#দাড়ির_পরিচয়ঃ
আরবি ভাষায় দাড়িকে বলা হয় ﻟﺤﻴﻪ লিহইয়া
বা লাহয়া। এর আভিধানিক অর্থ হলো
থুতনিসহ মুখের দুই পাশের ওই হাড়, যার ওপর
দাঁতগুলো অবস্থিত।
প্রাপ্ত বয়সে ওই হাড়ের ওপর যে লোম বা
কেশ গজায়, ওই লোম বা কেশগুলোকেই
হাড়ের নামকরণে লিহইয়া বলা হয়।
শরিয়তের দৃষ্টিতে দাড়ি বলা হয়,
দো'চোয়াল ও থুতনির চুলগুচ্ছ কে।
(তাজুল উরুস,খন্ড ১০, পৃ ৩২৩)
আসুন দাড়ি সম্পর্কিত রাসুলে খোদা (দঃ)
এর পবিত্র হাদিস শরিফ সমূহ জেনে নিই।
.
# হাদিস_শরিফের_আলোকে_দাড়িঃ
১. হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূল ﷺ ইরশাদ
করেছেন, দশটি বিষয় সকল নবী রাসূলগণের
সুন্নাত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং
দাঁড়ি লম্বা করা অন্যতম।
(মুসলিম শরীফ,১/১২৯)
২. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,
রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, তোমরা গোঁফ
কাট এবং দাঁড়ি লম্বা কর, আর
অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর।
(মুসলিম শরীফ,১/১২৯)
৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে
বর্ণিত। রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, তোমরা
মুশরিকদের বিপরীত কর, দাঁড়ি লম্বা কর,
আর গোঁফ ছোট কর।
(বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫, মুসলিম,মুসান্নামে
ইবনে আবি শাইবা ৮/৩৭৫, আবু দাউদ ১/৩২১)
৪. হুজুর ﷺ বলেছেন যে, তোমরা ভালভাবে
গোঁফ কাট এবং দাড়ি বাড়াও। (বুখারী
শরীফ ২/৮৭৫)
৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রঃ) হতে
বর্ণিত,রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন, আমি গোঁফ
ছোট করার জন্য এবং দাড়ি লম্বা করার জন্য
নির্দেশ প্রদান করেছি।
(মুসলিম ১/১২৯,আবু দাউদ ২/২২১, তিরমিযি
৩৯৪ পৃ,মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৭২১ পৃ)
৬. হযরত আবু হুরাইরা (র) হতে বর্ণিত,রাসুল
ﷺ ইরশাদ করেন,মুশরিকরা গোঁফ লম্বা করে
ও দাড়ি মুন্ডিয়ে ফেলে,তোমরা তাদের
বিপরীত কর দাড়ি লম্বা রাখ,গোঁফ ছোট
কর।
(মাজমাউজ যাওয়াইদ ৫/১৬৬)
৭. হযরত আনাস বিন মালিক (র) হতে
বর্ণিত,রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন, তোমরা
অগ্নি পূজারীর বিরুধিতা কর।গোঁফ ছেটে
ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর।
(মাজমাউজ যাওয়াইদ (৫/১৬৬)
৮. হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (র) হতে
বর্ণিত,রাসুল ﷺ ইরশাদ করেন,দশটি বিষয়
পূর্ববর্তী নবী রাসুল গণের ফিতরত (স্বভাব)
ছিল তারমধ্যে
ক) গোফ ছেটে ফেলা
খ) দাড়ি লম্বা করা
গ) মিসওয়াক করা
ঘ) অযুর সময় নাকে পানি দেওয়া ইত্যাদি।
(মুসলিম ১/১২৯, আবু দাউদ ১/৮, নাসাঈ
২/২৩৭, ইবনে মাজা ২৫ পৃ)
৯. হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত,
রাসূলে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেন, দাড়ি
বাড়াও , গোঁফ কাট এবং এ ক্ষেত্রে ইহুদী-
খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করোনা।
(মাসনাদে আহমদ)
১০. নবী করীম ﷺ এর আমল দ্বারাও দাড়ি
প্রমান পাওয়া যায়।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, সাহাবী
হযরত খাব্বাব রা.-কে কেউ জিজ্ঞেস
