এখনো কবর দেয়া হয়নি। নামাজের সময়; আজান দিতে বেলাল [রা] এগিয়ে এলেন। আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলার পর যখন তিনি 'আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' বললেন; বলে তিনি মিম্বারের দিকে তাকালেন, এই প্রথম তিনি দেখলেন রাসূল ﷺ বেলালের সামনে নেই। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন, ধুমড়ে মুষড়ে পড়লেন। তিন দিনের জন্য তিনি বোবা হয়ে গেলেন, আজান দিতে গেলেই তিনি কান্নায় স্তব্ধ, এমতবস্থায় বেলাল [রা] কান্না করতে করতে বললেন: আমি আর আজান দেব না, ❝যে দেশে মহানবী ﷺ নেই, আমি সেখানে থাকবো না❞ এই বলে তিনি মদীনা ছেড়ে সিরিয়ার চলে যান।
ছয় মাস কেটে গেলো, একদিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে মহানবী ﷺ তাকে বলছেন, "ইয়া বেলাল, কি ব্যাপার তুমি আমাকে একবারও দেখতে আসোনি, এতদিন হয়ে গেলো!! তোমার হ্নদয় কি আমার সাক্ষাত করতে চায় না!! ঘুম ভেঙে বেলাল চিৎকার দিয়ে ❝লাব্বাইকা ইয়া সাইয়েদী❞ বলে মাঝরাতেই দ্রুত গতিতে মদিনায় সফর করলেন, আর রাসূল ﷺ এর রওজার পাশে কেঁদে কেঁদে বেহুঁশ হয়ে গেলেন। বেলার [রা] এর আগমনের খবরে মদীনাবাসী আনন্দে আত্মহারা। তাকে দেখে তার কন্ঠে আযান শুনতে সাহাবীরা ব্যাকুল, কিন্তু তিনি কিছুতে রাজি না। অবশেষে হাসান হুসাইন [রা] এগিয়ে এসে বললেন: মামা দয়া করে একবার আজান শোনাও, যেভাবে আমার নানাজান কে শুনাতেন। মাসুম বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে বেলাল [রা] আর না করতে পারলেন না, কারণ এই দুই ছোট্ট শিশু ছিল রাসূল ﷺ এর কলিজার টুকরা।
তিনি আবার আজান দিলেন, সাথে সাথে মদিনার মাটি স্তব্দ হয়ে গেলো, সবাই দৌড়ে মসজিদে নববীর দিকে ছুটলো, কর্মরত মানুষরা কাজ ভুলে গেলো, মায়েরা ঘরের কাজ বন্ধ করে দিলো, ছোট ছোট শিশুরা বলতে লাগলো আম্মু !! মু’আয্যিনে নবী ﷺ হযরত বেলাল এসে গেছেন, মদীনাবাসিদের হ্নদয় আন্দোলিত, আযান শুনে সবার চোখের সামনে রাসূল ﷺ পবিত্র জীবদ্দশার দৃশ্য ভেসে উঠলো!! আজান শেষ করে তিনি মিম্বারের দিকে তাকালেন যখন দেখলেন রাসূল ﷺ নেই তিনি কান্না করতে করতে আবার সিরিয়ায় চলে যান।
- এই সেই বেলাল [রা] যে ছিল সামাজিক মর্যাদাহীন একজন নিগ্রো, কালো গোলাম, যার মা বাবা ছিল গোলাম এবং হাবশী, সমাজের নিচুস্তরের মানুষ।
- এই সেই বেলাল [রা] ইসলাম গ্রহণ করায় তার মালিক উমাইয়া তাকে মুরুভুমির তপ্ত বালিতে পিঠ ঠেকিয়ে বেত্রাঘাত করতো আর বলতো লাত এবং উজ্জা দুই মূর্তির পূজা কর, জবাবে বেলাল [রা] বলতো আহাদ!! আহাদ!! আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই।
- এই সেই বেলাল [রা] যার সীমাহীন কষ্ট দেখে রাসূল ﷺ বলেছিলেন কেউ কি নেই বেলাল কে মুক্তি দিবে, এই নিদারুণ কষ্ট থেকে?
- এই সেই বেলাল [রা] যাকে আবুবক্কর [রা] ১০ টি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে কিনে মুক্তি দেন, এই দেখে উমাইয়া হেসে বলেছিলো, ইয়া আবু তুমি কি পাগল এই গোলাম এর জন্য তুমি আমাকে ১ টি স্বর্ণমুদ্রা দিলেও তোমাকে আমি একে দিয়ে দিতাম, উত্তরে আবুবক্কর [রা] বলেছিলো: তুমি যদি এর জন্য ১০০ টি স্বর্ণমুদ্রা ও চাইতে আমি দিয়ে দিতাম কোন তর্ক ছাড়াই, কারণ বেলাল আমার গোলাম না বেলাল আমার মালিক।
- এই সেই বেলাল [রা] মক্কা বিজয়ের পর রাসূল ﷺ বলেছিলেন ইয়া বেলাল [রা] কাবার উপর দাঁড়িয়ে আজান দাও। তাকে কাবার উপরে দেখে উতাভ বিন উসাইদ আর হারিস বিন হিশাম দুই মুশরিক (পরে মুসলিম সাহাবী) বলেছিলো, ছিঃ ছিঃ এই দিন দেখার আগে আমার আব্বার মৃত্যু হয়েছে আমি খুশি, নাহলে একজন কালো মানুষকে কাবার উপরে দেখে তার মৃত্যু হত। ছিঃ ছিঃ কিন্তু আমি একে বলি ইজ্জাতুল ইসলাম, ইজ্জাহ !! সুবাহানাল্লাহ, একজন দাস!! দাস আবিসিনিয়ার ক্রীতদাস!! কাবার উপরে দাঁড়ানো!! সম্মানটুকু দেখুন। ইজ্জাতুল ইসলাম, ইজ্জাহ।
- এই সেই বেলাল যাকে আবু দার আল গিফারী [রা] একজন এক্সট্রিমলি হ্যান্ডসাম সাহাবী গালি দিয়ে বলেছিলো, ও কালো মায়ের সন্তান, তুই আমার মুখের উপর কথা বলবি, এই শুনে রাসূল ﷺ আবু দার এর শরীর শক্ত করে ধরে তাকে চোখ রক্ত বর্ণ করে বলেছিলো ইয়া আবু দার আমি মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রাসূল, ❝সাদা মা আমিনার গর্ভে জন্ম আর কালো মা হালিমার দুধ খেয়ে বড়❞ আফসোস আবু দার জাহেলী যুগের জাহেলিয়াত তোমার মনে এখনো আফসোস!!
আফসোস আজ আমাদের সমাজে এখনো উঁচু নিচু, কালো সাদা, গরীব ধনীর পার্থক্য চোখে পড়ার মতো। এই ঈমানের কি দাম? যে ঈমান আমাকে মানুষ থেকে অমানুষ বানায়। এই বিশ্বাসের কি দাম যে আমাকে উঁচু নিচু পার্থক্য শেখায়।
কপিড
No comments:
Post a Comment