Thursday, November 8, 2018
Wednesday, September 26, 2018
ইতিহাস নয় পবিত্র কুরআন অনুযায়ী জাহান্নামী কারা!
ইতিহাস নয় পবিত্র কুরআন অনুযায়ী জাহান্নামী কারা!
========✍️ইমরান বিন বদরী।
ইয়াজিদের স্বপক্ষে কথা বলাই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে আহলে বাইতের বিরোধিতা করা। ইতিহাস খোদায়ি কোন বানী নয়, ইতিহাস লিখেছেন আপনারই মত একজন। ইতিহাসের পাতায় পাতায় নিজের বিবেকবুদ্ধিকে হ্রাস করতে যাবেননা। খোদায়ি জ্ঞানে একটু ভেবে দেখার চেষ্টা করুন। মনেরাখা চাই সালতানাত যার হুকুম তারই হয়। আহলে বাইতের হত্যাকারী অপরাধী ইয়াজিদকে নিরপরাধ ভাবতে গিয়ে আহলে বাইতের সদস্যদের অপরাধীর কাতারে শামিল করবেননা । সীমার বলুন আর ইবনে জিয়াদ বলুন সবাই কিন্তু হুকুমের গোলাম ছিলো।কি অপরাধ ছিলো আমার রাসুলের নয়নমনি ইমাম হুসাইন রাদিঅাল্লাহু তাআ'লা আনহুসহ অসংখ্য আহলে বাইতের সদস্যদের? একজন অথর্ব শাসকের আনুগত্য করেনি বলে কি নির্মমভাবে হত্যা করতে হবে?
ইয়াজিদের মনে যদি ইসলামের আলো থাকতো সে কোনদিন এমন অমানবিক নির্মমতার ইতিহাস রচনা করতে পারতো? মোটেও না।
কোন মুসলমান অন্যায়ভাবে অন্য মুসলমানকে হত্যা করতে পারেনা। আল্লাহ তায়ালা অন্যায়ভাবে হত্যাকারীদের সম্পর্কে বলেন,
وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا
এবং যে কোন মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলো, তার শাস্তি জাহান্নাম। যেখানে সে চিরস্থায়ী হবে। [সূরা নিসা,আয়াত-৯৩]
এখন আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই হত্যাকাণ্ডের মাঝে কোন পক্ষ অপরাধী! পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কেউ কি আছে যে জানেননা, ইয়াজিদ এবং তার সৈন্যরা কতো নিরপরাধকে হত্যা করেছে! যেগুলো সব অন্যায়ভাবেই করা হয়েছিল।
উপরোক্ত আয়াত অনুযায়ী চিন্তা করলে স্পস্ট হবেন কারা জাহান্নামী আর কারা জান্নাতি। ইমাম হুসাইন রাদিঅাল্লাহু তাআ'লা আনহু যে জান্নাতি নয় শুধু জান্নাতিদের সরদার সে'তো আগেই ঘোষণা করে গেছেন আমার রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।(তিরমিজি ৩৭২০)
আজান দিলে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে কেন ? আসুন জেনে নেয়া যাক...
আজান দিলে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে কেন? আসুন জেনে নেয়া যাক...
কুকুর ঘেউ ঘেউ করে কেন- জ্ঞানী অমুসলিমের জন্য জানার অনেক কিছু রয়েছে ইসলাম একমাত্র সত্য ধর্ম তার প্রমান বহন করে।
কিছু নিষিদ্ধ কাজ:-
(১) উপুর হয়ে বুকের উপরে ভর দিয়ে শোয়া নিষিদ্ধ, কারণ এইভাবে শয়তান শোয়। সহীহ বুখারী।
(২) বাম হাতে খাওয়া বা পান করা নিষিদ্ধ, কারণ বাঁ হাতে শয়তান খায়। রিয়াদুস সালেহীন।
(৩) পশুর হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা নিষিদ্ধ, কারণ আল্লাহর নাম নিয়ে জবাই করা প্রাণীর হাড়গুলো যা মানুষেরা ফেলে দেয়, তা মুসলিম জিনদের খাবার। সহীহ বুখারী।
(৪) সন্ধ্যা সময় বাচ্চাদের বাইরে বের হতে দিতে রাসুল (সাঃ) নিষেধ করেছেন এবং ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে বলেছেন, কারণ তখন জিনেরা বাইরে বের হয়।
(৫) আযান দিলে শয়তান জিনেরা বায়ু ছাড়তে ছাড়তে লোকালয় থেকে পলায়ন করে। আর কুকুর ও গাধা শয়তান জিনদেরকে দেখতে পেলে চিৎকার করে।
একারণে, অনেক সময় ইশা বা ফযরের আযান দিলে কুকুরেরা চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। কারণ তখন কুকুরেরা আযান শুনে পলায়নরত শয়তান জিনদের দেখতে পায়। উল্লেখ্য, রাতের বেলা কুকুর ও গাধার ডাক শুনলে”আউযুবিল্লাহি….রাজীম”
এই দুয়া পড়ে শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাইতে হয়।
সহীহ বুখারী, হিসনুল মুসলিম।
(৬) মোরগ আল্লাহর রহমতের ফেরেশতাদেরকে দেখতে পায়, একারণে মোরগের ডাক শুনে “আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আসুকা মিং ফাযলিকা” এই দুয়া পড়ে আল্লাহর অনুগ্রহ চাইতে হয়। হিসনুল মুসলিম।
(৭) গোসলখানায় প্রসাব করা যাবে না।।
________ আল হাদিস (ইবনে মাজাহঃ ৩০৪)
(৮) কেবলামুখি বা তার উল্টো হয়ে
প্রসাব, পায়খানা করা যাবে না।।
_________ সহিহ বুখারিঃ ৩৯৫
(৯) গুলি বা তীরের নিশানা প্রশিহ্মণের জন্য প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না।।
_________ মুসলিমঃ ৫১৬৭
(১০) ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুশরিক কাউকে বিয়ে করা যাবে না।।
_________ আল কোরআন।
(১১) স্বামী ব্যাতিত অন্য কারোর জন্য সাজা হারাম।
_________ আল কোরআন,(আহজাবঃ ৩৩)
(১২) মুর্তি কেনা, বেঁচা, পাহারা দেওয়া হারাম।।
_________ আল কোরআন (মাইদাহঃ ৯০, ইবরাহীমঃ ৩৫)
(১৩) কারো মুখমণ্ডলে আঘাত করা যাবে না।।
________ মুসলিমঃ ৬৮২১
(১৪) কাপড় পরিধাণ থাকা সত্তেও কারো গোপন অঙ্গের জায়গার দিকে দৃষ্টিপাত করা যাবে না।।
________ মুসলিম ৭৯৪
(১৫) আল্লাহ ব্যাতিত কারো নামে কসম করা যাবে না। বাপ দাদার নাম,কারো হায়াত, মসজিদ বা কোরআন এর নামে কসম করা, মাথায় নিয়ে সত্যতা প্রকাশ করা যাবে না।।
__________ আবু দাউদ৩২৫০ নাসায়ীঃ ৩৭৭৮।
১৬) কোন প্রাণীকে আগুনে পুড়িয়ে মারা যাবে না।।
_________ আবু দাউদ ২৬৭৭
(১৭) হাশরের দিন শেষ বিচারের পরে আল্লাহ জান্নাতীদেরকে জান্নাতে দেবেন আর, জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে দেবেন।
তখন আল্লাহ জান্নাতী ও জাহান্নামীদেরকে ডাক দিয়ে বলবেন, তোমরা এই দিকে দেখো।
তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটা সাদা দুম্বাকে দেখিয়ে আল্লাহ বলবেন, এই দুম্বাটা হচ্ছে মরণ। তখন সেই দুম্বাকে জবাই করে ফেলা হবে।
এইভাবে দুম্বারূপী মরণকে জবাই করে আল্লাহ মৃত্যুকে হত্যা করে ফেলবেন। তখন তিনি বলবেন, আজকের পর থেকে আর কোন মরণ থাকবেনা।
সুতরাং, যারা জান্নাতে যাবে তারা চিরকাল জান্নাতে আনন্দ- উল্লাসের মাঝে থাকবে। আর যারা জাহান্নামে যাবে তারা চিরকাল আযাব- গজব আর দুঃখ-কষ্টের মাঝে থাকবে।
কারণ জাহান্নামে যতই আগুনে পুড়ুক বা যতই যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি ভোগ করুক, তার ফলে কোনদিন তারা মরবেনা। অনন্তকাল কঠিন শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষ্যা করুক।
#আমিন।
Tuesday, September 18, 2018
ঘটনার পর কি এজিদ (২৬-৬৪ হিজরী) মুমিন? - ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী
কারবালা (দুই)- কারবালা এবং মদিনার হাররার ঘটনার পর কি এজিদ (২৬-৬৪ হিজরী) মুমিন?
- ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী
=============
কিছু কমবখত এবং নাদান এজিদ-প্রেমী পোস্ট দিয়ে বেড়ায় ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া নাকি তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ আলেম ছিল। নাউজুবিল্লাহ! এজিদকে লানত না দিয়ে তার জন্য দুয়া করার পরামর্শ দেয় ওই নাদান মুসলমান নামধারীরা। বুখারি শরীফের একটি হাদিসের অপব্যাখ্যা করে তারা এজিদকে জান্নাতি প্রমাণ করারও দুঃসাহস দেখায়। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করবে না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আহলে বায়েতের প্রতি এমন অবিচারের কারণে তদের ঈমান ও আমল দুটোই বরবাদ হয়ে গেছে। এখন দেখা যাক কুরআন ও হাদিসের আলোকে এজিদ কি মুমিন রয়ে গেছে নাকি কুফরিতে পতিত হয়ে গেছে। যে হাদিস দিয়ে এরা এজিদ বিন মুয়াবিয়াকে জান্নাতী বানাতে চায় সে ঘটনার সময় এজিদ বিন মুয়াবিয়ার বয়স মাত্র ৬ বছর। আর এ ফযিলত কেবল প্রথম মুসলিম নৌবাহিনীর জন্য প্রাপ্য।
নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আহলে বায়েতের প্রতি ভালোবাসা ঈমানের শর্ত, এজিদ বিন মুয়াবিয়া বা কোন লানতপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ নয়। তারা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে যে কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসেইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর সংগী সাথীদের হত্যা করে এজিদ (লাঃ) কুফরি করেনি, কবীরা গোনাহ করেছে। এর পক্ষে যদিও তাদের কোন দলীল নেই।
১। মুসলমান তো দূরের কথা, কোন কাফির বা মুশরিক যদি যুদ্ধ ক্ষেত্রেও জীবন বাঁচানোর জন্য ইসলাম গ্রহণ করে তাকেও হত্যা করা নিষেধ। আর হত্যাকারী নিজেই শিরক আর কুফরে প্রত্যাবর্তন করে। দেখুন সহীহ মুসলিম এবং সহীহ বুখারির নিম্নের হাদিসগুলো।
প্রথম হাদিসঃ
------------
আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। "ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন, যদি আমি কোন কাফিরের সম্মুখীন হই এবং সে আমার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তার তলোয়ার দ্বারা আমার একটি হাত উড়িয়ে দেয়, এরপর কোন গাছের আড়ালে গিয়ে বলে আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলাম গ্রহণ করলাম! এ কথা বলার পরও আমি কি তাকে কতল করতে পারি?" রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ "তাকে হত্যা করো না।" আমি আরয করলাম, "হে আল্লাহর রাসুল! সে আমার একটি হাত কেটে ফেলে এ কথা বলেছে, তবুও কি আমি তাকে হত্যা করব না?" তিনি বললেনঃ "না, হত্যা করতে পারবে না। যদি তুমি তাকে হত্যা কর (তবে) এ হত্যার পুর্বে তোমার যে অবস্হান ছিল সে ব্যাক্তি সে স্হানে পৌছবে এবং কালিমা পড়ার আগে সে ব্যাক্তি যে অবস্হানে ছিল তুমি সে স্হানে পৌছবে।"
[সহীহ মুসলিমঃ ১৭৬, সহীহ বুখারিঃ ৩৭৯৪]
দ্বিতীয় হাদিসঃ
------------
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের একটি বাহিনী মুশরিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পাঠালেন। উভয় দল পরস্পর সম্মুর্খীন হল। মুশরিক বাহিনীতে এক ব্যাক্তি ছিল। সে যখনই কোন মুসলিমকে হামলা করতে ইচ্ছা করত, সে তাকে লক্ষ করে ঝাপিয়ে পড়ত এবং শহীদ করে ফেলত। একজন মুসলিম তার অসতর্ক মূহৃর্তের অপেক্ষা করতে নাগলেন। জুনদুব বললেন, আমাদের বলা হলো যে, সে ব্যাক্তি ছিল উসামা ইবনু যায়িদ। তিনি যখন তার উপর তলোয়ার উত্তোলন করলেন তখন সে বলল, 'লা ইলাহা ইল্লাহ' তবুও উসামা (রাঃ) তাকে হত্যা করলেন। দুত যুদ্ধে জয়লাভের সুসংবাদ নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হলেন। তিনি তার কাছে যুদ্ধের পরিস্হিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি সব ঘটনাই বর্ণনা করলেন, এমন কি সে ব্যাক্তির ঘটনাটিও বললেন যে তিনি কি করেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামাকে ডেকে পাঠালেন এবং প্রশ্ন করলেন, তুমি সে ব্যাক্তিকে হত্যা করলে কেন? উসামা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে অনেক মুসলিমকে ঘায়েল করেছে এবং অমুক অমুককে শহীদ করে দিয়েছে। এ বলে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেন। আমি যখন তাকে আক্রমণ করলাম এবং সে তলোয়ার দেখে অমনি 'লা ইলাহা ইল্লাহ' বলে উঠল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি তাকে মেরে ফেললে? তিনি বললেন, জি হ্যা। রাসুল বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মাগফিরাতের জন্য দু'আ করুন। রাসুল বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে তখন তুমি কি করবে? তারপর তিনি কেবল এ কথাই বলছিলেনঃ কিয়ামতের দ্বীন যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি এর অতিরিক্ত কিছু বলেন নি।
[মুসলিমঃ ১৭৬]
তৃতীয় হাদিসঃ
--------------
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিআল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলমানদেরকে গালাগালি করা ফাসেকি আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফরী।
[বুখারীঃ ৪৮, মুসলিমঃ ৬৪ ]
উপরের এই তিনটি হাদিস ছাড়াও আরও অসংখ্য হাদিস রয়েছে এই কথার পক্ষে। উপরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে এজিদকে কি বলা যায়? এজিদের নির্দেশে জান্নাতে যুবকদের সর্দার, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, খাতুনে জান্নাত মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কলিজার টুকরা, মুমিনদের নেতা, সাইয়্যেদ এবং আহলে বায়েতের অন্যতম সদস্য ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ও রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) এবং তাঁর ৭২ জন সাথীদের শহীদ করা হয়। প্রাণহীন দেহগুলোকে একে একে লাঞ্ছিত করা হয়, পদদলিত করা হয়, দেহ থেকে মাথা কেটে আলাদা করা হয়, নিধর দেহগুলোর উপর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে ছিন্নভহিন্ন করা হয়। নারী ও শিশুদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়। বন্দী নারী ও শিশুদের হাঁটিয়ে কারবালা থেকে কুফা, কুফা থেকে সুদূর দামেস্কে নেয়া হয়। এজিদের অপবিত্র দরবারে বিধবাদের ভাগাভাগি করা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে কৌতুক আর হাসিতামাশার ঢেউ খেলে যায়। এই এজিদের নির্দেশে পবিত্র মদিনা শহরে তাণ্ডব চালানো হয়। তার নির্দেশেই অসংখ্য সাহাবা (রাঃ) কে শহীদ করা হয়। নারীদের সম্ভ্রমহানি করা হয়। পবিত্র মসজিদে নববীকে ঘোড়ার আস্তাবলে রূপান্তরিত করা হয় ফলে তিন দিন সেখানে কোন আজান দেয়া হয়নি। মক্কার পবিত্র ক্বাবাকে লাঞ্ছিত করা হয়, দেয়াল জ্বালিয়ে দেয়া হয়, মুসলমানদের শহীদ করা হয়। এরপরও তারা যদি হাদিস অস্বীকার করে এজিদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর লোভে মনে করে সে কুফরি করেনি বরং কবীরা গোনাহ করেছে তাহলে তাদের ঈমান চলে যাবে। জেনেশুনে কেউ একটি সহীহ হাদিসকে অস্বীকার করলে কুফরি হয়।
উপরন্তু, মদিনার হাররার ঘটনা এবং কা'বার আগুন দেবার পর এবং কারবালার হত্যাকাণ্ডকে বদরের প্রতিশোধ হিসেবে উল্লেখ করার পর এজিদের মুমিন থাকার আর সুযোগ নেই। সে জাহেল নাপাক ঈমানহারা হয়ে গেছে। এরপরও বিখ্যাত সব ইমাম, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুজাদ্দিদ তাকে লানত দিয়েছেন এবং অনেকেই তার কাফের হয়ে যাবার ব্যাপারে সন্দেহও করেন নি।
"জা'ফর ইবনে আবী তালিব" নামে কাউকে চেনেন???
"জা'ফর ইবনে আবী তালিব" নামে কাউকে চেনেন???
হুম তিনি এক গোলামে মোস্তফা যার দুই হাত উৎসর্গ করার পর নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছিলেন....
শুনুন তাহলে,
অষ্টম হিজরীর প্রথম দিকে সিরিয়ার রোমান বাহিনীকে আক্রমণের জন্য রাসূল সা. সেনাবাহিনী প্রস্তুত করলেন। যায়িদ বিন হারিসা রাঃ কে সেনাপতি নিয়োগ করে তিনি বললেনঃ তিনি নিহত হলে আমীর হবে জা’ফর ইবন আবী তালিব রাঃ।উনি নিহত বা আহত হলে আমীর হবে আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা । আর উনি নিহত বা আহত হলে মুসলমানরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে আমীর নির্বাচন করবে।’ মুসলিম বাহিনী জর্দানের সিরিয়া সীমান্তের ‘মূতা’ নামক স্থানে পৌঁছে দেখতে পেল, এক লাখ রোমান সৈন্য তাদের মুকাবিলার জন্য প্রস্তুত এবং তাদের সাহায্যের জন্য লাখম, জুজাম, কুদাআ ইত্যাদি আরব গোত্রের আরও এক লাখ খৃষ্টান সৈন্য পেছনে প্রতীক্ষা করছে। অন্যদিকে মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা মাত্র তিন হাজার। যুদ্ধ শুরু হতেই যায়িদ বিন হারিসা রাঃ বীরের ন্যায় শাহাদাত বরণ করেন। অতপর জা’ফর বিন আবী তালিব রাঃ তাঁর ঘোড়ার পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়েন এবং শত্রু বাহিনী যাতে সেটি ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য নিজের তরবারী দ্বারা ঘোড়াটিকে হত্যা করে ফেলেন। তারপর পতাকাটি তুলে ধরে রোমান বাহিনীর অভ্যন্তরভাগে বহু দূর পর্যন্ত প্রবেশ করে শত্রু নিধন কার্য চালাতে থাকেন। এমতাবস্থায় তাঁর ডান হাতটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। তিনি বাম হাতে পতাকা উঁচু করে ধরেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তরবারির অন্য একটি আঘাতে তাঁর বাম হাতটিও দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবুও তিনি হাল ছাড়লেন না। বাহু দিয়ে বুকের সাথে জাপ্টে ধরে তিনি ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখলেন। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ পর তরবারির তৃতীয় একটি আঘাতে তাঁর দেহটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।
হযরত জা’ফরের শাহাদাতের পর দীর্ঘদিন ধরে রাসূল সা. শোকাভিভূত ও বিমর্ষ ছিলেন। হযরত জিবরীল আ. উনাকে সুসংবাদ দান করেন যে, আল্লাহ তা’আলা সৈয়দুনা জা’ফরকে তাঁর দুটি কর্তিত হাতের পরিবর্তে নতুন দু’টি রক্তরাঙা হাত দান করেছেন এবং তিনি জান্নাতে ফিরিশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছেন। এ কারণে তাঁর উপাধি হয়, ‘যুল-জানাহাইন’ ও ‘তাইয়ার’- দু’ ডানাওয়ালা ও উড়ন্ত।
সুবহানাল্লাহ
একহাতে ইনজুরি নিয়ে ক্রিকেট খেলাতে তোমরা যেভাবে উচ্ছ্বাসিত হচ্ছো,তোমরা কি "জা'ফর ইবনে আবী তালিবে"র গল্প জানো??