করেন, হুজুর পাক ﷺ কি জোহর ও আছর
নামাযে কেরআত পাঠ করতেন? তিনি
বলেন, হ্যা, পাঠ করতেন। লোকটি পুন:প্রশ্ন
করেন, আপনি কিভাবে তা বুঝতেন ? তিনি
বলেন হুজুর - ﷺ এর দাড়ি মুবারকের দোলায়
আমরা বুঝতাম যে, তিনি কিরআত পাঠ
করছেন।
(তাহাবী শরীফ)
বলাবাহুল্য, কেরআত পাঠকালে ঐ দাড়ি
দোলাই পরিদৃষ্ট হবে, যা যথেষ্ট দীর্ঘ হয়,
ছোট ছোট দাড়ি কখনো দুলবে না।
আরও অসংখ্য হাদিস শরিফ আছে দাড়ির
সম্পর্কিত।
#দাঁড়ির_হুকুম_ও_পরিমাপ :
দাড়ি সম্পর্কিত হাদিস শরিফ সমূহের
পরিপ্রেক্ষিতে চার মাযহাবের ঈমাম গণ
ঐক্যমত পোষণ করে ফতোয়া প্রদান
করেছেন,
ইসলামী শরীয়তে একমুষ্টি পরিমান লম্বা
দাঁড়ি রাখা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বা
ওয়াজিব পর্যায়ভুক্ত।
অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম সাধারণ
ভাবে দাড়ি রাখা ওয়াজিব বলেছেন।
কারণ,দাড়ি রাখার জন্য নবী ﷺ আমর বা
নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর আমর বা
নির্দেশ ওয়াজিব হওয়া কে চাই।
ফকিহ গণ দাঁড়ি এক মুষ্টির কম রাখাকে
মাকরুহ এবং কেউ কেউ হারাম বলেছেন।
চার মাযহাব এর ঈমামগণ বলেছেন, এক
মুষ্টির নিছে বা একেবারে তা মুন্ডিয়ে
ফেলা হারাম এবং কবীরা গুনাহ।
স্বয়ং হুজুর ﷺ এর দাঁড়ি রাখা এবং তার
অসংখ্য হাদীসে উম্মতের প্রতি দাঁড়ি
রাখার সাধারণ নির্দেশই প্রমান করে যে,
দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব এবং না রাখা
হারাম। কারন, শরীয়ত প্রবর্তক কর্তৃক কোন
বিষয়ের প্রতি সাধারন নির্দেশ হলে তা
পালন করা ওয়াজিব এবং বিপরীত করা
হারাম হয়ে যায়। আর এটা ফিক্বাহ
শাস্ত্রের একটি মূলনীতিও বটে।
#সুতরাং প্রমাণিত হয় এক মুষ্টির নিছে
দাড়ি মুন্ডানো ব্যক্তি ফাসেকে মুলিন বা
প্রকাশ্য ফাসিক।
তার জন্য তাওবা আবশ্যক, এমন ব্যক্তিকে
যে কোন নামাযের ইমাম বানানো গোনাহ
এবং তার পিছনে (ইমামতিতে) নামায
আদায় করা মাকরুহে তাহরীমা, যা
পরবর্তীতে দোহরিয়ে (পুনরায়) আদায় করা
ওয়াজিব বা আবশ্যক।
# নিম্মে এই সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের
আমল ও চার মাযহাবের ঈমাম ও
ফোকাহায়ে কেরামগণের উক্তি সমূহ তুলে
ধরা হল।
# দাঁড়ি_ও_সাহাবায়ে_কেরামের_আমল :
১.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.যখন হজ্জ্ব
বা উমরা আদায় করতে, তখন স্বীয় দাঁড়ি
মুষ্টি করে ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ
কেটে ফেলতেন।
(বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫)
২. হযরত আবু হুরায়রা রা. স্বীয় দাঁড়ি
ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে
ফেলতেন।
(মুসান্নাফ লি-ইবনি আবি শাইবা- ১৩/১১২)
# চার_মাযহাব_ও_ফোকাহায়ে_কেরামগণে
র_ফতোয়াঃ
# হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত ফতোয়া
গ্রন্থ "দুররুল মুখতার এ ঈমাম আলাউদ্দিন
খাচকপি হানাফি (রহ) বলেছেন পুরুষের জন্য
দাড়ি মুন্ডানো হারাম।
#হানাফি মাজহাবের অন্যতম ভাষ্যকার ও
ফকিহ আল্লামা ইবনুল হুমাম তার কিতাব
হেদায়ার ব্যাখ্যায় "ফতহুল কদির ২/২৭, দুররুল
মুখতার ২/১১৭, বাহরুর রাইক ২/২৮০ এবং
তাহাবী শরীফের ৪১১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
