Tuesday, September 18, 2018

ঘটনার পর কি এজিদ (২৬-৬৪ হিজরী) মুমিন? - ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

কারবালা (দুই)- কারবালা এবং মদিনার হাররার ঘটনার পর কি এজিদ (২৬-৬৪ হিজরী) মুমিন?

- ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী

=============

কিছু কমবখত এবং নাদান এজিদ-প্রেমী পোস্ট দিয়ে বেড়ায় ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া নাকি তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ আলেম ছিল। নাউজুবিল্লাহ! এজিদকে লানত না দিয়ে তার জন্য দুয়া করার পরামর্শ দেয় ওই নাদান মুসলমান নামধারীরা। বুখারি শরীফের একটি হাদিসের অপব্যাখ্যা করে তারা এজিদকে জান্নাতি প্রমাণ করারও দুঃসাহস দেখায়। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করবে না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আহলে বায়েতের প্রতি এমন অবিচারের কারণে তদের ঈমান ও আমল দুটোই বরবাদ হয়ে গেছে। এখন দেখা যাক কুরআন ও হাদিসের আলোকে এজিদ কি মুমিন রয়ে গেছে নাকি কুফরিতে পতিত হয়ে গেছে। যে হাদিস দিয়ে এরা এজিদ বিন মুয়াবিয়াকে জান্নাতী বানাতে চায় সে ঘটনার সময় এজিদ বিন মুয়াবিয়ার বয়স মাত্র ৬ বছর। আর এ ফযিলত কেবল প্রথম মুসলিম নৌবাহিনীর জন্য প্রাপ্য। 


নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আহলে বায়েতের প্রতি ভালোবাসা ঈমানের শর্ত, এজিদ বিন মুয়াবিয়া বা কোন লানতপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ নয়। তারা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে যে কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসেইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর সংগী সাথীদের হত্যা করে এজিদ (লাঃ) কুফরি করেনি, কবীরা গোনাহ করেছে। এর পক্ষে যদিও তাদের কোন দলীল নেই।  


১। মুসলমান তো দূরের কথা, কোন কাফির বা মুশরিক যদি যুদ্ধ ক্ষেত্রেও জীবন বাঁচানোর জন্য ইসলাম গ্রহণ করে তাকেও হত্যা করা নিষেধ। আর হত্যাকারী নিজেই শিরক আর কুফরে প্রত্যাবর্তন করে। দেখুন সহীহ মুসলিম এবং সহীহ বুখারির নিম্নের হাদিসগুলো। 


প্রথম হাদিসঃ

------------

আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। "ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন, যদি আমি কোন কাফিরের সম্মুখীন হই এবং সে আমার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তার তলোয়ার দ্বারা আমার একটি হাত উড়িয়ে দেয়, এরপর কোন গাছের আড়ালে গিয়ে বলে আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলাম গ্রহণ করলাম! এ কথা বলার পরও আমি কি তাকে কতল করতে পারি?" রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ "তাকে হত্যা করো না।" আমি আরয করলাম, "হে আল্লাহর রাসুল! সে আমার একটি হাত কেটে ফেলে এ কথা বলেছে, তবুও কি আমি তাকে হত্যা করব না?" তিনি বললেনঃ "না, হত্যা করতে পারবে না। যদি তুমি তাকে হত্যা কর (তবে) এ হত্যার পুর্বে তোমার যে অবস্হান ছিল সে ব্যাক্তি সে স্হানে পৌছবে এবং কালিমা পড়ার আগে সে ব্যাক্তি যে অবস্হানে ছিল তুমি সে স্হানে পৌছবে।"

 [সহীহ মুসলিমঃ ১৭৬, সহীহ বুখারিঃ ৩৭৯৪] 