শোনো তাহলে,
অষ্টম হিজরীর প্রথম দিকে সিরিয়ার রোমান বাহিনীকে আক্রমণের জন্য রাসূল সা. সেনাবাহিনী প্রস্তুত করলেন। যায়িদ বিন হারিসাকে সেনাপতি নিয়োগ করে তিনি বললেনঃ ‘যায়িদ নিহত হলে আমীর হবে জা’ফর ইবন আবী তালিব। জা’ফর নিহত বা আহত হলে আমীর হবে আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা। আর সে নিহত বা আহত হলে মুসলমানরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে আমীর নির্বাচন করবে।’ মুসলিম বাহিনী জর্দানের সিরিয়া সীমান্তের ‘মূতা’ নামক স্থানে পৌঁছে দেখতে পেল, এক লাখ রোমান সৈন্য তাদের মুকাবিলার জন্য প্রস্তুত এবং তাদের সাহায্যের জন্য লাখম, জুজাম, কুদাআ ইত্যাদি আরব গোত্রের আরও এক লাখ খৃষ্টান সৈন্য পেছনে প্রতীক্ষা করছে।
অন্যদিকে মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা মাত্র তিন হাজার। যুদ্ধ শুরু হতেই যায়িদ বিন হারিসা বীরের ন্যায় শাহাদাত বরণ করেন। অতপর জা’ফর বিন আবী তালিব তাঁর ঘোড়ার পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়েন এবং শত্রু বাহিনী যাতে সেটি ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য নিজের তরবারী দ্বারা ঘোড়াটিকে হত্যা করে ফেলেন। তারপর পতাকাটি তুলে ধরে রোমান বাহিনীর অভ্যন্তরভাগে বহু দূর পর্যন্ত প্রবেশ করে শত্রু নিধন কার্য চালাতে থাকেন। এমতাবস্থায় তাঁর ডান হাতটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। তিনি বাম হাতে পতাকা উঁচু করে ধরেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তরবারির অন্য একটি আঘাতে তাঁর বাম হাতটিও দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবুও তিনি হাল ছাড়লেন না। বাহু দিয়ে বুকের সাথে জাপ্টে ধরে তিনি ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখলেন। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ পর তরবারির তৃতীয় একটি আঘাতে তাঁর দেহটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।
হযরত জা’ফরের শাহাদাতের পর দীর্ঘদিন ধরে রাসূল সা. শোকাভিভূত ও বিমর্ষ ছিলেন। অবশেষে হযরত জিবরীল আ. তাঁকে সুসংবাদ দান করেন যে, আল্লাহ তা’আলা জা’ফরকে তাঁর দুটি কর্তিত হাতের পরিবর্তে নতুন দু’টি রক্তরাঙা হাত দান করেছেন এবং তিনি জান্নাতে ফিরিশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছেন। এ কারণে তাঁর উপাধি হয়, ‘যুল-জানাহাইন’ ও ‘তাইয়ার’- দু’ ডানাওয়ালা ও উড়ন্ত।
একজন ক্রিকেটার এক হাত দিয়ে খেলেছে।তা নিয়ে আমরা আজ এতো আবেগ দেখাচ্ছি।উচ্ছ্বাসে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছি। অথচ দুই হাত অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে যিনি আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যাবস্থা ইসলামকে বিজয়ী করলেন তাকে আমরা চিনিইনা।
আমি ঐ খেলোয়ারকে ছোট করছিনা।তবে খেলাটা যে তার পেশা তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।সুতরাং একজন পেশাদার তার পেশাদারীত্ব দেখাবেন এটাই স্বাভাবিক।
জানিনা তার এই খেলা কতজনকে কিভাবে মুক্তি দিতে পারবে,তবে এইসব বিষয় নিয়ে করা অতি রঞ্জন যেন আমাদের পরকালীন মুক্তির পথে বাঁধা না হয়।
Monday, September 17, 2018
শরিয়তের_আলোকে_দাড়ির_বিধান ।
#দাড়ির_পরিচয়ঃ
আরবি ভাষায় দাড়িকে বলা হয় ﻟﺤﻴﻪ লিহইয়া
বা লাহয়া। এর আভিধানিক অর্থ হলো
থুতনিসহ মুখের দুই পাশের ওই হাড়, যার ওপর
দাঁতগুলো অবস্থিত।
প্রাপ্ত বয়সে ওই হাড়ের ওপর যে লোম বা
কেশ গজায়, ওই লোম বা কেশগুলোকেই
হাড়ের নামকরণে লিহইয়া বলা হয়।
শরিয়তের দৃষ্টিতে দাড়ি বলা হয়,
দো'চোয়াল ও থুতনির চুলগুচ্ছ কে।
(তাজুল উরুস,খন্ড ১০, পৃ ৩২৩)
আসুন দাড়ি সম্পর্কিত রাসুলে খোদা (দঃ)
এর পবিত্র হাদিস শরিফ সমূহ জেনে নিই।
.
# হাদিস_শরিফের_আলোকে_দাড়িঃ
১. হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূল ﷺ ইরশাদ
করেছেন, দশটি বিষয় সকল নবী রাসূলগণের
সুন্নাত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং
দাঁড়ি লম্বা করা অন্যতম।
(মুসলিম শরীফ,১/১২৯)
২. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,
রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, তোমরা গোঁফ
কাট এবং দাঁড়ি লম্বা কর, আর
অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর।
(মুসলিম শরীফ,১/১২৯)
৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে
বর্ণিত। রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, তোমরা
মুশরিকদের বিপরীত কর, দাঁড়ি লম্বা কর,
আর গোঁফ ছোট কর।
(বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫, মুসলিম,মুসান্নামে
ইবনে আবি শাইবা ৮/৩৭৫, আবু দাউদ ১/৩২১)
৪. হুজুর ﷺ বলেছেন যে, তোমরা ভালভাবে
গোঁফ কাট এবং দাড়ি বাড়াও। (বুখারী
শরীফ ২/৮৭৫)
৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রঃ) হতে
বর্ণিত,রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন, আমি গোঁফ
ছোট করার জন্য এবং দাড়ি লম্বা করার জন্য
নির্দেশ প্রদান করেছি।
(মুসলিম ১/১২৯,আবু দাউদ ২/২২১, তিরমিযি
৩৯৪ পৃ,মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৭২১ পৃ)
৬. হযরত আবু হুরাইরা (র) হতে বর্ণিত,রাসুল
ﷺ ইরশাদ করেন,মুশরিকরা গোঁফ লম্বা করে
ও দাড়ি মুন্ডিয়ে ফেলে,তোমরা তাদের
বিপরীত কর দাড়ি লম্বা রাখ,গোঁফ ছোট
কর।
(মাজমাউজ যাওয়াইদ ৫/১৬৬)
৭. হযরত আনাস বিন মালিক (র) হতে
বর্ণিত,রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন, তোমরা
অগ্নি পূজারীর বিরুধিতা কর।গোঁফ ছেটে
ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর।
(মাজমাউজ যাওয়াইদ (৫/১৬৬)
৮. হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (র) হতে
বর্ণিত,রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন,দশটি বিষয়
পূর্ববর্তী নবী রাসুল গণের ফিতরত (স্বভাব)
ছিল তারমধ্যে
ক) গোফ ছেটে ফেলা
খ) দাড়ি লম্বা করা
গ) মিসওয়াক করা
ঘ) অযুর সময় নাকে পানি দেওয়া ইত্যাদি।
(মুসলিম ১/১২৯, আবু দাউদ ১/৮, নাসাঈ
২/২৩৭, ইবনে মাজা ২৫ পৃ)
৯. হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত,
রাসূলে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেন, দাড়ি
বাড়াও , গোঁফ কাট এবং এ ক্ষেত্রে ইহুদী-
খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করোনা।
(মাসনাদে আহমদ)
১০. নবী করীম ﷺ এর আমল দ্বারাও দাড়ি
প্রমান পাওয়া যায়।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, সাহাবী
হযরত খাব্বাব রা.-কে কেউ জিজ্ঞেস
করেন, হুজুর পাক ﷺ কি জোহর ও আছর
নামাযে কেরআত পাঠ করতেন? তিনি
বলেন, হ্যা, পাঠ করতেন। লোকটি পুন:প্রশ্ন
করেন, আপনি কিভাবে তা বুঝতেন ? তিনি
বলেন হুজুর - ﷺ এর দাড়ি মুবারকের দোলায়
আমরা বুঝতাম যে, তিনি কিরআত পাঠ
করছেন।
(তাহাবী শরীফ)
বলাবাহুল্য, কেরআত পাঠকালে ঐ দাড়ি
দোলাই পরিদৃষ্ট হবে, যা যথেষ্ট দীর্ঘ হয়,
ছোট ছোট দাড়ি কখনো দুলবে না।
আরও অসংখ্য হাদিস শরিফ আছে দাড়ির
সম্পর্কিত।
#দাঁড়ির_হুকুম_ও_পরিমাপ :
দাড়ি সম্পর্কিত হাদিস শরিফ সমূহের
পরিপ্রেক্ষিতে চার মাযহাবের ঈমাম গণ
ঐক্যমত পোষণ করে ফতোয়া প্রদান
করেছেন,
ইসলামী শরীয়তে একমুষ্টি পরিমান লম্বা
দাঁড়ি রাখা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বা
ওয়াজিব পর্যায়ভুক্ত।
অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম সাধারণ
ভাবে দাড়ি রাখা ওয়াজিব বলেছেন।
কারণ,দাড়ি রাখার জন্য নবী ﷺ আমর বা
নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর আমর বা
নির্দেশ ওয়াজিব হওয়া কে চাই।
ফকিহ গণ দাঁড়ি এক মুষ্টির কম রাখাকে
মাকরুহ এবং কেউ কেউ হারাম বলেছেন।
চার মাযহাব এর ঈমামগণ বলেছেন, এক
মুষ্টির নিছে বা একেবারে তা মুন্ডিয়ে
ফেলা হারাম এবং কবীরা গুনাহ।
স্বয়ং হুজুর ﷺ এর দাঁড়ি রাখা এবং তার
অসংখ্য হাদীসে উম্মতের প্রতি দাঁড়ি
রাখার সাধারণ নির্দেশই প্রমান করে যে,
দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব এবং না রাখা
হারাম। কারন, শরীয়ত প্রবর্তক কর্তৃক কোন
বিষয়ের প্রতি সাধারন নির্দেশ হলে তা
পালন করা ওয়াজিব এবং বিপরীত করা
হারাম হয়ে যায়। আর এটা ফিক্বাহ
শাস্ত্রের একটি মূলনীতিও বটে।
#সুতরাং প্রমাণিত হয় এক মুষ্টির নিছে
দাড়ি মুন্ডানো ব্যক্তি ফাসেকে মুলিন বা
প্রকাশ্য ফাসিক।
তার জন্য তাওবা আবশ্যক, এমন ব্যক্তিকে
যে কোন নামাযের ইমাম বানানো গোনাহ
এবং তার পিছনে (ইমামতিতে) নামায
আদায় করা মাকরুহে তাহরীমা, যা
পরবর্তীতে দোহরিয়ে (পুনরায়) আদায় করা
ওয়াজিব বা আবশ্যক।
# নিম্মে এই সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের
আমল ও চার মাযহাবের ঈমাম ও
ফোকাহায়ে কেরামগণের উক্তি সমূহ তুলে
ধরা হল।
# দাঁড়ি_ও_সাহাবায়ে_কেরামের_আমল :
১.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.যখন হজ্জ্ব
বা উমরা আদায় করতে, তখন স্বীয় দাঁড়ি
মুষ্টি করে ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ
কেটে ফেলতেন।
(বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫)
২. হযরত আবু হুরায়রা রা. স্বীয় দাঁড়ি
ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে
ফেলতেন।
(মুসান্নাফ লি-ইবনি আবি শাইবা- ১৩/১১২)
# চার_মাযহাব_ও_ফোকাহায়ে_কেরামগণে
র_ফতোয়াঃ
# হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত ফতোয়া
গ্রন্থ "দুররুল মুখতার এ ঈমাম আলাউদ্দিন
খাচকপি হানাফি (রহ) বলেছেন পুরুষের জন্য
দাড়ি মুন্ডানো হারাম।
#হানাফি মাজহাবের অন্যতম ভাষ্যকার ও
ফকিহ আল্লামা ইবনুল হুমাম তার কিতাব
হেদায়ার ব্যাখ্যায় "ফতহুল কদির ২/২৭, দুররুল
মুখতার ২/১১৭, বাহরুর রাইক ২/২৮০ এবং
তাহাবী শরীফের ৪১১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
দাড়ি এক মুষ্টিরর কমে কেটে ছেটে রাখা
যা কোন কোন পাশ্চাত্যের লোকেরা এবং
মেয়েলী স্বভাব এর পুরুষ লোকেরা করে
থাকে, তা কারো নিকট জায়েজ নাই।
আর দাড়ি সম্পূর্ণ মুন্ডানো ইয়াহুদি ও
ইরানের মাজুসি (অগ্নিপূজারীদের) কাজ।
*গুনিয়া কিতাবের ১/২০৮, বাহরুর রাইক
২/২৮০, দুররুল মুখতার ১/১৫২, ফাতহুল কদির
২/২৭০ কিতাব সমূহতে বর্ণিত আছে,
দাড়ি মুন্ডনকারীকে শাস্তি প্রদান করা
হবে।
কেননা সে হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছে।
*ইমাম আলা হযরত (রহ) ফতোয়ায়ে রজবিয়া
তে বর্ণনা করেছেন,
শরিয়তের নির্ধারিত পরিমাণের (একমুষ্টি)
এর চেয়ে কম না রাখা ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে রজবিয়া ২২/১১৫)
*ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (রহ)
বলেন,
দাড়ি মুন্ডানো হারাম,এটা
আফরঙ্গি,হিন্দু,যুল কিয়ানদের চরিত্র,
তাদের কে কলন্দিরাও বলা হয়।
(আশিয়াতুল লুমায়াত শরহে মেশকাত ১/২১২)
*সদরুল শরিয়াহ মুফতি আমজাদ আলী (রহ)
"বাহারে শরিয়ত" উল্লেখ করেছেন,
দাড়ি লম্বা রাখা পূর্ববর্তী নবী
রাসুলগণের সুন্নাত।
মুন্ডানো বা একমুষ্টির কমে ছেটে রাখা
হারাম।
(বাহারে শরিয়ত ১৬/১৯৭)
*ফকিহে মিল্লাত আল্লামা জালাল উদ্দিন
আহমদ "ফতোয়ায়ে ফয়যুর রাসুল " এ বর্ণনা
করেছেন,
বার বার দাড়ি মুন্ডানকারী ব্যক্তি
ফাসেক ও হারামে লিপ্ত।
এমন ব্যক্তি কে ইমাম বানানো এবং তার
পিছনে নামায পড়া মাকরুহে তাহরীমী।
(ফতোয়ায়ে ফয়যুর রাসূল ১/২৫৯)
*হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব
"গুনিয়া শরহে মুনিয়া" তে বর্ণিত আছে,
ফাসেক (দাড়ি মুন্ডনকারী) কে ইমাম
বানালে গুনাহগার হবে।
কেননা তাকে (ফাসেক) কে ইমাম বানানো
হারাম।
*"তাহাতাবি আলা মারাকিয়ুল ফালাহ"
কিতাবে বর্ণিত আছে,
ফাসেকের ক্ষেত্রে মাকরুহ বলতে মাকরুহে
তাহরীমা কে বুঝায়।ক
(তাহাতাবী আলা মারাকিয়ুল ফালাহ
১/৩০৩)
*"দুররুল মুখতার" কিতাবে বর্ণিত আছে,
যে সমস্ত নামায মাকরুহে তাহরীমীর
সাথে আদায় করা হয়েছে তা পুনরায় আদায়
করা ওয়াজিব।
.
