয়তানী প্ররোচনা বাকী থাকবে’।[ মুসলিম হা/২৮১২; মিশকাত হা/৭২। ]


এদিন তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে আরও এরশাদ করেন, 

يَا أَيُّهَا النَّاسُ , إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوا أَبَدًا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ 

‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্তু রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা তা শক্তভাবে ধারণ করে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। একটি আল্লাহর কিতাব, অপরটি তাঁর নবীর সুন্নাত’।[মুওয়াত্ত¡া মালেক, মিশকাত হা/১৮৬।]


খুম কূয়ার নিকটে ভাষণ: হজ্জ থেকে ফেরার পথে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী ‘খুম’ নামক কূয়ার নিকটে যাত্রাবিরতি করে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। যাতে তিনি নবী পরিবারের উচ্চ মর্যাদা ব্যাখ্যা করেন। অতঃপর হযরত আলীর হাত ধরে এরশাদ করেন, مَنْ كُنْت مَوْلَاهُ فِعْلِيٌّ مَوْلاهُ ‘আমি যার বন্ধু, আলীও তার বন্ধু’।[আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৬০৮২, ছহীহাহ হা/১৭৫০।] 

وصلى الله وسلم على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه اجمعين

No comments:

Post a Comment

Featured post

কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা

 কোরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা ||-----๑▬▬๑﷽๑▬▬๑-----|| কোরবানী একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিময় আমল। আল্লাহ বলেন فصل لربك وانحر হে নবী! আপনি ...