দ্বিতীয় হাদিসঃ

------------

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের একটি বাহিনী মুশরিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পাঠালেন। উভয় দল পরস্পর সম্মুর্খীন হল। মুশরিক বাহিনীতে এক ব্যাক্তি ছিল। সে যখনই কোন মুসলিমকে হামলা করতে ইচ্ছা করত, সে তাকে লক্ষ করে ঝাপিয়ে পড়ত এবং শহীদ করে ফেলত। একজন মুসলিম তার অসতর্ক মূহৃর্তের অপেক্ষা করতে নাগলেন। জুনদুব বললেন, আমাদের বলা হলো যে, সে ব্যাক্তি ছিল উসামা ইবনু যায়িদ। তিনি যখন তার উপর তলোয়ার উত্তোলন করলেন তখন সে বলল, 'লা ইলাহা ইল্লাহ' তবুও উসামা (রাঃ) তাকে হত্যা করলেন। দুত যুদ্ধে জয়লাভের সুসংবাদ নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হলেন। তিনি তার কাছে যুদ্ধের পরিস্হিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি সব ঘটনাই বর্ণনা করলেন, এমন কি সে ব্যাক্তির ঘটনাটিও বললেন যে তিনি কি করেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামাকে ডেকে পাঠালেন এবং প্রশ্ন করলেন, তুমি সে ব্যাক্তিকে হত্যা করলে কেন? উসামা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে অনেক মুসলিমকে ঘায়েল করেছে এবং অমুক অমুককে শহীদ করে দিয়েছে। এ বলে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেন। আমি যখন তাকে আক্রমণ করলাম এবং সে তলোয়ার দেখে অমনি 'লা ইলাহা ইল্লাহ' বলে উঠল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি তাকে মেরে ফেললে? তিনি বললেন, জি হ্যা। রাসুল বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মাগফিরাতের জন্য দু'আ করুন। রাসুল বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে তখন তুমি কি করবে? তারপর তিনি কেবল এ কথাই বলছিলেনঃ কিয়ামতের দ্বীন যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি এর অতিরিক্ত কিছু বলেন নি। 

[মুসলিমঃ ১৭৬]


তৃতীয় হাদিসঃ

--------------

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিআল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলমানদেরকে গালাগালি করা ফাসেকি আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফরী। 

[বুখারীঃ ৪৮, মুসলিমঃ ৬৪ ]


উপরের এই তিনটি হাদিস ছাড়াও আরও অসংখ্য হাদিস রয়েছে এই কথার পক্ষে। উপরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে এজিদকে কি বলা যায়? এজিদের নির্দেশে জান্নাতে যুবকদের সর্দার, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, খাতুনে জান্নাত মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কলিজার টুকরা, মুমিনদের নেতা, সাইয়্যেদ এবং আহলে বায়েতের অন্যতম সদস্য ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ও রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) এবং তাঁর ৭২ জন সাথীদের শহীদ করা হয়। প্রাণহীন দেহগুলোকে একে একে লাঞ্ছিত করা হয়, পদদলিত করা হয়, দেহ থেকে মাথা কেটে আলাদা করা হয়, নিধর দেহগুলোর উপর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে ছিন্নভহিন্ন করা হয়। নারী ও শিশুদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়। বন্দী নারী ও শিশুদের হাঁটিয়ে কারবালা থেকে কুফা, কুফা থেকে সুদূর দামেস্কে নেয়া হয়। এজিদের অপবিত্র দরবারে বিধবাদের ভাগাভাগি করা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে কৌতুক আর হাসিতামাশার ঢেউ খেলে যায়। এই এজিদের নির্দেশে পবিত্র মদিনা শহরে তাণ্ডব চালানো হয়। তার নির্দেশেই অসংখ্য সাহাবা (রাঃ) কে শহীদ করা হয়। নারীদের সম্ভ্রমহানি করা হয়। পবিত্র মসজিদে নববীকে ঘোড়ার আস্তাবলে রূপান্তরিত করা হয় ফলে তিন দিন সেখানে কোন আজান দেয়া হয়নি। মক্কার পবিত্র ক্বাবাকে লাঞ্ছিত করা হয়, দেয়াল জ্বালিয়ে দেয়া হয়, মুসলমানদের শহীদ করা হয়। এরপরও তারা যদি হাদিস অস্বীকার করে এজিদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর লোভে মনে করে সে কুফরি করেনি বরং কবীরা গোনাহ করেছে তাহলে তাদের ঈমান চলে যাবে। জেনেশুনে কেউ একটি সহীহ হাদিসকে অস্বীকার করলে কুফরি হয়। 


উপরন্তু, মদিনার হাররার ঘটনা এবং কা'বার আগুন দেবার পর এবং কারবালার হত্যাকাণ্ডকে বদরের প্রতিশোধ হিসেবে উল্লেখ করার পর এজিদের মুমিন থাকার আর সুযোগ নেই। সে জাহেল নাপাক ঈমানহারা হয়ে গেছে। এরপরও বিখ্যাত সব ইমাম, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুজাদ্দিদ তাকে লানত দিয়েছেন এবং অনেকেই তার কাফের হয়ে যাবার ব্যাপারে সন্দেহও করেন নি।

No comments:

Post a Comment

Featured post

কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা

 কোরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি মাসআলা ||-----๑▬▬๑﷽๑▬▬๑-----|| কোরবানী একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিময় আমল। আল্লাহ বলেন فصل لربك وانحر হে নবী! আপনি ...