# শাফেয়ী_মালেকি_ও_হাম্বলি_মাযহাব
ের_অভিমতঃ
ইমাম ইবনুর রাফ’আ বলেন,
ইমাম # শাফেয়ী রহ. “আলউম্ম” কিতাবে
লেখেন যে, দাড়ি কাটা হারাম।
# মালেকী মাজহাব মতেও দাড়ি মুন্ডন করা
হারাম। অনুরূপভাবে ছুরত বিগড়ে যাওয়া মত
ছেটে ফেলাও হারাম। (কিতাবুল ওবদা)
# হাম্বলী মাজহাবের কিতাব “শাহহুল
মুন্তাহা” ও “শরহে মুজ্জুমাতুল আদব” এর
উল্লেখ হয়েছে যে, নির্ভরযোগ্য মত হল
দাড়ি মুন্ডন করা হারাম।
# শেষ_কথাঃ
মোট কথা হল,দাড়ি রাখা অনেকে সুন্নাতে
মুয়ক্কাদা বলেছেন যা ওয়াজিব পর্যায়ে।
চার মাজহাবের ঈমাম সহ অধিকাংশ
ওলামায়ে কেরাম এবং ফোকাহায়ে
কেরামের মতে হাদিস শরিফের আমর তথা
নির্দেশসূচক শব্দ হতে ওয়াজিব বলেছেন।
কেননা আমর তথা নির্দেশ সূচক শব্দ
ওয়াজিব কে চাই / ওয়াজিব সাবিত হয়
আর একমুষ্টির নিচে দাড়ি মুন্ডানো
সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।
একমুষ্টির নিচে দাড়ি মুন্ডনকারি ব্যক্তি
কে ফাসেকে মুলিন বা প্রকাশ্য ফাসেক
বলা হয়।
এরুপ ব্যক্তি কে ইমাম বানানো গুনাহ এবং
এদের ইমামতিতে নামায পড়া মাকরুহে
তাহরীমাহ।
ফাসেকের ইমামতিতে নামায পড়লে সে
নামায দোহরিয়ে (পুনরায়) আদায় করা
ওয়াজিব।
Sunday, September 16, 2018
৭২ জন শহিদে কারবালার নাম ৷৷
আল্লাহ পাক শহীদে কারবালার আত্মত্যাগ এর বিনিময়ে ওনাদের উসীলায় আমাদের নাজাতের ব্যবস্থা করে দিন।- আমিন
(1) হযরত সৈয়েদেনা ইমাম হুসাঈন ইবনে আলী (কাররামাহু ওয়াজাহুল কারিম) রাদিআল্লাহু
(2) হযরত আব্বাস বিন আলী (কাররামাহু ওয়াজাহুল কারবলা)
(3) হযরতসৈয়েদেনা আলী আকবর বিন হুসাঈন (রাদিআল্লাহু )
(4) হযরত সৈয়েদেনা আলী আসগর বিন হুসাঈন (রাদিআল্লাহু)
(5) হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন আলী (কাররামাহু ওয়াজাহুল
কারিম)
(6) হযরত সৈয়েদেনা জাফর বিন আলী( কাররামাহু ওয়াজাহুল কারিম)
(7) হযরত সৈয়েদেনা উসমান বিনআলী(কাররামাহু ওয়াজাহুল কারিম)
(8) হযরতসৈয়েদেনা আবু বকরবিন আলী(কাররামাহু ওয়াজাহুল
কারিম)
(9) হযরত সৈয়েদেনা আবু বকর বিন হাসান(রাদিআল্লাহু তায়ালা
আনহু)
(10) হযরত সৈয়েদেনা কাসিম বিন হাসান(রাদিআল্লাহুু)
(11) হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন হাসান (রাদিআল্লাহু )
(12) হযরত সৈয়েদেনা আওন বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর
(রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু)
(13) হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর
(রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু)
(14) হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিনআকীল(রাদিআল্
লাহু)
(15) হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন মুসলিম (রাদিআল্লাহু)
(16) হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন সাঈদ বিন আকীল
(রাদিআল্লাহু)
(17) হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল রহমান বিন আকীল(রাদিআল্লাহু)
(18) হযরত সৈয়েদেনা জাফর বিন আকীল(রাদিআল্লাহু)
(19) হযরত ওনস বিন হাস` আসাদী (রাদিআল্লাহু)
(20) হযরত হাবিব বিন মাজাহির আসাদী(রাদিআল্লাহু)
(21) হযরত মুসলিম বিন আওসাজা আসাদী(রাদিআল্লাহু )
(22) হযরত কাইস বিন মাসহার আসাদী(রাদিআল্লাহু)
(23) হযরত আবু সামামা উমরু বিন আব্দুল্লাহ(রাদিআল্লাহু
(24) হযরত বুরির হামদািন(রাদিআল্লাহু
(25) হযরত হানালাবিন আসাদ( রাদিআল্লাহু)
(26) হযরত আবিস শাকরি(রাদিআল্লাহু) (27) হযরত আব্দুল রহমান
রাহবি(রাদিআল্লাহু)
(28) হযরত সাইফ বিন হাস` (রাদিআল্লাহু)
(29) হযরত আমির বিন আব্দুল্লাহ হামদানি(রাদিআল্লাহু)
(30) হযরত জুনাদা বিন হাস`(রাদিআল্লাহু)
(31) হযরত মাজমা বিন আব্দুল্লাহ(রাদিআল্লাহু)
(32) হযরত নাফে বিন হালাল (রাদিআল্লাহু)
(33) হযরত হাজ্জাজ বিন মাসরুক (রাদিআল্লাহু) মুয়াজ্জিন এ
কাফেলা
(34) হযরত ওমর বিন কারজা (রাদিআল্লাহু)
(35) হযরত আব্দুল রহমান বিন আবদে রব(রাদিআল্লাহু)
(36) হযরত জুনাদা বিন কাব(রাদিআল্লাহু)
(37) হযরত আমির বিন জানাদা(রাদিআল্লাহু)
(38) হযরত নাঈম বিন আজলান(রাদিআল্লাহু)
(39) হযরত স্বাদ বিন হাস`(রাদিআল্লাহু) (40) হযরত জুহায়ের বিন
কাইন(রাদিআল্লাহু)
(41) হযরত সালমান বিন মাজারাইব (রাদিআল্লাহু)
(42) হযরত সাঈদ বিন ওমর(রাদিআল্লাহু)
(43) হযরত আব্দুল্লাহ বিন বাসির (রাদিআল্লাহু)
(44) হযরত ইয়াজিদবিন জাঈদ কানদি(রাদিআল্লাহু)
(45) হযরত হারব বিন ওমর উল কাইস(রাদিআল্লাহু
(46) হযরত জাহির বিন আমির(রাদিআল্লাহু:)
(47) হযরত বাসির বিন আমির(রাদিআল্লাহু)
(48) হযরত আব্দুল্লাহ আরওয়াহ গাফফারি(রাদিআল্লাহু)
(49) হযরত জন (রাদিআল্লাহু)
(50) হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমির(রাদিআল্লাহু)
(51) হযরত আব্দুল আলা বিন ইয়াজিদ (রাদিআল্লাহু)
(52) হযরত সেলিম বিন আমির(রাদিআল্লাহু) আজদী
(53) হযরত কাসিম বিন হাবীব(রাদিআল্লাহু)
(54) হযরত জায়েদ বিন সেলিম (রাদিআল্লাহু)
(55) হযরত নোমান বিন ওমর (রাদিআল্লাহু) আবদী
(56) হযরত ইয়াজিদ বিন সাবিত (রাদিআল্লাহু)
(57) হযরত আমির বিন মুসলিম (রাদিআল্লাহু)
(58) হযরত সাইফ বিন মালিক (রাদিআল্লাহু)
(59) হযরত জাবির বিন হাজ্জজি(রাদিআল্লাহু)
(60) হযরত মাসুদ বিন হাজ্জজি (রাদিআল্লাহু)
(61)হযরত আব্দুল রহমান বিন মাসুদ(রাদিআল্লাহু)
(62) হযরত বাকের বিন হাই
(63) হযরত আম্মার বিন হাসান তাই(রাদিআল্লাহু)
(64) হযরত জুরঘামা বিন মালিক (রাদিআল্লাহু)
(65)হযরত কানানা বিনআতিক(রাদিআল্লাহু)
(66) হযরত আকাবা বিন স্লাট (রাদিআল্লাহু)
(67)হযরত হুর বিন ইয়াজিদ তামিমি (রাদিআল্লাহু)
(68) হযরত আকাবা বিন স্লট (রাদিআল্লাহু)
(69) হযরত হাবালা বিন আলী শিবানী (রাদিআল্লাহু)
(70) হযরত কানাবা বিন ওমর(রাদিআল্লাহুতায়াল আনহু)
(71) হযরত আব্দুল্লাহ বিন ইয়াকতার (রাদিআল্লাহু তায়ালা
আনহু)
(72) হযরত গোলাম এ তুরকি (রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু)
Friday, September 14, 2018
ইমাম মালেকের মায়ের গল্প
এক গুণবতীর উদহারণ........(শিক্ষনীয় পোষ্ট)
যুবতীর গুণের প্রশংসা শুনে তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে না দেখেই বিয়ে করেন এক যুবক। স্ত্রীকে বাসরঘরে গিয়েই প্রথম দেখেন। কিন্তু স্ত্রীর ঘোমটা খুলতেই তিনি মনোবেদনায় বিষণ্ণ হয়ে পড়েন।
দেখেন, তার পরম কাঙ্খিত স্ত্রী রূপসী নয়, কালো। তাই তিনি স্ত্রীর কক্ষ ত্যাগ করেন। মনের দুঃখে স্ত্রীর কাছে আর ফিরে আসেন না। নাম তার আমের বিন আনাস। অবশেষে স্ত্রী নিজেই তার কাছে যান। প্রিয় স্বামীকে বলেন, ‘ওগো! তুমি যা অপছন্দ করছো, হয়তো তাতেই তোমার কল্যাণ নিহিত আছে, এসো।’ অতঃপর আমের স্ত্রীর কাছে যান এবং বাসর রাতযাপন করেন।
কিন্তু দিনের বেলা স্ত্রীর অসুন্দর চেহারার প্রতি তাকাতেই তার মন খারাপ হয়ে যায় আবার। মনের দুঃখে আমের এবার বাড়ি ছেড়ে দেন। চলে যান বহুদূরে, অন্য শহরে। এদিকে বাসর রাতেই যে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করেছেন, এ খবর তিনি রাখেন না। আমের ভিনদেশে লাগাতার বিশটি বছর কাটান।
বিশ বছর পর তিনি নিজ শহরে ফেরেন। এসেই প্রথমে নিজ বাড়ির কাছের সেই প্রিয় মসজিদে ঢোকেন। ঢুকেই দেখেন এক সুদর্শন যুবক পবিত্র কোরআনের মর্মস্পর্শী দরস পেশ করছেন। আর বিশাল মসজিদ ভরা মানুষ পরম আকর্ষণে তা হৃদয়ে গেঁথে নিচ্ছে। তাঁর হৃদয়গ্রাহী দরস শুনে আমেরের অন্তর বিগলিত হয়ে যায়। আমের লোকদের কাছে এই গুণী মুফাসসিরের নাম জানতে চাইলে লোকেরা বলেন, ‘ইনি ইমাম মালেক।’
আমের আবার জানতে চান, ‘ইনি কার ছেলে?’ লোকেরা বললো, ‘এই এলাকারই আমের বিন আনাস নামের এক ব্যক্তির ছেলে। যিনি বিশ বছর আগে বাড়ি থেকে চলে গেছেন, আর ফিরে আসেননি।’ আবেগে উত্তাল আমের ইমাম মালেকের কাছে এসে বললেন, ‘আমাকে আপনার বাড়িতে নিয়ে চলুন। তবে আমি আপনার মায়ের অনুমতি ছাড়া আপনার ঘরে প্রবেশ করবো না। আমি আপনার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবো।
আপনি ভেতরে গিয়ে আপনার মাকে বলবেন, দরজায় একজন লোক দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আমায় বলেছিলেন, তুমি যা অপছন্দ করছো, হয়তো তাতেই তোমার কল্যাণ নিহিত আছে।’ এ কথা শুনেই ইমাম মালেকের মা বললেন, ‘হে মালেক! দৌঁড়ে যাও, সম্মানের সঙ্গে উনাকে ভেতরে নিয়ে আসো, উনিই তোমার বাবা। দীর্ঘদিন দূরদেশে থাকার পর উনি ফিরে এসেছেন।’ এই হলেন সেই গুণবতী মা, যিনি ইমাম মালেক (রহ.)-এর মতো সন্তান গড়ে তোলার কারিগর।
তাই রূপবতী নারী দ্বারা নয়, গুণবতী নারীদের মাধ্যমেই পৃথিবী আলোকিত হয়।
সংকলিত।
Tuesday, September 11, 2018
হাদিস তথ্য
🌻 সবাই পড়ুন এবং শেয়ার করুন 🌻
বিষয়ঃ হাদিস তথ্য
শিক্ষার্থীঃ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া ৷
¶ মুহাদ্দিসঃ যে ব্যক্তি হাদিস চর্চা করেন এবং বহু সংখ্যক হাদীসের সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন তাকে মুহাদ্দিস বলে ৷
¶ শায়খঃ হাদিসের শিক্ষা দাতা রাবীকে শায়খ বলে ৷
¶ শায়খায়নঃ ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম কে শায়খায়ন বলা হয় ৷
¶ শায়খুল হাদিসঃ যিনি সনদ ও মতনের সমস্ত বৃত্তান্ত সহ ৫০ হাজার হাদিস মুখস্ত করেছেন তাকে শায়খুল হাদিস বলে ৷
¶ হাফিজুল হাদিসঃ যিনি সনদ ও মতনের সমস্ত বৃত্তান্ত সহ ১ লক্ষ হাদিস মুখস্ত করেছেন তাকে হাফিজুল হাদিস বলে ৷
¶ হুজ্জাতুল হাদিসঃ যিনি সনদ ও মতনের বৃত্তান্ত সহ ৩ (তিন) লক্ষ হাদিস মুখস্ত করছেন তাকে হুজ্জাতুল হাদিস বলে ৷
¶ ইমামুল হাদিসঃ যিনি সনদ ও মতনের সমস্ত বৃত্তান্ত সহ ১৬ লক্ষ হাদিস মুখস্ত করেছেন তাকে ইমামুল হাদিস বলে ৷
¶ হাকেমুল হাদিসঃ যিনি সনদ ও মতনের বৃত্তান্ত সহ সমস্ত হাদিস মুখস্ত করছেন তাকে হাকেমুল হাদিস বলে ৷
বিদ্রঃ একটি হাদিস জইফ বা মওজু বলতে হলে সনদ সহ ৫০ হাজার হাদিস মুখস্ত থাকতে হবে ৷
ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর শানে খাজা গরিবে নেওয়াজ (রহ.) এর কালাম ৷৷
ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর শানে খাজা গরিবে নেওয়াজ (রহ.) এর কালামঃ
শাহ আস্তে হোসাইন ,
বাদশা আস্তে হোসাইন ,
দ্বীন আস্তে হোসাইন,
দ্বীন পানা আস্তে হোসাইন,
সার- দাদ না- দাদ দরদস্তে ইয়াজিদ ,
হাক্কে বেনায়ে লা- ইলাহা আস্তে হোসাইন।
অর্থাৎ,,, হোসাইন রাজা,,,
হোসাইন বাদশাহ,,
হোসাইন দ্বীন,,,,
হোসাইন দ্বীনের আশ্রয়।
মাথা দিয়েছে,,দেয়নি তো হাত ইয়াজীদের হাতে,,,প্রকৃতপক্ষে হোসাইন লা-ইলাহার বুনিয়াদ।।।
Monday, September 10, 2018
চোখের পানি আসবে জান্নাতের পথ সুগম হবে
চোখের পানি আসবে জান্নাতের পথ সুগম হবে
৭১ জন সদস্যকে নির্মমভাবে শহীদ করার পর?
এবার পরিবারের কাছে আখেরি বিদায় নিয়ে যুদ্ধের মাঠে যান ঈমামে হুসাইন রাঃ। তাঁকে দেখে ইবনে যিয়াদ (লানাতুল্লাহি আলাই) একসাথে ২৫০০ তীর নিক্ষেপ করে!! আল্লাহু আকবার। যার মধ্যে ১২১ টি তীর ঈমামের নূরানি শরীর মোবারকে বিদ্ধ হয়।
এ কোন শরীর? এ সেই শরীর যার প্রত্যেক স্থানে রাহমাতুল্লিল আলামিন চুমু দিয়েছিলেন।
এ কোন শরীর? এ সেই শরীর যে শরীর সিজদারত রাসুলে হাশমী স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর চড়ে বসলে আল্লাহ সিজদাকে দীর্ঘ করার আদেশ করেন।
এ কোন শরীর? এ সেই শরীর যে শরীরকে দেখলে জুমার খুৎবা বন্ধ করে দিয়ে রাসুলে আরাবী স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কোলে নিয়ে নিতেন।
এ কোন শরীর? এ সেই শরীর যে শরীরকে মুহাদ্দিসিন রাসুলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুরুপ বা নকল বলেছেন।
এ পাক শরীর মোবারকে ১২১ টি তীর বিদ্ধ হওয়ার পরেও শেরে খোদার ছেলে অটল থাকলে তারা আবার তাঁকে ৩৭ টি বল্লম ও ৪০ বার তরবারি দিয়ে আঘাত করে। নাউযুবিল্লাহ।
আল্লাহ আল্লাহ, এ কেমন বর্বরতা!! এ কেমন নৃশংসতা!! এ কেমন যুলুম অত্যাচার!!
ইতিহাস সাক্ষী আছে, এরকম নৃশংসতার উদাহরণ আর দুটি নেই।
তারপরেও কিভাবে কিছু মানুষ ইয়াজিদ কে রাহমাতুল্লাহি আলাই বলে!!! কিভাবে এই জাহান্নামী পাপিষ্ঠর উপর রহমতের দুয়া করতে পারে? তারা কি ঈমামে হুসাইনের নানাজানের কালেমা পড়েছে নাকি ইয়াজিদের???
আল্লাহ উত্তম জানেন। আল্লাহ তাদের হিদায়াত ও আমাদের হিফাযত করুন।
Monday, September 3, 2018
এক ব্যক্তি জঙ্গলে হাটছিলেন............
এক ব্যক্তি জঙ্গলে
হাটছিলেন............
হঠাৎ দেখলেন এক সিংহ তার পিছু
নিয়েছে!
তিনি প্রাণভয়ে দৌড়াতে লাগলেন!
কিছুদূর গিয়ে একটি পানিহীন কুয়া
দেখতে পেলেন।
তিনি চোখ বন্ধ করে ঝাঁপ দিলেন!
পড়তে পড়তে তিনি একটি ঝুলন্ত দড়ি
দেখে তা খপ করে ধরে ফেললেন।
এবং ঐ অবস্থায় ঝুলে রইলেন!
উপরে চেয়ে দেখলেন
কুয়ার মুখে একটি সিংহ তাকে
খাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে!
নিচে চেয়ে দেখলেন বিশাল এক
সাপ তার নিচে নামার অপেক্ষায়
চেয়ে আছে!
বিপদের উপর আরো বিপদ!!
দেখতে পেলেন একটি সাদা আর
একটি কালো ইঁদুর তার ঝুলে থাকা
দড়িটি কামড়ে ছিড়ে ফেলতে চাইছে!
এমন হিমশিম অবস্থায় কি করবেন
যখন তিনি কিছুই বুঝে উঠতে
পারছিলেন না,
ঠিক তখনি
হঠাৎ তার সামনে কুয়ার সাথে
লাগোয়া গাছে একটা মৌচাক
দেখতে পেলেন!
তিনি কি মনে করে সেই
মৌচাকের মধুতে আঙ্গুল
ডুবিয়ে তা চেটে দেখলেন!
সেই মধুর মিষ্টতা এতই বেশি ছিল যে
তিনি কিছু মুহূর্তের জন্য উপরের
গর্জনরত সিংহ, নিচের হাঁ করে
থাকা সাপ, আর দড়ি কাঁটা ইঁদুরদের
কথা ভুলেই গেলেন।
ফলে তার বিপদ অবিশ্যম্ভাবী হয়ে
দাঁড়ালো......।
ব্যখ্যায় বলা হয়.........
এই সিংহটি হচ্ছে আমাদের মৃত্যু, যে
সর্বক্ষণ আমাদের তাড়িয়ে
বেড়াচ্ছে।
সেই সাপটি হচ্ছে কবর!
যা আমাদের অপেক্ষায় আছে!
দড়িটি হচ্ছে আমাদের জীবন,
যাকে আশ্রয় করেই বেঁচে থাকা!
সাদা ইঁদুর হল দিন, আর কালো
ইঁদুর হল
রাত, যারা প্রতিনিয়ত ধীরে
ধীরে আমাদে জীবনের আয়ু
কমিয়ে দিয়ে আমাদের মৃত্যুর
দিকে নিয়ে যাচ্ছে!
আর সেই মৌচাক হল দুনিয়া!