দাড়ি এক মুষ্টিরর কমে কেটে ছেটে রাখা
যা কোন কোন পাশ্চাত্যের লোকেরা এবং
মেয়েলী স্বভাব এর পুরুষ লোকেরা করে
থাকে, তা কারো নিকট জায়েজ নাই।
আর দাড়ি সম্পূর্ণ মুন্ডানো ইয়াহুদি ও
ইরানের মাজুসি (অগ্নিপূজারীদের) কাজ।
*গুনিয়া কিতাবের ১/২০৮, বাহরুর রাইক
২/২৮০, দুররুল মুখতার ১/১৫২, ফাতহুল কদির
২/২৭০ কিতাব সমূহতে বর্ণিত আছে,
দাড়ি মুন্ডনকারীকে শাস্তি প্রদান করা
হবে।
কেননা সে হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছে।
*ইমাম আলা হযরত (রহ) ফতোয়ায়ে রজবিয়া
তে বর্ণনা করেছেন,
শরিয়তের নির্ধারিত পরিমাণের (একমুষ্টি)
এর চেয়ে কম না রাখা ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে রজবিয়া ২২/১১৫)
*ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (রহ)
বলেন,
দাড়ি মুন্ডানো হারাম,এটা
আফরঙ্গি,হিন্দু,যুল কিয়ানদের চরিত্র,
তাদের কে কলন্দিরাও বলা হয়।
(আশিয়াতুল লুমায়াত শরহে মেশকাত ১/২১২)
*সদরুল শরিয়াহ মুফতি আমজাদ আলী (রহ)
"বাহারে শরিয়ত" উল্লেখ করেছেন,
দাড়ি লম্বা রাখা পূর্ববর্তী নবী
রাসুলগণের সুন্নাত।
মুন্ডানো বা একমুষ্টির কমে ছেটে রাখা
হারাম।
(বাহারে শরিয়ত ১৬/১৯৭)
*ফকিহে মিল্লাত আল্লামা জালাল উদ্দিন
আহমদ "ফতোয়ায়ে ফয়যুর রাসুল " এ বর্ণনা
করেছেন,
বার বার দাড়ি মুন্ডানকারী ব্যক্তি
ফাসেক ও হারামে লিপ্ত।
এমন ব্যক্তি কে ইমাম বানানো এবং তার
পিছনে নামায পড়া মাকরুহে তাহরীমী।
(ফতোয়ায়ে ফয়যুর রাসূল ১/২৫৯)
*হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব
"গুনিয়া শরহে মুনিয়া" তে বর্ণিত আছে,
ফাসেক (দাড়ি মুন্ডনকারী) কে ইমাম
বানালে গুনাহগার হবে।
কেননা তাকে (ফাসেক) কে ইমাম বানানো
হারাম।
*"তাহাতাবি আলা মারাকিয়ুল ফালাহ"
কিতাবে বর্ণিত আছে,
ফাসেকের ক্ষেত্রে মাকরুহ বলতে মাকরুহে
তাহরীমা কে বুঝায়।ক
(তাহাতাবী আলা মারাকিয়ুল ফালাহ
১/৩০৩)
*"দুররুল মুখতার" কিতাবে বর্ণিত আছে,
যে সমস্ত নামায মাকরুহে তাহরীমীর
সাথে আদায় করা হয়েছে তা পুনরায় আদায়
করা ওয়াজিব।
.
# শাফেয়ী_মালেকি_ও_হাম্বলি_মাযহাব
ের_অভিমতঃ
ইমাম ইবনুর রাফ’আ বলেন,
ইমাম # শাফেয়ী রহ. “আলউম্ম” কিতাবে
লেখেন যে, দাড়ি কাটা হারাম।
# মালেকী মাজহাব মতেও দাড়ি মুন্ডন করা
হারাম। অনুরূপভাবে ছুরত বিগড়ে যাওয়া মত
ছেটে ফেলাও হারাম। (কিতাবুল ওবদা)
# হাম্বলী মাজহাবের কিতাব “শাহহুল
মুন্তাহা” ও “শরহে মুজ্জুমাতুল আদব” এর
উল্লেখ হয়েছে যে, নির্ভরযোগ্য মত হল
দাড়ি মুন্ডন করা হারাম।
# শেষ_কথাঃ
মোট কথা হল,দাড়ি রাখা অনেকে সুন্নাতে
মুয়ক্কাদা বলেছেন যা ওয়াজিব পর্যায়ে।
চার মাজহাবের ঈমাম সহ অধিকাংশ
ওলামায়ে কেরাম এবং ফোকাহায়ে
কেরামের মতে হাদিস শরিফের আমর তথা
নির্দেশসূচক শব্দ হতে ওয়াজিব বলেছেন।
কেননা আমর তথা নির্দেশ সূচক শব্দ
ওয়াজিব কে চাই / ওয়াজিব সাবিত হয়
আর একমুষ্টির নিচে দাড়ি মুন্ডানো
সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।
একমুষ্টির নিচে দাড়ি মুন্ডনকারি ব্যক্তি
কে ফাসেকে মুলিন বা প্রকাশ্য ফাসেক
বলা হয়।
এরুপ ব্যক্তি কে ইমাম বানানো গুনাহ এবং
এদের ইমামতিতে নামায পড়া মাকরুহে
তাহরীমাহ।
ফাসেকের ইমামতিতে নামায পড়লে সে
নামায দোহরিয়ে (পুনরায়) আদায় করা
ওয়াজিব।