যার
সামান্য মিষ্টতা পরখ করে দেখতে
গেলেও আমাদের এই চতুর্মুখি
ভয়ানক
বিপদের কথা ভুলে যাওয়াটা
বাধ্য...।
আল্লাহ আমাদের আখেরাতের
সামানা তৈরি করে যাওয়ার
তাওফিক দান করুন।
#আমিন,,
সাইয়্যেদুল ইসতেগফার
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُك وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
অর্থঃ “হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক,
তুমি ছাড়া প্রকৃত এবাদতের যোগ্য কেউ নাই।
তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার গোলাম
আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি।
আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছে সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি।
যত অপরাধ করেছি সুগুলোও স্বীকার করছি।
অত:এব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।”
রাসূল ﷺ এর দেহ মোবারক
এখনো কবর দেয়া হয়নি। নামাজের সময়; আজান দিতে বেলাল [রা] এগিয়ে এলেন। আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলার পর যখন তিনি 'আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' বললেন; বলে তিনি মিম্বারের দিকে তাকালেন, এই প্রথম তিনি দেখলেন রাসূল ﷺ বেলালের সামনে নেই। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন, ধুমড়ে মুষড়ে পড়লেন। তিন দিনের জন্য তিনি বোবা হয়ে গেলেন, আজান দিতে গেলেই তিনি কান্নায় স্তব্ধ, এমতবস্থায় বেলাল [রা] কান্না করতে করতে বললেন: আমি আর আজান দেব না, ❝যে দেশে মহানবী ﷺ নেই, আমি সেখানে থাকবো না❞ এই বলে তিনি মদীনা ছেড়ে সিরিয়ার চলে যান।
ছয় মাস কেটে গেলো, একদিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে মহানবী ﷺ তাকে বলছেন, "ইয়া বেলাল, কি ব্যাপার তুমি আমাকে একবারও দেখতে আসোনি, এতদিন হয়ে গেলো!! তোমার হ্নদয় কি আমার সাক্ষাত করতে চায় না!! ঘুম ভেঙে বেলাল চিৎকার দিয়ে ❝লাব্বাইকা ইয়া সাইয়েদী❞ বলে মাঝরাতেই দ্রুত গতিতে মদিনায় সফর করলেন, আর রাসূল ﷺ এর রওজার পাশে কেঁদে কেঁদে বেহুঁশ হয়ে গেলেন। বেলার [রা] এর আগমনের খবরে মদীনাবাসী আনন্দে আত্মহারা। তাকে দেখে তার কন্ঠে আযান শুনতে সাহাবীরা ব্যাকুল, কিন্তু তিনি কিছুতে রাজি না। অবশেষে হাসান হুসাইন [রা] এগিয়ে এসে বললেন: মামা দয়া করে একবার আজান শোনাও, যেভাবে আমার নানাজান কে শুনাতেন। মাসুম বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে বেলাল [রা] আর না করতে পারলেন না, কারণ এই দুই ছোট্ট শিশু ছিল রাসূল ﷺ এর কলিজার টুকরা।
তিনি আবার আজান দিলেন, সাথে সাথে মদিনার মাটি স্তব্দ হয়ে গেলো, সবাই দৌড়ে মসজিদে নববীর দিকে ছুটলো, কর্মরত মানুষরা কাজ ভুলে গেলো, মায়েরা ঘরের কাজ বন্ধ করে দিলো, ছোট ছোট শিশুরা বলতে লাগলো আম্মু !! মু’আয্যিনে নবী ﷺ হযরত বেলাল এসে গেছেন, মদীনাবাসিদের হ্নদয় আন্দোলিত, আযান শুনে সবার চোখের সামনে রাসূল ﷺ পবিত্র জীবদ্দশার দৃশ্য ভেসে উঠলো!! আজান শেষ করে তিনি মিম্বারের দিকে তাকালেন যখন দেখলেন রাসূল ﷺ নেই তিনি কান্না করতে করতে আবার সিরিয়ায় চলে যান।
- এই সেই বেলাল [রা] যে ছিল সামাজিক মর্যাদাহীন একজন নিগ্রো, কালো গোলাম, যার মা বাবা ছিল গোলাম এবং হাবশী, সমাজের নিচুস্তরের মানুষ।
- এই সেই বেলাল [রা] ইসলাম গ্রহণ করায় তার মালিক উমাইয়া তাকে মুরুভুমির তপ্ত বালিতে পিঠ ঠেকিয়ে বেত্রাঘাত করতো আর বলতো লাত এবং উজ্জা দুই মূর্তির পূজা কর, জবাবে বেলাল [রা] বলতো আহাদ!! আহাদ!! আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই।
- এই সেই বেলাল [রা] যার সীমাহীন কষ্ট দেখে রাসূল ﷺ বলেছিলেন কেউ কি নেই বেলাল কে মুক্তি দিবে, এই নিদারুণ কষ্ট থেকে?
- এই সেই বেলাল [রা] যাকে আবুবক্কর [রা] ১০ টি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে কিনে মুক্তি দেন, এই দেখে উমাইয়া হেসে বলেছিলো, ইয়া আবু তুমি কি পাগল এই গোলাম এর জন্য তুমি আমাকে ১ টি স্বর্ণমুদ্রা দিলেও তোমাকে আমি একে দিয়ে দিতাম, উত্তরে আবুবক্কর [রা] বলেছিলো: তুমি যদি এর জন্য ১০০ টি স্বর্ণমুদ্রা ও চাইতে আমি দিয়ে দিতাম কোন তর্ক ছাড়াই, কারণ বেলাল আমার গোলাম না বেলাল আমার মালিক।
- এই সেই বেলাল [রা] মক্কা বিজয়ের পর রাসূল ﷺ বলেছিলেন ইয়া বেলাল [রা] কাবার উপর দাঁড়িয়ে আজান দাও। তাকে কাবার উপরে দেখে উতাভ বিন উসাইদ আর হারিস বিন হিশাম দুই মুশরিক (পরে মুসলিম সাহাবী) বলেছিলো, ছিঃ ছিঃ এই দিন দেখার আগে আমার আব্বার মৃত্যু হয়েছে আমি খুশি, নাহলে একজন কালো মানুষকে কাবার উপরে দেখে তার মৃত্যু হত। ছিঃ ছিঃ কিন্তু আমি একে বলি ইজ্জাতুল ইসলাম, ইজ্জাহ !! সুবাহানাল্লাহ, একজন দাস!! দাস আবিসিনিয়ার ক্রীতদাস!! কাবার উপরে দাঁড়ানো!! সম্মানটুকু দেখুন। ইজ্জাতুল ইসলাম, ইজ্জাহ।
- এই সেই বেলাল যাকে আবু দার আল গিফারী [রা] একজন এক্সট্রিমলি হ্যান্ডসাম সাহাবী গালি দিয়ে বলেছিলো, ও কালো মায়ের সন্তান, তুই আমার মুখের উপর কথা বলবি, এই শুনে রাসূল ﷺ আবু দার এর শরীর শক্ত করে ধরে তাকে চোখ রক্ত বর্ণ করে বলেছিলো ইয়া আবু দার আমি মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রাসূল, ❝সাদা মা আমিনার গর্ভে জন্ম আর কালো মা হালিমার দুধ খেয়ে বড়❞ আফসোস আবু দার জাহেলী যুগের জাহেলিয়াত তোমার মনে এখনো আফসোস!!
আফসোস আজ আমাদের সমাজে এখনো উঁচু নিচু, কালো সাদা, গরীব ধনীর পার্থক্য চোখে পড়ার মতো। এই ঈমানের কি দাম? যে ঈমান আমাকে মানুষ থেকে অমানুষ বানায়। এই বিশ্বাসের কি দাম যে আমাকে উঁচু নিচু পার্থক্য শেখায়।
কপিড
দুরুদ শরীফ আমলের আশ্চর্য ঘটনাঃ
একদা নীলনদ দিয়ে এক সওদাগরের একটি জাহাজ যাচ্ছিল।ঐ জাহাজে দৈনিক দরুদ শরীফ পাঠকারী একজন ছিল।অভ্যাস অনুযায়ী একদিন দরুদ শরীফ পাঠকালে দেখতে পেল,একটি মাছ জাহাজের কিনারায় আসলো।যতক্ষন পর্যন্ত সে দুরুদশরীফ পড়ছিল,ততক্ষন পর্যন্ত ঐ মাছটি তা শুনছিল।হঠাৎ এক জেলে এসে জাল মারলো,ফলে মাছটি আটকা পড়লো।পরিশেষে মাছটি ধরে বাজারে বিক্রয় করার জন্য বাজারে নিয়ে গেল।হযরত ওমর(রাঃ) অথবা হযরত আবু বকর ছিদ্দিক(রাঃ) এ খেয়ালে বাজারে আসছিলেন যে,একটি বড় মাছ ক্রয় করবেন এবং মহানবী(সাঃ) কে দাওয়াত করবেন।তিনি বাজার হতে ঐ মাছটি ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে এলেন এবং তার স্ত্রীকে ভালো করে মাছটি ভুনা করার জন্য বললেন।বিবি সাহেবা মাছটি রান্না করার জন্য সব রকমের চেষ্টা করলেন,কিন্তু রান্নাতো দূরের কথা,ভাছটি কড়াইয়ে চাপিয়ে আগুন জ্বালাতে পারলেননা।আগুন নিজে নিজেই নিভে যায়।পরিশেষে তারা উভয়েই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে মহানবী(সাঃ) কে ডেকে আনলেন এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন।তিনি মাছটির সমস্ত ঘটনা পরিজ্ঞাত হয়ে বললেন,দুনিয়ার অগ্নি কেন,দোজগের অগ্নিও তাকে জ্বালাতে পারবেনা।কেননা এক সময় একজন ভক্ত অত্যন্ত ভক্তির সাথে দুরুদশরীফ পাঠ করছিল,আর এই মাছটিও অনুরুপভাবে প্রেমের সাথে তা শ্রবন করছিল।এ অবস্থায় সে জালে ধরা পড়েছে।সুতরাং,দুনিয়ার আগুন কেন দোজগের আগুন ও তার জন্য হারাম হয়েগেল।দুরুদশরীফ পাঠ ও শ্রবন করা এতই মযীলত যে জ্ঞান বুদ্ধিহীন একটি মাছ শুধু দুরুদশরীফ শোনার জন্য এতখানি মর্যাদা পেল।অথচ আশরাফুল মাখলুকাত মুসলমান হওয়া সত্বেও কেন এমন মর্যাদা পাবেনা।নিশ্চয়ই পাবে।
কিতাবঃতাম্বিহুল গাফিলীন(পৃষ্ঠাঃ২২১)
লেখকঃআল্লামা ফকীহ আবুল লায়ছ সমরকন্দী(রহঃ)।
অনুবাদঃমাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহমান খন্দকার।
Sunday, September 2, 2018
"জানাযার নামাজের পর হাত তুলে দোয়া প্রসংগে " আপত্তির জবাব
→অতি দুঃখের সহিত বলতে হচ্ছে!
→ইদানিংকালে জানাযার নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দোয়া করাকে এক শ্রেণীর মানুষ বিদআত বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে আমি তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার সামান্য চেষ্টা করছি মাত্র।
→জানাজার পর মৃত ব্যক্তির কল্যাণের জন্য দো’আ করা জায়েজ এবং সুন্নাত নিন্মোক্ত দলিল সমুহ অবলোকন করলেই আমরা জানতে পারবো ইনশাআল্লাহ :-
♣দলীল নং- ০১: পবিত্র কোরআনে ৩০পারা,৯৪ নং সুরা ইনশিরাহ,৭-৮ নং আয়াত, মহান আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
ﻓﺎﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻓﺎﻧﺼﺐ- ﻭﺍﻟﻰ ﺭﺑﻚ ﻓﺎﺭﻏﺐ –
আর যখন আপনি অবসর হবেন, পরিশ্রম করুন এবং আপনার প্রতিপালকের দিকে মনোনিবেশ করুন। এ আয়াতের তাফসীরে
আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (রহঃ) বলেন, ﻋﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ
ﻭﺍﻟﻀﺤﺎﻙ ﻭﻣﻘﺎﺗﻞ ﻓﻰ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ - ( ﻓﺎﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻓﺎﻧﺼﺐ ) ﺍﻯ ﺍﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ
ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﻤﻜﺘﻮﺑﺔ ﻓﺎﻧﺼﺐ ﺍﻟﻰ ﺭﺑﻚ ﻓﻰ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻭ ﺍﺭﻏﺐ ﺍﻟﻴﻪ ﻓﻰ
ﺍﻟﻤﺴﺂﻟﺔ ﻳﻌﻄﻴﻚ – অর্থাৎ হযরত কাতাদাহ, দাহ’হাক
মাকাতিল (রাঃ) আনহুম আল্লাহ পাকের এই বানী সম্পর্কে বলেন :- ﻓﺎﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻓﺎﻧﺼﺐ এর মর্মার্থ হল
আপনি যখন ফরয সালাত শেষ করবেন, তখন নিজেকে দো’আ করার জন্য নিয়োজিত করে
নেবেন এবং প্রার্থনা করার জন্য তারই প্রতি মনোনিবেশ করবেন। তিনি আপনাকে প্রদান করবেন। বর্ণিত আয়াতের তাফসীরকারকদের মতে, নামাযের দোয়ার কথা বলা হয়েছে।
সুতরাং জানাযা নামায যেহেতু এক প্রকার ফরয নামায যদি ও তা ফরযে কেফায়া। সেহেতু জানাযা নামাযের পর দো’য়া করা ও প্রমানিত।
♣দলীল নং- ০২: ﻋﻦ ﺍﻣﺎﻣﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﻴﻞ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ
ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻱ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺍﺳﻤﻊ ؟ ﻗﺎﻝ ﺟﻮﻑ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﺍﻻﺧﺮﻭﺩﺑﺮ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﻤﻜﺘﻮﺑﺎﺕ –
অর্থাৎ হযরত আবু উমামাহ বাহেলী (রাঃ) হতে বর্নিত তিনি বলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিঙ্ঘেস করা হলো
যে, কোন মুহূর্তের দো’আ অধিক কবূল হয়ে থাকে?
তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন রাতের শেষাংশের দো’আ
(তাহাজ্জুদের সময়) এবং ফরয নামায সমূহের পরের দো’আ (দ্রুত কবূল হয়ে থাকে)”।
যেহেতু জানাজার নামাজ ফরযে কেফায়ার তাই এ নামাযের পরে ও
দো’আ করা এ হাদীসের ভিত্তিতে জায়েয, যেভাবে পাচঁ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরেও জায়েয।
মিশকাত শরীফ, ১৬৭৪ নং হাদিস:
♣দলীল নং- ০৩: ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ
ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﺫﺍ ﺻﻠﻴﺘﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻓﺎﺧﻠﺼﻮﺍ ﻟﻪ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ (رواه ابو داود)
– অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসুল (সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, তিনি
বলেছেন যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পড়ে ফেলবে তখন সাথে সাথেই (বিলম্ব না করেই) তার জন্য একটি খাস দো’আ কর।
(ইবনে মাজাহ, হা/ ১৪৯৭ ও আবু দাউদ, হা/ ৩১৯৯)
এ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হল যে, জানাযা নামাযের পর পরই মৃত ব্যক্তির জন্য খাস করে দো’আ
করতে হবে। জানাযা নামাযের পর দো’আ অস্বীকারকারীগণ এ হাদীসের উল্লেখিত দোয়াকে নামাযের মধ্যে পঠিত দো’আ অথবা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরস্থানে দো’আ করাকে বুঝাতে আপ্রান চেষ্টা চালায়।
→তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, আলোচ্য হাদীসে ﻓﺎﺧﻠﺼﻮﺍ
শব্দের মধ্যে ﻓﺎﺀ হরফের অর্থ কি? আল্লামা সিরাজুদ্দীন উসমান (রহঃ) এর নাহু শাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব হেদায়াতুন নাহুতে হরফের
অধ্যায়ে ﻓﺎﺀ হরফের অর্থ লিখা হয়েছে ﺍﻟﻔﺎﺀ ﻟﻠﺘﺮﺗﻴﺐ ﺑﻼ
ﻣﻬﻠﺔ ﻧﺤﻮ ﻗﺎﻡ ﻃﻔﻴﻞ ﻓﺒﺮﻫﺎﻥ ﻭ ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻄﻔﻴﻞ ﻣﺘﻘﺪﻡ ﻭﺑﺮﻫﺎﻥ ﻣﺘﺎﺧﺮﺍ ﺑﻼ
ﻣﻬﻠﺔ অর্থাৎ ﻓﺎﺀ হরফটি বিলম্বহীন পর্যায়ক্রমিক
অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন ﻗﺎﻡ ﻃﻔﻴﻞ ﻭﺑﺮﻫﺎﻥ অর্থ তুফাইল
দাঁড়ালো অতঃপর বুরহান দাঁড়ালো। এ উদাহরনটিতে তুফাইলের দাঁড়ানো বুরহানের পূর্বে হবে এবং বুরহানের দাঁড়ানো বিলম্বহীন ভাবে তুফাইলের পরে হবে। অর্থাৎ বুরহানের দাঁড়ানো
তুফাইলের পূর্বে বা তার সাথে হবে না। এমনকি তুফাইলের দাঁড়ানোর অনেক পরে ও হবে না বরং তুফাইল দাঁড়ানোর পর তার সাথে সাথেই বুরহান দাঁড়াবে।
→সুতরাং উক্ত হাদীস শরীফের ইবারত হল- ﺍﺫﺍ ﺻﻠﻴﺘﻢ
ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻓﺎﺧﻠﺼﻮﺍ ﻟﻪ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ অর্থাৎ যখন তোমরা মৃত
ব্যক্তির জানাযার নামায পড়ে ফেল। অতঃপর তাঁর জন্য খাস করে দো’আ কর। আলোচ্য ইবারতে প্রথমে নামায পড়ার কথা বলা হয়েছে। তার পর
দো’আ করার জন্য বলা হয়েছে। তাই উক্ত দোয়াটি নামাযে পঠিত দো’আ হিসেবে গন্য হবেনা। নামাযের পরেই বিলম্ব না করে দো’আ করতে হবে।
এবং নামাযের পর দাফন পর্যন্ত বিলম্ব করে তার পরে পঠিত দো’আ হিসেবে ও উক্ত দো’আটি যদি
দাফনের পরবর্তী দোআ হিসেবে বুঝানো হত তাহলে হাদীস শরীফের ইবারতে ﻓﺎﺀ হরফ ব্যবহার
না করে ﺛﻢ (ছুম্মা) হরফ ব্যবহার করা হত কারণ ছুম্মা হরফের অর্থ হলো ﺍﻟﺘﺮﺗﻴﺐ ﺑﻤﻬﻠﺔ অর্থাৎ
বিলম্বের সহিত পর্যায়ক্রম। যেমন বলা হয়। ﺩﺧﻞ ﺍﻧﻮﺍﺭ
ﺛﻢ ﻣﺤﻤﻮﺩ অর্থাৎ আনওয়ার প্রবেশ করল অতঃপর
বিলম্ব করে মাহমুদ প্রবেশ করল। অনুরূপ ফা হরফের অর্থ দুরুসুল বালাগাত কিতাবের প্রনেতা আল্লামা বেগ নাসেফ, মুহাম্মদ বেগ দিয়াব,
মুস্তফা তাম্মুম ও সুলতান আফেন্দী (রাহঃ) বর্ননা করেছেন”। অনুরূপ ফা হরফের অর্থ কাফিয়া কিতাবের প্রনেতা আল্লামা জালালুদ্দীন ইবনে
হাযেব (রাহঃ) বর্ননা করেছেন”। অনুরূপ (ফা) হরফের অর্থ নুরুল আনওয়ার কিতাবের ব্যাখ্যাকার
আল্লামা মোল্লা জীউন (রাহঃ) বর্ননা
করেছেন”।
→তাই বুঝা গেল রাসুল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানাযা নামাযের পর পরই দোআ করার জন্য আদেশ করেছেন। আর যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আদেশের বিপরীতে কথা বলে তাদের
ঈমান আছে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
♣দলীল নং- ০৪: প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম (রাহঃ) তার ফাতাওয়ার কিতাবে
মুতার যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ করেন। হযরত আব্দুল জাব্বার বিন উমারাহ (রাঃ) তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবী বাকরাহ (রাঃ) থেকে তিনি
বলেন যখন (শামদেশে) মুতানামক স্থানে (মুসলমান এবং কাফের) যুদ্ধ শুরু করল। তখন রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (মদিনা শরীফের মসজিদে নববীর) মিম্বরে বসা ছিলেন, তখন তার এবং শ্যাম দেশের
মধ্যবর্তী স্থানের সকল আবরন দূর করে উন্মক্ত করে দেয়া হল। তিনি মুতার যুদ্ধ সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে
লাগলেন। অতঃপর রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (রাঃ) (ইসলামের) পতাকা হাতে নিয়েছেন। কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি শাহাদাত বরণ করলেন।আল্লাহর হাবীব (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জানাযার নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোআ করলেন ও (উপস্থিত সাহাবীদের উদ্দেশ্যে) বললেন তোমরা তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি জান্নাতে প্রবেশ করে সেখানে ঘুরাফেরা
করছেন। অতঃপর হযরত জাফর ইবনু আবী তালেব (রাঃ) পতাকা নিজ হাতে নিলেন কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি শাহাদাত বরণ করলেন। ﻓﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﺩﻋﺎ ﻟﻪ ﻭﻗﺎﻝ
ﺍﺳﺘﻐﻔﺮﻭﺍ ﻟﻪ অর্থাৎ অতঃপর রসুল সাল্লাল্লাহ)
তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার জানাযা নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোআ করলেন লোকদেরকে ও তার মাগফিরাতের জন্য দোআ
করতে বললেন”।
♣দলীল নং- ০৫: মুতার যুদ্ধে রাসুল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীরা জানাযার নামাযের পর কী করলেন তা ইমাম
বায়হাক্বী (রাহঃ) সুন্দর করে সহীহ সনদে এভাবে বর্ননা দিচ্ছেন
ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻗﺘﻞ
ﺯﻳﺪ ﺍﺧﺬ ﺍﻟﺮﺍﻳﺔ ﺟﻌﻔﺮ ﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﻓﺠﺎﺀﻩ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﻓﺠﺒﺐ ﺍﻟﻴﻪ ﺍﻟﺤﻴﺎﺓ
ﻭﻛﺮﻩ ﺍﻟﻴﻪ ﺍﻟﻤﻮﺗﻰ ﻭﻣﻨﻪ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻻﻥ ﺣﻴﻦ ﺍﺳﺘﺤﻠﻢ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ ﻓﻰ ﻓﻠﻮﺏ
ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺗﻤﻨﻴﻨﻰ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ؟ ﺛﻢ ﻣﻀﻰ ﻗﺪﻭﻣﺎ ﺣﺘﻰ ﺍﺳﺘﺸﻬﺪ ﻓﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻪ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﺩﻋﺎ ﻟﻪ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺳﺘﻐﻔﺮﻭﺍﻻﺧﻴﻜﻢ ﻓﺎﻧﻪ ﺷﺎﻫﺪ ﺩﺧﻞ
ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻫﻮ ﻳﻄﻴﺮ ﻓﻰ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺠﻨﺎﺣﻴﻦ ﻣﻦ ﻳﺎﻗﻮﺕ ﺣﻴﺚ ﻳﺸﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻨﺔ
অর্থাৎ হযরত আছিম বিন উমর বিন কাতদাহ (রাঃ) বর্ননা করেন, অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জানাযার
নামায পড়লেন এবং তাঁর জন্য দোআ করলেন তারপর বললেন তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার কর, নিশ্চয়ই সে এখন শহীদ হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করেছে এবং ইয়াকুত ডানায়
ভর করে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছেন ”।
♣দলীর নং- ০৬: বিখ্যাত হানাফী ফকীহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা কাসানী ওফাত ৫৮৭ হিজরী হাদীসটি দুজন সাহাবী এ ভাবে বর্ননা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত-
ﻓﺎﺗﺘﻬﻤﺎ ﺻﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻓﻠﻤﺎ ﺣﻀﺮﺍ ﻣﺎ ﺯﺍﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺳﺘﻐﻔﺎﺭ ﻟﻪ ﻭ ﺭﻭﻱ
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺳﻼﻡ ﺍﻧﻪ ﻓﺎﺗﺘﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ
ﻓﻠﻤﺎ ﺣﻀﺮ ﻗﺎﻝ : ﺍﻥ ﺳﺒﻘﺘﻤﻮﻧﻰ ﺑﺎﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻴﻪ ﻓﻼ ﺗﺴﺒﻘﻮﻧﻰ ﺑﺎﻟﺪﻋﺎﺀ ﻟﻪ –
অর্থাৎ উভয়ে এক জানাযায় গিয়ে জানাযার নামায না পেয়ে মায়্যিতের জন্য ইস্তিগফার পড়লেন বা দোআ করলেন। আরেক বর্ননায় রয়েছে
একদা হযরত উমর (রাঃ) এর জানাযা যখনই শেষ হয়ে গেল তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ)
আসলেন, তিনি বললেন হে আমার সাথীরা! তোমরা আমার পূবেই জানাযার নামায পড়ে ফেলেছো কিন্তু জানাযার পর দোআ আমাকে বাদ দিয়ে করো না অর্থাৎ আমাকে সাথে নিয়েই দোআ করো ”।
উক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমানিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরামগন জানাযার পর পুনরায় দোআ করতেন। এটা ছিল সাহাবাগনের সম্মিলিত আমল, →সুতরাং জানাযার পর দোআ করা সাহাবীদের সুন্নাত।
♣দলীল নং- ০৭: হযরত ইবরাহীম হিজরী (রাঃ) বললেন আমি হযরত আবদুল্লাহ বিন আওফা (রাঃ) যিনি বাইতুর রিদওয়ানের তাঁর কন্যার ওফাত হলে তিনি তাঁর মেয়ের কফিনের পেছনে একটি খচ্ছরের
উপর সওয়ার হয়ে যাচ্ছেন। তখন মহিলারা কান্না করতে ছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন তোমরা
মর্সিয়া করোনা, যেহেতু রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মর্সিয়া করতে নিষেধ করেছেন। তবে তোমাদের মধ্যে যে কেউ চায় অশ্রু ঝরাতে পারবে। ﺛﻢ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻓﻜﺒﺮ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﺭﺑﻌﺎ ’
ﺛﻢ ﻗﺎﻡ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺮﺍﺑﻌﺔ ﻗﺪ ﺭﺑﻴﻦ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺘﻜﺒﺮﺗﻴﻦ ﻳﺴﺘﻐﻔﺮ ﻟﻬﺎ ﻭﻳﺪﻋﻮ ﻭﻗﺎﻝ :
ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺼﻨﻊ ﻫﻜﺬﺍ এরপর
জানাযার নামায চারটি তাকবীরের মধ্যে সম্পন্ন করলেন। চতুর্থ তাকবীরের পর, দুই তাকবীরের
মধ্যখানের সময় পরিমান দো’আ করতে ছিলেন এবং তিনি (সাহাবী) বললেন অনূরূপ রাসুল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
জানাযায় করতেন”।
♣দলীল নং- ০৮: বর্নিত হয়েছে একবার রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটা জানাযার নামায শেষ করলেন। এরপর হযরত ওমর (রাঃ) উপস্থিত হলেন তাঁর সাথে কিছু লোক ও ছিল।
তিনি দ্বিতীয়বার জানাযার নামায
পড়তে চাইলেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন জানাযার নামায দ্বিতীয় বার পড়া যায়না ﻭﻟﻜﻦ ﺍﺩﻉ ﻟﻠﻤﻴﺖ ﻭ
ﺍﺳﺘﻐﻔﺮ ﻟﻪ তবে তুমি মৃত ব্যক্তির জন্য দোআ করত
পার এবং তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো”।
সুতরাং উপরোক্ত দলিলাদির মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম জানাযা নামাযের পর মৃত ব্যক্তির জন্য তাঁর বিদায় বেলায় মুনাজাত বা দোআ করা একটি উত্তম উপহার। আমাদের সাধারণ বিবেক বলে এত দিন যারা আমাদের একান্ত আপনজন হিসেবে ছিলেন যারা আমাদের সুখে-দুঃখে
ছিলেন তাদেরউপকার করার জন্য কোন উপায় আমাদের নেই। কেবল তাদের জন্য দোআ করাই একমাত্র উপহার। শরীয়ত সম্মত একটি উত্তম আমল জানাযার পর দোআ করার বিরোধিতা করতে গিয়ে সমাজে ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টি কারীরা একটি খোড়া যুক্তি অবতারনা করে বলে বেড়ায় জানাযাইতো দোআ আবার দোয়ার কী প্রয়োজন?
→আমরা বলতে চাই দোআ করা যদি না জায়েয হয় তাহলে ভাত খাওয়ার পর আর কিছু খাওয়া যাবে
না। কারন খাওয়ার পর আবার কিসের খাওয়া?
বিষয়টি একবারে হাস্যকর। মূলত জানাযা কেবল দোআ হিসেবে আখ্যায়িত করা অজ্ঞতার নামান্তর। কারণ যে কারণে তারা জানাযাকে
দোআ বলতে চায় সে কারনে অন্যান্য নামাযকে ও দোআ বলতে হবে। কেননা সকল নামাযের ভিতরে কোন না কোনোভাবে দোআ রয়েছে। এবার যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে খন্ডন করা প্রয়োজন। মূলত জানাযার নামায দোআ নয়। নামাযের সকল শর্তাবলী জানাযার নামাযে ও বিদ্যমান।
যেমনঃ-
→১) জানাযার জন্য ওযু কিংবা তায়াম্মুম শর্ত কিন্তু দোয়ার জন্য শর্ত নয়।
→২) জানাযার জন্য কিবলামুখী হওয়াশর্ত কিন্তু দোয়ার জন্য নয়।
→৩) জানাযার জন্য কিয়াম তথা দাড়ানো শর্ত দোয়ার জন্য নয়।
→৪) ফিকহের কিতাব সমূহে কোথাও জানাযাকে দোআ হিসেহে উল্লেখ করা হয়নি বরং সব জায়গায় লিখা আছে “সালাতুল জানাযাহ” তথা জানাযার নামায। এমনকি জানাযার পূর্বে যে নিয়ত করা হয় তাতে ও আমরা বলে থাকি “সালাতিল জানাযাহ” দোআ -ইল- জানাযাহ কেউ বলেনা।
→৫) যে কারনে নামায ভঙ্গ হয় সে কারণে জানাযার নামায ও ভঙ্গ হয়।
→৬) নামায জামাতে হয় জানাযা ও জামাতে হয়।
→৭) নামাযে নিয়্যত আছে জানাযায় ও নিয়্যত আছে।
→৮) নামাযে সালাম আছে জানাযায় ও সালাম আছে।
→৯) জানাযায় রুকু সিজদা নেই একেক ধরনের নামায একেক ধরনের হয় যেমন ইস্তিকার নামায,
ইস্তিখারার নামায, সালাতুত তাসবীহ ইত্যাদি বিভিন্ন রূপ (উসুলুশ শাশী)।
^১০) নামায থেকে সালাম দ্বারা বের হতে হয় জানাযায় ও তাই কিন্তু দোআ থেকে পৃথক হতে সালাম প্রয়োজন হয়না।
→১১) ফরয নামাযের পর দোআ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত জানাযার নামায ফরযে কেফায়া তাই
এতে ও দোআ অপরিহার্য।
→১২) সালাতুল মাগরিবকে মাগরিবের দোআ বলা হয় না বরং নামায বলা হয় তাহলে সালাতুল
জানাযাকে জানাযার দোআ কেন বলা হবে? তাই এটা ও নামায।
→১৩) নামাযের জন্য আযান আছে, জানাযার জন্য ও এলান (ঘোষনা) আছে সকল নামাযেই দোআ আছে
শুধু জানাযাকে খাস করা ঠিক নয়।
→১৪) নামাযে মাসবুক (বিলম্বে আসলে) যেভাবে পরবর্তীতে নামায সম্পন্ন করতে হয় একই ভাবে জানাযার একই হুকুম। কিন্তু দোআয় মাসবুকের মাসআলা নেই।
→১৫) দোআয় এদিক সেদিক তাকানো যায়, নামাযে ও জানাযায় তাকানো যায়না, তাই জানাযার
নামায দোআ হয় কী করে।
→১৬) নামাযে মুক্তাদীর জন্য “ইক্তিদা” আছে জানাযায় ও আছে।
→১৭) ইস্তিসকার নামায মাঠে ময়দানে হয় জানাযার নামায ও তাই বরং প্রয়োজনে মসজিদে ও পড়া যায়।
→১৮) বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরের কিতাব তফসীরে জালালাইন কিতাবে ৫০২ পৃষ্টা মধ্য সূরা ইনশিরাহ ৭-৮ নং আয়াতে আছে, আর যখন নামায হতে অবসর
গ্রহন করবে অতঃপর দোয়ার মধ্যে মশগুল হয়ে যাও। নামায শেষ হওয়ার পর দোয়ার কথা বলা হয়েছে।
জানাযা দোআ নয় বরং নামায, তাই তাঁর পর দোআ করতে হবে। সুতরাং একটি ফরযে কিফায়ার নামাযকে কেবল দোআ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে হালকা করে দেয়ার কোন মানে হয়না।
→অতএব আসুন তর্কের খাতিরে তর্কনয় বরং সত্যকে জানার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ তায়ালা ও
রাসুল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আনুগত্যকে মান্য করার চেষ্টা করি।
♥ বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন
(সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
Saturday, September 1, 2018
মিলাদুন্নবী (দঃ) খুশি পালনে, আবু লাহাবের শাস্তি লাঘব !!
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বেলাদাতের খুশিতে সুহাইবাহ (রাঃ) কে আযাদ করায় আবু লাহাবের আযাব হালকা হয় যে কাফিরের বিরোদ্ধে সূরা লাহাব নাজিল হয়েছে। ও ওহাবী সালাফীরা এইসব হাদিস কি তোমরা দেখ না ?
হযরত অরওয়া ইবনে জুবায়ের (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন,
সুহইবাহ আবু লাহাবের দাসী ছিল। আবু লাহাব ওনার কাছে থেকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বেলাদাতের [অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর] সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে [সেই খুশিতে] সুহাইবাহ কে আযাদ করে দিয়েছিল। যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করেছিল তখন [এক বছর পর] তার ঘনিষ্ঠদের কেউ [হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু] তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশে বলেন, “তোমার অবস্থা কেমন?” আবু লাহাব উত্তরে বলল, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি,কেবল যে দিন [মিলাদুন্নবীর খুশিতে] সুহাইবাকে [তর্জনী ও মধ্যমা দু’টি আঙ্গুলের ইশারায়] আযাদ করে দিয়েছিলাম, ঐ কারনে (প্রতি সোমবার) আংগুল দুটির মধ্যে কিছু পানি জমে আমি ঐ পানি (চুষে) পান করে থাকি ও প্রতি সোমবার (জাহান্নামের কঠিন) আযাবকে হাল্কাবোধ করে থাকি।”
শয়তান চারবার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল ৷৷
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফে সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো কে জানেন? সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো ইবলিশ শয়তান । সে এতোটাই কষ্ট পেয়েছিল যে, কষ্টে সে রীতিমত কান্না করছে।
حكى السهيلي عن تفسير بقي بن مخلد الحافظ : أن إبليس رن أربع رنات; حين لعن ، وحين أهبط ، وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وحين أنزلت الفاتحة
“শয়তান চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল ,প্রথম বার যখন আল্লাহ তায়ালা তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন; দ্বিতীয়বার যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বের করে দেয়া হয়। তৃতীয়বার, যখন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেলাদত শরীফ হয়। এবং চতুর্থবার যখন সূরা ফাতেহা নাযেল হয়।”
(দলীল: আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া-২য় খণ্ড ২৬৬, ২৬৭,পৃষ্ঠা
লেখক: আবুল ফিদা হাফিজ ইবনে কাছির আদ দামেষ্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
প্রকাশনা: মাকতাবাতুল মা’রেফা, বয়রুত লেবানন।)
অবাককরা এক শিক্ষণীয় ঘটনা ৷৷
একবার হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর স্ত্রীর মিষ্টি খাওয়ার খুব ইচ্ছে হল। তিনি স্বামীকে মিষ্টি কিনে আনতে বললেন। মুসলিম জাহানের শাসক খলীফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) তখন স্ত্রীকে জানালেন বর্তমানে তার মিষ্টি কেনার মত সামর্থ নেই। আমীরুল মুমিনীনের স্ত্রী এরপর প্রত্যেক দিনের খরচ থেকে টাকা বাঁচিয়ে জমা করা শুরু করলেন। কিছু অর্থ জমা হওয়ার পর তা স্বামীকে দিয়ে বললেন মিষ্টি কিনে আনতে। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (র) জিজ্ঞেস করলেন এই অর্থ কোথা থেকে এসেছে। স্ত্রী বললেন প্রতিদিনের খরচ থেকে বাঁচিয়ে তিনি এই অর্থ জমা করেছেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) তখন বললেন, এই পরিমাণ অর্থ তাহলে আমি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অতিরিক্ত নিচ্ছি ? এটার তো তাহলে আমার আর কোন দরকার নেই। কেননা এইটি জনগনের হক। যা ভোগ করার অধিকার আমাদের কারো নেই। এইটি দিয়ে অন্তত কয়েকজন গরীবের দুই বেলার খাবার ব্যবস্থা করা যাবে। এরপর তিনি সেই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে আসেন। ( হেকায়াতে সাহাবী:- ৫৪৯)
সুবহানাল্লাহ শেয়ার করুন
Friday, August 31, 2018
বিশ্বময়কর একটি ঘটনা সুবহানাল্লাহ
একদিন মদীনার দুই ব্যক্তি একজন যুবককে টেনে হিছরে, অর্ধপৃথিবীর শাসক,খলীফা, হযরত উমর রা. এর দরবারে হাজির করলো। এবং বিচার দাখিল করলো যে,এই যুবক আমাদের পিতাকে হত্যা করেছে। আমরা এর ন্যায় বিচার চায়।
তখন খলীফা (প্রধানমন্ত্রী) হযরত উমর রা. সেই যুবককে প্রশ্ন করেন, তার বিপক্ষে করা দাবী সম্পর্কে। তখন সেই যুবক বলেন,তাদের দাবী সম্পুর্ণ সত্য।
আমি ক্লান্তির কারনে বিশ্রামের জন্য এক খেজুর গাছের ছায়ায় বসলাম। ক্লান্ত শরীরে অল্পতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার একমাত্র পছন্দের বাহন আমার উট টি পাশে নেই। খুঁজতে খুঁজতে কিছু দূর গেয়ে পেলাম, তবে তা ছিলো মৃত। পাশেই ওদের বাবা ছিলো। যে আমার সেই উট কে তাদের বাগানে প্রবেশের অপরাধে পাথর মেরে হত্যা করেছে।
আমি ও রাগান্বিত হয়ে তাদের বাবার সাথে তর্কাতর্কি করতে করতে এক পর্যায়ে তাদের বাবার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে ফেলি, ফলে সে সেইখানেই মারা যায়। যা সম্পুর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়ে গেছে। যার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
বাদী'রা বলেন:- আমরা এত মৃত্যুদণ্ড চাই।
হযরত উমর রা. সব শোনে বললেন উট হত্যার বদলে একটা উট নিলেই হতো, কিন্তু তুমি বৃদ্ধকে হত্যা করেছো। হত্যার বদলে হত্যা, এখন তোমাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। তোমার কোন শেষ ইচ্ছা থাকলে বলতে পারো।
নওজোয়ান বললো, আমার কাছে কিছু ঋন ও অন্যের কিছু আমানত আছে। আমাকে যদি কিছুদিন সময় দিতেন তবে আমি বাড়ি গিয়ে আমানত ও ঋন গুলি পরিশোধ করে আসতাম।
খলিফা হযরত উমর রা. বললেন তোমাকে একা ছেড়ে দিতে পারি না। যদি তোমার পক্ষ থেকে কাউকে জিম্মাদার রেখে যেতে পারো তবে তোমায় সাময়িক মুক্তি দিতে পারি।
নিরাশ হয়ে নওজোয়ান বললো, এখানে আমার কেউ নেই। যে আমার জিম্মাদার হবে।
একথা শুনে হঠাৎ মজলিসে উপস্থিত, আল্লাহর নবীর এক সাহাবী হযরত আবু জর গেফারী রা. দাড়িয়ে বললেন, আমি হবো ওর জামিনদার।
সাহাবী হযরত আবু জর গেফারী রা. এই উত্তরে সবাই হতবাক। একেতো অপরিচিত ব্যক্তি তারউপর হত্যার দন্ড প্রাপ্ত আসামীর জামিনদার
খলিফা বললেন আগামি শুক্রবার জুম্মা পর্যন্ত নওজোয়ানকে মুক্তি দেওয়া হলো। জুম্মার আগে নওজোয়ান মদিনায় না আসলে নওজোয়ানের বদলে আবু জরকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে।
মুক্তি পেয়ে নওজোয়ান ছুটলো মাইলের পর মাইল দূরে তার বাড়ির দিকে। আবুজর রা. চলে গেলেন তাঁর বাড়িতে।এদিকে দেখতে দেখতে জুম্মাবার এসে গেছে, নওজোয়ানের কোন খবর নেই।
হযরত উমর রা. রাষ্ট্রীয় পত্রবাহক পাঠিয়ে দিলেন আবুজর গিফারি রা. এর কাছে। পত্রে লিখা আজ শুক্রবার বাদ জুমা সেই যুবক যদি না আসে আইন মোতাবেক আবুজর গিফারির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। আবুজর যেন সময় মত জুমার প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে নববীতে হাজির হয়।
খবর শোনে সারা মদীনায় থমথমে অবস্থা। একজন নিষ্পাপ সাহাবী আবুজর গিফারী আজ বিনা দোষে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবে।
জুমার পর মদিনার সবাই মসজিদে নববীর সামনে হাজির। সবার চোখে পানি। জল্লাদ প্রস্তুত। জীবনে কতজনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে তার হিসাব নেই। কিন্তু আজ কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছে না। আবুজরের মত একজন সাহাবী সম্পূর্ন বিনা দোষে আজ মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবে, এটা মদীনার কেউ মেনে নিতে পারছে না। এমনকি মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদানকারী খলিফা উমর রা. ও অনবরত কাঁদছেন। তবু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কারো পরিবর্তনের হাত নেই। আবু জর রা. তখন ও নিশ্চিন্তে মনে হাসি মুখে দাড়িয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। জল্লাদ ধীর পায়ে আবু জর রা. এর দিকে এগুচ্ছেন আর কাদছেন। আজ যেন জল্লাদের পা চলে না। পায়ে যেন কেউ পাথর বেঁধে রেখেছে।
এমন সময় এক সাহাবী জল্লাদকে বললো, হে জল্লাদ একটু থামো। মরুভুমির ধুলার ঝড় উঠিয়ে ঐ দেখ কে যেন আসতেছে। হতে পারে ঐটা নওজোয়ানের ঘোড়ার ধুলি। একটু দেখে নাও, তারপর না হয় আবু জরের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করিও।
ঘোড়াটি কাছে আসলে দেখা যায় সত্যিই এটা ঐ নওজোয়ান। নওজোয়ান দ্রুত খলিফার সামনে এসে বললো, হুযুর বেয়াদবি মাফ করবেন। রাস্তায় যদি ঘোড়ার পা'য়ে ব্যাথা না পেত,তবে সঠিক সময়েই আসতে পারতাম।
বাড়িতে আমি একটুও দেরী করি নাই। বাড়ি পৌছে গচ্ছিত আমানত ও ঋন পরিশোধ করি এবং তারপর বাড়ি এসে বাবা, মা এবং নববধুর কাছে সব খুলে বলে চিরবিদায় নিয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এখন আবু জর রা. ভাইকে ছেরে দেন, আমাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে পবিত্র করুন। কেয়ামতে খুনি হিসেবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে চাই না।
আশেপাশে সব নিরব থমথমে অবস্থা।
সবাই হতবাগ, কি হতে চলেছে।
যুবকের পুনরায় ফিরে আসাটা অবাককরে দিলো সবাইকে। খলিফা হযরত উমর রা. বললেন, তুমি জানো তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, তারপরে ও কেন ফিরে এলে।
উত্তরে সেই যুবক বলে:- আমি ফিরে এসেছি, কেউ যাতে বলতে না পারে, এক মুসলমানের বিপদে আরেক মুসলামান সাহায্য করতে এগিয়ে এসে নিজেই বিপদে পড়ে গেছিলো।
এবার হযরত উমর রা. হযরত আবু জর গেফারী রা. কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কেন না চেনা সত্যেও এমন জামিনদার হলেন।
উত্তরে হযরত আবু জর গেফারী রা. বললেন, পরবর্তি কেউ যেন বলতে না পারে, এক মুসলমান বিপদে পড়েছিলো, অতচ কেউ তাকে সাহায্য করতে আসেনি।
এমন কথা শুনে, হঠাৎ, বৃদ্বার দুই সন্তানের মাঝে একজন বলে উঠলেন, হে খলীফা, আপনি তাকে মুক্ত করে দিন। আমরা তার উপর করা দাবী তুলে নিলাম।
হযরত উমর রা. বললেন, কেন.?
তাদের মাঝে একজন বলে উঠলো, কেউ যেন বলতে না পারে,এক মুসলমান অনাকাঙ্ক্ষিত ভূল করে নিজেই শিকার করে ক্ষমা চাওয়ার পরে ও অন্য মুসলমান তাকে ক্ষমা করেনি।
#সুবহানাল্লাহ ( হায়াতুস সাহাবা:-৮৪৪)
৩য় জুমা’ ১৯ যুল হাজ্জাহ ১৪৩৯হি: ৩১ আগষ্ট- ২০১৮
জুমার খুতবা
***************
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিদায় হজ্বের ভাষণ
========================================
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী
খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম। #
بسم الله الرحمن الرحيم
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশম হিজরি,৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে যে হজ্ব পালন করেন, ইসলামের ইতিহাসে তা ‘হজ্জাতুল বিদা’ বা ‘বিদায় হজ্ব’ নামে খ্যাত। দশম হিজরি জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফাতের বিশাল ময়দানে উপস্থিত প্রায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার বা প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার সাহাবীর সম্মুখে জীবনের অন্তিম ভাষণ দান করেন, যা বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের 'বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ' নামে পরিচিত।
১০ম হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসের চারদিন বাকী থাকতে শনিবার যোহরের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায় লক্ষাধিক সাহাবীর এক বিরাট দল সমভিব্যাহারে মদীনা হ’তে মক্কার পথে হজ্ব আদায়ের জন্যে রওয়ানা হ’লেন। অনবরত আট দিন পথ চলার পর যিলহজ্ব মাসের ৪ তারিখ রোজ শনিবার মক্কা মুয়ায্যামায় প্রবেশ করেন, ৮ জিলহজ সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিনায় তাশরীফ নিয়ে গেলেন। দশম হিজরি জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখে আয়োজিত হয় বিশ্বমানবতায় এক মহাসমাবেশ। ওই দিনটি ছিল ইসলামের গৌরবময় ও সুউচ্চ মর্যাদা বিকাশের দিন, যার ফলে প্রাক-ইসলামি অন্ধকার যুগের যাবতীয় কুসংস্কার ও অহেতুক কাজকর্ম বিলুপ্ত হয়ে গেল।
এ দিন ছিল শুক্রবার, ভোরে নামায আদায় করে মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হলেন। লাখো কণ্ঠের গগনবিদারী ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে দুই পাশের পর্বতমালা কেঁপে উঠল। আরাফাহ ময়দানের পূর্বদিকে ‘নামিরা’ নামক স্থানে তাঁবু স্থাপন করা হলো, সেখানে পৌঁছে দুপুর পর্যন্ত তাঁবুতে অবস্থান করেন। জুমার সালাত আদায় করে তিনি ‘কচওয়া’ নামক উষ্ট্রীর উপর আরোহন করে আরাফা’র সন্নিকটে ‘আরনা’ প্রান্তরে উপস্থিত হয়ে এ বিশাল সমাবেশে তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজ্বের খুতবা বা ভাষণ প্রদান করেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ভাষণ ছিল মূলত আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের চূড়ান্ত ঘোষণা। আর তাই তো সেদিন নাযিল হয়েছিল
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপরে আমার নে‘মতকে পরিপূর্ণ করলাম আর ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (সুরা মায়েদা, আয়াত-৩)।
দীর্ঘ ২৩ বছরে কঠিন সাধনা আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান স্রষ্টার ইচ্ছার স্বরূপে আরব জাহানকে গড়ে তুলেছিলেন। আরাফাত ময়দানে বিদায় হজ্বের ভাষণে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল ইসলামের সেই মর্মবানী। ইসলামের প্রকৃত মূল্যবোধ অনুযায়ী মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে এই ভাষণে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা ছিল। ইসলাম ধর্ম যে ধাপে ধাপে ও পর্যায়ক্রমে পূর্ণতা পেয়েছিলো, তারই চূড়ান্ত ঘোষণা ছিলো মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ভাষণ।
এ ভাষণে ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছিলো। মুসলিম জাতির সাফল্যের ধারা বজায় রাখতে মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। এই ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল উপাসনামূলক অনুশাসন ছিলো না, বরং মানবসমাজের জন্য করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপদেশও ছিলো এ ভাষনে।
আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, তাঁর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি, মানবজাতির ঐক্য, আধ্যাত্মিক ভ্রাতৃত্ব, সামাজিক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক সাম্য ইত্যাদি সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম সব বিষয়ই এই ভাষণের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এই ভাষণে তাকওয়া বা দায়িত্বনিষ্ঠতার কথা গুরুত্ব দেয়া হয়েছিলো এবং পাপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছিলো। আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব বা হক্কুল্লাহ ও মানবস¤প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব বা হক্কুল ইবাদের মধ্যে সীমারেখা টেনে দেয়া হয়েছিলো তাঁর এ ভাষনে।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ভাষণে সমাজ ও রাষ্ট্রে অরাজকতা, বিদ্রোহ এবং কুপরামর্শ প্রদানকারী শয়তানদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ভাষণে বিভিন্ন ধরণের সুদপ্রথা রহিত করে শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিলো। নারীর পূর্ণ নিরাপত্তা, সম্মান ও অধিকারকে নিশ্চিত করার জন্য মুসলমানদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো এই ভাষণে। মানুষে মানুষে আত্মীয়তার বন্ধন, বিশেষ করে রক্তের সম্পর্কের উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ ও সামাজিক কুসংস্কার থেকে মানুষের মুক্তি লাভের ওপর জোর দেয়া হয়েছিলো।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই ঐতিহাসিক ভাষণে স্বর্গ-মর্তের সকল কিছুর ওপর আল্লাহর কর্তৃত্ব সুনিশ্চিত করা হয়েছিলো এবং মানুষকে এসব কিছুর আমানতদার হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। আল্লাহর মালিকানায় সবার অধিকার স্বীকৃত বলে উত্তরাধিকার আইনের ওপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়। আমানতের খেয়ানতকারীর প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা ও মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা বিধানের জন্য কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সাম্য, স্বাধীনতা, ন্যায়পরায়ণতা, ভ্রাতৃত্ব এবং বদান্যতা ও মানবতার পরম ধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিলো।
আরাফাতের ময়দানের উক্ত ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি এরশাদ করেন,
أَمَّا بعد، أيّهَا النّاس، اسْمَعُوا منّي أُبّينْ لَكُمْ، فَإنّيَ لاَ أَدْرِي، لعَليّ لاَ أَلْقَاكُمْ بَعْدَ عَامي هَذَا، في مَوْقِفي هذا،
১. ‘হে জনগণ! তোমরা আমার কথা শোন! কারণ আমি হয়তো এরপর তোমাদের সঙ্গে এই স্থানে আর মিলিত হবনা’।[দারেমী হা/২২৭, ফিক্বহুস সীরাহ পৃঃ ৪৫৬, সনদ ছহীহ।]
أَيُهَا النَّاس، إنّ دِمَاءَكُمْ وَأمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عَليكُمْ حَرَامٌ إلى أنْ تَلْقَوْا رَبَّكُمْ، كَحُرمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا في شَهْرِ كُمْ هَذَا في بَلَدِكُم هَذَا
২. ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্ভ্রমকে তোমাদের পরস্পরের উপরে এমনভাবে হারাম, যেমনভাবে আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহর তোমাদের জন্য হারাম’ (অর্থাৎ এর সম্মান বিনষ্ট করা হারাম) ।
أَلَا كُلُّ شَيْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَيَّ مَوْضُوعٌ ، وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ ، وَإِنَّ أَوَّلَ دَمٍ أَضَعُ مِنْ دِمَائِنَا دَمُ ابْنِ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ ، كَانَ مُسْتَرْضِعًا فِي بَنِي سَعْدٍ فَقَتَلَتْهُ هُذَيْلٌ
৩. ‘শুনে রাখ, জাহেলী যুগের সকল কিছু আমার পায়ের তলে পিষ্ট হ’ল। জাহেলী যুগের সকল রক্তের দাবী পরিত্যক্ত হ’ল। আমাদের রক্ত সমূহের প্রথম যে রক্তের দাবী আমি পরিত্যাগ করছি, সেটি হ’ল রাবী‘আহ ইবনুল হারেছ-এর শিশু পুত্রের রক্ত; যে তখন বনু সা‘দ গোত্রে দুগ্ধ পান করছিল, আর হোযায়েল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিল’।
وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ ، وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ ، فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ
৪. “জাহেলী যুগের সূদপ্রথা পরিত্যক্ত হ’ল। আমাদের সূদ সমূহের প্রথম যে সূদ আমি পরিত্যক্ত বলে ঘোষনা দিচ্ছি সেটা হ’ল আববাস ইবনু আব্দিল মুত্ত¡ালিবের পাওনা সূদ। সূদের সকল প্রকার কারবার সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত করে দেওয়া হ’ল।”
فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ ، وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ ، فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ ، وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ،
৫. ‘তোমরা মহিলাদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে তাদেরকে হালাল করেছ। তাদের উপর তোমাদের প্রাপ্য হ’ল, তারা যেন তোমাদের বিছানা এমন কাউকে মাড়াতে না দেয়, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা সেটা করে, তবে তোমরা তাদের মৃদু প্রহার করবে, যা গুরুতর হবে না। আর তোমাদের উপরে তাদের প্রাপ্য হক হ’ল, তোমরা যেন তাদের জন্য সুন্দর রূপে খাদ্য ও পরিধেয়ের যোগান দাও।
وَقَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ ، كِتَابُ اللَّهِ ،
৬. ‘আর জেনে রাখ, আমি তোমাদের মাঝে রেখে যাচ্ছি এমন এক বস্তু, যা মযবুতভাবে ধারণ করলে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। আর সেটি হ’ল আল্লাহর কেতাব’।[মুসলিম হা/১২১৮, মিশকাত হা/২৫৫৫ ‘মানাসিক’ অধ্যায়।]
أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ لا نَبِيَّ بَعْدِي , وَلا أُمَّةَ بَعْدَكُمْ , أَلا فَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ , وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ , وَصُومُوا شَهْرَكُمْ , وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ طَيِّبَةً بِهَا أَنْفُسُكُمْ , وَأَطِيعُوا وُلاةَ أَمْرِكُمْ ، تَدْخُلُوا جُنَّةَ رَبِّكُمْ " .
৭. ‘হে জনগণ! শুনে রাখ আমার পরে কোন নবী নেই এবং তোমাদের পরে আর কোন উম্মাত নেই। অতএব তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর, রামাযান মাসের রোযা রাখো, সন্তুষ্ট চিত্তে তোমাদের মালের যাকাত দাও, তোমাদের প্রভুর গৃহে হজ্জ আদায় কর, তোমাদের শাসকদের আনুগত্য কর, এ সবের মাধ্যমে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ কর’।[ত্বাবারাণী, আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৭১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২৩৩।]
وَأَنْتُمْ تُسْأَلُونَ عَنِّي، فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُونَ؟ قَالُوا: نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ ، فَقَالَ: بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ ، يَرْفَعُهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى النَّاسِ اللَّهُمَّ ، اشْهَدْ ، اللَّهُمَّ ، اشْهَدْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ
৮. আর তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। তখন তোমরা কি বলবে? লোকেরা বলল, আমরা সাক্ষ্য দেব যে, আপনি সবকিছু পৌঁছে দিয়েছেন, দাওয়াতের হক আদায় করেছেন এবং উপদেশ দিয়েছেন’। অতঃপর তিনি শাহাদাত অঙ্গুলি মুবারক আসমানের দিকে উঁচু করে ও সমবেত জনমন্ডলীর দিকে নীচু করে তিনবার বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক’।[মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫।]
ফাযালাহ বিন ওবায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِالْمُؤْمِنِ؟ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَالْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ النَّاسُ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُجَاهِدُ مَنْ جَاهَدَ نَفْسَهُ فِى طَاعَةِ اللهِ وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ الْخَطَايَا وَالذُّنُوبَ
৯. ‘আমি কি তোমাদেরকে মুমিন সম্পর্কে খবর দিব না? সে ঐ ব্যক্তি যার হাত থেকে অন্যদের মাল ও জান নিরাপদ থাকে। আর মুসলিম সেই, যার যবান ও হাত থেকে অন্যেরা নিরাপদ থাকে। আর মুজাহিদ সেই, যে আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত করে এবং মুহাজির সেই, যে সকল প্রকার অন্যায় ও পাপকর্ম সমূহ পরিত্যাগ করে’। [ আহমাদ হা/২৪০০৪; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৮৬২; ছহীহাহ হা/৫৪৯।]
উক্ত কথাটি হযরত আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় অন্যভাবে এসেছে,
الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ ‘মুসলিম সেই, যার যবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে এবং মুহাজির সেই, যে আল্লাহর নিষেধ সমূহ পরিত্যাগ করে’।[ বুখারী হা/১০; মিশকাত হা/৬।]
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আরাফাতের ময়দানে উটনীর পিঠে সওয়ার অবস্থায় প্রদত্ত ভাষণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
أَلاَ وَإِنِّى فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ وَأُكَاثِرُ بِكُمُ الأُمَمَ فَلاَ تُسَوِّدُوا وَجْهِى أَلاَ وَإِنِّى مُسْتَنْقِذٌ أُنَاسًا وَمُسْتَنْقَذٌ مِنِّى أُنَاسٌ فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُصَيْحَابِى. فَيَقُولُ إِنَّكَ لاَ تَدْرِى مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ-
১০. ‘মনে রেখ! আমি তোমাদের সকলের আগেই হাউয কাউছারে পৌঁছে যাব। আর আমি অন্য সকল উম্মতের মধ্যে তোমাদের আধিক্য নিয়ে গর্ব করব। অতএব তোমরা আমার চেহারাকে কালেমালিপ্ত করো না। মনে রেখ! আমি অনেককে সেদিন মুক্ত করব এবং অনেকে সেদিন আমার থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তখন আমি বলব, ‘হে আমার প্রতিপালক! এরা তো আমার সাথী। তিনি বলবেন, তুমি কি জানো না তোমার পরে কী করেছিল’ (ইবনু মাজাহ হা/৩০৫৭)।
হযরত সাহল বিন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে, এ জওয়াব পাওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করবেন, سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِى ‘দূর হও দূর হও! যে ব্যক্তি আমার পরে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছ’।[ বুখারী হা/৬৫৮৩-৮৪; মুসলিম হা/২২৯৭ (৩২); মিশকাত হা/৫৫৭১।]
১১. একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে, أَلاَ إِنَّ الْمُسْلِمَ أَخُو الْمُسْلِمِ فَلَيْسَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ مِنْ أَخِيهِ شَىْءٌ إِلاَّ مَا أَحَلَّ مِنْ نَفْسِهِ ‘মনে রেখ! এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। অতএব কোন মুসলমানের জন্য তার ভাই-এর কোন বস্ত্ত হালাল নয় কেবল অতটুকু ব্যতীত যতটুকু সে তার জন্য হালাল করে’ (তিরমিযী হা/৩০৮৭)।
হযরত ইবনু আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বর্ণনায় এসেছে, لاَ يَحِلُّ لاِمْرِئٍ مِنْ مَالِ أَخِيهِ إِلاَّ مَا أَعْطَاهُ مِنْ طِيبِ نَفْسٍ وَلاَ تَظْلِمُوا ‘কোন ব্যক্তির মাল তার ভাই-এর জন্য হালাল নয়। যতক্ষণ না সে তাকে খুশী মনে তা দেয়। আর তোমরা যুলুম করো না...।[বায়হাক্বী হা/১১৩০৪; ইরওয়া হা/১৪৫৯-এর আলোচনা ১/২৮১, সনদ হাসান।]
১২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও এরশাদ করেন,
وَاعْلَمُوا أَنَّ الْقُلُوبَ لاَ تَغِلُّ عَلَى ثَلاَثٍ: إِخْلاَصِ الْعَمَلِ للهِ، وَمُنَاصَحَةِ أُولِى الأَمْرِ، وَعَلَى لُزُومِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ، فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيطُ مِنْ وَرَائِهِمْ-
জেনে রেখ, তিনটি বিষয়ে মুমিনের অন্তর খিয়ানত করে না : (ক) আল্লাহর উদ্দেশ্যে এখলাসের সাথে কাজ করা। (খ) শাসকদের জন্য কল্যাণ কামনা করা এবং (গ) মুসলমানদের জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরা। কেননা তাদের দো‘আ তাদেরকে পিছন থেকে (শয়তানের প্রতারণা হ’তে) রক্ষা করে’ (দারেমী হা/২২৭, সনদ ছহীহ)। অর্থাৎ মুমিন যতক্ষণ উক্ত তিনটি স্বভাবের উপরে দৃঢ় থাকবে, ততক্ষণ তার অন্তরে খিয়ানত বা বিদ্বেষ প্রবেশ করবে না। যা তাকে ইলম প্রচারের কাজে বাধা দেয়। আর তিনিই হবেন কামেল মুমিন’ (মির‘আত হা/২২৯-এর ব্যাখ্যা)।
ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, لُزُومِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ অর্থ আক্বীদা ও সৎকর্মে সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং জুম‘আ, জামা‘আত ও অন্যান্য বিষয়ে সকলে অংশগ্রহণ করা। فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيطُ مِنْ وَرَائِهِمْ অর্থ তাদের দো‘আ তাদেরকে শয়তানী প্রতারণা এবং পথভ্রষ্টতা হ’তে পিছন থেকে তাদের রক্ষা করে।
এর মধ্যে ধমকি রয়েছে, যে ব্যক্তি জামা‘আত তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে বেরিয়ে যাবে, সে ব্যক্তি জামা‘আতের বরকত ও মানুষের দো‘আ থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়াও এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা অধিক উত্তম বিচ্ছিন্ন থাকার চাইতে’।
কোন কোন বর্ণনায় مَنْ وَرَائَهُمْ এসেছে। অর্থাৎ তাদের পিছনে যারা আছে, তারা তাকে রক্ষা করে। ত্বীবী বলেন, এর দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতকে বুঝানো হয়েছে। যাদের দো‘আ তাদের পরবর্তী বংশধরগণকেও পথভ্রষ্টতা হ’তে রক্ষা করে’ (মিরক্বাত, শরহ মিশকাত হা/২২৮-এর ব্যাখ্যা)।
ইসলামের পূর্ণাঙ্গতার সনদ নাযিল :
-----------------------------------
সারগর্ভ ও মর্মস্পর্শী বিদায়ী ভাষণ শেষে আল্লাহর পক্ষ হ’তে নাযিল হয় এক ঐতিহাসিক দলীল, ইসলামের পূর্ণতার সনদ, যা ইতিপূর্বে নাযিলকৃত কোন আসমানী ধর্মের জন্য নাযিল হয়নি।
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপরে আমার নে‘মতকে পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ-৩)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যবানে পাকে এই আয়াত শ্রবণ করে হযরত ওমর ফারূক রাদিয়াল্লাহু আনহু কেঁদে উঠলেন। অতঃপর লোকদের প্রশ্নের জওয়াবে বললেন, ‘পূর্ণতার পরে তো কেবল ঘাটতিই এসে থাকে’।[আর-রাহীক্ব পৃঃ ৪৬০; আল-বিদায়াহ ৫/২১৫।]
বস্তুতঃ এই আয়াত আল্লাহর প্রিয় নবীর ইন্তিকালের আভাস, এ আয়াত নাযিলের মাত্র ৮১ দিন পর তিনি ওফাত লাভ করেন। এই আয়াত প্রসঙ্গে জনৈক ইহুদী পন্ডিত হযরত ওমর ফারূক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, عَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، أَنَّ الْيَهُودَ، قَالُوا لِعُمَرَ: إِنَّكُمْ تَقْرَءُونَ آيَةً، لَوْ أُنْزِلَتْ فِينَا لَاتَّخَذْنَا ذَلِكَ الْيَوْمَ عِيدًا، যদি এরূপ আয়াত আমাদের উপর নাযিল হ’ত, তাহ’লে আমরা ঐদিনটিকে ঈদের দিন হিসাবে উদযাপন করতাম’।
জওয়াবে হযরত ওমর ফারূক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, فقال عمر: قد علمت اليوم الذي أنزلت، والمكان الذي أنزلت فيه، نزلت في يوم الجمعة ويوم عرفة، وكلاهما بحمد الله لنا عيد. ঐদিনে একটি নয়, বরং দু’টি ঈদ একসঙ্গে উদযাপন করেছিলাম।- (১) ঐদিন ছিল শুক্রবার, যা আমাদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন (২) ঐদিন ছিল ৯ই যিলহাজ্জ আরাফাহর দিন। যা হ’ল উম্মতের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে বার্ষিক ঈদের দিন’।[তিরমিযী হা/৩০৪৪, সনদ ছহীহ।]
মিনায় ২য় ভাষণ:
===========
সুনানে আবু দাঊদের বর্ণনা অনুযায়ী ১০ই যিলহাজ্জ কুরবানীর দিন সকালে সূর্য উপরে উঠলে [আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৬৭১।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি সাদা-কালো মিশ্রিত বাহনে সওয়ার হয়ে (কংকর নিক্ষেপের পর) জামরায়ে আক্বাবায় এক ভাষণ দেন। ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, এদিনে তিনি এরশাদ করেন,
"لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ، فَإِنِّي لَا أَدْرِي لَعَلِّي لَا أَحُجُّ بَعْدَ حَجَّتِي هَذِهِ"
(১) হে জনগণ! তোমরা আমার নিকট থেকে হজ্জের নিয়ম-কানূন শিখে নাও। কারণ আমি এ বছরের পর আর হজ্জ করতে পারব না’।[মুসলিম, মিশকাত হা/২৬১৮।] তিনি আরও এরশাদ করেন,
إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللَّه السَّماواتِ والأَرْضَ: السَّنةُ اثْنَا عَشَر شَهْرًا، مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُم: ثَلاثٌ مُتَوَالِيَاتٌ: ذُو الْقعْدة، وَذو الْحجَّةِ، والْمُحرَّمُ، وَرجُب مُضَر الَّذِي بَيْنَ جُمادَى وَشَعْبَانَ
২. ‘কালচক্র আপন রূপে আবর্তিত হয়, যেদিন থেকে আসমান ও যমীন সৃষ্টি হয়েছে। বছর বারো মাসে হয়। তারমধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। তিনটি পরপর, যুলক্বা‘দাহ, যুলহিজ্জাহ ও মুহাররম এবং রজব মুদার’ [মুদার গোত্রের দিকে সম্পর্কিত করে ‘রজবে মুদার’ বলা হয়েছে।] হ’ল জুমাদা ও শা‘বানের মধ্যবর্তী।[বুখারী হা/১৭৪১ ‘মিনায় ভাষণ’ অনুচ্ছেদ; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৫৯।]
৩. অতঃপর তিনি এরশাদ করেন,
أَيُّ شَهْرٍ هَذَا؟ قلْنَا: اللَّه ورسُولُهُ أَعْلَم، فَسكَتَ حَتَّى ظنَنَّا أَنَّهُ سَيُسمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ، قَالَ: ্রأَليْس ذَا الْحِجَّةِ؟গ্ধ قُلْنَا: بلَى، قَالَ: فأَيُّ بلَدٍ هَذَا؟ قُلْنَا: اللَّه وَرسُولُهُ أَعلمُ، فَسَكَتَ حتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سيُسمِّيهِ بغَيْر اسْمِهِ، قَالَ: أَلَيْسَ الْبَلْدةَ؟ قُلْنا: بلَى، قَالَ: فَأَيُّ يَومٍ هذَا؟ قُلْنَا: اللَّه ورسُولُهُ أَعْلمُ، فَسكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّه سيُسمِّيهِ بِغيْر اسمِهِ، قَالَ: أَلَيْسَ يَوْمَ النَّحْر؟ قُلْنَا: بَلَى، قَالَ: فإِنَّ دِماءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وأَعْراضَكُمْ عَلَيْكُمْ حرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، في بَلَدِكُمْ هَذا، في شَهْرِكم هَذَا،
এটি কোন মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক অবগত। অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম হয়ত তিনি এর পরিবর্তে অন্য কোন নাম রাখবেন। তিনি বললেন, এটা কি যুলহিজ্জাহ নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটি কোন শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক অবগত। অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম হয়ত তিনি এর পরিবর্তে অন্য কোন নাম রাখবেন। তিনি বললেন, এটা কি মক্কা নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আজ কোন দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক অবগত। অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম হয়ত তিনি এর পরিবর্তে অন্য কোন নাম রাখবেন। তিনি বললেন, আজ কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, জেনে রেখ, তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল-সম্পদ, তোমাদের ইয্যত তোমাদের উপর এমনভাবে হারাম যেমনভাবে তোমাদের আজকের এই দিন, এই শহর, এই মাস তোমাদের জন্য হারাম (অর্থাৎ এর সম্মান বিনষ্ট করা হারাম)।
وَسَتَلْقَوْنَ ربَّكُم فَيَسْأَلُكُمْ عَنْ أَعْمَالِكُمْ، أَلا فَلا تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ،
৪. ‘সত্বর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে। অতঃপর তিনি তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। সাবধান! আমার পরে তোমরা পুনরায় ভ্রষ্টতার দিকে ফিরে যেয়ো না এবং একে অপরের গর্দান মেরো না বা হত্যা করোনা।
أَلا لِيُبَلِّغ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ، فلَعلَّ بعْضَ مَنْ يَبْلغُه أَنْ يَكُونَ أَوْعَى لَه مِن بَعْضِ مَنْ سَمِعه، ثُمَّ قال: أَلا هَلْ بَلَّغْتُ؟ أَلا هَلْ بلَّغْتُ؟ قُلْنا: نَعَمْ، قَالَ: اللَّهُمَّ اشْهَدْ
৫. ‘ওহে জনগণ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? লোকেরা বলল, হাঁ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। উপস্থিতগণ যেন অনুপস্থিতগণকে কথাগুলি পৌঁছে দেয়। কেননা উপস্থিত শ্রোতাদের অনেকের চাইতে অনুপস্থিত যাদের কাছে এগুলি পৌঁছানো হবে, তাদের মধ্যে অনেকে অধিক বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছে’।[বুখারী হা/১৭৪১ ‘মিনায় ভাষণ’ অনুচ্ছেদ; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৫৯।]
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, উক্ত ভাষণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও এরশাদ করেন,
أَلاَ لاَ يَجْنِى جَانٍ إِلاَّ عَلَى نَفْسِهِ لاَ يَجْنِى وَالِدٌ عَلَى وَلَدِهِ وَلاَ مَوْلُوْدٌ عَلَى وَالِدِهِ
৬. ‘মনে রেখ, অপরাধের শাস্তি অপরাধী ব্যতীত অন্যের উপরে বর্তাবে না। মনে রেখ, পিতার অপরাধের শাস্তি পুত্রের উপরে এবং পুত্রের অপরাধের শাস্তি পিতার উপরে বর্তাবে না’।
(৭) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، خَطَبَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ ، فَقَالَ : إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ يَئِسَ أَنْ يُعْبَدَ بِأَرْضِكُمْ وَلَكِنَّهُ رَضِيَ أَنْ يُطَاعَ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِمَّا تَحْقِرُونَ مِنْ أَعْمَالِكُمْ ، فَاحْذَرُوا
মনে রেখ, শয়তান তোমাদের এই শহরে পূজা পাওয়া থেকে চিরদিনের মত নিরাশ হয়ে গেছে। তবে যে সব কাজগুলিকে তোমরা তুচ্ছ মনে কর, সেসব কাজে তার আনুগত্য করা হবে, আর তাতেই সে খুশী থাকবে’।[তিরমিযী হা/২১৫৯; ইবনু মাজাহ হা/২৭৭১ ‘হজ্জ’ অধ্যায়; মিশকাত হ/২৬৭০।] যেমন মিথ্যা, প্রতারণা, ঝগড়া-মারামারি ইত্যাদি। যা পরবর্তীদের মধ্যে ঘটেছিল (মির‘আত)। হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে وَلَكِنْ فِى التَّحْرِيشِ بَيْنَهُمْ ‘কিন্তু শয়তানী প্ররোচনা বাকী থাকবে’।[ মুসলিম হা/২৮১২; মিশকাত হা/৭২। ]
এদিন তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে আরও এরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ , إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوا أَبَدًا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ
‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্তু রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা তা শক্তভাবে ধারণ করে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। একটি আল্লাহর কিতাব, অপরটি তাঁর নবীর সুন্নাত’।[মুওয়াত্ত¡া মালেক, মিশকাত হা/১৮৬।]
খুম কূয়ার নিকটে ভাষণ: হজ্জ থেকে ফেরার পথে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী ‘খুম’ নামক কূয়ার নিকটে যাত্রাবিরতি করে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। যাতে তিনি নবী পরিবারের উচ্চ মর্যাদা ব্যাখ্যা করেন। অতঃপর হযরত আলীর হাত ধরে এরশাদ করেন, مَنْ كُنْت مَوْلَاهُ فِعْلِيٌّ مَوْلاهُ ‘আমি যার বন্ধু, আলীও তার বন্ধু’।[আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৬০৮২, ছহীহাহ হা/১৭৫০।]
وصلى الله وسلم على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه اجمعين
Wednesday, August 29, 2018
নামাযে নিমস্বরে আমীন বলা সুন্নত
আমীন সম্পর্কেও কিছু লোক বাড়াবাড়ি করে। তারা বলে নামাযে আমীন জোরে বলতে হবে। আস্তে বলা সুন্নতের পরিপন্থী। তাদের একথা সঠিক নয়। হাদীস শরীফ, অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ী’র আমল দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, আমীন আস্তে বলাই সুন্নত।
নিমস্বরে আমীন বলা অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমল
ইমাম ইবনে জারীর তাবারী র. (মৃ.৩১১ হি.) তাঁর তাহযীবুল আছার গ্রন্থে বলেছেন,
وروي ذلك عن ابن مسعود وروي عن النخعي والشعبى وابراهيم التيمى كانوا يخفون بآمين والصواب ان الخبر بالجهر بها والمخافتة صحيحان وعمل بكل من فعليه جماعة من العلماء وان كنت مختارا خفض الصوت بها إذكان اكثر الصحابة والتابعين على ذلك . (شرح البخاري لابن بطال المتوفى ৪৪৯ه باب جهر المأموم بالتأمين، والجوهر النقى
অর্থাৎ ইবনে মাসউদ রা., ইবরাহীম নাখায়ী র. শা’বী র. ও ইবরাহীম তায়মী র. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা আমীন আস্তে বলতেন। সঠিক কথা হলো আমীন আস্তে বলা ও জোরে বলার উভয় হাদীসই সহীহ। এবং দুটি পন্থা অনুযায়ী এক এক জামাত আলেম আমলও করেছেন। যদিও আমি আস্তে আমীন বলাই অবলম্বন করি, কেননা অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ী এ অনুযায়ীই আমল করতেন। (দ্রঃ শারহুল বুখারী লিইবনে বাত্তাল,মৃত্যু ৪৪৯হিজরী; আল জাওহারুন নাকী, ২খ, ৫৮পৃ,)
ইবনে জারীর র. এর এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হলো যে, অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমল ছিল আমীন আস্তে বলা। তিনি নিজেও একজন বিখ্যাত মুহাদ্দিস হওয়া সত্ত্বেও আস্তে আমীন বলাকেই অবলম্বন করেছেন।
মদীনাবাসীর আমল:
মদীনা শরীফে ইমাম মালেক র. এর নিবাস ছিল। তিনিও ফতোয়া দিয়েছেন,
ويخفي من خلف الإمام آمين. المدونة-فى الركوع والسجود
অর্থাৎ মুকতাদী আস্তে আমীন বলবে। (আল-মুদাওয়ানা, ১খ.৭১ পৃ.)
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা আহমদ আদ দরদের র. লিখেছেন,
وندب الاسرار به اى بالتأمين لكل من طلب منه.
অর্থাৎ ‘মুকতাদীর জন্য আস্তে আমীন বলাই মুস্তাহাব।’
কুফাবাসীর আমল:
এমনিভাবে কূফায় পনের শত সাহাবী বসবাস করতেন। এই কূফার সাধারণ আমল ছিল আমীন আস্তে বলা। ইবনে মাসউদ, তাঁর শিষ্যবর্গ, ইবরাহীম নাখায়ী, ইবরাহীম তায়মী ও শা‘বী প্রমুখ কূফার বড় বড় ফকীহ ও মুহাদ্দিস সকলে আমীন আস্তে বলার পক্ষপাতি ছিলেন।
মজার ব্যাপার হলো ওয়াইল রা. এর মাধ্যমে বর্ণিত জোরে আমীন বলার হাদীসটি সুফিয়ান ছাওরী রা. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সুফিয়ান ছাওরী ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীস অর্থাৎ হাদীস সম্রাট। অথচ তিনি নিজেও ছিলেন আস্তে আমীন বলার পক্ষে।
বোঝার সুবিধার্থে এখানে আমরা আলোচনাকে দুটি ভাগে ভাগ করব। এক. ইমামের আস্তে আমীন বলা। দুই. মুকতাদীর আস্তে আমীন বলা।
Monday, August 27, 2018
যে বক্তব্যের কারণে গ্রেপ্তার হলেন কাবা শরীফের ৷৷
ইমাম ও খতীব, শাইখ সালেহ আত্ তালিব হাফিযাল্লাহ্
'
তিনিই সর্বপ্রথম গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি যিনি একই সাথে কা'বা শরীফের ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ৷
তিনি তাঁর প্রদত্ব বয়ানে অশ্লীলতা ও ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ বস্তুগুলো থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব বলেন, এবং যারা বেহায়াপনার প্রচার করছে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করার আদেশ করেন,
যদিও তিনি তাঁর সব গুলো কথা অজ্ঞাত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন কিন্তু যাদের বুঝার তারা বুঝে নিয়েছেন তিনি এই কথা গুলো কাকে সম্ভোধন করে বলেন নাই।
নিম্নে সেই খুৎবা'র বঙ্গানুবাদ যার পর পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ৷
তিনি বলেন, মুনাফেকরা তাদের মঞ্চে বলে, তোমরা কুরআনের মজলিসকে বর্জন করো ৷ আমরা আমাদের মসজিদের মিম্বার থেকে স্পষ্ট ভাষায় তাদেরকে বলছি, হে মুসলমানরা তোমরা মুনাফেক ও বেইমানদের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো ৷
তোমরা আল্লাহর নাফরমান এবং যারা এই সমাজের মধ্যে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে চালু করছে তাদেরকে বয়কট করো ৷ আমরা ঐ কথায় বলব যা আমাদের পূর্বসূরী বড় বড় উলামায়ে কেরামগণ বলে গেছেন।
তাঁরা বলেছেন, তোমরা যে কোন ধরণের গোনাহের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো এবং ঐ সমস্ত মানুষদের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো যাদের কর্ম পদ্ধতী সন্দেহযুক্ত, এবং যারা নারীদেরকে রাস্তায় বের করে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুমতি দেয়, যারা নারীদেরকে উলঙ্গপনার দিকে আহবান করে, যারা নারী-পুরুষের অবাদে মেলামেশার দিকে উৎসাহিত করে বর্তমান সমাজে ফাসাদ শুরু করেছে, তাদেরকে বয়কট করুন ৷
যারা নেশাযুক্ত পানীয়কে বৈধতা দান করে তাদেরকে বৈকট করো ৷
আপনারা পরিপূর্ণভাবে গান-বাজনা এবং কমেডি, কৌতুক ও সিনেমার অনুষ্ঠানকে বয়কট করুন ৷ যদিও যারা এই সিনেমা ও কমেডি চালু করেছে তারা এটাকে নিছক বিনোদন মনে করে ৷
অথচ, এটা কেবল বিনোদন নয় বরং এই সিনেমার অনুমোদন দ্বারা একমাত্র উদ্দেশ্য হল পশ্চিমা চিন্তা-চেতনাকে লালন করা এবং সমাজের রন্ধে রন্ধে পশ্চিমা আদর্শ ও নীতিকে ঢুকিয়ে দেওয়া ৷ যে নাচ গানের এবং কমেডি নাটক সিনেমার অনুমোদন একেবারে, ইসলামী নেই ৷ ইসলামী নীতিতে এই কাজ হারাম, ইসলাম এর অনুমোদন প্রদান করে না ৷
তারা অশ্লীলতাকে বিনোদন নামের পোষাক পরিয়ে এবং বেহায়াপনাকে মুক্তচিন্তা-চেতনার চাদর পরিয়ে উপস্থাপন করছে। অথচ, এই বিনোদন দ্বারা কেবল এটাই উদ্দেশ্য যেন, তারা যুবক যুবতীদেরকে নাচ-গান, বেহায়াপনা ও অশ্লিলতা ও ইখতিলাত অর্থাৎ অবাদ মেলামেশার দিকে মাজনুন তথা পাগলপারা বানিয়ে দিতে পারে ৷
তাদের এই অসৎ উদ্যেগ পবিত্র এই ভূমির জন্য লজ্জাজনক বিষয়, এবং এই পবিত্র ভূমিকে লাঞ্চিত করার শামিল, তাদের এই অসৎ উদ্যেগ ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকেত, এক সময় আসবে যখন এই বেহায়াপনায় 'কুদওয়াতুন লিশ্শাবাব' তথা যুবকদের উত্তম মডেল হিসাবে স্থান পাবে ৷
হে সীমাহীন চরমপন্থীরা!
তোমরা জনগণের ধন সম্পদকে অন্যায়ভাবে, অহেতুক পাপ কাজে খরচ করছো, এতে না আছে জনগণের কোন রকম উপকারের ছিটাফোঁটা, না আছে জনগণের কল্যান ৷
হে চরমপন্থীরা!
যদি তোমরা জনগনের পয়সাকে পাপকাজে খরচ করা বন্ধ না করো, তাহলে একদিন আসবে যেদিন এই অপরাদ ও পাপ তোমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে এবং তোমাদের জন্য বড়ই আফসোসের কারণ হবে, ফলে তোমরা পরাজয় বরণ করবে ৷
হ্যাঁ, অচিরেই তোমাদেরকে শক্তি এবং আদর্শের পরাজয় হবে ৷ তোমাদেরকে তারাই পরাজিত করবে যারা সর্বদায় দ্বীনের উপর অটল থাকে, তারাই একদিন তোমাদের বিনোদন নামক বেহায়পানা ও অশ্লীলতাকে ময়লা আবর্জনার ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করবে, তাদের নিজেদের উত্তম আদর্শ এবং সঠিক নিয়ত ও ইসলামী আক্বীদার মাধ্যমে ৷ অচিরেই তোমাদের অশ্লীলতার মঞ্চেকে কুরআনের ধারকবাহকগণ আদর্শের যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করবে ৷
অচিরেই তোমাদেরকে পরাজিত করবে ঐ আল্লাহুআকবার ধ্বনীর আওয়াজ যা দিবারাত্রি পাঁচ বার কানে ভেসে আসে, এবং আমাদের অন্তরে এই পবিত্র আওয়াজের বাতাস প্রবাহিত হয়, ও চক্ষু শীতল হয় ৷ এরপর আরোও বলেছেন তবে ইন্টারনেটে তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার কারণ হিসাবে এতটুকু ভাষনেই উল্লেখ করা হয়েছে ৷
দুআ করি, আল্লাহ শাইখকে যে কোন বিপদের হাত থেকে হিফাযত করুন, আমীন।
ফারুকী হত্যা: কয়েকজনের নাম পেয়েছে সিআইডি
টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নূরুল ইসলাম ফারুকী খুনের চার বছর পর হত্যাকাণ্ডে জড়িত কয়েকজনের নাম পাওয়ার কথা জানিয়েছে সিআইডি।
গ্রেপ্তার এক জঙ্গির আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তাদের নাম জানা গেছে বলে জানিয়েছে মামলাটির বর্তমান তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।
হাদিসুর রহমান সাগর নামে ওই ব্যক্তির জবানবন্দির ভিত্তিতে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলছেন, ইসলাম সম্পর্কে ব্যাখ্যা নিয়ে বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় জঙ্গিরা।
২০১৪ সালের ২৭ অগাস্ট ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারের ভাড়া বাড়ির দোতলায় মাওলানা ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত।
ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুকী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতেরও কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন।
এ মামলার তদন্তভার প্রথমে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে থাকলেও পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দায়িত্ব পায়।
নুরুল ইসলাম ফারুকী (ফাইল ছবি)
মোল্যা নজরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর দায়িত্ব নেওয়ার পর তদন্তে সাগরসহ বেশ কয়েকজনের নাম পান তারা। পরে খোঁজ নিয়ে জানেন, সাগর অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
“তখন আমরা ফারুকী হত্যা মামলায় তাকে অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডে আনার পর জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দেয়।”
এরপর গত ৩০মে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সাগর। ফারুকী হত্যামামলায় এখন পর্যন্ত সাগরই একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি বলে সিআইডি জানায়।
মোল্যা নজরুল বলেন, “হত্যাকারীরা মনে করছিল, ফারুকী বিভিন্ন মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহ সম্পর্কে ভুল ব্যাখা দিতেন। তাছাড়া আল্লাহ এবং হাদিস সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য দিতেন, যা কোনোভাবেই কোরান-হাদিস সমর্থন করে না বলে তাদের মত।
“এজন্য জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। এ কারণে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে সাগর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে।”
সাগরের দাবি, হত্যাকাণ্ডের সময় ফারুকীর বাসার নিচে ছিলেন তিনি। জেএমবির অন্য সদস্যরা বাসার ভেতর ঢুকে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
মোল্যা নজরুল বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে ১০ থেকে ১২ জন জড়িত ছিল বলে সাগর জানালেও সাতজনের নাম জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে। তার মধ্যে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া জামাই ফারুকও রয়েছেন।
সাগরের স্বীকারোক্তি উদ্ধৃত করে মোল্যা নজরুল বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন জেএমবির একটি বৈঠক টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর এলাকায় হয়েছিল। সেখানে একজন সাগরকে পরদিনের ‘একটি অভিযানের জন্য’ প্রস্তুত থাকতে বলেছিল।
সিআইডি কর্মকর্তাদের ধারণা, সাগর জেএমবির বড় নেতাই ছিলেন। রাজশাহী অঞ্চলের দায়িত্ব ছিল তার।
মোল্যা নজরুল জানান, “যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেপ্তার হওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”
Sunday, August 26, 2018
শতাব্দির মহান সংস্কারক গাউসে জমান, মুর্শিদে বরহক্ব, হযরতুলহাজ্ব, আল্লামা, হাফেজ, ক্বারী, সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহঃ)'র কৃতিত্বঃ
শতাব্দির মহান সংস্কারক গাউসে জমান, মুর্শিদে বরহক্ব, হযরতুলহাজ্ব, আল্লামা, হাফেজ, ক্বারী, সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহঃ)'র কৃতিত্বঃ
১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ১৩৪০ হিজরির দিকে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশস্থ হাজারা জেলার দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফে কুতুবুল আউলিয়া আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহঃ)'পlর ঘরে এই মহান সাধক জন্মগ্রহণ করেন। শুধু তাঁর পিতা সিরিকোটি (রহ.) নন, বরং তাঁর আম্মাজান সৈয়্যদা খাতুন (রহ.)ও একজন সাহেবে কাশ্ফ অলিআল্লাহ্ হিসেবে সমগ্র সিরিকোট অঞ্চলে মশহুর ছিলেন। আব্বা-আম্মা উভয় দিক থেকেই তিনি ইমাম হোসাইন (রা.)’র বংশ ধারায় বিখ্যাত মাশওয়ানী’ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
#১৯৪২ সালে হযরত সিরিকোটি (রহঃ)'র সাথে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামে শুভাগমন করেন এবং মাতৃগর্ভের ওলী যুবক তৈয়্যব শাহ (রহঃ) আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিতে তারাবীহ নামাযে ইমামতি করেন।
#১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামের রেয়াজুদ্দিন বাজার শেখ সৈয়্যদ ক্লথ স্টোরে চলমান খতমে গাউসিয়া মাহফিলে তাঁকে আব্বা হুযূর কর্তৃক জনসম্মুখে খেলাফত দেয়া হয় এবং আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’র সংবিধান সংশোধনী কমিটিতে তাঁকে প্রধান করে এ বছরই তাঁকে আনজুমান’র জিম্মাদারীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষিক্ত করা হয়।
#১৯৬৮ সনে ঢাকার মুহাম্মদপুরে প্রতিষ্ঠা করেন, ‘কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলীয়া মাদ্রাসা। এটি আজ রাজধানীতে সূফিবাদী সুন্নি মুসলমানদের একমাত্র অবলম্বন।
#১৯৭৪ সালে তিনি এক ঐতিহাসিক নির্দেশ প্রদান করেন যে, পবিত্র জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবীর ﷺ উদযাপনের। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিরোধী ষড়যন্ত্র যখন এদেশের সুন্নিয়তের ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল- তখন এর আবেদনকে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌছিয়ে দিয়ে ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব হিসেবে -‘জশ্নে জুলুছ’ ছিল এক যুগান্তকারী প্রদেক্ষেপ।
#১৯৭৫ সনে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন হালিশহর তৈয়্যবিয়া (ডিগ্রী) মাদ্রাসা ও মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া হাফেজিয়া, কালুরঘাট, চট্টগ্রাম।
#১৯৭৫ সনে পাকিস্তান, করাচীর আওরঙ্গী টাউনেও প্রতিষ্ঠা করেন, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া করাচী।
#১৯৭৬ সনে চন্দ্রঘোনা তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া (ডিগ্রী) মাদরাসা, গাউসিয়া তৈয়্যবিয়া কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম, মাদরাসা-এ মুহাম্মদিয়া তৈয়্যবিয়া, ফরিদগঞ্জ , মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া সুন্নিয়া, ভৈরব, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া সসুন্নিয়া, মমাদার্শা, হাটহাজারী, চন্দনাইশ এলাহাবাদ আহমদিয়া সুন্নিয়া ফাজিল মাদরাসাসহ বাংলাদেশ, বার্মা, পাকিস্তান বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পৃষ্টপোষক করেন যা তাঁর ‘সাচ্চা আলেম’ তৈরীর আন্দোলনের মহাসড়কে মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
#১৯৭৬ এর ১৬ ডিসেম্বর তারিখে তিনি বাংলা ভাষায় সুন্নিয়াত ভিত্তিক সাহিত্য প্রকাশনার উপর গুরুত্বারোপ করে মাসিক ‘তরজুমান এ আহলে সুন্নাত’ প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং জানুয়ারি ১৯৭৭ থেকে আনজুমান থেকে এ প্রকাশনার যাত্রা শুরু হয় এবং পরবর্তীতে নিবন্ধন লাভের পর অদ্যাবধি সুন্নিয়তের শীর্ষস্থানীয় মাসিক প্রকাশনার ক্ষেত্রে এখনো প্রধান এবং প্রাচীনতম এই মাসিক তরজুমান।
#১৯৭৯ সালে হুজূর ক্বিবলা ২২ জন পীরভাইসহ যিয়ারতের উদ্দেশে গাউসে পাক হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ)'র দরবারে উপস্থিত হন। সেখানে অবস্থানকালে একদিন রাত প্রায় ১২টার পর হুজুর ক্বিবলা আকস্মিকভাবে আনজুমানের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ্ব মুহাম্মদ জাকারিয়া সাহেবকে ডেকে বললেন- মাওলানা জালালুদ্দীনকো বুলাইয়ে। তিনি অধ্যক্ষকে নিয়ে হুজূর ক্বিবলার সামনে উপস্থিত হলে হুজূর কেবলা (রহঃ) সকলের উপস্থিতিতে এরশাদ করলেন-
“আভী আভী হুজূর গাউসে পাক শাহেনশাহে বাগদাদ (রঃ) কি তরফ্ছে অর্ডার হুয়া হ্যায় আলমগীর খানক্বাহ্ শরীফ বানানা হ্যায়, আউর মাজমুয়ায়ে ছালাওয়াতে রাসূল ﷺ ছাপওয়ানা হ্যায়, আউর ইয়ে বাত ভা-য়ূঁকো ছমঝা দিজিয়ে’।
অর্থাৎ: এ মাত্র হুজুর গাউছে পাক শাহেনশাহে বাগদাদ (রঃ)'র পক্ষ থেকে নির্দেশ এসেছে আলমগীর খানক্বাহ্ শরীফ তৈরি করতে হবে এবং মাজমুয়ায়ে ছালাওয়াতে রাসূল ﷺ ছাপাতে হবে; আর এ নির্দেশ ভাইদেরকে বুঝিয়ে দিন। তখন হুজূর কেবলা (রঃ)'র নির্দেশে বিষয়টি অধ্যক্ষ সাহেব ভাইদেরকে বুঝিয়ে দিলেন এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম জামেয়ার পাশে নির্মাণ করা হয় আলমগীর খানকা-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া। যা আজ ত্বরিকতপন্থীদের প্রশান্তির স্থান আর আউলিয়ায়ে কেরামগণের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে। আর হুজুর কেবলার জীবদ্দশায় বিরল তাৎপর্যপূর্ণ ৩০ পারা বিশিষ্ট দরূদ গ্রন্থ মাজমুয়ায়ে ছালাওয়াতে রাসূল ﷺ এর ২২ পারা পর্যন্ত উর্দু অনুবাদ নিজ তত্ত্বাবধানেই সম্পন্ন করেন- যা পরবর্তীতে বর্তমান হুজুর কিবলা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী কর্তৃক ৩০ পারা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়ে বর্তমানে বঙ্গানুবাদসহ প্রকাশিত হচ্ছে।
#১৯৮৬ সালে ত্বরিকতের ভিত্তিকে মজবুত ও সুন্নিয়তের প্রচার প্রসারকে শক্তিশালী করার লক্ষে গাউসে পাকের নামানুসারে আনজুমানের সহযোগী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। বর্তমানে এই সংগঠনেরর ঝান্ডা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ব্রাজিল, আরব-আমিরাতসহ পৃথিবীর প্রায় অর্দশতাধিক দেশে উড়ছে আর বাংলাদেশে ত্বরিকত ভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ।
#১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুন মোতাবেক ১৫ জিলহজ্ব ১৪১৩ হিজরি সোমবার সকালে দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফে মুর্শিদে বরহক, গাউসে জামান, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) ইন্তেকাল করেন। তাঁকে সেখানেই দাফন করা হয় পরদিন মঙ্গলবার। তাঁর ঐতিহাসিক জানাজায় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী গওহর আইয়ুবসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী বিশেষতঃ খ্যাতনামা ওলামা-মাশায়েখগণ।
#আগামীকাল সোমবার ১৫ যিলহজ্ব জামেয়ার ময়দানে এই মহান দ্বীনি সংস্কারকের পবিত্র ওরস মোবারকে উপস্থিত হয়ে আল্লাহ তাআলা যেন সবাইকে ওনার ফয়ুজাত হাসিল করার তাওফিক দান করেন।
#আমিন.....
Featured post
কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা
কোরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা ||-----๑▬▬๑﷽๑▬▬๑-----|| কোরবানী একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিময় আমল। আল্লাহ বলেন فصل لربك وانحر হে নবী! আপনি ...